—–এই রাজু ওঠ আর কত ঘুমাবি(আম্মু)
—–হুম কী হয়ছে?(রাজু)
——কয়টা বাজে দেখছোস
——দেখার দরকার নাই ঘুমাতে দাও। এখন যাও তো এখান থেকে
——নবাবের বাচ্চা ৯ টা বাজে কলেজ এ যাবি না।
—– কিইইই ৯ টা বাজে আর তুমি এখন আমায় ডাকতেছো। আরো আগে ডাকতে পারলে না
—– সেই কখন থেকে ডাকতেছি কিন্তু তুই নবাবের বাচ্চার মত পইরা ঘুমাইতাছোস
—–আচ্ছা হয়ছে যাও নাস্তা রেডি কর আমি আসতেছি
—- ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আয়।
নাস্তা করেই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয় রাজু।আজ সূয্যি মামার দেখা নেই। নীল আকাশের কালোমেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে ।মনে হয় বৃষ্টি নামবে।বৃষ্টিতে ভেজার কোন ইচ্ছেই নেই রাজুর।এদিকে ছাতাটা ও বাসায় ফেলে আসছে এখন সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।আনমনে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে রাজু।কলেজ গেটে পৌছাতেই মুষলধারে বৃষ্টি পরা শুরু হয়ে গেল।রাজু দৌড়ে ক্লাসরুমের দিকে যেতে গেলে হঠাৎ করে একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা খায়।ধাক্কা খেয়ে মেয়েটি মাঠের কাদার মধ্যে পরে যায়।এদিকে রাজুতো ভয়ে কাঁপতেছে।কি থেকে কি হয়ে গেল সে কিছুই বুঝতে পারছে না। মেয়েটির রাজুর দিকে তাকিয়েই ঝাড়তে শুরু করলো
——চোখে কম দেখেন নাকি?দেখে চলতে পারেন না মন চায়তেছে একটা থাপ্পড় দিয়ে সবগুলা দাত ফেলে দেই(মেয়েটি)
——স্যরি পেত্নী আপু আমি দেখতে পাই নাই প্লিজ আমারে মাইরেন না। আমায় ছাইরা দেন(রাজু)
—–ঐ কি বললেন আপনি আমি পেত্নী??
—-আমি তো তাই দেখতেছি।পরে গিয়ে আপনার সুন্দর চেহারায় যে কাদা লাগছে তাতে পুরাই আপনাকে পেত্নীর মত লাগছে
——কি বললেন আপনি কি বললেন?আপনারে আমি….
আর কিছু বলার আগেই দৌড়ে পালিয়ে যায় রাজু।সে জানে এখানে বেশি সময় থাকলে বিপদ আরো বেরে যাবে তাই পালিয়ে যাওয়াই ভালো।সেই দিন আর বেশি ক্লাস হলো না অনেক আগেই ছুটি দিয়ে দিলো। আজ তার কলেজের প্রথম দিন তাই বন্ধু না থাকায় আড্ডাও হলো না
পরের দিন আগের মতই রাজু রাস্তাদিয়ে হেটে কলেজ এ যাচ্ছে।হঠাৎ করে শুনতে পায় কে যেনো কাকে ডাকছে “এই যে শুনছেন”অহ হ্যালো কানে শুনতে পান না নাকি?
রাজু পিছনের দিকে তাকায় কিন্তু মেয়েটিকে চিনতে পারে না তাই আবার হাটা শুরু করে।এবার মেয়েটি একটু রেগেই যায়।দৌড়ে এসে রাজুর কলাড় ধরে।
—–এই যে মিঃ কখন থেকে ডাকছি শুনতে পান না
—-Excuse me আপনি কাকে ডাকছেন আমি কি করে বুজবো। আমার একটা নাম আছে। নাম ধরে ডাকলেই হত
—–আমি আপনার নাম জানবো কি করে?
—-না জানেন না তো ডাকছেন কেনো?
—-কাল আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে কাদায় ফেলে দিছেন আবার পেত্নী ও বলেছেন কেন???
—–খাইছে আমারে এখন আমি কিতা করুম।(আস্তে আস্তে বিড়বিড় করে বলছে রাজু)
——-ঐ এত আস্তে বিড়বিড় করে কি বলছেন(চোখ গরম করে)
—–না মানে আমি আপনাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দেই নি SoRrYyyyyy
—-অক্কে
—–ফ্রেন্ড??
—– হুম ফ্রেন্ড
—-ধন্যবাদ পেত্নী আপু
—-ওই আবার পেত্নী বললেন কেনো?
—–আমি তো আপনার নামই জানি না। তাই পেত্নী বলে ডাকলাম
—-নাম জিজ্ঞেস করলেই পারতেন।আমি তাহমিনা..আপনি?
—-রাজু..আচ্ছা আমি কি আপনার নামটা কাটাছেড়া করে ছোট করে মিনা বলতে পারি??
—–হুম পারেন কিন্তু আপনি আপনি করে কথা বললে হবে না।
—–তাহলে??
—–তুমি করে বলতে হবে
——আচ্ছা চলেন ক্লাসে চলেন
—-ঐ আবার
—–সরি। আচ্ছা চল ক্লাসে চল
—হুম চল
এভাবেই শুরু হয় রাজু মিনার বন্ধুত্ব। আস্তে আস্তে তাদের বন্ধুত্ব গভীর থেকে আরো গভীর হয়।সারা দিন দুষ্টুমিষ্টি ঝগড়া রাগ অভিমান।রাজু মীনাকে পেত্নী বলে ডাকে। এনিয়েও তাদের সাথে প্রায় ই ঝগড়া হয়।অভিমান করে কেউ কারো সাথে কথা বলে না।কিন্ত অভিমানটা বেশি দিন যেতে দিত না কেউ।ছোট্ট একটা সরি দিয়েই আবার সব আগের মত হয়ে যায়।একজন আরেক জনের অনেক কেয়ার নিত।এক জন আরেক জন ছাড়া অচল যেন দুই দেহে এক আত্তা।
আজ তাদের বন্ধুত্ব এর ১বছর।রাজু অনেক ভালোবেসে ফেলছে মীনাকে কিন্তু বলতে পারছে যদি মিনা তাকে ফিরিয়ে দেয়।যদি তাদের ফ্রেন্ডশিপটা নষ্ট হয়ে যায়।না যে ভাবেই হোক মিনা কে এবার বলেই দিতে হবে।মোবাইলটা বের করেই মিনাকে ফোন দেয় রাজু কিন্তু ওয়েটিং। আবার দেয় কিন্তু এবারও ওয়েটিং।এভাবে প্রায় ৩০ মিনিট চলে গেলো কিন্তু এখনো ওয়েটিং।এক ঘন্টা পর মিনা ফোন দেয় রাজুকে।
—-ঐ পেত্নী কই তুই(রাজু)
—-বাসায়।কেনো(মিনা)
—-এখনি পার্কে আয়
—-কেনো কি হইছে
—-ঐ তরে আসতে বলছি আয়। বেশি কথা বলস কেন।ফোন রাখলাম তাড়াতাড়ি আসো
—–অক্কে
এক ঘন্টা পর পার্কে আসে মীনা।আজকে মীনাকে অন্যরকম লাগছে। একটা কালো শাড়ি পরে আসছে আজ।কালো শাড়িতে মীনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।চোখে কাজল দিছে চুল গুলো ও খোলে রেখেছে।ঐ কাজল কালো চোখের মধ্যে যে কেউ হারিয়ে যাবে।
—–ঐ কি হয়ছে কি দেখছ??(মিনা)
—–তোকে(রাজু)
—-হি হি হি আমাকে মনে হয় আগে কোন দিন দেখছ নাই
—-দেখছি কিন্তু এভাবে না।কালো শাড়িতে তোকে অনেক সুন্দর লাগতেছে
—-হয়ছে আর পাম দিতে হবে না।আমি পেত্নীর দেখতে আমি জানি।কি জন্য আসতে বলছোস তাই বল?
—-তার আগে বল তোর ফোন ওয়েটিং ছিল কেন?
—-কথা বলছিলাম। ফ্রেন্ড ফোন দিছিলো
—ছেলে না মেয়ে?
—-আজব তো তুই এত কিছু জিজ্ঞেস করিস কেন?ছেলে ফ্রেন্ড তো?
—-ফ্রেন্ডের সাথে এত কিসের কথা।তাও আবার ছেলে কাল থেকে আর কোন ছেলের সাথে কথা বলতে পারবি না
—–কেনো?তুই আমার কে যে তোর কথা শুনতে হবে
—-আমি বলছি বলবি না ব্যস
—–আমি বলবই তর কি
—আমার অনেক কিছু তুই কেন বুঝিস না আমি তরে কথাটা বলতে গিয়ে থেমে যায় রাজু
—-বল কি আমারে?বল
—–আচ্ছা তুই কি কিছুই বুঝস না
—-কি বুঝবো আমি(মিটিমিটি হাসছে মীনা)
—–তুই কেনো বুঝিস না আমি তোকে ভালোবাসি।
—-তুই বুঝাস না তাই বুঝি না
—-আজ তো বুঝলি ভালোবাসবি আমায়
—না
—–কেনো
—-আমি তো পেত্নী। পেত্নীকে কেউ ভালোবাসতে পারে না
—–আমি তোর ভুত হতে চাই
—-তাই
—-হুম
——–আচ্ছা প্রপোজ কর।তবে অন্য সবার মত করে না।
——তো কেমন করে করবো?
——এমন ভাবে করবি যেভাবে কেউ কোন দিন কাউকে প্রপোজ করে নাই
অতঃপর রাজু ফিল্মি স্টাইলে হাটু গেরে মীনাকে প্রপোজ করে আচ্ছা আমি কি তোর ভুত হতে পারি?তোর সাথে ঐ তেতুল গাছে এক সাথে থাকার অধিকার পেতে পারি?? দুজনে এক সাথে মানুষের ঘাড় মটকাবো ভয় দেখাবো। ভালোবাসবি আমায়??
—-হুম বাসবো তো অনেক ভালোবাসবো
অতঃপর পেত্নী ভুতকে নিয়ে তাদের ভালোবাসার ঘর বাধে ঐ বড় তেতুল গাছটায়…