শাশ্বত প্রেম

শাশ্বত প্রেম

পুজোর চারদিন নিজের বৃত্তে মহা ব্যস্ত থাকে তরী।আবাসনের পুজো ফাংশন ছেলের নাটক মেয়ের নাচ নিজের শাড়ি ব্লাউজ এসব নিয়ে কোথা থেকে হুস করে যেন কেটে যায় বহু আকাঙ্ক্ষিত দিন গুলো ।

একাদশীর সকালে তরীর হঠাৎ খেয়াল হল পুজোর চারদিন সে একবারও ঘোষাল কাকুকে কোথাও দেখেনি।ঘোষাল কাকু কাকিমা নিঃসন্তান দম্পতি ।তিনতলার ফ্ল্যাটে থাকেন।সেরিব্রাল স্ট্রোকে একবছর হল কাকিমার কোমর থেকে পা অবস । উঠে বসতে পারেন না। ।কাজের লোক নিয়ে কাকু কোনমতে সামলান।বিয়ের পর থেকে তরী ওঁনাদের কাছে বাবা মায়ের স্নেহ পেয়েছে ।

একরাশ চিন্তা মাথায় নিয়ে তখনি তিনতলায় যায় তরী।দরজা খুলে তরী কে সোফায় বসতে বলেন কাকু।তারপর দ্রুতপায়ে বেডরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করলেন।কিছুক্ষণ পরে ঘর থেকে বেরিয়ে বেসিনে ভালো করে হাত ধুয়ে কিচেনে গেলেন। সেখানে থেকে কিছুক্ষণ পরে তরীর কাছে এলেন ।

বিজয়ার প্রণাম সেরে তরী বলল ,

“কাকু আয়া আসেনি।”

“আর আয়া, জানো পুরো পুজোতে আয়া রান্নার লোক কেউ এলনা।কত চেষ্টা করলাম।কাউকে পেলাম না।”

কাকুর ঝুঁকে পড়া ভগ্ন শরীর টা দেখে তরীর চোখে জল এল।

“এইতো তোমার কাকিমা কে পরিস্কার করে এসে ভাত বসালাম।এবারে আর মায়ের মুখ টাও দেখা হলনা।কি করবো বলো একা রেখে যেতে ভয় হয় যে।”

কি বলা উচিত তরী বুঝতে পারেনা। এক চরম অনুশোচনায় মনে মনে দগ্ধ হল সে।

“তরী একবার আসবি মা।”
বেডরুম থেকে কাকিমার ক্ষীন গলা ভেসে আসে।

“যাই কাকিমা ।”

তরী পড়িমরি ছুটে যায় সে ঘরে। গিয়ে দেখে সদ্য স্নান করা ভিছে চুল শুয়ে আছেন কাকিমা ।বালিশ বিছানা টানটান পরিষ্কার ।শুধু টেবিলে জিনিস পত্র এলোমেলো আর কিছু জামাকাপড় এদিক ওদিক ছড়ানো পড়ে রয়েছে ।

তরীকে দেখেই হাত বাড়িয়ে দেন তিনি।তরীও এগিয়ে এসে দুহাতে জড়িয়ে ধরে তাঁকে।তাঁর দুচোখ বেয়ে নেমে আসছে জলের ধারা ।তারপর কান্না ভেজা গলায় বললেন,

“তোর কাকু টা এবার মরে যাবে তরী।আমি আর ওর কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। কেন ভগবান এই দিন দেখার জন্য বাঁচিয়ে রাখলেন আমায়।”

তরী দুহাতে ওনার চোখের জল মুছে দিয়ে বলে ,

“আমাকে একবারও খবর দিলেনা কাকিমা ।এইভাবে পুরো পুজোটা কাকু সবকাজ নিজে করলো ।একি ওনার পক্ষে সম্ভব ।”

“অনেক বার বলেছিলাম রে কিছতেই শুনল না।বলল পুজোতে ওরা আনন্দ করছে করুক বিরক্ত করবোনা।শুধু শুধু ব্যস্ত হবে।”

তারপর একটু থেমে সঙ্কোচের সাথে বললেন,

“একটা উপকার করবি মা।জানি ছেলে মেয়ে স্বামী সব নিয়ে বড্ড ব্যস্ত তুই।তবু বলছি।তোর কাকুকে নিয়ে একবার সেন ডাক্তারের কাছে যাবি মা।কতদিন চেকআপ হয় না। ।আমি বেশ বুঝতে পারছি ও ভালো নেই।কিছুতেই আমার কথা শোনেনা।শুধু আমার মত একটা পঙ্গু মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ”

কথার মাঝেই কাকু কাঁপা হাতে জলের গ্লাস নিয়ে ঘরে ঢুকলেন ।হাতের মুঠোয় কয়েকটা ট্যাবলেট ।তারপর কাকিমার মাথার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললেন ,

“কি এত বলছো। মেয়েটাকে বিব্রত কোরো না। কাল বিসর্জন হয়েছে আর আজই আমাদের খোঁজ নিতে চলে এসেছে ।দেখি হাঁ করো দেখি।”

বলে ওষুধ গুলো কাকিমার মুখে দিয়ে ঠোঁটের কোন দিয়ে ধীরে ধীরে গলায় জল ঢাললেন তিনি।

জীবন সায়াহ্নে উপস্থিত দুজন মানুষের শ্বাশত প্রেমে আপ্লুত হয় তরীর সমস্ত সত্তা। দাম্পত্যর প্রকৃত অর্থ যেন সে নতুন ভাবে উপলব্ধি করল।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত