জিনানের মুগ্ধতার রেশ যেন কাটতেই চাচ্ছেনা। স্বপ্নার মুখটা যেন এখনো চোখের সামনে ভাসছে। জিনান নিজেকে বুঝানোর চেষ্টা করলো অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে এভাবে ভাবা ঠিক হচ্ছেনা। কিন্তু কিছুতেই স্বপ্নাকে নিজের ভাবনা থেকে বের করতে পারছেনা। বারবার মনে হচ্ছে এমন একজনেরই তো খোঁজে ছিলো সে। জিনান দোতলা থেকে নেমে স্বপ্নাদের দরজায় নক করলো। দরজা খুললো ইসমাইল হোসেন। ইসমাইল হোসেনকে দেখে জিনান বললো,
-ভাই লাইটারটা দিন তো। সিগারেট জ্বালাবো লাইটারটা খুঁজে পাচ্ছিনা।
–আসেন ভেতরে আসেন। জিনান সোফায় বসতেই ইসমাইল হোসেন বললো,
–বুঝলেন ভাই বাসা পাল্টানোর মতো ঝামেলা কিছু নেই। বিয়ের আগে এই ঝামেলা ছিলোনা। ট্রান্সফার হলে একটা মেসে দেখে উঠে পরলেই হতো। বউ নিয়ে তো আর মেসে ওঠা যায়না।
ইসমাইল হোসেন কি বলছেন সেদিকে কোন খেয়াল নেই জিনানের, তার চোখ খুঁজছে স্বপ্নাকে। স্বপ্না ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী। ইসমাইল হোসেন জিনানের কলিগ। দুমাস আগে বিয়ে করেছেন তিনি। দুদিন আগে অফিসে বসে গল্প করার সময় ইসমাইল হোসেন বলছিলেন তার একটা ভাড়া বাসা দরকার। স্ত্রীকে সাথে নিয়ে আসবেন। জিনান বাসার নিচতলা ভাড়া দেয়ার জন্য ভাড়াটে খুঁজছিলো। ব্যাস জিনান নতুন ভাড়াটে আর ইসমাইল হোসেন নতুন বাসা পেয়ে গেলেন। এ বাসাটা জিনানের বাবার টাকায় করা। নাহলে তাদের যা বেতন, সে বেতনে দোতলা বাসা করা তো পরের কথা। ভাড়া বাসা নেয়ার আগেও কয়েকবার ভাবতে হয়। যেমনটা হয়েছে ইসমাইল হোসেনের ক্ষেত্রে। বেচারা পঁয়ত্রিশ পার করে বিয়ে করার সাহস দেখিয়েছেন। এতো দীর্ঘ যৌবন একা পার করার পরে পত্নী সুখ পেয়েও ছয় মাস সময় নিয়েছেন স্ত্রীকে নিজের কাছে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিতে।
ইসমাইল হোসেন কথা বলেই যাচ্ছে জিনান চুপচাপ বসে আছে। এমন সময় স্বপ্না ঘরে ঢুকলো। চুলগুলো খোপা করে রেখেছে। কয়েকটা চুল কানের পাশ দিয়ে গালে লেপ্টে আছে। শাড়ির আঁচল কোমরে পেঁচানো তবুও কোমরের একটা অংশ দেখা যাচ্ছে। স্বপ্নার বয়স কতো হবে আঠারো কি উনিশ। জিনানের মনে হলো ইসমাইল হোসেনের সাথে স্বপ্নাকে একদম মানায় না। ইসমাইল হোসেন স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললো,
–এই লাইটারটা এনে দাও তো।
স্বপ্না লাইটার এনে টেবিলের উপর রাখলো। জিনান লাইটারটা নিয়ে সিগারেট ধরালো। স্বপ্না জিনানের সামনে বসতে বসতে বললো,
–সিগারেট খাওয়া কিন্তু ভালো না। আমি মোটেও সিগারেট খাওয়া পছন্দ করিনা। জিনান মুচকি হেসে সিগারেটটা নিভিয়ে বললো,
-ভাবি যখন অপছন্দ করে তখন নাহয় খেলাম না। জিনানকে সিগারেটটা নেভাতে দেখে স্বপ্না বললো,
–ওমা আমি তো এমনি বললাম।
জিনান এক দৃষ্টিতে স্বপ্নার দিকে তাকিয়ে আছে। জিনান চেষ্টা করছে না তাকানোর কিন্তু দৃষ্টি ফেরাতে পারছেনা। স্বপ্নার রূপে এক ধরণের সম্মোহিত করার শক্তি আছে।
রাতে জিনানের ঠিকমতো ঘুম হয়নি। রাত জেগে সে স্বপ্নার কথা ভেবেছে। স্বপ্না যদি তার স্ত্রী হতো তাহলে কি এমন ক্ষতি হতো। স্বপ্নার মতো স্ত্রী থাকলে পুরো জীবন একরাশ মুগ্ধতা আর ভালোবাসা দিয়ে কাটিয়ে দিতে পারতো সে। ইসমাইল হোসেনকে নিয়ে জিনানের হিংসা হচ্ছে। লোকটা ভাগ্যবান। ভাগ্যবান না হলে এ বয়সে এসে এতো রূপবতী স্ত্রী পেতোনা। কেউ একজন দরজা ধাক্কাচ্ছে। জিনান দরজা খুলে স্বপ্নাকে দেখতে পেলো। স্বপ্না মনে হয় সকাল সকাল গোসল সেরেছে। চুলগুলো ভেজা। কালো রঙের একটা শাড়ি পরেছে। স্বপ্না বললো,
–ভাইয়া ছাদে কাপড় শুকাতে দিবো। চাবিটা দিবেন? জিনান ছাদের চাবিটা এনে স্বপ্নার হাতে দিয়ে বললো,
-চাবিটা আপনার কাছে রেখে দিন।
–অফিস যাবেন না?
-হুম যাবো…
জিনান খেয়াল করলো স্বপ্নার প্রতি সে দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কারনে অকারনে নানা অযুহাতে নিচতলায় যাচ্ছে শুধু মাত্র স্বপ্নাকে দেখার জন্য। বিকালে অফিস শেষে জিনান সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইরে আড্ডা দিতো। স্বপ্নারা এ বাসায় ওঠার পর থেকে জিনান অফিস থেকে সোজা বাসায় চলে আসে। রোজ বিকেলে স্বপ্না যখন ছাদে আসে জিনান ছাদের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে থাকে। জিনান বুঝতে পারছে সে যা করছে সেটা মোটেও ঠিক না কিন্তু স্বপ্নার প্রতি দুর্বলতা সে কিছুতেই কাটাতে পারছেনা। স্বপ্না মন খারাপ করে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। আজ সকালে ইসমাইল তার সাথে রাগারাগি করেছে। তার তেমন দোষ ছিলোনা। সে তো ইচ্ছা করে তরকারিতে লবন বেশি দেয়নি। ইসমাইল তরকারি মুখে দিয়েই থু থু করে ফেলে দিয়ে বলেছে,
–রান্নার সময় তোমার মন কোথায় থাকে। কি রেঁধেছো এটা। ইসমাইল অফিস যাওয়ার সময় স্বপ্না টিফিন বক্স এগিয়ে দিতেই ইসমাইল রুক্ষ গলায় বলেছে,
–থাক লাগবেনা। এটা কি খাওয়া সম্ভব। অফিসের ক্যান্টিনে কিছু খেয়ে নিবো। সবাইকে ছেড়ে অন্য এক শহরে যেই মানুষটার হাত ধরে এসেছে সেই মানুষটাই যদি তার সাথে এমন ব্যবহার করে তাহলে সে থাকবে কিভাবে। স্বপ্নার কান্না পাচ্ছে।
স্বপ্নার মনে হলো কেউ একজন ছাদে এসেছে। কিন্তু এ বাড়িতে তো সে একাই থাকে। স্বপ্না দ্রুত পেছন ফিরে তাকালো। জিনান দাঁড়িয়ে আছে। স্বপ্নার মুখের দিকে তাকিয়েই জিনান বুঝতে পারলো কোন কারনে স্বপ্নার মন খারাপ। জিনানকে দেখে স্বপ্না ছাদ থেকে চলে যাচ্ছিলো। জিনানের কথা শুনে স্বপ্না থমকে দাঁড়ালো,
-আপনার কি মন খারাপ? জিনানের কথা শুনে স্বপ্না অবাক হয়ে বললো,
–কেন?
-না আপনার মুখ দেখে মনে হলো আপনার মন খারাপ।
–না আমি ঠিক আছি। আপনি অফিস যাননি?
-শরিরটা ভালো না। তাই যাইনি।
–কি হয়েছে?
-মনে হয় জ্বর এসেছে।
–ও…
স্বপ্না ছাদ থেকে চলে গেলো। জিনান কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে নিচে নামলো। দরজা ধাক্কানোর শব্দে স্বপ্না দরজা খুলে দেখলো জিনান দাঁড়িয়ে আছে। জিনান বললো,
-আপনার কাছে জ্বরের অষুধ আছে?
–জ্বি… দিচ্ছি। স্বপ্না অষুধ নিয়ে এসে দেখলো জিনান সোফায় বসে আছে। কিন্তু সে তো ভেতরে আসতে বলেনি। স্বপ্নাকে দেখে বললো,
-সকালে নাস্তা করা হয়নি। খালি পেটে অষুধ খাওয়া কি ঠিক হবে?
–আচ্ছা বসুন আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। স্বপ্না মাংস আর রুটি এনে দিলো। জিনান খাবার মুখে দিতেই বুঝতে পারলো তরকারিতে লবন বেশি হয়েছে। তবুও পুরো খাবারটা শেষ করে হাসি মুখে বললো,
-বাহ্ আপনার হাতের রান্না তো চমৎকার।
–হয়েছে, মিথ্যা প্রশংসা করতে হবেনা। তরকারিতে লবন বেশি হয়েছে। সেটা নিয়ে সকালে কথাও শুনেছি।
-ও আচ্ছা এ কারনে মন খারাপ।
স্বপ্না কথার জবাবে শুষ্ক হাসি দিলো। ঘরে আসার পর থেকে স্বপ্নার মলিন মুখটা জিনানের চোখে ভাসছে। এমন একটা মেয়েকে কেউ কিভাবে কঠিন কথা বলতে পারে। আসলে যে যা পায় তার কদর বুঝেনা। জিনানের ঘুম ভাঙ্গলো বিকালে। ঘুম ভাঙ্গার পর থেকে দু ধরনের অনুভুতি কাজ করছে তার ভেতর। এক ধরনের সুখ আবার এক ধরনের চাপা কষ্ট। জিনান একটা স্বপ্ন দেখেছে। স্বপ্নে স্বপ্না আর সে স্বামী স্ত্রী। স্বপ্না কালো পাড়ের সাদা শাড়ি পরেছে। স্বপ্নাকে খুব খুশি খুশি লাগছে। স্বপ্না আয়নার সামনে বসে সাজগোজ করছে। জিনান বিছানায় শুয়ে আছে। স্বপ্না জিনানের দিকে তাকিয়ে বললো,
–এই তুমি কতোক্ষন ঘুমাবে বলো তো। দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। ওঠো জিনান কথার জবাব না দিয়ে স্বপ্নার দিকে তাকিয়ে আছে। স্বপ্না বিরক্তির স্বরে বললো,
–কি শুরু করলে বলো তো। বলছি যে দেরি হচ্ছে। কথা কি তোমার কানে যাচ্ছেনা। এই ওঠো আর শুয়ে থাকতে হবেনা।
কথাটা বলে স্বপ্না জিনানের কাছে এসে জিনানের হাত ধরে টানতে শুরু করলো। জিনান স্বপ্নার হাতে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো। ঠিক এই সময়টায় জিনানের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। স্বপ্নটার কারনে জিনান এক ধরনের সুখ অনুভব করছে আবার যখন মনে হচ্ছে স্বপ্না অন্যকারো স্ত্রী তখন এক ধরনের চাপা কষ্ট হচ্ছে। জিনান বুঝতে পারছেনা তার মনের মধ্যে কি চলছে। সে কি স্বপ্নার প্রেমে পরেছে?
সন্ধ্যায় ইসমাইল হোসেন এসে জিনানকে ডিনারে দাওয়াত করে গেছেন। গ্রাম থেকে নাকি তার মা আর বোন এসেছে। জিনানের সামনে যেই মহিলা বসে আছেন তিনি ইসমাইল সাহেবের মা। জিনান বাসায় ঢুকার পর থেকে এই মহিলা তার বিয়ে নিয়ে উঠে পরে লেগেছেন। জিনান কেন বিয়ে করছেনা, কেমন মেয়ে পছন্দ এসব কথা বলে কান ঝালাপালা করে দিয়েছে। এর মধ্যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজের মেয়ের প্রশংসা করেই যাচ্ছেন। জিনান বুঝতে পারছে এই মহিলা তাকে মেয়ে জামাই বানাতে ইচ্ছুক। কিন্তু তার মেয়েকে দেখার পর জিনান মনে মনে বলেছে, তুই যা খুশি বল কিন্তু আমার মন গলাতে পারবিনা। এই ট্রাক্টরের চাকাকে আমি মরে গেলেও বিবাহ করবেনা। মহিলা কথা বলার পাশাপাশি আরেকটা কাজ করছেন। ছেলের বউয়ের কাজের ভুল ধরছেন। চায়ে চিনি হয়নি, সিঙ্গারা ঠিকমতো ভাজা যায়নি, মাথায় ঘোমটা নেই কেন, কোমর দেখা যাচ্ছে কেন। জিনান একবার ভাবলো মহিলাকে বলবে,
-এভাবে তার ভুল না ধরে তাকে একটু সাহায্য তো করতে পারেন। অথবা আপনার মেয়ে যে দুহাতে দুটো সিঙ্গারা নিয়ে খাচ্ছে তাকে তো বলতে পারেন তার ভাবিকে কাজে একটু সাহায্য করতে। জিনান বলতে গিয়েও কিছু বলতে পারলোনা। যেখানে ইসমাইল হোসেন স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে কিছু বলছেন না সেখানে সে বলতে পারেনা। সে বাইরের মানুষ। বাইরের মানুষদের ঘরের বউদের পক্ষে কথা বলতে নেই। এতে দোষ হয়। অন্য কারো না ঘরের বউয়ের দোষ। জিনান এই মহিলার বকবকানি থেকে রক্ষা পেলো যখন খাবার টেবিলে ডাক পরলো। সবাই খেতে বসলো। কিন্তু স্বপ্না বসলোনা। জিনান স্বপ্নার দিকে তাকিয়ে বললো,
-ভাবি আপনিও বসুন। স্বপ্না ক্লান্তি মুখে হাসি এনে বললো,
–আমি পরে খাবো। আপনারা খেয়ে নিন।
জিনান লক্ষ্য করলো ইসমাইল হোসেন নিজেও খেতে বসেছেন অথচ স্ত্রীকে বসতে বলছেন না। খাওয়া শেষে করে জিনান নিজের ঘরে চলে এসেছে। কিছুক্ষন পরে নিচতলা থেকে চেঁচামেচির শব্দ আসতে শুরু করলো। জিনান নিচে নেমে দেখলো বাসার দরজাটা খোলা। দরজা দিয়ে ঢুকলেই দেখলো ইসমাইল হোসেন স্বপ্নার গালে চড় বসিয়ে দিলেন। চেঁচামেচি যেন মুহূর্তেই থেমে গেলো। জিনান এগিয়ে গিয়ে ইসমাইল হোসেনের হাত ধরে বললো,
-এটা কি করছেন। মাথা ঠিক আছে আপনার? স্বপ্না ঘরে গিয়ে একটা ব্যাগ হাতে বের হলো। ইসমাইল হোসেন স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
–কোথায় যাচ্ছো? স্বপ্না কোন কথা না বলে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো। ইসমাইল হোসেনের মা বললেন,
-মায়ের রক্ত শরিরে, পালাবেনা তো কি করবে? তেজ দেখছো মেয়ের।
জিনান স্বপ্নার পেছন পেছন বেরিয়ে আসলো। কিছুদূর এগিয়ে জিনান স্বপ্নার হাত চেপে ধরলো। স্বপ্না এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
–হাত ধরছেন কেন?
-সরি। এতো রাতে কোথায় যাচ্ছেন?
–জানিনা।
-ঘটনা কি ঘটেছে জানতে পারি? স্বপ্না কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
–আমার শাশুড়ি যখন থেকে জানতে পেরেছেন আমার মা আমার বাবাকে রেখে অন্য কারো সাথে চলে গেছে তখন থেকে তিনি কথায় কথায় মায়ের প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে আসেন। আজ তিনি মাত্রা ছাড়িয়ে ফেলেছিলেন বলেই কথার জবাব দিয়েছিলাম। বাকিটা আপনি নিজেই দেখেছে। জানেন প্রতিটা মেয়ে চায় তার স্বামী তাকে বুঝবে। তার একজন ভালো বন্ধু হবে। ইসমাইল কেমন যেন। আমাকে সময় দেয়না। আমাকে বুঝতে চেষ্টা করেনা। অল্পতেই রাগারাগি করে। যখন তার মা বোন আমাকে কথা শোনায় তখন সে চুপ করে থাকে। তাকে কিছু বললে বলে, মুরুব্বিদের সব কথা ধরলে হয়না। কিন্তু আমার যে খারাপ লাগে।
-আচ্ছা আপনি এতো কষ্টের পরেও এ সংসার করছেন কেন?
–মানে?
-ইসমাইলকে ছেড়ে দিন।
–কি বলছেন এসব?
-দেখুন আমি যা বলছি ভেবেই বলছি। আমি আপনাকে ভালোবাসি। প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই ভালোবাসি। আপনি ইসমাইলকে ছেড়ে দিন। আমি আপনাকে বিয়ে করবো। আপনাকে অনেক সুখে রাখবো।
জিনান নিজের কথা শেষ করে স্বপ্নার হাত ধরলো। স্বপ্না নিজের হাত ছাড়িয়ে জিনানের গালে চড় বসিয়ে দিলো। স্বপ্নার চলে যাওয়ার সময় পেছনে যাওয়ার সাহস করেনি জিনান। নিজের বাসায় ফিরে দেখলো ইসমাইল হোসেন আর তার মায়ের মাঝে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। জিনান দোতলায় নিজের ঘরে চলে আসলো। স্বপ্নার প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারছেনা সে।
জিনান বারান্দার চেয়ারে বসে আছে। টিনের চালে হালকা হালকা বৃষ্টি পরছে। পাশের ঘর থেকে পুরুষ কন্ঠে খুব কুরআন তিলাওয়াতের সুর শুনতে পাচ্ছে সে। জিনান ইসমাইল হোসেনের কাছে স্বপ্নার বাবার বাসার ঠিকানা নিয়েছে। ইসমাইল হোসেনকে বলেছে, স্বপ্নাকে বুঝিয়ে নিয়ে আসবে। সত্যি বলতে সে এসেছে স্বপ্নাকে দেখতে। স্বপ্নাকে এটা বুঝাতে সে স্বপ্নাকে কতোখানি ভালোবাসে সেটা। স্বপ্না তাকে বসার জন্য বারান্দায় চেয়ার বের করে দিয়ে রান্নাঘরে গেছে। যেই লোকটা কুরআন তিলাওয়াত করছেন তিনি নিশ্চই স্বপ্নার বাবা। স্বপ্নার বাবা ঘর থেকে বের হয়ে দেখলেন অতি সুদর্শন এক যুবক বসে আছে।জিনান স্বপ্নার বাবাকে দেখে সালাম দিলো। স্বপ্নার বাবা জিজ্ঞাসা করলেন,
–আপনি ইসমাইলের কে হন?
-বন্ধু…
–ও আচ্ছা। ইসমাইল আসলোনা যে?
-এমনি। বাসায় আর কাউকে দেখছিনা যে।
–স্বপ্নাকে বিয়ে দেয়ার পর থেকে একাই থাকি।
-রান্নাবান্না।
–সবকিছু নিজেই করি। বহুদিনের অভ্যাস। স্বপ্না জিনানকে ডাকলো,
–এদিকে আসুন। জিনান এগিয়ে যেতেই স্বপ্না বললো,
–নাস্তা দিয়েছি খেয়ে চলে যান।
-স্বপ্না তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি। আমি জানি তুমি সুখে নেই। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়োনা।
–আমার বাবাকে দেখেছেন? আমার মা প্রায় পনেরো বছর আগে আপনার মতো একজন মানুষের কথা বিশ্বাস করে তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। আমার মা হয়তো সুখে আছেন কিন্তু এই মানুষটা এখনো তাকে ভুলতে পারেননি। আপনি কি চাচ্ছেন আমিও আমার মায়ের মতো করি। হ্যাঁ ইসমাইলের প্রতি আমার অনেক অভিযোগ রয়েছে তারমানে এটা না তাকে ছেড়ে আমি চলে যাবো। একটা সম্পর্ক ভাঙ্গার জন্য যেমন অনেকগুলো কারন থাকে ঠিক তেমনি সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখার জন্যেও অনেকগুলো কারন থাকে। আপনি চলে গেলে আমি খুশি হবো।হঠাৎ স্বপ্নার বাবার কণ্ঠ শোনা গেলো,
-মা স্বপ্না জামাই এসেছে।
জিনান চলে আসার আগে ইসমাইল হোসেনের দিকে তাকালো। কিছু মানুষ সত্যি অনেক ভাগ্যবান হয়। এমন মানুষ দেখলে হিংসা হয় আবার তাদের জন্য আফসোস হয়। কারন তারা নিজের ভাগ্যের কদর করেনা।
ইসমাইল হোসেন জিনানের বাসা ছেড়ে দিয়েছে। জিনান কারন জিজ্ঞাসা করলে বলেছে, স্বপ্নার বাসাটায় মন টিকছেনা। জিনান বারান্দায় বসে সিগারেট জ্বালিয়েছে। পাশের চেয়ারটায় একটা মিষ্টির প্যাকেট। ইসমাইল হোসেন এই মাত্র দিয়ে গেলো। ইসমাইল হোসেন বাবা হতে চলেছে সেই খুশিতে। জিনান বারান্দা থেকে স্বপ্নার দিকে তাকিয়ে আছে। স্বপ্না রিকশায় বসে আছে। স্বপ্না জানে জিনান বারান্দায় দাঁড়ানো তারপরেও একবারের জন্য বারান্দার দিকে তাকায়নি। জিনান মিষ্টির প্যাকেটটা ছুঁড়ে ফেললো। তার কষ্ট হচ্ছে। স্বপ্নাকে সে হয়তো সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে।।