কে আপনি?কাকে চাই?
-ভাল ভাবে চোখ কচলে দেখলাম এটা ১২ নম্বর বাসা তো।
-হা করে কি দেখছেন কি চাই
এখানে হুম?
-আরও একবার চোখ কচলে সামনে দাড়িয়ে থাকা রমনীটিকে দেখালাম।
-স্ট্যাটু হয়ে দাড়িয়ে আছেন কেন?
-আমি কি হ্যালুসিনেশনের ভিতর আছি।
-আশ্চর্য তো।
-আশ্চর্য মানে অষ্টমাচার্য আমাকেই বলছ তুমি কে?
-হ্যা কে আপনি?
-হে খোদা এইদিনটাও দেখতে হল নিজের বউ ও আমায় চিনতে পারছে না।
-এই যে মিষ্টার কে আপনার বউ
এখানে কোন বউ থাকেনা।
-এটা ১২ নাম্বার বাসা তো?
-হ্যা।
-তুমি দিশা তো?
-হ্যা।
-আল্লাহ আমারে উঠায় নাও।
-এত সহজে তুমি উঠবে না।
-দেখি সাইড দাও ভিতরে ঢুকব।
-না ভিতরে ঢোকা যাবেনা।
-আমার বাসা আমার সব আমি ভিতরে ঢুকতে পারব না কেন?
-সে কৈফিয়ত তোমাকে দিব কেন?
-দিশা কি হচ্ছে কি?
-আমারও একি প্রশ্ন কি?
-দেখ দিশা আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।
-আমিও রেগে আছি।
-মানে কি?দেখ এভাবে এখানে দাড়িয়ে ঝগড়া করলে সবাই কি বলবে।
-যা বলে বলুক তোমার আজ ভিতর ঢোকা হচ্ছেনা।
-কিন্তু কেন?
-আবার জিজ্ঞাসা করছ কেন নির্লজ্জ একটা।
-ধুর সেই কখন থেকে হাবিজাবি বলে যাচ্ছ আসল কথাটা বল তো।
-হ্যা আমি ভাল কথা বললে তো খারাপ শোনা যায় বাসের মধ্যে যখন আরেকটা মেয়ে বাবু, সোনা বলে ডাকে তখন তো ভালই উত্তর দাও।
-কি বলছ এসব মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।
-বুঝতে পারছ না?না না বোঝার ভান করছ?কে মেয়েটা?যাও তার কাছে।
-মানে কি?কোন মেয়েটা কার কাছে যাব।
-ন্যাকা সেঁজ না তো।
-দেখ দিশা তোমার এই হাবিজাবি কথা শোনার কোন টাইম আমার নেই ভেতরে যেতে দাও।
-দিব না।এত রাগ আমাকে দেখাবে না যাও ওই মেয়েটার কাছে।
-কোন মেয়েটা বলবা তো?
-কেন আমার সাথে যখন ফোনে কথা বলছিলে পাশ থেকে বাবু এটা খাও ওটা খাও কে বলছিল তুমিও তো সাড়া দিচ্ছিলে।
-উফফ দিশা তুমি পার বটে আরে ওকে আমি চিনিনা একসিটে পাশাপাশি বসে এসেছি ব্যাস এটুকু।
-না চিনলে কেউ কাউকে বাবু বলে ডাকে?
-ও ফোনে ওর প্রেমিকের সাথে কথা বলছিল হয়ত।
-প্রেমিক হ্যা ঠিকই বলেছ আর সেই প্রেমিকটা হচ্ছ তুমি।
-মানে কি?
-মানে বুঝনা ন্যাকামি করছ কতদিন থেকে চলছে এসব বাড়ি যাওয়ার নাম করে তুমি ওই মেয়েটার সাথে ছি ছি ছি।
-দিশা বিশ্বাস কর সত্যিই আমি ওই মেয়েটাকে চিনিনা।
-থাক না আবির এই তুমি আমাকে ভালবাস।
-দেখ আমি সত্যিই তোমাকে ভালবাসি দিশা একটা মিথ্যেকে আকড়ে ধরে ভুল বুঝনা।
-থাক ওই পাপী মুখে ভালবাসি বলবেনা একদম।
-ঠাশ…..
-তুমি আমায় মারলে আবির।
-হ্যা বাধ্য হলাম কারন তুমি ভুলের মোহে জড়িয়ে আছ।
-এখানে কোনটা ভুল আমাদের বিয়ে আমাদের ভালবাসা।
-উফফ দিশা দেখ মাথাটা গরম হয়ে আছে সরে যাওতো ভাল লাগছেনা।
-দাড়াও আবির বলে যাও কোনটা ভুল ওই মেয়েটা না আমি।
-জানিনা।(বলেই পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকলাম)
-কেঁদে ফেলেছে দিশা পিছু পিছু আসছে।
ব্যাগটা রেখেই ফ্রেশ হতে ঢুকলাম। কি মহাঝামেলায় ফেসে গেলাম রে বাবা।আদরে আদরে একেবারে মাথায় তুলেছি।কতবার বলছি মেয়েটাকে চিনিনা চিনিনাতবুও নাছোড়বান্দা।দিশা আমার স্ত্রী। ছয়মাস হল বিয়ে করেছি।শান্তিতেই আছি বলতে হবে কারন মেয়েটা অনেক ভাল। ভাল বলতে আচার আচরন ধার্মিকতা সবদিক থেকে সমান।তবেএই গুনটি এই ছয়মাসে একবারও দেখিনি যেটা আজ দেখলাম সন্দেহ।
প্রতিটা মেয়ে মাত্রই সন্দেহ গুনটা থাকবেই তবে আজ মায়ারটা প্রকাশ পেল।কি সাংঘাতিক মেয়ে এত রেগে গেছে যে আমাকে নাকি চিনেনা।রাগার যে যথেষ্ট কারন আছে সেটা এখন বুঝতে পারছি। আব্বুকে দেখে দেশের বাড়ি থেকে ফিরছি বাসে আমার পাশে এক রমনী বসে পড়ল।যদিও জানালার পাশের সিটটা আমার ছিল তবুও মিষ্টি করে ভাইয়া ডাকল ছেড়ে দিলাম।কিছুদূর বেশ ভালই আসলাম।মাঝখানে শুরু হল মেয়েটার ফোনালাপ বাবু কি কর,বাবু ওটা করেছ এটা করেছ।কান মাথায় যন্ত্রনা উঠিয়ে দিচ্ছে।হঠাৎ করে আমার ফোনটাই বেজে উঠল। দিশার ফোন রিসিভ করে কথা বলছি বাসের হেল্পার এসে টিকিট চেক করছে।আমার কাছে এসে দেখতে চাইছে তবে ওর কন্ঠটা তেমন শোনা যাচ্ছেনা। এবার মেয়েটি পাশ থেকে বলল বাবু একটা উমমমমা দাও।
হেল্পার টিকিট চাইছে আমি বের করে বললাম নাও।প্যাচটা লেগে গেছে।মেয়েটা এবার বলছে বাবু তোমারটা দাও।হেল্পার টিকিটটা ফেরত দেওয়ার জন্য বলল স্যার নেন আমি বললাম জ্বি।সব মিলিয়ে দিশা হেল্পারের কোন কথাই শোনেনি শুনেছে শুধু মেয়েটার কথা আর আমার দেয়া উত্তরগুলো যা কিনা হেল্পারকে দিয়েছি।আরও এরকম কিছু লুতুপুতু কথা শুনে বউ যে আমার রেগে আগুন হয়ে ফোন কেটেছে আমি বোকা টের পাইনি। বাসায় এসেই তো স্বচক্ষে দেখলাম আমাকেই বলে কি চাই?ওই মেয়েটার উপর কি যে রাগ হচ্ছে আমার সুখের সংসারে বাত্বি জ্বালায় দিল। পাব্লিক প্লেসে কি দরকার বাবু বাবু বলে চিল্লানোর।সবকিছুর তো একটা প্রাইভেসি থাকা দরকার। এদিকে রাগের মাথায় বউটাকেও দিয়েছি একটা থাপ্পড়।আর দেরি করলে চলবেনা বেরোতে হবে ওয়াশরুম থেকে কি করছে বউটা আল্লাহই জানে।
-কি করছ দিশা?
-দেখতেই পারছেন কাপড় সাঁজাইতেছি।
-হ্যা কিন্তু আলমারিতে না সাঁজিয়ে ব্যাগে কেন?
-আপনার রাস্তা পরিষ্কার করে দিতে চাই।
-মানে কি?
-বাপের বাড়ি চলে যাব খুব সুখে থাকেন আপনারা।
-দিশা আমাকে বোঝার চেষ্টা কর আমি তখন হেল্পারের কথার জবাব দিয়েছি যা কিনা ওই মেয়েটার কথার সাথে মিলে গেছে।
-থাক না আবির।
-না থাকবে না তুমি পাগলামো করতে পারবে না।
-আর একটা দিন সহ্য কর পাগলীর পাগলামো।
-দিশা আমার চোখের দিকে তাকাও তাকাও বলছি।
-পারব না।
-প্লিজ দিশা তুমি বিশ্বাস করনা আমায়,আমি বলছি তুমি ভুল পথে হাটছ।
-ছাড় আমাকে ওটা না হয় ভুল মিথ্যে ছিল কিন্তু তোমার দেওয়া থাপ্পড়টা।
-ওটা রাগের মাথায় কেন যে করলাম জানিনা।
-রাগের মাথায় কবে খুন করে ফেলবে।
-দিশা…..
-ধমক দিয়ে লাভ নেই আমি চলে যাব বাপের বাড়ি।
-দিশা এমন করনা প্লিজ।
-টেবিলে খাবার দেওয়া আছে খেয়ে নিও।
-খেয়ে নিব মানে তুমি খাবেনা।
-না।
-কেন?
-ক্ষুধা নেই।
-এত রাগ তোমার?
-নাহ রাগ করতে জানিনা আমি।আবির শোন..
-হুম বল।
-কালই তো চলে যাব আজকের রাতটা এখানে থাকব একবিছানায় শুতে পারবনা তাই যদি ওই রুমটাতে গিয়ে থাক।
-কিন্তু…
-প্লিজ।
-খেয়ে তো নাও?
-খাব না প্লিজ জোর কর না।
মেয়েটা এতটা রেগে যাবে আশা করিনি।সামান্য একটা কারনে এতবড় শাস্তি।সত্যি নিজের প্রতিও ঘৃনা হচ্ছে কেন যে মারতে গেলাম।এতটা রেগে আছে যে আমার সাথে এক ঘরেই থাকবে না।ভাবতে গেলে বুকটা ফেটে যাচ্ছে সকালেই নাকি আমার হৃদয়ের একটা অংশ হারিয়ে যাবে।আমি আর কিছু ভাবতে পারছিনা। রাতে আমিও খাইনি।পাশের রুমটাতে এসে শুয়ে পড়েছি।বাইরে ভীষন বৃষ্টি হচ্ছে ঝুম বৃষ্টি।বৃষ্টির দিনে নাকি কেঁদে শান্তি পাওয়া যায় আমিও পাচ্ছি এক অনাবিল শান্তি।আচ্ছা ও তো কখনও একা থাকেনি আজ পারবে।একটু যাব কি। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।নাহ গেলে যদি রাগ করে।আজ ঘুমটাও চলে গেছে কেউ নেই সাথে বৃষ্টি ফোঁটা ছাড়া।পাশ ফিরে ভাবছি।দুটো ঠান্ডা হাত বুকের উপর ছোঁয়া দিল। কিছুটা শিউরে উঠলাম।কিছু বলতে যাব বুকের উপর ঠান্ডা একটা শরীর ফুঁপে ফুঁপে কাঁদছে।
-তুমি এমন কেন?(দিশা)
-কেমন?
-তুমি জান আমি একা থাকতে পারিনা তাহলে কিভাবে একা রেখে ঘুমাচ্ছ।
-তুমিই তো বললে।
-বলেছি বলে সব কথা শুনবে।
-হ্যা মানে না।
-আচ্ছা আমি যদি সত্যি সত্যি বাপের বাড়ি চলে যাই কি হবে।
-আমি বাঁচব না।
-আবির l
-হুম।
-একদম বলবে না এই কথাটা।
-তাহলে চলে যেতে চাইছিলে কেন?
-অভিমানে।
-এত অভিমান কেন?
-জানিনা তোমাকে হারিয়ে ফেললে বাঁচবনা আমি।
-আমিও।
-ক্ষুদা লাগেনি?
-হুম তোমার?
-হুম চল খাইয়ে দিবে।
-না তুমি খাইয়ে দিবে।
-আচ্ছা দুজন দুজনকে খাইয়ে দিব।
-হুম চল।
হঠাৎ করে কিছু আশা কিছু ভালবাসা ধরা দিলে সত্যিই কেমন সবকিছু গুলিয়ে যায়।খুব জোরে বলতে ইচ্ছে হয় হ্যা এটাই তো আমি চেয়েছিলাম।তোমাক ে ফিরে পেতে।