অফিস থেকে বাসায় ফিরেই দেখি বউ টিভিতে সিরিয়াল দেখছে। আমি চুপচাপ জামাকাপড় খুলতে খুলতে ওকে বললাম
— রান্না করেছো,?( আমি)
— হুম (বউ)
— খেয়েছো??
— তুমি খাইয়ে দেবে না?
— নামাজ পড়েছো সারাদিনে?
— না পড়তে পারিনি।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ইদানিং মেয়েটা নামাজ পড়া ছেড়েই দিছে। মিথ্যা বলা, ফেসবুক ঘাটা, টিভি দেখে সময়য় পার করে। কেন নামাজ পড়োনি বললে নানারকম মিথ্যে কারণ দেখায়। আসলে ভালোবাসার মানুষকে মারধোর শাসন না করে তার কাছ থেকে ভালোবাসাটটুকু কেড়ে নিলেই সে বুঝতে পারে তার ভূলটা কোথায় ছিলো । আমিও এখন থেকে তাই করবো। বাথরুম।থেকে ফ্রেশ হয়ে বাসার নিচে দোকানে গিয়ে সিগারেট কিনে ঘরে এসে ধরালাম। সঙ্গে সঙ্গে সিগারেটের গন্ধে বউ লাফিয়ে এলো
— তুমি সিগারেট খাচ্ছো?
— হ্যা তো??
— তুমি না আমাকে প্রমিস করেছিলে?
— মিথ্যা ছিলো
— তুমি সিগারেট ফেলো বলছি
— বেশি বাড়াবাড়ি না করে চুপচাপ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
— না আমি খাবোনা
— খুব ভালো কথা। আমার একবেলা খাবার বেচে যাবে।
— ও তাই না? তাহলে কালই আমি বাপের বাড়ি চলে যাবো
— যা না।
আটকে রাখছে কে? তুই গেলে তোর জায়গায় আরেকটা মেয়েকে আনবো। এখন সর মুখের সামনে থেকে রাগ দেখিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম। ঘন্টাখানেক পর আবার রুমে ঢুকে দেখলাম বউটা বিছানায় শুয়ে কাদছে। জানি খায়নি। আমিও না খেয়ে বিছানায় মুখ ঘুড়িয়ে শুয়ে পড়লাম কিছুক্ষণ পর
— এই ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাদবি না। (আমি)
— টেবিলের ওপর খাবার রাখা আছে। (কাদতে কাদতে)
— তোর ওই জঘন্য রান্না খাওয়া যায়? আমি সন্ধ্যায় ফেরার সময় হোটেলে খেয়ে এসেছি। কিছুই বললো না। একটু পর বউটা আস্তে করে আমার গায়ে হাত রাখলো আর বললো
— কি হয়েছে তোমার? আমি কি কোনো ভূল করছি?(বউ)
— না তোকে আমার আর ভালো,লাগেনা। তুই বুঝিস না?. আর কতোদিন পুরোনো বউ চালাবো? এবার আমার নতুন চাই।
— তাহলে আমি কি করবো? মরে যাবো?
— হ্যা যা। মরে আমাকে উদ্ধার কর।
এবার হয়তো বাড়াবাড়িই হয়ে গেলো,। ও জোরে কেদে দিলো। কিন্তুু আমি পাত্তা না দিয়ে ঘুমোবার চেষ্টা করলাম। সকাল বেলা ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখেই অফিসে গেলাম। ৯টার দিকে ফোন করলো
— কি হয়েছে? এতো ফোন কিসের? (আমি)
— নাস্তা না করে চলে গেছো কেন? (বউ)
— তোর হাতের খাবার আমার খেতে বমি আসে বমি। এখানে এসে খেয়েছি । আমার সহকারী মুনতাহা নাস্তা করাইছে।
— ওই মেয়ের সাথে তুমি…
— হুম ওকেেআমি পছন্দ করি। ভালোবাসি। আর ফোন দিবিনা সারাদিনে অনেকবার নিষেধ করতেও ফোন করেছে। ম্যাসেজ করেছে। কিন্তুু রিপ্লে করিনি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতেই পাগলি বউটা এসে হাউমাউ করে কেদে দিয়ে পা দুটো জড়িয়ে ধরলো। সত্যি বলতে এবার আমিও কেদে দিয়েছি। তাড়াহুড়ো করে চোখ মুছে ওকে টেনে তুললাম। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমাকে বললো
— অন্য মেয়েকে বিয়ে করার আগে আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলো। আমার ভূলটা কোথায় বলে দাও। ভূল করেছি ধরে মাইর দাও গালি দাও। আমার থেকে ভালোবাসা কেন কেড়ে নিতে চাইছো??
— তুমি এইটুকু ভালোবাসা হারিয়েই এমন হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিছো। কিন্তুু পরকালে যদি আমরা একজন জান্নাতি আরেকজন জাহান্নামি হই তখন আমাকে ছাড়া এই ভালোবাসাকে ছাড়া থাকবে কিভাবে? কিংবা দুজনেই যদি জাহান্নামী হই তবে কি তুমি পারবে এভাবে আমার কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে।তুমি কি শুধু দুদিনের জন্য আমাকে চাও? তুমি চাও না পরকালেও আমরা স্বামী স্ত্রী হয়ে পাশাপাশি থাকি। তুমি কি চাওনা চিরকাল আমরা ভালোবাসার অটুট বন্ধনে আবদ্ধ থাকি? তুমি কি চাওনা আমরা দুজন একসাথে জান্নাতের অকল্পনীয় সুন্দর উদ্যানে আদম-হাওয়ার মতো হাতে হাত রেখে বিচরণ করি? বলো এসব চাওনা তুমি?? বউটা আমার এতোক্ষণে কেদে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। কিন্তুু এবার আমাকে ছোট্ট একটা চিমটি দিয়ে মুচকি হেসেই বললো
— এর জন্য এতো কিছু? হারামি। মুখে বললেই হতো
— সেটা অনেকবার বলেছি। কাজে আসেনি
— ঠিকআছে এখন থেকে যেভাবে বলবে সেভাবেই চলবো। পাচওয়াক্ত নামাজ পড়বো। আর টিভি ফোন এগুলো হাতেও নেবোনা।
— এইতো আমার মিষ্টি বউ
— পামে গলছি না। আজ তোমার খাবার বন্ধ
— ওই আমার খিদা লাগছে খুব
— তো? কাল না চেচিয়ে চেচিয়ে বললে আমার হাতের রান্না জঘন্য । মুখেই দেয়া যায় না। বমি আসে তোমার
— ওটাতো মিথ্যে বলেছি
— ওইজন্যেই এখন না খেয়ে থাক
— ঠিকআছে একরাত ভাত না খেলেও চলবে। আরো একটা স্পেশাল জিনিস আছে তো। আজ রাতটা না হয় উমমমমমাহ (গালে চুমা দিছি)খেয়েই পেট ভরাবো
— you দুষ্টু পাজি ইতর ছাড়ো বলছি শয়তান ভোরবেলা স্বপ্নে দেখছি কেউ একজন আমার কান ধরে টানছে।ঘুম ভেঙেই দেখি এটা আমার বউ হারামির কাম
— ওমাগো ব্যাথা লাগে তো কান ছাড়ো পাজি বৌ
— শয়তান কখন থেকে ডাকছি তোকে?
— জোরে ডাকতে পারোনা?
— কেন ডাকবো? এখন থেকে কান ধরেই টেনে তুলবো। ৫ মিনিটে ফ্রেস হয়ে মসজিদে যাবা।
— হু যাচ্ছি যাচ্ছি।
বউটা ভেংচি কেটে চলে গেলো। আর আমি মুচকি হেসে ভাবতে লাগলাম, আমার তো এমন বউই দরকার যে কিনা রোজ সকালে কান টেনে আমাকে ঘুম থেকে উঠাবে আর নামাজে পাঠাবে।