নতুন বউকে নিয়ে মায়ের কাছে হাজির হয়েছে সাদমান। এসেই বলল, ‘মা! ওকে কাল বিয়ে করেছি। বরণ করে নাও।’ আল্লাহ গোওওও। এ তুই কী শুনাইলি?’ মা তুমি কেঁদো না তো। পরে সব কিছু বলব। এখন ওকে বরণ কর।’ নাদিরা মায়ের পায়ে কদমবুচি করতে যাবে ঠিক তখনই সাদমানের মা পা সরিয়ে নিলেন। নাদিরাকে বরণ করা তো দূরের কথা ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ব্যাঙগের মতো মুখ ফুলিয়ে বসে রইলেন। সাদমান নাদিরাকে রুমে নিয়ে গেল।
‘তুমি বিশ্রাম নাও আর আমি দু কাপ কফি নিয়ে আসছি।’
‘দু কাপ কেন?’
‘কেন আবার? তোমার আর আমার জন্য।’
‘না দু কাপ আনবে না। এক কাপ নিয়ে আসো।’
‘এক কাপ কেন? তুমি খাবে না?’
‘আরে বুদ্ধু এক কাপে দুজন খাবো। তাহলে পেয়ার মহব্বত বাড়বে। বুঝলা।’
‘ওহ তাই নাকি। ঠিক আছে।’
বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সাদমান। সাদমান একটি কোম্পানীতে চাকরী করে। ঢাকায় ওদের বাড়ি। সাদমানের বাবা ছিলেন একজন সরকারী অফিসার। সাদমানের যখন পাঁচ বৎসর তখন সন্ত্রাসীদের হাতে সাদমানের বাবা নিহত হন। বড়লোক হওয়ায় সাদমানকে মানুয করতে সাদমানের মায়ের তেমন কষট হয়নি।
শস্য শ্যামল সবুজ গ্রাম সোনারপাড়া।এই গ্রামেই বেড়ে উঠেছে নাদিরা। মামার কাছেই মানুষ হয়েছে। নাদিরা ছোট থাকতেই ওর মা বাবা মারা যান। এতিম মেয়েটিকে নাদিরার মামা আফজল উদ্দীন বুকে টেনে নেন। প্রথম কয়েকদিন নাদিরার মামি ওকে স্নেহ করলেও উনার ছেলে মেয়ে হবার পর থেকেই ওকে অবহেলা করতে শুরু করেন। ওকে দিয়ে সমস্ত কাজ করাতেন।এভাবেই বড় হয় নাদিরা। নাদিরা অনেক শান্ত মেয়ে। কারো সাথে কটু ভাষায় কথা বলে না। সাদমান কফি নিয়ে আসলো। নাদিরার হাতে দিয়ে বলল, ‘এই নাও কফি।’ আগে তুমি খাও।’ কেন?’ প্রথমে তুমি এক চুমুক খাবে তারপর আমি। এভাবে সবটুকু শেষ করব। ঠিক আছে? ঠিক আছে আমার টুনটুনি।’ এভাবে ওরা কফি খাওয়া শেষ করল। চারদিকে মাগরিবের আজান হচ্ছে। পশু পাখিরা নীড়ে ফিরছে। নাদিরা ওজু করে রুমে আসলো। সাদমানকে শুয়ে থাকতে দেখে বলল, তুমি এখনও শুয়ে আছ? তাড়াতাড়ি মসজিদে যাও।’
‘ভালো লাগছে না।কাল থেকে যাব।’
‘না তা হবে না। এখনই যাবা। জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করো গিয়ে।’
‘প্লিজ নাদিরা।’
‘এসব প্লিয টলিজে কোন কাজে আসবে না। আর হ্যাঁ বুঝেছি তুমি আমার সাথে থাকতে চাও না তাইতো!’
‘মানে?’
‘বারে। আমি যদি জান্নাতে যাই আর তুমি যাবেনা। তা কি হয়?’
‘কী বলছো।’
‘হুম তাইতো নামাজে যাচচ্ছ না। আর আমার মনে হয় তুমি আল্লাহকে ভয় পাওনা।’
‘আমার ভুল হয়ে গেছে। আর নামাজ মিস হবে না। আমি এখনই নামাজে যাচ্ছি।’
‘ঠিক তো?’
‘হ্যা।’ সাদমানকে মসজিদে পাঠিয়ে নাদিরা নামাজ পড়ল। নামাজ পড়ে মায়ের রুমের দরজায় কড়াঘাত করল।
‘মা! ও মা! দরজাটা একটু খুলুন।’
‘কে?’
‘আমি নাদিরা। আপনার বউমা।’
‘তো এখানে কি চাই?’
‘আপনি নামাজ পড়েছেন?’
‘তা কি তোমাকে বলতে হবে?’
‘জ্বি না মা। আপনাকে তাহলে চা করে দেই?’
‘লাগবেনা। যাও এখান থেকে। আমাকে একা থাকতে দাও।’
ঠিক আছে মা। আপনি একা থাকুন। সন্ধার সময় একা থাকলে ভূতে ধরবে, পেত্নীয়ে ধরবে। আপনার ঘাড় মটকাবে।’
মনে মনে ভয় নিয়ে নাদিরার শাশুড়ি বলেন, ‘কিহহ।’ নাদিরা চলে আসল। ইতিমধ্য সাদমানও চলে এসেছে।
‘তুমি এসেছো?’ ‘না তো। আমার আত্মা এসেছে।’ ‘ওহ তাহলে তো ভালো। একটা কথা জানতে চাই।’ ‘কী?’ ‘আপনার আম্মাজান ডলি জুহুরের মতো আল্লাহ গোওওও বলে কাদেন কেন? ‘টুনটুনি পাখি। তুমি আমার মায়ের নাম ধরে কথা বলছো কেন?’ ‘আমি আবার কখন নাম ধরে কথা বললাম। আমি তো সিনেমার ডলি জুহুরের কথা বলছিলাম।’ ‘আরে আমার মায়ের নামইতো ডলি জাহান।’
‘ও আচ্ছা। আমার শাশুড়ি একজন অভিনেত্রী। তাইতো এভাবে কাদেন।’ আস্তে কথা বলো। মা এমনিতে আমাদের উপর রেগে আছেন। যদি এখন তা শুনতে পারেন তাহলে আরো বিগড়ে যাবেন।’ ‘শুনো, উনি তো এখনো দরজা খুললেন না। তুমি গিয়ে একটু ডাকো হয়তো খুলবেন। ‘ঠিক আছে চলো।’ সাদমান মায়ের রুমের দরজায় কড়াঘাত করতেই দরজা খুলে দিলেন। ‘মা। আমি তোমাকে সব খুলে বলতে এসেছি।’ ‘ঠিক আছে বসো।’ নাদিরা তিন কাপ চা নিয়ে আসলো। সাদমান চা খেতে খেতে বলতে শুরু করল।
‘বন্ধুর বড় ভাইয়ের বিয়েতে গিয়েছিলাম সোনারপাড়া গ্রামে। ওই যে আমাদের বাসায় আসতো তানিম তার বড় ভাইয়ের। সন্ধ্যা বেলায় গিয়ে পৌছলাম বিয়ে বাড়িতে। কিন্তুু দুভাগ্য! কবুল বলার আগেই তানিমের বড় ভাই সেখানেই মারা গেলেন।সাদমানের মা মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ‘হায় আল্লাহ তাহলে মেয়েটির কি হলো?”বলছি।শুনো। মেয়েটার মামা অনেক কষট করে বিয়ের আয়োজনটা করেছিলেন। মেয়েটি তখন অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। তানিমের পরিবার মেয়েটিকে অপয়া বলতে লাগল। মেয়েটির কারণেই তাদের ছেলে মারা গেছে।
তানিমের পরিবার চলে আসতে লাগলেন। মেয়েটির মামা তানিমের বাবাকে বললেন, ‘আপনার ছোট ছেলের সাথে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিন।’ তানিমের বাবা জবাব দিলেন, ‘কিহ। ছোট লোক। আমার একটি ছেলেকে খাইছে আবার আরেকটা ছেলেকে খাবে।’ ‘বাচা মরা তো আল্লাহর হাতে। এতে তো মেয়েটার কোন দোষ নেই।’ তবুও তানিমের বাবা শুনলেন না।সবাই যখন চলে যেতে লাগলেন তখন আমি বললাম, ‘মেয়েটিকে আমিই বিয়ে করব।’ তানিম বলল, ‘কি বলছিস সাদমান।’ ‘হ্যা। আমিই বিয়ে করব আপনার ভাগ্নিকে।’ নাদিরার মামা আমার হাত ধরে বললেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো বাবা?’ ‘না মামা। আপনি সব ব্যবস্থা করুন।’
তারপর আমার আর নাদিরার বিয়েটা হয়ে গেল। সেদিন অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় অন্য একজন বন্ধুর বাড়ি থাকতে হলো। তানিমের বাবা তাদের সাথে নেয়নি।’ ‘আমার ভুল হয়ে গেছে বাবা। আমি মনে করেছিলাম এ মেয়েটি তোর গলায় জোর করে বসেছে।’ ‘তাই তো বললাম আমি সব খুলে বলছি। এর আগেই আপনি রাগ করে ফেললেন।’ নাদিরা হু হু করে হেসে ওঠল। ‘মা! আপনার ছেলে গাছ নাকি! আর আমি বান্দর নাকি যে ঝুলে যাব?’ ‘নাদিরা! সেটা মজা করে বলেছিলাম। আর আমার ভুল হয়ে গেছে। আমায় মাফ করে দাও।’ ‘ছিঃ মা। আপনি কি বলছেন।আমি আপনার মেয়ে। আর আপনি কিনা আমার কাছে ক্ষমা চাইছেন।’
এশার আযান হয়েছে। মাথায় শাড়ির আঁচল দিতে দিতে নাদিরা বলল, ‘চলেন মা। আমরা মা মেয়ে একসাথে নামাজ পড়ি আর উনি মসজিদে চলে যাবেন।’ নাদিরার মাথায় হাত বুলিয়ে সাদমানের মা বলেন, “চলো মা।” বিছানা থেকে ওঠে সাদমানও বলল, ‘আমিও মসজিদে চলে যাচ্ছি। আমরা সবাই জান্নাতে একসাথে থাকতে চাই। তাইনা নাদিরা?’ ‘হ্যাঁ।’
সমাপ্ত