বিকেলে একটু ঘুমিয়েছিলাম, হঠাৎ ফোন ভাইব্রেশন করে উঠছে, বিরক্তি সত্বেও ফোন টা রিসিভ করলাম।
– হ্যালো। ওপাশ থেকে মেয়ের কন্ঠে ভেসে এলো, আপনার নাম কি…?? আমি সাধারনত অপরিচিত কাউকে নিজের নাম ও ঠিকানা বলিনা। কিন্তু কেনো যানি সেদিন আমার মুখ থেকে আসল পরিচয় বের হলো।
– আমার নাম সেইফ, আপনি কে??
– আপনি কিসে পড়েন???
– ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। কিন্তু কে আপনি??
– আপনার বাসা কোথায়??
– আজব তো কে আপনি, আমি কি আপনাকে চিনি???
– যেটা বলছি সেটার উত্তর দেন না প্লিজ…।
– আমার বাসা রংপুর।
– আমি আপনাকে চিনি, আমি আপনাকে দেখেছি।
– তাই? তা কই দেখেছেন?
– ঐ যে রংপুর এ শাপলার মোরে কয়েকটা পাথরের সিনারী আছে না সেখানে।
– শাপলা চত্তরের কথা বলছেন??
– হ্যা হ্যা…।
– আপু, আমার বাড়ি রংপুর বিভাগের কোন এক জেলার কোন এক থানায়। আমার থানা থেকে রংপুর ৮৫ কিঃমিঃ দূরে। আর আমি তো কোন দিন রংপুর এ যাই নি তাহলে আমাকে দেখলেন কিভাবে???
– সরি সরি,
আসলে আমি আপনাকে চিনিনা। আমার বাড়ি গাজিপুরে, আমি একবার রংপুরে গিয়েছিলাম। সেখানে শাপলা চত্তর দেখেছিলাম সেই কারনে আপনাকে সেই জায়গার কথা বললাম।
– আচ্ছা আচ্ছা তা আপনার নাম কি??
– আমার নাম সামিহা।
– কিসে পড়েন??
– ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার।
– হম, তা কল দিয়েছেন কেনো??
– আজ আমি মোবাইল কিনেছি। মোবাইল কিনার পর নিয়ত করেছি আমার প্রথম কল যেই ছেলে ধরবে তারসাথে প্রেম করব।
– মানে?? আপনি আমার সাথে প্রেম করার জন্য কল দিয়েছেন??
– হ্যা আমি আপনার সাথে প্রেম করবো I Love You..
– আপনি একটা পাগল, না সরি পাগলি ।।
– হ্যা এই কথা সবাই বলে।
– পাগলের সাথে কথা বলার ইচ্ছা নাই বাই।
একটু রাগ করেই কলটা কেটে দিলাম। এমন পাগল মেয়ে কখনো দেখিনি। এতোদিন জানতাম ছেলেরা মেয়েদের কল করে বিরক্ত করে কিন্তু এখন দেখছি মেয়েরাও।। সারাদিন যেভাবে কাটে সেভাবেই কাটছিলো আমার দিন, কিন্তু কেনো যানি সেই মেয়েটার কথা খুব মনে পরছে। এতো মিষ্টি কন্ঠ, কোন দিন শুনিনি। সারাদিন মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে মনে হয় পাগলিটার প্রেমে পরে গেলাম। সন্ধায় খুব খারাপ লাগছিলো, পাগলিটার কথা শুনার জন্য মনটা ছটফট করছিলো। বাধ্য হয়ে কল দিলাম মেয়েটাকে।
– হ্যালো…।।
– আমি সেইফ।
– হ্যা চিনেছি, পাগলিটাকে কল দিলেন কেনো।
– পাগলিটা মনে হয় আমার মন চুরি করেছে, তাই ফেরত নেওয়ার জন্য কল দিলাম।
– এই পাগলি টা যা নেয় তা তো আর ফেরত দেয় না।
– তাহলে আর কি করা, আপনার মনটা আমাকে দেন আর আমার টা তো আপনার কাছেই আছে।
– হ্যা তা করা যায়।
– তাহলে আমরা মন দেওয়া নেওয়া পর্ব টা শেষ করি।
– কিভাবে???
– I Love You..
– I Love you toooo…
এভাবেই শুরু হয় আমার আর সামিহার প্রেম। দিনের বেশি অংশটাই চলে যেতো তার সাথে কথা বলে। তাকে এতোটাই ভালোবেসে ফেললাম যে তাকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। ওর বাড়ি গাজিপুর আর আমার বাড়ি রংপুর, ওর সাথে দেখা হওয়াটা অসম্ভব ছিলো। কাউকে না দেখে এতো টা ভালোবাসা যায় আগে যানতাম না। মেয়েটা আমাকেও অনেক ভালোবাসতো। আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না।খেতে গেলেও আমি ঘুমাতে গেলেও আমি। আমার সাথে কথা না বলে কিছুই করত না সে। মোবাইলেই তাকে ঘুমিইয়ে দিতে হত আবার মোবাইলেই তাকে খাইয়ে দিত হত, এই রকম ছিলো আমার আর সামিহার সম্পর্ক।
সামিহা একটু জেদি মেয়ে ছিলো। যা বলে তাই করে। নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও জেদ টা কে ঠিক রাখে। আমারো একটা বদ অভ্যাস ছিলো, আমি কোন কিছু তেমন মনে রাখতে পারতাম না। একদিন ফোনে কথা বলার সময় সামিহা তার জন্ম দিনের কথা বলল।সামনে সোমবার তার জন্মদিন। অনেক কিছু প্ল্যান মাথায় ছিলো কিন্তু সোমবারে তার জন্মদিনের কথা ভুলে গেছিলাম। তাকে wish টুকুও করার কথা মনে ছিলো না।
সামিহা সেদিন অনেক মন খারাপ করেছিলো। সে রাগ করে অনেক কথা বলেছিলো। এমন কি কল দিতেও নিষেধ করেছিলো আ্মাকে। ঠিক সেই মহুর্তেই দেখি ফোনটা কেটে গেলো। আমি ভাবলাম রাগ করে মনে হয় কেটে দিয়েছে তাই আবার কল করছিলাম তাকে কিন্তু একি ও তো কল কাটেনি, আসলে আমার ফোনের ব্যালেন্স শেষ। আমি ভাবছিলাম সামিহা নিশ্চয় আমাকে আরো বেশি ভুল বুঝতেছে তাই আমার কাছে থাকা জিপির কার্ড উঠানোর জন্য নাম্বার টিপছিলাম। কিন্তু একি আমার মোবাইল তো হ্যাং হয়ে গেছে। আমার মোবাইল ঠিক করার জন্য কিছু না ভেবে restore করলাম। কিছুক্ষন পর দেখি আমার মোবাইলের মেইন অপশন আমার সামনে।
আমি তারাতারি টাকা ভরে সামিহা কে কল দেবার জন্য contact গেলাম কিন্তু এ কি নাম্বার সব কই, কল লিস্টেও তো নেই !!! আমি ভুলেই গেছিলাম restore দিলে সব নাম্বার ডিলেট হয়ে যায়। আর সামিহার নাম্বার আমার মুখস্থ ছিলো না তাই তাকে কল করার কোনো পথ দেখছিলাম না। আর সামিহা তো অনেক জেদি সে আর কখনো আমাকে কল করেনি। সে দিন রাতে চোখের দুই ফোটা জল ঝরিয়ে নিজেকে বলেছিলাম,তুমি স্বপ্নের মত আমার কাছে এসেছিলে আবার ঠিক স্বপ্নের মতই চলে গেলে।