– ভাইয়া!
– জ্বী বলুন।
– আপনার সাথে আমার আগে কখনো কথা হয়নি। কিন্তু আমি আপনার অনেক বড় একজন ফ্যান।
– হুম জানি। আমার পোষ্ট করা সব গল্পেই আপনার রিএকশন থাকে।
– এক্সাক্টলি।
আপনার লেখা সব গল্পই আমার একাধিকবার করে পড়া। ইনবক্সে নক করে আপনাকে বিরক্ত করার ইচ্ছা আমার কোনদিনই ছিলোনা। কিন্তু আমি সম্প্রতি একটা বিপদে পড়েছি। একটু বড়সড় বিপদ। এবং আমার ধারনা আপনি আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবেন। আপনি লেখক মানুষ। আপনি নিশ্চয় এমন কোন উপায় বের করবেন যা কাজে দেবে।
শৈলী নামের এই মেয়েটা প্রায় তিনবছর ধরে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে রয়েছে। ব্যাস অতোটুকুই। সেই মেয়ের বিপদে আমি কিভাবে কাজে লাগবো সেটা বুঝে উঠতে পারিনা। অবশ্য দুনিয়ার খুব কম বিষয়ই আমি বুঝি। আমার নিকটজনেরা সেটা আমাকে উঠতে বসতে মনে করিয়ে দেয়। আমার মনে হলো মেয়েটা আসলেই খুব বিপদে পড়েছে। এমন নয় যে আমি অনেক মানুষকে সাহায্য করি বা করতে পারি। কিন্তু সম্ভবত এই মেয়েটাকে সাহায্য করতে পারবো। আমি খুব ধৈর্য নিয়ে পরবর্তী দশ মিনিট ধরে তার কথা শুনি।
ফরহাদের সাথে শৈলীর বিয়ে হয়েছে বছর পাঁচেক হবে। সুখের সংসারে সেই অর্থে সব কিছুই পরিমানমতো আছে। একটু কম বয়সে বিয়ে হওয়ায় দু’জনেই ঠিক করেছিলো, বিয়ের পাঁচ/ছয় বছর আগে বাচ্চাকাচ্চা নেবেনা। দুজনের ভেতর অদ্ভুত মিল ছিলো। তাই জীবন চলছিলো মসৃন পথে। ধাক্কাটা তাই হঠাতই আসে। যখন এক সন্ধ্যায় ফরহাদ শৈলীকে সামনে বসিয়ে খুব ঠান্ডা মাথায় কিছু কথা বলা শুরু করে। পরের গল্পটা যেন আমার খুব পরিচিত। শুধু মেয়েটার নামটা ভালোভাবে শুনে নিলাম। সিমি! ফরহাদ আর শৈলীর সাথে থাকতে চায়না। কারন সিমি নামের মেয়েটাকে নিয়েই সে সামনের দিনগুলো চলতে চায়। আমি আজকাল খুব বেশি রাত জাগিনা। শৈলীর জন্য নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলো আজ। দেরি করে বেডে যাওয়ায় ঘুম আসতে তাই দেরি হলো আজ।
এতো সকালে আমার ফোন পেয়ে বোধহয় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো ফারুক। এর উপর প্রস্তাবটাও অদ্ভুত। সে আমতা আমতা করে কথা বলা শুরু করলো। তবে শেষমেশ রাজি হয়ে গেলো। আমার জন্য নাকি সে সব কাজই করতে পারবে। সেটা অবশ্য আমিও জানি। আজ সকালে উঠেই আমি ফেসবুকে সিমি নামের মেয়েটার অদ্যপন্ত ঘাটাঘাটি করি। আর তখনই বুঝতে পারি মেয়েটার যে জিনিসটা ফরহাদ মানে শৈলীর হাজব্যান্ডকে আটকে ফেলেছে তা হলো চাকচিক্য। মেয়েটা যে কেবল চোখঁধাধানো সুন্দরী সেটা নয়। সেটা হলেও ফরহাদ হয়তো বের হয়ে আসতে পারতো। কিন্তু মেয়েটা অতি আকর্ষনীয় দেহ সৈষ্ঠব্যের অধিকারীনি।
এই মোহ থেকে ফরহাদ কেন আমি নিজেই বের হতে পারতাম কিনা সন্দেহ! আমি তাই ফরহাদ ছেলেটাকে দোষ দেইনা। এরপর মেয়েটা সম্পর্কে আরেকটু খোঁজ নিলাম সেই সাতসকালেই। ভাগ্য ভালো। মেয়েটার এক কলেজ বন্ধুকে পেয়ে গেলাম আমার পরিচিত ভক্তদের তালিকায়। মেয়েটা এবং তার পরিবার সম্পর্কে জানতেই আমি বুঝে গেলাম আমাকে কি করতে হবে। ফারুকের নামটা তখনই মনে এলো আমার। ফারুক বছর তিনেক আগে বান্দরবনের একটা রিসোর্টে বাবুর্চির কাজ করতো। শীতের এক ছুটিতে সেই রিসোর্টের ডাইনিং এ বসে আমি প্রথম তার রান্না খেয়েছিলাম। খাবার মুখে তোলা মাত্রই আমার মুখ হাঁ হয়ে গিয়েছিলো।
কারো রান্না যে এতো স্বাদের হতে পারে তা আমি সেইদিনই জেনেছিলাম। একদম জাদুকরী ব্যাপার! এর পরের তিনদিন আমি শুধু রিসোর্টে বসে তার রান্না খাবার খেয়েছি। বাইরে বের হওয়ার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। সেই তিনদিনেই পাঁচ কেজি ওজন বেড়েছিলো আমার। ফারুককে আমি সেখানে ফেলে আসিনি। তাকে সাথে করে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলাম। তারপর দুবাইয়ে আমার এক বন্ধুর রেস্টুরেন্টে চাকরি দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। বিদেশ ভালো লাগেনা বলে ফারুক দেশে ফিরে এসেছিলো বছর দুই পরে। এরপর খুব একটা যোগাযোগ ছিলোনা। তবে আমি জানি এই ফারুকই পারবে কেসটা সমাধান করতে।
সিমিদের বাসার রান্নার লোকটাকে তাড়াতে আমার কিছু টাকা খরচ করতে হলো। অবশ্য ফারুককে তার রিপ্লেস হিসেবে নিয়োগ করাতে খুব একটা বেগ পেতে হলোনা। হওয়ার কথাও না। এরপর ফেসবুকে শৈলীকে মেসেজ দিলাম, যেভাবেই হোক ছয়মাস সংসারটা টিকিয়ে রাখো। আজ ছয়মাস হতে চললো শৈলী নামক মেয়েটার সাথে আমার প্রথম কথোপকথনের। আমি আজ আবার মেয়েটাকে মেসেজ লিখছি। মাত্র দুটো শব্দে লিখলাম,
– কি খবর? অনেক্ষন পর সিন হওয়া মেসেজের উত্তর এলো,
– কোন বিষয়ে বলুনতো?
– তোমার হাজব্যন্ড ফরহাদ সাহেব এখন কেমন আছেন?
– সেতো ভালোই আছে। কেন কোন প্রব্লেম?
– না মানে যে সমস্যায় তুমি পড়েছিলে সেটা সলভ হয়েছে কিনা? সিমি নামের সেই মেয়েটার……..
– দেখেন আমি একবার রাগের মাথায় কি না কি বলেছি আর সেইটা নিয়ে আপনি পড়ে আছেন????
আমার হাজব্যান্ড বলেছে সিমি কেবল তার কলিগ ছিলো। এর বেশি কিছু নয়। সে জাস্ট ফান করেছিলো। আর আমি নিজে কিছুদিন আগে মেয়েটাকে দেখেছি। ইয়া মোটা একটা মেয়েকে নিয়ে কেউ অন্তত ফ্যান্টাসি করতে যাবেনা। মেয়েটা এরপর আমাকে ব্লক করে দেয়। আমি স্মিথভাবে হাসি। জানতাম ফারুক ছেলেটা তার কাজ ঠিকভাবেই করতে পারবে।