বিয়েটা করেছিলাম ভালোবেসে।কিন্তু এখন আর আমার স্ত্রীকে আমার ভালো লাগে না।তাকে দেখলে কেমন জানি বিরক্তি চলে আসে আমার ভিতর।সে এটা বুঝতে পারে তাই আমার সামনে খুব কম আসে।আমি রাফিউল ইসলাম রিফাত আকাশ আর আমার স্ত্রী মারিয়া।দুজনে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম দুজনের পরিবারের সম্মতিতেই।আমাদের সাত বছরের বিবাহিত জীবন খুবই ভালো যাচ্ছিলো কিন্তু একটা এক্সিডেন্ট এর কারনে মারিয়ার মুখের একপাশে কেটে যায় আর সেই কাটা দাগের জন্য মারিয়াকে এখন আর আমার কাছে ভালো লাগে না।
মারিয়াকে নিয়ে এখন কোথাও যেতে আমার লজ্জা লাগে।তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি মারিয়াকে ডিভোর্স দিব।মারিয়া সে কথা জানে এবং সে নিজেও আমার সাথে একমত।তাই এখন আমি বসে আছি এই শহরের বিখ্যাত অ্যাডভোকেট মারুফ তামিমের বাসায়।শুনেছি তিনি অনেক ডিভোর্স করিয়েছেন তাই তার সাথে দেখা করার জন্য তার অফিসে গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানে না পেয়ে তার বাসায় এসেছি।অনেকটা সময় বসে থাকার পর উনি আসলেন।তাকে দেখে আমি রীতিমত অবাক কোনো অ্যাডভোকেট এতটা সুন্দর স্মার্ট হতে পারে ভাবা ছিল না তার হাটা চলা চেহারা দেখলে মনে হয় কত মেয়ের ক্রাস সে। বয়সটাও কম আর দেখতেও নায়কের মত তার এসব আইনের ভিতর না থেকে রঙিন জগতে থাকলে ভালো হত।
তিনি আমার সামনের সোফাতে বসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কি প্রয়োজনে তার কাছে এসেছি।আমি তাকে ডিভোর্স এর কথা বললাম।তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন কেনো ডিভোর্স দিতে চাইছি আমার স্ত্রীকে।আমি তাকে সবকিছু খুলে বললাম সব শুনে তিনি আমাকে আগামীকাল দুপুরে খাবারের দাওয়াত দিলেন আর সাথে করে আমার স্ত্রীর একটা বর্তমান এবং পুর্বের ছবি নিয়ে আসতে।আমি তার কথা শুনে আর কিছু না বলে চলে আসলাম আর ভাবতে লাগলাম তার মত একজন বড় অ্যাডভোকেট আমাকে তার বাসায় দুপুরে খাবার দাওয়াত দিয়েছেন এটা বড় আশ্চার্যের বিষয় হয়ত উনি তার মক্কেলদেরকে এভাবে আপ্যায়ন করে অনেক টাকা কামাই করেন।বাইরে রাত অবধি আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম।বাসায় যেয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরেরদিন আজকে মারুফ সাহেবের বাড়ি যাবার কথা।তাই তৈরী হয়ে তার কথা মত মারিয়ার অতীতের আর বর্তমানের ছবি নিয়ে তার বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।এখন বসে আছি তার বাসায় ড্রয়িংরুমে।কিছু ক্ষন পর তিনি আসলেন।এসে আমার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে আমার কাছে মারিয়ার ছবি চাইলেন।আমি তাকে মারিয়ার ছবি দিলাম।তিনি ছবি দুইটা ভালোভাবে দেখলেন এরপরে বললেন চলুন আমার সাথে খাওয়া দাওয়া করে নেই।আমি তার পিছু পিছু বাসার ভিতরে গেলাম।
তিনি আমাকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে নিজেই খাবার পরিবেশন করে দিলেন।খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা ড্রয়িংরুম এ বসে গল্প করছিলাম তখন আমি তাকে বললাম মারুফ সাহেব আমাদের ডিভোর্স এর ব্যপারে কি ভাবলেন।তখন তিনি আমাকে বললেন আকাশ সাহেব আপনাকে কিছু দেখানোর আছে আমার।এরপর তিনি প্রিয়া বলে ডাক দিলেন।তখন ভিতর থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে আসল।তার মুখ দেখে আমি শিহরিত কারণ মেয়েটার মুখ সম্পুর্ণ এসিডে ঝলসানো।সেই মেয়েটি এসে মারুফ সাহেবের পাশে বসলেন।আমি তখনও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি এই মেয়েটা কে।
তখনই মারুফ সাহেব বললেন আকাশ সাহেব পরিচয় করিয়ে দেই উনি হলেন আমার স্ত্রী রিয়া।তার মুখে স্ত্রী কথাটা শুনে আমি অবাক তারমত একজন হ্যান্ডসাম ছেলের স্ত্রী এমন একজন যার চেহারাটাই নাই।তিনি আবার বললেন আমি আর রিয়া সেই কলেজ লাইফ থেকে একে অপরকে ভালোবাসি।ভালোবেসে দুজনে বিয়ে করেছি।আর রিয়াকে আমি এখনও ভালোবাসি আর বাকি জীবন ভালোবেসে যাব।আমি তার বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে ভালোবাসি নাই তার মনের সৌন্দর্য দেখে ভালোবেসেছি তাই আমাদের কাছে ভালোবাসাটা এখনও অফুরন্ত।আমার কাছে আমার স্ত্রী সেরা সুন্দরী।আমি তাকে ছাড়া একা থাকার কথা ভাবতেও পারি না যদি ভালোবাসা না থাকত তাহলে আপনার মত আমারও ডিভোর্স হয়ে যেত।
আশা করি আপনি আপনার উত্তর পেয়েছেন আকাশ সাহেব।এতখন মারুফ সাহেব এর কথা শুনে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি আমি।এ আমি কি করতে চাইছিলাম নাহ আমার ভুলের জন্য মারিয়ার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।আমি মারুফ সাহেবের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাসায় যাবার জন্য।বাসায় যাবার আগে মারিয়ার প্রিয় আইসক্রিম আর চকলেট নিয়ে নিলাম।এতদিন যত কষ্ট দিয়েছি সব আজকে ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিব।সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।