“”জানেন আজকের দিনটা আমার জীবনে সবচেয়ে অানন্দের দিন ছিল। আমরা বান্ধুবীরা কলেজ ফাঁকি দিয়ে নদীর পাড়ে ঘুরতে গেছিলাম।
আমরা নদীতে গোসলও করছি, জানেন আমার জীবনে কোনদিনও এইরকম মজা করিনি।””
কথা গুলো মেয়েটি আপন মনে বলে চলছে..
ওর কথা বলার ধরন দেখেই মনে হচ্ছে সত্যিই মেয়েটা আজ অনেক খুশি!
মনে মনে ভাবছি কি সহজ সরল মেয়েটা! সামান্য একটা ব্যাপারে সে কত খুশি।
মেয়েটা কথা গুলো আপন মনে বলে চলছে আর আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি..!
ও প্রতিদিন কি কি করে সেটা ফোন দিয়ে আমাকে বলাটা একটা রুটিন হয়ে গেছে।
মনে হয় ও যদি কথা গুলো আমাকে না বলতে পারে তাহলে রাতে ওর ঘুমই আসবে না।
.
একেবারে সহজ সরল গ্রামের একটা মেয়ে।অবশ্য সে গ্রামের মেয়ে সেটা আমাকে বুঝে নিতে হয়েছে।
ওর কথাবার্তা আধুনিক মেয়েদের মতো না।
কারন ও যখন প্রথম প্রথম আমাকে fbতে নক করতো তখন Hi না দিয়ে বড় করে একটা সালাম দিয়ে নক করতো।
তারপর কথার খই ফুঁটানো শুরু।আর প্রোফাইল ভর্তি আজগুবি শেয়ারে ভরা।
“আর এর জন্মদিন, শেয়ার করে জানিয়ে দিন।না হয় ঈমান থাকবে না”, ” লাইক দিয়ে কমেন্ট করে তারপর ছবিটির দিকে তাকান।
দেখুন কান্ড।ভাল লাগলে শেয়ার করুন” , “অসাধারণ মজার ভিডিও।না দেখলে মিস।”
এই টাইপের আজগুবি জিনিষ দিয়ে টাইমলাইন ভর্তি।
.
মেয়েটাকে কখনো দেখিনি বা দেখার প্রয়োজন বোধ করিনি।
টাইমলাইন ঘেটে একটা ছবি পেয়েছিলাম যেখানে গোধূলির সময় লালচে সূর্যটার দিকে তাকানো একটা ছবি। লম্বা চুল তার বাতাসে উঠছে।
এছাড়া আর কোন ছবি নেই।
ফেইসবুকে পরিচয়ের পর থেকে প্রায়ই নক করতো।
ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টটা ও নিজেই দিয়েছিল। কেন দিয়েছিল জানিনা। ওর ফ্রেন্ডলিষ্টে হাতেগনা ২২ জন ফ্রেন্ড আছে তার মধ্যে আমিই একজন।
তাই হয়তো আমার সাথেই বেশী কথা হয়।
মাঝে মাঝে গল্প লিখে পোষ্ট করতাম।
ওর নাকি আমার লেখা গল্প ভাল লাগত।
একদিন আমার নম্বর চাইলো। নিষেধ করতে পারলাম না। দিয়ে দিলাম।
এর পর প্রায়ই ফোন দিতো।
আমার মুখে আমার লেখা গুলো শুনতে চাইতো।
কেন জানি ওর কন্ঠে করা আবদার ফেলে দেওয়ার সাধ্য আমার ছিল ন
আমার ফোনফোবিয়া আছে।বেশীক্ষণ কথা বলতে পারি না।বিরক্তি লাগে। যদি তা সুমধুর কন্ঠের গায়িকা হয় তবুও।
মেয়েটা অনর্গল কথা বলতে পারে।
ঠিক সদ্য কথা শেখা বাচ্চাদের মতো।
কয়েকদিন আগে আমাকে কল করলো।
তখন মধ্য দুপুর হবে। আমি খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম।
জেগে গিয়ে বিরক্তিভাব নিয়ে ঘুমজড়ানো কন্ঠেই ফোনটা ধরলাম। ওপাশ থেকে সালাম দিয়েই আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই কাঁদতে শুরু করলো।
আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে পড়লাম। আমার ঘুম উধাও হয়ে গেছে।
আমি ভাবলাম সিরিয়াস কিছু হয়ে গেছে। মেয়েটা কেঁদেই যাচ্ছে।
ধমক দিয়ে বললাম কি হইছে কারনটাতো বলবা।
মেয়েটা ভয় পেয়ে থেমে গেল। এরপর কান্নার সাউন্ড আরো বেড়ে গেল।
অনেক কান্নাকাটির পর জানালো তার কবুতরের ডিম নষ্ট হয়ে গেছে।
ওই মুহূর্তে আমি কাঁদবো না হাসবো বুঝতে পারলাম না।এতো সহজ সরল একটা মেয়ে কিভাবে হয়? তাও এই আধুনিক যুগে?
শান্তনা দিয়ে তার কান্না বন্ধ করালাম।
স্যরি বলে ফোন কেটে দিল।হয়তো আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে অন্যায় করে ফেলেছে তাই অনুশোচনায় ভুগতেছিল।
.
আমার প্রো পিক নেই কেন তা নিয়েও তার মাথাব্যথা ছিল।এ নিয়ে আমাকে মেয়েদের সাথে,ফেইক আইডির সাথে তুলনা করতেও সে ভুলেনি।
একবার আমার মা অসুস্থ হওয়ার কারনে একদিন অনলাইনে আসিনি। আমাকে না পেয়ে ফোন দিয়ে অস্থির করে ফেললো।
যখন জানলো আমার মা অসুস্থ তখন তার অবস্খাও দেখার মতো ছিল।যেনো তার খুব কাছের কেউ অসুস্থ।
ঘন্টায় দু’তিনবার করে ফোন দিয়ে খবর নিতো।
মেডিসিন দিচ্ছি কিনা,মাথায় পানি ঢালছি কিনা, ঠিকমতো খাওয়াচ্ছি কিনা!
যখন তাকে জানানো হল মায়ের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেছে, তখন তার গলাটা কেমন ধরে আসছিল। বুঝলাম ওপাশে সে কাঁদছে।
একসময় মা সুস্থ্য হলো। মেয়েটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। যেন হাঁফছেড়ে বাঁচলো।
.
একটা সময় সে কথা বলার কোন টপিক খুঁজে পেতোনা।তখন কথা বলার জন্য অদ্ভুত অদ্ভুত টপিক বানাতো সে।যেন কথা তাকে বলতেই হবে।
এজন্য টপিক হিসেবে আমার নামটাকেও সে ছাড়েনি। আমার ডাক নাম তানিম!
একদিন বললো,
“জানেন জানেন আপনার প্রো পিক নাই কেন?
“হুম। আমার ইচ্ছে হইছে তাই দেইনি।
“না। এটা না। কারন আপনার মধ্যে মেয়েলি একটা ব্যাপার আছে।আপনার নামেও।হিহিহি…
“তাই নাকি? যেমন?
“আপনার নাম উল্টা করলে হয় মনিতা। তানিম=মনিতা। আর মনিতা মেয়েদের নাম। হিহিহি……
আমিও মেয়েটার সাথে হাসলাম।কি সহজ সরল হাসি মেয়েটার…
.
মেয়েটা আমাকে প্রায়ই ব্যার্থ প্রেমের গল্প শুনাতো। সেখানে শুধু মেয়েটিই ছেলেটিকে পছন্দ করতো কিন্তু ছেলেটি তাকে পাত্তা দিতনা।
মেয়েটি কেন আমাকে বারবার ব্যার্থ প্রেমের গল্প শুনায়? যেখানে শুধু মেয়েটাই ছেলেটাকে ভালবাসে? ছেলেটা ভালবাসে না কেন তা জানি না।
এ নিয়ে আমার মাথাব্যথাও নেই। প্রায় গল্পেইতো হয় একপক্ষীয় ভালবাসা। এটাও হয়তো তেমন।
আজ তিনদিন মেয়েটা অনলাইনে নেই। প্রথম প্রথম এতোটা মনে পড়েনি তাকে।কারন কখনোই তার প্রতি খুব একটা মনোযোগী হইনি।
কিন্তু তার সাথে কথা বলাটা আমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছিল। তার ফোন পেয়ে ডিস্টার্ব ফিল হওয়াটাতেও মজা ছিল।
তার গল্পটাও মিস করছি।কেমন যেন খালি খালি লাগছে।ফেবুতে ঢুকলে কে যেন নেই নেই ভাব।মোবাইটাতেও কার যেন কল আসে না।
কে যেন মধ্য দুপুরে ঘুম ভাঙিয়ে কাঁদে না। গল্প লেখাতেও মনোযোগী হতে পারছি না।
আমিতো তাকে ভালবাসি না তবে মিস করছি কেন?
কিজানি ফ্রেন্ড হিসেবেওতো হতে পারে।
অসুখ করেনিতো?
অথবা সিরিয়াস কিছু?
নয়তো যে মেয়েটা আমার সাথে প্রতিদিন কথা না বলে থাকতে পারে না সে কিভাবে ৩ দিন কথা না বলে রইলো।
মেয়েরাতো গিরগিটির মতো রং পাল্টাতে পারে।
সেও কি অন্যমেয়েদের মতো হয়ে গেলো নাতো?
কল দিলাম তার নম্বরে। এটাই হয়তো ওর নম্বরে করা প্রথম কল।
নম্বর বন্ধ। যা ভেবেছিলাম তাই। হয়তো সিম চেঞ্জ।
বুকে কেমন যেন একটা ধাক্কা লাগলো।চোখ বন্ধ করলেও তার কথা মনে পড়ে।
কখনো তার পুরো ছবি দেখতে চাইনি। তবু তার কল্পনা করা অবয়ব চোখে ভেসে উঠে।
একটা গ্রাম্য মেয়ে যার খোলা লম্বা চুল বাতাসে উড়ছে।মেয়েটা হাসছে।
কিছুই ভাল লাগছে না মেয়েটাকে খুব মিস করছি। মেয়েটাকে ছাড়া আমার চলবেই না।
ভালবেসে ফেলেছি বোধহয়।
ফেইসবুকে ঢুকলাম মেয়েটার প্রোফাইলে।যোগাযোগ করা দরকার।
এবাউট ঘেটে একটা ছেলেকে আবিষ্কার করলাম যে ফ্যামিলি মেম্বারে কাজিন হিসেবে এড হওয়া। ছেলেটাকে নক দিলাম।
অনলাইনে নেই।অপেক্ষা করতে থাকলাম। সময়টাকে অনেক দীর্ঘ মনে হচ্ছে।আমার কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে।
একটা সময় ছেলেটা এলো।মেয়েটা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই বললো, বিয়ে হয়ে গেছে পাশের গ্রামের একছেলের সাথে। ছেলেটা নাকি আবুধাবি থাকে।
বিয়েটা নাকি হঠাৎই ছিল। আর ভাল সম্বন্ধ পেয়ে পাত্রী পক্ষও দেরী করেনি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।আমরা মানুষগুলোই এমন।ভুল সময়ে ভুল মানুষের প্রেমে পড়ি।
আমাকে আর কেউ মধ্য দুপুরে ঘুম ভাঙাবে না। মা অসুস্থ হলে আমাকে কারো কাছে মেডিসিন দেওয়ার হিসেব দিতে হবে না।
কেউ আর পুরনো একটা গল্প বার বার বলতে আসবে না।
যে গল্পে মেয়েটা ছেলেটাকে ভালবাসে কিন্তু ছেলেটা মেয়েটার প্রতি মনোযোগী না।
মেয়েটাকে জানাতে খুব ইচ্ছে করছে,গল্পটায় কিছু সংশোধন প্রয়োজন ছিল।
মেয়েটি ছেলেটিকে ভালবাসতো।ছেলেটা মেয়েটার ভালবাসা বুঝেনি।ছেলেটা বড্ড বোকা ছিল। তাই মনোযোগী হয়নি।
যখন ছেলেটা মেয়েটাকে ভালবাসতে শুরু করে তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। মেয়েটা তখন অন্য কারো।
আজও অপেক্ষা করি।সে হয়তো মেসেজ দিয়ে বলবে, “একটা গল্প শুনবেন???”
আজ আমি সত্যিই তাকে সময় দিবো। তার গল্পের ভাল একজন শ্রোতা হবো।
আর ফিরিয়ে দিবো না। কথা দিলাম…।
.
**আসলে আমরা কেউই সময় থাকতে প্রিয় মানুষ গুলোর মূল্য বুঝিনা,
যখন প্রিয় মানুষ গুলো ছায়ার মত আমাদের সাথে থাকে তখন তাদের সঠিক মূল্যটা আমারা দিতে পারিনা।
কিন্তু যখন অবহেলা পেতে পেতে মানুষ গুলো দূরে সরে যায় তখনই তাদের মর্ম আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু ততদিনে আর ফেরানোর সময় থাকেনা।
তাই সময় থাকতে প্রিয় মানুষের মূল্য দিন**