বিবাহ বার্ষিকী

বিবাহ বার্ষিকী

আচ্ছা, পরিচয় করিয়ে দেই আমাদের গল্পের প্রধান দুটি চরিত্রের সাথে । নির্জন, পড়াশুনা শেষ হলো প্রায় দুই বছর হয়ে গেছে । এখন ওর আম্মুর একটাই টেনসন, ছেলের একটা সুন্দরী-ভদ্র-মার্জিত বউ চাই । সেই বউ খুব সম্ভবত “ইভা” হতে যাচ্ছে ।

নির্জনের আম্মু আর ইভার আম্মু ছোট বেলাকার বান্ধবী । ওনাদের দুজনের মধ্যেই নাকি কি সব কথা বার্তা হয়েছে । মায়ের বাধ্য ছেলে নির্জন। তাই ইভার সাথে দেখা করতে হচ্ছে একপ্রকার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই। ইচ্ছের বিরুদ্ধে হওয়ার কারন এমন না যে অন্য কোন মেয়ে না যার সাথে নির্জনের কোন সম্পর্ক আছে। পড়ালেখা জীবনে একটাই রিলেশন ছিলো নির্জনের তার সাথে ব্রেকাপ হওয়ার পর আর কোন মেয়ের সাথে নিজেকে জড়ায় নি। নির্জন পড়ালেখা ২ বছর আগে শেষ করলেও সবে কিছুদিন আগে চাকরিতে ঢুকেছে। তার এখন বিয়ে করার কোন ইচ্ছে নেই। অপর দিকে ইভা! ভদ্র,মার্জিত কিন্তু খানিকটা চঞ্চল। সে জন্যই নির্জনের মায়ের খুব বেশি পছন্দ ইভাকে! ইভা সবে অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী।

পারাবারিক শাসন, নিয়ম, শৃঙ্খলায় বড় হওয়ায় কোন ছেলের সাথে কখনো জড়ানোর ভাগ্য হয় নি! কোন ছেলের সাথে না জড়ানোর মূল কারন যে এটাই ঠিক তা না! নির্জন এর মা আর ইভার মা দুজনে ছোট বেলার বান্ধবী হওয়ায় তাদের একে অপরের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিলো। তারপরও ইভার সাথে নির্জনের খুব বেশি দেখা হয়নি, কেননা নির্জন ঢাকায় ভার্সিটির কারনে ঢাকাতেই থাকতো।কিন্তু ইভা প্রতিনিয়ত নির্জনের ফেসবুক আইডি ফলো করতে করতে খানিকটা প্রেমেই পরে গেছে! মূল ঘটনা; শুক্রবার বিকেল ৪ টা! আজ নির্জনের ইভার সাথে দেখা করতে যাওয়ার দিন! নির্জন খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিয়মিত ব্যাবহারিক একটা টি-শার্ট আর চটি জোড়া পায়ে দিয়েই বাসা থেকে বের হতে যাচ্ছিলো,ঠিক তখনো নির্জনের মায়ের চোখ বড় করা রাগান্বিত চেহারার দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো।

-মা কি হয়েছে? এমন রাগান্বিত লাগছে কেনো তোমাকে!
>তুই কি বস্তিতে যাচ্ছিস নাকি বিয়ের জন্য পাত্রি দেখতে?
-অমা! এ কেমন কথা তোমার পছন্দ করা মেয়েকেই তো দেখতে যাচ্ছি।
>আয় আমার সাথে আয় (নির্জনের কানে ধরে সোজা ঘড়ে নিয়ে গেলো)
-মা ছাড়ো লাগছে তো।
>নে আলমারি খোল আর ফরমাল ড্রেস পরে নীল সুট টা পড়বি।
-আমি কি মেয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি নাকি কোন ইন্টার্ভিউ এ যাচ্ছি?
>কথা কম বলে যা বলেছি তাই কর। ড্রেস পরে পুরাপুরি প্রস্তুত হওয়ার পর
-মা টাই টাও কি পড়বো?
>তবে রে! (মারকুটে ভাবে এগিয়ে আসে নির্জনের দিকে)

অবস্থা ভালো না দেখে মাকে সালাম দিয়ে দৌড় দিয়ে বেরিয়ে পড়লো রাস্তায়। বাসা থেকে প্রায় ৫ কিলো দূরে পার্কে ইভার সাথে দেখা করার কথা। একটা রিকশা নিয়ে পার্কের দিকে রওনা দিলো। মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো,মায়ের ফোন রিসিভ করতেই মা বলে দিলো একগুচ্ছ গোলাপ নিতে।(বলে রাখা ভালো নির্জনের বাবা নেই ওর মাই ওর বাবা, বন্ধু) রিকশা টা থামিয়ে পাশের দোকান থেকে কিছু গোলাপ কিনে নিলো।ইচ্ছে করেই ছোট ছোট গোলাপ নিলো।

পার্কে পৌঁছানোর পর পার্কের ব্রেঞ্চে বসে আছে নির্জন। ইভার আসার কথা ৪ টায় এ যে ৪.৩০ পার হয়ে গেলো,এখন পর্যন্ত আসার কোন নাম নেই। কয়েকবার ভেবেছিলো ইভাকে কল করবে কিন্তু ইগো দেখিয়ে কল দেয় নি। নির্জনের সময়টা অবশ্য খুব খারাপ কাটছে না। যে ব্রেঞ্চ টায় নির্জন বসে আছে ঠিক তার কিছুটা সামনে একটা নীল শাড়ি পরা খানিকটা শ্যামলা দীঘল চুলের একটা মেয়ে কিছু পথ শিশুর সাথে খেলছে।এ দেখেই নির্জনের সময়টা কেটে যাচ্ছিলো। নির্জন যখন সামনের সেই মেয়েটাকে নিয়ে ভাবছিলো ঠিক সেই সময় মায়ের ফোন এলো রিসিভ করতেই একটা ঝাড়ি।

>এই হতচ্ছাড়া তোর পৌঁছানোর কথা কয়টায় আর তুই এখনো কোথায় যে পৌঁছাতে পারলি না।
– মা আমি তো সেই কতক্ষন ধরে অপেক্ষা করছি।তোমার পছন্দ করা সেই নবাব নন্দিনীরই আসার কোন লক্ষন দেখছি না।
>বলিস কি? ইভার মা তো বল্লো ইভা সেই টায় পার্কে পৌঁছেছে।
-তো আমি কি করে বলবো সে পার্কে পৌঁছেছে নাকি কোথায় আছে!
>তুই কল দিস নি ওকে?
-না!

আবার ঝাড়ি খেলো একটা,তাড়াতাড়ি কল দিতে বলে নির্জনের মা কলটা কেটে দিলো। এবার আর উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়েই কল দিলো। রিসিভ করেই এক সুরেলা কন্ঠের মেয়ে বললো আপনি কোথায় আপনার অপেক্ষায় অনেক সময় ধরে পার্কে আছি।

-আমি কোথায় মানে আপনি কোথায়?৪ টা থেকে বসিয়ে রেখেছেন।(রাগান্বিত কন্ঠে)
*দেখেন একদম রাগ দেখাবেন না আমিও ৪ টাতেই পার্কে এসেছি আপনি এসে কল দেন নি কেনো?
-আমি কেনো কল দিতে যাবো,আপনি কল দিতে পারেন নি?
*আমি মেয়ে আপনি ছেলে কল দেয়ার রেস্পন্সিবিলিটিটা আপনার।
-ওকে ওকে ভুল হয়েছে, এখন কোথায় আছেন সেটা বলেন।
*পার্কের উত্তর দিকে বড় বট গাছ টার কাছে।
-আজব তো! আমিও তো এখানেই আপনাকে তো দেখতে পাচ্ছি না।
*কিছু বাচ্চার সাথে নীল শাড়ি পড়ে খেলছি আমি খুঁজে নেন বাই। কল টা কেটে দিলো নির্জন মনে মনে ভাবছে কি মেয়েরে বাবা!কথার মধ্যে কোন মধু নেই।এগিয়ে গেলো নীল শাড়ি পড়া মেয়েটার দিকে।

-এই যে শুনছেন?
*আমাকে বলছেন (ইভা)
-আপনি ইভা? রাইট!
*হ্যা! আপনি নির্জন?
-হ্যা!
*আসেন বাচ্চাদের সাথে খেলি!
-মা পাঠিয়েছে আপনার সাথে দেখা করতে বাচ্চাদের সাথে খেলতে নয়।
* কি বাধ্য ছেলে মায়ের! হু(মুখ ভ্যাংচিয়ে)

বাচ্চাদের চকলেট দিয়ে ইভা নির্জন এসে বসলো পার্কের একটা ব্রেঞ্চে। আচ্ছা আপনি কি সব সময় এমন গম্ভীরই থাকেন?(ইভা) আমাকে দেখে আপনার কেনো গম্ভীর মনে হচ্ছে? এইযে বসে আছেন কোন কথা বলছেন না। কি কথা বলবো? গল্প করেন আমার সাথে! (নির্জন মজা করে ঝোলা ঝুলির গল্প বলতে শুরু করলো একটা গল্প বলা শেষ করতেই…..) আচ্ছা আপনি গল্প ভালোবাসেন? হ্যা খুব ভালো লাগে গল্প শুনতে। সেদিনের মত কিছু সময় ঘোরাঘুরির পর দুজনে দুজনকে বিদায় জানিয়ে বাড়িতে ফিরলো। রাতে খাওয়ার টেবিলে

>ইভার তোকে ভালো লেগেছে, সামনের সপ্তাহেই এঙ্গেজমেন্ট, ওই দিনই বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলবো।
-মানে কি? ইভার পছন্দ হয়েছে বলে বিয়ে ঠিক আমার কোন মতামত নেই?
> না নেই! আমার বৌমা আমি পছন্দ করেছি তাকেই বৌ করে ঘড়ে আনবো।তোর সমস্যা থাকলে তুই বৌমা এনে দিয়ে চলে যাস কোন সমস্যা নাই।(হাসি হাসি মুখ করে বল্লো নির্জনের মা)

নির্জন কখনো ওর মায়ের অবাধ্য হয়নি।তাই নির্জনের মা জানে আজো অবাধ্য হবে না। নির্জনের যে ইভাকে পছন্দ হয় নি এমনটা না! মেয়েটা সহজ সরল ভালো মনের ভাবতেই মুখের কোনে একচিলতে হাসি। (নির্জনের ভ্রম কাটলো নোভার ডাকে) ঠিক তখনই নোভা এসে নির্জনের হাত ধরে টান দিলো। আর বলতে লাগলো বাবা বাবা সবাই অপেক্ষা করছে তুমি যাবে না? (নির্জন ইভার মেয়ে নোভা! খুব লক্ষি একটা মেয়ে।)আজ নির্জন ইভার ৬ষ্ট বিবাহ বার্ষিকী! আর ঠিক ৬ বছর আগের দিন গুলোই আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে করছিলো নির্জন।

নোভা হুয়িল চেয়ার টা ঠেলে ডাইনিং এ গেলো। (৫ম বিবাহ বার্ষিকীর কেকটাও নির্জন ইভা দুজনে দাঁড়িয়েই কেটেছিলো, কিছুদিন আগের একটা দুর্ঘটনায় নির্জনের একটা পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়! ডাক্তার এর কথা অনুযায়ী চিকিৎসা করলে বছর খানেকের মধ্যে সুস্থ হতে পারে নির্জন)

ইভা, মা, শাশুড়, শাশুড়ি, আর নোভার ২, ৪ জন বন্ধু সকলে ডাইনিং এ অপেক্ষা করছিলো নির্জনের।
নির্জন আসতেই কেক কাটা হলো অনেক আনন্দ পূর্তির মাধ্যমে উদযাপিত হলো তাদের ৬ষ্ট বিবাহ বার্ষিকী।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত