বসে আছি কারাগার নামক একটি লোহার কাঁচায়। কাঁচা ভেঙ্গে বের হবার একমাত্র পন্থা মামার হাতুড়ি। এখানে হাটু গেড়ে বসে চেয়ারের দিকে একনজরে তাকিয়ে তাকতে খুব একটা মন্দ লাগতেছেনা। কারণ, সামনে পরীর বেশে মানষকন্যা বসে আছে। তবে কাঁচা বাঁধা অপেক্ষা কাঁচা মুক্ত হয়ে দেখাটা বীরের কর্ম মনে হবে। মামাকে ফোন করা যাক।
=হ্যালো, মামা কেমন আছো তুমি?(আমি)
=ভালো, কোথায় তুই? আজকে দেখা হওয়ার কথা ছিল মনে আছে ভাগ্নে। (মামা)
=হ্যা মামা মনে থাকবেনা এমন কাজতো না সেটা, তবে আমি এখন পরীর দেশে সৌন্দর্য্যের স্বাদ উপভোগ করতেছি।
=ভাগ্নে কি আবোল তাবোল বকতেসিস ভালো করে বল কোথায়?
=মামা সাতকানিয়া থানা চিনো তুমি? ঐখানে কাঁচার ভিতরে বসে আছি। উহুঁ হুঁ হুঁ মশাঁয় রক্ত বদল করতেছে মামা তারাতারি উদ্ধার কর।
=ঐ থানার মামলা নিয়ে আমি কাজ করি।
না চেনার কি আছে। এক্ষুনি আসতেছি আমি। লকাবের কি পরিপাটিরে বাবা। মশাঁর সাথে ব্লাডের ইনপুট বিজনেস ভালো চলতেছে। মামা এসেছে হাতে একটা ফাইল দেখা যাচ্ছে। মনে হয় জামিনের কাগজ। হাবিলদার এসে বাহিরে নিয়ে গেল। মামা দেখতেছি পরীর সাথে কুশোল বিনীময় করতেছে। এসময় গিয়ে মামাকে জড়িয়ে ধরলাম,,,
=মামা তুমি আসলেই একটা জিনিয়াস। বলার সাথে সাথে কাজ হয়ে গেল।(আমি)
=আমাকে কি দরকার তোর আইডেন্টি দিলেইত হয়ে যেত। (মামা)
=কেনো দিই নাই সেটা না হয় পরে বলি। এখন চলো।
=আচ্ছা, ঠিক আছে।
চলে আসব এমতাবস্থায় পেছন তেকে পরীটা বলে উঠল আপনার ভাগ্নেকে বলেন, বাইক চালাতে যেন চোখ্যদ্বয় দিয়ে বাহিরে পর্যবেক্ষণ করে। তখন আমি বললাম, বাইক চালানোর সময় একটা পরীকে দেখে মনে হলো আমি বাইক চালাতেছিনা। যেন পরীর সাথে হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছি।
পাল্টা জবাবে পরীটা বলে উঠলো লয়্যার সাহেব আপনার ভাগ্নের মাথা বোধহয় গেছে। আমরা এত মানুষ তাকার পরে সেখানে একটা বিড়াল ছাড়া কিছুই দেখেনি। আর ওনি নাকি পরী……উনাকে মেন্টাল হাসপাতালে নিয়ে যান তাড়াতাড়ি। প্রথমবারের মতো ছেড়ে দিলাম দিত্বীয়বার তা আর হবে না। মনে মনে বলতেছি, “আমিতো চায় তুমি আমাকে সারাজীবনের জন্য বন্দি করে রাখ।” আমি আখরাওয়ান। লেখাপড়া শেষ করেছি তিন বছর গত হয়ে গেছে। এখন একটি কর্মে নিযুক্ত আছি। কি কর্ম তা অবশ্যই পরে জেনে যাবেন। এতক্ষণ পরী বলে যাকে সম্মোধন করতেছি তিনি হলেন ওসি সুমাইয়া ফারাহ্।আমি কাঁচায় যাওয়ার ঘটনাটা মামা শোনার জন্য অস্তির হয়ে পড়েছে।
=ভাগ্নে বল জেলে গেলি কিভাবে?
শোনো মামা। তোমার সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় রাস্তায় পুলিশ ফাঁড়ি দেখতে পায়। এদের ভিতর এক
পরীকে দেখে আমার আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গেল। ডানা ডানা হরিণীর কাজলা আঁখি। পূর্ণিমার আলোধারা ছড়িয়ে পড়ছে মুখমন্ডলে। পলকবিহীন হয়ে চেয়ে আছি তার দিকে। আমি যে ড্রাইভ করতেছি তা আমার বিন্দু মাত্রা মনে নেই। তাকে দেখে আমি খেয়ালিপনা হয়ে গেলাম। হটাৎ করে বড়রকমের শব্দ হল। সামনে তাকিয়ে দেখতেছি বাইকের সামনের চাকা পুলিশ পিকাপের বাম্পারে লাগিয়ে দিছি। পরীটা ডাইনিতে পরিবর্তন করতে মুহূর্ত দেরি করেনি। তাকে পুরোপুরি দেখে আমি ত হয়ে গেলাম। এতক্ষণ শুধু তার মায়াবতি চেহারা দেখেছি পুরো দেখিনি। গাঁয়ে পুলিশের পোশাক, হাতে হাতকড়া। সোজাসুজি এসে আমার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিল কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে। সাথে করে থানায় একেবারে। তার বক্ষদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে নামটা জেনে নিলাম। সুমাইয়া ফারাহ্ A+ সে আমার দিকে তাকিয়ে বলতেছে,,,
=আপনার নাম কি? আমি জবাব না দিয়ে তার দিকে চেয়ে আছি। এভাবে তার দিকে চেয়ে আছি দেখে একটু অসস্তিবোধ করে ধমকের সুরে আবার বলল। এই যে নাম কি আপনার?
=আখরাওয়ান।
=কি করেন, কোথায় থাকেন?
=বর্তমানে ভবঘুরে, থাকি মজিদার পাড়া। আচ্ছা আমাকে এখানে নিয়ে আসার কারণ জানতে পারি।
=আপনি জানেন না কেন, আপনার চোখ নাই?
=অবশ্যই চোখ আছে তা নাহলে তোমাকে দেখি কিভাবে?
=এই যে ভদ্রতা বজায় রাখুন, এটা শশুর বাড়ি না থানা বুঝেছেন।
= না মানে বলছিলাম যে অপরাধ তো বেশি না। একটু ইন্জিনে ইন্জিনে লেগেছে আরকি। এবার রাগের সুরে বলল,,
=দুই দুইটা অপরাধ করেছেন। একটা গতিসীমা অমান্য করেছেন আরেকটা পুলিশের গাড়িতে আঘাত করা।
=তাহলে গাড়িকে গ্রেপতার করেন এসব দোষ তো গাড়িই করেছে নাকি।
=আমার সাথে ইয়ারকি হচ্ছে। দাড়াও লকাবে পুরে কয়েক ঘা দিলে মজা বুঝবে। তৎক্ষনাত হাবিলদারকে ডেকে লকাবে বন্দি করে রাখল।
=আরে আরে করছেনটা কি। আমার এক জায়গায় যেতে হবে শীঘ্রই।
=আগেই বলেছি এটা শশুর বাড়ি না। ইচ্ছা করলে চলে যাবেন। যেতে হলে জামিন হয়ে যাবেন।
=আরে কোনো কথাবার্তা ছাড়া আপনি এভাবে আমাকে গ্রেপতার করতে পারেন না।
=গ্রেপতার তো করেই ফেলেছি। আপনি এখন কাঁচার ভিতর।
=আমার কোনো দোষ নাই। রাস্তার মাঝখানে একটা পরী আমাকে তার রূপে খেয়ালিপনা করে দিল। এর মধ্যে ছোট একটা ভুল হয়েছে বিদ্বায় এভাবে শাস্তি দিতে পারেন না?
=এটা গাড়ি দুর্ঘটনা। ছোট ভুল না। আরেকটা কি যেন বলেছেন পরী! পরী কী এখনও দেখতেপারছেন? কিছুক্ষণ পর তো নিজেকেও দেখতে পাবেন না।
=পরী তো আমার সামনে দাড়িয়েআছে সাথে কথাও বলতেছে। তারপর আমার দিকে একটু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল…
=আপনি কি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতেছেন। আপনার কি মনে হয়। এরূপ কথায় ছাড়া পেয়ে যাবেন?
=সত্যি বলছি। আপনার দিকে চোখ পরার জন্যই এতো কিছু ঘটে গেল।
=এটা প্রপোজাল প্যালেস নয়, জেল।
=আচ্ছা একটা কথা বলি। আপনাকে না এখানের চেয়ে পরীর দেশে বেশ লাগত।
=এসব কথা বাকিরা শুনতে পারলে মেন্ট্যাল শক্ দিবে। তারপর আরকি মামা। সে চেয়ারে বসে বসে কাজ করতেছে আর আমি মশা মারতেছি। মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে একটু একটু মুচকি হাসে। দেখতেছি এমনি ছেড়ে দেবে না। তাই তোমাকে ফোন দিলাম।
=মামা চলো বাসাই যায়।
=হ্যা চল।
দুইদিন পর আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু এসে দাওয়াত দিয়ে গেছে তার বিয়েতে। বিয়ে বাড়িতে এসে দেখতেছি ফারাহ্ কে। কয়েকজন মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলতেছে। তার হাসি ভরা চেহারা তেকে চোখ ফেরাতে পারছিনা।
=কিরে কি দেখতেছিস এমনভাবে।(বন্ধু)
=পরী দেখতেছি। পরী…
=এখানে পরী কোথায় পেলি।
=সামনে তাকিয়ে দেখ কি হাসি রে ভাই।
= ও ফারাহ্, আমার কাজিন। পুলিশ অফিসার।
= জানি আমি। মনে কর এটাই তোর হবু ভাবি।
= কিভাবে জানলি।
=সেটা অন্য একদিন বলব।
ফারাহ্ মেয়েগুলোর সাথে কথা বলতে বলতে আমারদিকে চোখ পড়ল। আমাকে দেখে সে পুরোপুরিভাবে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন আজব কিছুদেখতে পেল। হয়ত আমার এখানে উপস্থিতি আশা করেনি সে। আমিওতো মনেকরিনি ওকে এখানে দেখতে পাব। দেখা যে কাকতালীয় ভাবে হচ্ছে ফরাহ্ কি তা জানে। তার ভ্রু কুচকানো চেহারা দেখে তা মনে হচ্ছে না। আমার দিখে দেয়ে আসছে। কি জানি, না আবার হাতখড়া পরায়। এখান তেকে লুকায়িত হতে হবে।
=এই যে মি. দাড়ান দাড়ান। এতক্ষণতো আমাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। এখন পালানো হচ্ছে কেন? (ফারাহ্)
=আপনি এখানে! বিয়েতে আসছেন বুঝি?(আমি)
=প্রশ্ন আমি করেছি প্রথমে।
=না পানির তৃষ্ণা পেয়েছেতো তাই একটু পানি পান করতে যাচ্ছি।
=আপনিতো খুব সুন্দরকরে সত্যকে মিথ্যায় রূপান্তর করতে পারেন। আর এটা আমার কাজিনের বাসা।
=ওহ, ঠিক আছে। প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ।
=আপনার পরীর খুঁজে কি এখানে আসা হয়েছে বুঝি।
=হ্যা না মানে। আসলে বন্ধুর বিয়েতে এসেছি। কিন্তু পরীটাকে এখানেও দেখতে পাচ্ছি।
=ওহ তাই, কোথায় পরী। দেখান তো।
=এই তো সামনে দাড়িয়ে আমার সাথে কথা বলতেছে। একটা কথা বলব, আপনাকে না খুব সুন্দরী দেখতেপাচ্ছি। ( লজ্জায় ছেঁয়ে গেছে পুরো মুখ)
=তাক আর দামে তুলতে হবে না। এখন আমি আসি। পরে কথা হবে।
=চলে যাচ্ছেন কেন ? পরী দেখবেন না।
=এতক্ষণতো পরীর সাথে কথা বলেছিলেন।
তাহলে অন্য পরী দেখার কি আছে। তার মানে খুব সহজে বুঝে গেছে কি বলতে চায় আমি। যাওয়ার সময় একটা মুচকি হাসি দিয়ে গেল সাথে আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। আজকাল মেয়েদের এসব প্রশংসা পানির মতো সস্তা হয়ে গেছে। তারা দামি কিছু আশা করে। তবে ও তেমন দামি কিছু আশা করছে বলে মনে হয় না।
বিয়ে বাড়ি যেহেতু অনেক মানুষের আগমন। তাই সবার সাথে একটু আধটু কথা বলতে হচ্ছে। এর ভিতর কয়েকজন মেয়ের আমার সাথে হেসে গেয়ে কথা বলতেছে। হঠাৎএক পিচ্ছি ছানা এসে ছোট একটুকরো কাগজ ধরিয়ে দিল। কাগজ খুলে দেখলাম উপরের তলার বেলকনির পাশের রুমে যেতে বলছে খুব শীঘ্রই। কে যেতে বলল, কেন? তাও আবার শীঘ্রই। এত কিছু চিন্তা না করে সোজা চলে এসেছি। অমনি রুমের দরজার সামনে যাওয়া মাত্র কেউ একজন কলার ধরে রুমের ভিতর নিয়ে দরজা বন্দ করে দিল। আমার নিস্বাস বন্দ হওয়ার অবস্থা ফারাহ্ কে দেখে। তার চুল গুলো আমার মুখে কাধে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই চুলের ঘ্রাণে মনে হয় নতুন প্রেমের ঘন্টা বাজাচ্ছে। তার চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে। কিন্তু এতে তাকে কিরকম সুন্দরী দেখাচ্ছে তা অনুমান করতে পারছিনা। এসময় যদি আয়না দেখতো সে। তাহলে নিজেকে চিনতে পারত না। তার মনে হতো আসলেই একটা পরী।
=আরে আপনি। কেনো ডাকা হলো এভাবে?(আমি)
=এই যে কখন তেকে আপনি আপনি করতেছ।তুমি করে বলো।
=না ঠিক আছে। কিন্তু এভাবে বদ্ধ ঘরে বোদ্বহয় থাকা আমাদের উচিত হবেনা। বরংছে লোকালয়ে গিয়ে কথা বলি। তাছাড়া কেউ দেখলে সমস্যা হতে পারে।
=দেখুক সবাই। আর ওই মেয়েগুলোর সাথে এতো হাসাহাসি করার কি আছে।
=কথা ওরা বলতেছিল আমি শুধু তাকিয়ে দেখছিলাম।
=কি দেখছিলে পরী! তার মানে ঐখানে তোমার পরীকে দেখতেছিলে তাই তো।
=কি বলো তুমি এসব।
পরীতো আমার সামনে দাড়িয়ে কথা বলতেছে। এখন দেখতেছি লজ্জায় ডেকে গেছে পুরো চেহারা। ঠোটের বাম পাশে হালকা মৃদু হাসি লেগে আছে। রুমের ভিতর দক্ষিণা বাতাস বঁয়ে যাচ্ছে। বাতাসের সাথে লেপ্টে আছে হাসনাহেনা ফুলের সৌরভ। ফুলের সৌরভে চারদিকে মাতাওয়ারা করে তুলেছে। বাতাসের তালে তার চুল গুলো দুলে বেড়াচ্ছে। আমার মনে একগুচ্ছ ভালবাসার অনুভুতির শিহরণ জাগিয়ে তুলছে। তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম কিছু বলতে চায়তেছে। কিন্তু লজ্জা তাকে ঘ্রাস করে ফেলার কারণে বলতে পারছেনা। তাই আগ বাড়িয়ে আমিই বললাম।
=এখন কি বাহিরে যেতে পারি।
=না, আগে বলো মেয়েগুলোর সাথে কথা কেনো বলেছো।
=ঠিক আছে আর বলবনা। আচ্ছা ওদের সাথে কথা বললে তোমার সমস্যা কি।
=সমস্যা আছে। এখন তেকে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলাতো দুরের তাকাতেও পারবা না।
=কেন ??
=কারণ, তোমাকে আমার মনের কারাগারে বন্দি করে রাখব। চাইলেও পারবা না।
=তাই..
=হুম। হাত তুলো হাতকড়া পরাবো।
=হাতকড়া কেন !
=প্রেম আদালতের রায় অনুযায়ী ৩০২ধারা মোতাবেক আমার মনের কারাগারে শাস্তির নির্দেষ দেওয়া হলো।
=তাহলে আমি পালাই।
এখান তেকে শুরু দুই মনের কথোপকথন। আামার ছুটি শেস হওয়া বিধায় নিজ কর্ম স্থলে চলে এসেছি। ফারাহ্ সাথে প্রতিদিন ফোনে কথা হয়। রাগ অভিমান এসব নিয়ে ভালো চলছে আমাদের মাঝে।
প্রতিদিনের মতো আজও ফোন দিতেছি কিন্তু ফোন বন্দ পাচ্ছি। তাই তার কাছের কর্মরত এক মহিলা কনস্টেবলকে ফোন দিলাম। তার ভাষ্য অনুযায়ী ফারাহ্ ট্যুরে গেছে তার বান্ধবিদের সাথে। তাও আবার বান্দরবানের থানচি উপজেলায়। এসব শুনে মাথা ঠিক রাখতে পারছিনা। যেখানে পাহাড়ি সন্ত্রাসিদের আবাস্থল। এরমধ্যে তাদের সাথে অনেকবার পুরোএলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তাই চিন্তা হচ্ছে যদি ফারাহ্দের সাথে কিছু হয়ে যায়। এমতাবস্থায় হাতের ওয়ারলেস ওয়াটকি থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে। যা শুনে আমি পুরো থ হয়ে গেলাম। থানচি বাজার থেকে দুই কিলোমিটার দুরে। একটি এলাকায় সন্ত্রাসীরা এলোপাতারি ভাবে হামলা চালিয়েছে এবং কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে।
সাথে সাথে হেড অফিস থেকে নির্দেষ আসল ঐ এলাকা ঘেরাও করার জন্য। আর দেরি না করে সশস্ত্র হয়ে জলপাই রংএর পোশাক গাঁয়ে দিয়ে রওনা হলাম আমরা ৫০জনের একটি দল। সাথে আকাশ পথে আক্রমণাত্বক হেলিক্পটার। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখলাম তারা রক্তখেলায় মেতে উঠেছে। সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ শুরু করলাম। পুরো তিন ঘন্টা পর পরিস্থিতি সামলাতে পেরেছি। চারদিকে একবারে নিস্তব্দ। গাছের সবুজ পাতাগুলো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। পাশের একটি কুড়ে ঘর তেকে আওয়াজ আসছে। বাচাও বাচাও বলে চিৎকার করছে। কয়েকজন সৈনিক গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম নিরীহ পাহাড়িয়া আর শহরের কিছু পর্যটক। তাদের ভিতরে ফারাহ্ কে দেখে মনটা নড়াচড়া দিয়ে উঠল। তাকে এভাবে এখানে দেখব ভাবতেই পারিনি আমি। তার চেহারাতে অন্ধকার নেমে এসেছে। ফর্সা মুখটা মলিন হয়ে গেছে। আমাকে দেখা মাত্র ঝাপটে ধরে কান্না শুরু করে দিছে। কিন্তু তাতে আমি আগ্রহ না দেখিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সম্পর্ণ করে দিলাম। কান্নার জন্য মেয়েটার মুখ লালচে হয়ে গেছে।
আমারও কান্না চাপছে। তবে তা প্রকাশ করতে পারছিনা। কারণ, দেশ রক্ষার শপথ নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছি। কান্না পেলে চলবেনা, কান্না আমাদের মানায় না। শত্রু মোকাবেলায় পিছু হটা আমাদের কাম্য নয়। আমাদের কাম্য হাজারও শত্রুর বাঁধা পেরিয়ে সামনের ধিকে অগ্রসর হওয়া। অনেকদিন হয়ে গেছে ফারাহ্ সাথে যোগাযোগ করছিনা অভিমানে। সে অনেক চেষ্টা করেছিল যোগাযোগ করতে কিন্তু পারেনি। আমার মায়ের কাছে গিয়ে নাকি কান্নাকাটি করতেছে।তার সাথে কথা না বলার জন্য। ছুটি পেয়ে বাসায় গেলাম। বাসায় গিয়ে দেখতেছি মামা আর কাজি সাহেব। বুঝতে বাকি রইলনা আর। মায়ের সাথে দেখতেছি ফারাহ্ র বাবা মাকে। মাত্র ঘন্টা ক্ষনিকের আনুষ্ঠানিকতায় সারা জীবনের সংসারের অধ্যায় শুরু হলো। সারাদিন ক্লান্তি ভরা ছিলাম। এবার একটু বিশ্রাম নেওয়া দরকার। বিশ্রাম বললে ভূল হবে ঘুমাতে হবে। রুমে প্রবেশ করলাম। ফারাহ্ এসে সালাম করে খাটে বসে পরল। আমি পাশে গিয়ে শুয়ে পরলাম। ফারাহ্ এসে মাথার নিচ থেকে বালিশ নিয়ে ফেলল।
=এটা কি করলে! (আমি)
=কি করেছি? (ফারাহ্)
=বালিশ নিয়েছ কেন?
=কি করব তাহলে। বাসর রাতেও তুমি আমাকে এড়িয়ে চলতেছ।
=আজকে না আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে।
=ঘুমাতে পারবা না।
=কেন?
=আগে বলো এতদিন কথা বলনায় কেন আমার সাথে।
=রাগে অভিমানে। ট্যুরে যাওয়ার সময় আমাকে একটু জানালে কি এমন ক্ষতি হতো।
=দুঃখিত, তুমিতো তোমার সম্পর্কে কিছুই জানাও নি। তাই তোমার মামার কাছ থেকে সব জেনেশুনে তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম।
=এখনতো নিজেই সারপ্রাইজ হয়েগেছো। আচ্ছা,বালিশটা দাও ঘুমাব।
=না দেব না। আমাকে কষ্টে রেখে নিজে সুখে থাকতে চাও। তা হবে না। এর জন্য তোমাকে শাস্তি দেওয়া হবে।
=কি শাস্তি, ম্যাডাম।
=৩৪০ধারা মোতাবেক আমার মনের কারাগারে যাবৎজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডদিত করা হলো।
=তার মানে তোমাকে সারাজীবন আমার কাধে নিয়ে ঘুরাতে হবে।
=কেন! আর কাউকে ঘুরানোর সখ আছে নাকি।
=হ্যা না মানে আছে।
=কি বলেছ তুমি। দাড়াও দেখাচ্ছি মজা। এই বলে বালিশ দিয়ে শুরু করল অত্যাচার। বালিশটা নিয়ে ফেলতে হবে না হলে ধপারফা করে ফেলবে।
=এই কি করতেছ বালিশ চিড়ে যাবে তো।(আমি)
=তোমাকে চিড়ব আগে বালিশ না। কতবড় সাহস অন্যকে নিয়ে ঘুরার ইচ্ছা।
=মাফ চায় আর বলবনা। এখন একটু থামুন দয়াকরে।
=হুম, মনে থাকে যেন।
=তোমাকে না আজ সত্যিই লাল পরীর মতো লাগতেছে। এসময় একটা পরী থাকলে। তাহলে দেখতাম পরীর সুন্দরতা বেশি না তোমার।
=কাউকে দেখার দরকার নাই।
ফারাহ্ লজ্জায় আমার বুকে মুখ লোকালো। আসলেই অনেক কষ্ট পেয়েছে ও। আমার উচিত হয়নি ওর সাথে এভাবে যোগাযোগ না রাখা। ফারাহ্কে আজ সত্যিই পরীর মতো লাগতেছে। গোলাপের সৌভাসে মুখরিত করে তুলছে ঘরের প্রতিটি কানায়। চাদেঁর আলোয় খেলা করা গাছের ডালপালার ছায়াবৃতি পড়ছে ঘরের আঙ্গিনায়। পর্দার আড়াল হয়ে আসা চাদেঁর আলো ঝিকিমিকি করছে। অজানা অনুভুতি সাড়া দিয়ে উঠছে বার বার। ফারাহার মুখে মিষ্টি হাসির প্রলাপ ফুটে উঠেছে। তার মিটিমিটি করা চোখজোড়া আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এক সুখময় পরিবেশে বেসে আছি চোখ্যজোড়াদ্বয় এক হয়ে।
=কি দেখ এমন করে আমায়। (ফারাহ্)
=তোমাকে দেখার কি আছে।(আমি)
=আবার, এবার কিন্তু সত্যিই হাতকড়া পরাব।
=কোথায় পরাবে?
=কেন, হাতে।
=শুধু হাতে। অন্য কোথাও পরানো যায় না।
=কি বলতে চাও তুমি। আমি বুঝি না মনে কর।
=তাহলে দেরি করে লাভ কি। তাড়াতাড়ি পড়িয়ে দাও হাতকড়া।
=এই একদম ফাজলামো করবে না। চলো বাহিরে যাব।
=এত রাতে বাহিরে। কেউ দেখলে কি মনে করবে।
=এত কিছু বুঝিনা। আসো আমার সাথে।
=যাব না। তুমি যাও।
=কি যাবে না। কোথায় হাতকড়াটা, নিব এখন।
=না না যাচ্ছি।
কি মেয়ের প্রেমে পড়েছিরে আমি। বিয়ের দিনেও হাতকড়া নিয়ে বসে আছে। তারপরেও বুঝতে হবে বউ আমার যেমন তেমন না পুলিশ অফিসার।