ট্রেনের টিকিট নেয়ার জন্য লাইনে দাড়িয়ে আছে নাবিলা।অসহ্য
রকমের গরম তাই মাঝে মাঝে বাতাস করছে।নাবিলা খুলনা স্টশনে
আছে,গন্তব্য ঝিনাইদহ।নাবিলা অনেকদিন পর বাসায় ছুটি কাটিয়ে
আবার তার পড়াশোনার জন্য চলে যাচ্ছে।ঝিনাইদহ সরকারি ম্যাটসে
সে পড়াশোনা করে।
ট্রেন ছাড়তে এখনো কিছুটা সময় বাকি,তাই নাবিলা কিছু হালকা খাবার
কিনে ওয়েটিং রুমে বসলো।পাশে বিস্কুটের প্যাকেট
থেকে বিস্কুট নিয়ে খেতে লাগল নাবিলা।নাবিলা কিছুটা অবাক পাশ
থেকে অন্য একটি ছেলে বিস্কুট খেতে লাগল।
নাবিলা একটা নিচ্ছে সাথে সাথে ছেলেটিও একটা করে বিস্কুট
নিচ্ছে।
নাবিলার এখন কেমন জানি অসহ্য লাগছে ছেলেটার আচরন
দেখে।নাবিলা ভাবছে একটুখানি ভদ্রতা ছেলেটার মধ্যে
নেই,আরে বাবা বিস্কুট খাবি খা, অন্তত তো অনুমতি তো নিতে
পারে।অসভ্য ছেলে একটা।পকেটে টাকা নেই বললেই
হতো আমি না হয় বিস্কুট কিনে দিতাম,তাও এসব অভদ্রতা নাবিলা সহ্য
করতে পারছে না।শেষে নাবিলা কথা না বলে থাকতে পারল না..
—এই যে শোনেন আপনি আমার বিস্কুট খাচ্ছেন কেনো
শুনি?
–ছেলেটা (চুপ)
—ভদ্রতার খাতিরে তো অনুমতি তো নিতে পারেন নাকি।
—(চুপ)
—কি কথা বলতে পারেন না নাকি।অভদ্রতা তো খুব ভালই করছেন
দেখি।
–ছেলেটা আবারো (চুপ).
>নাবিলা হঠাৎ খেয়াল করলো ছেলেটা আর বিস্কুট খাচ্ছে না,যখন
থেকে নাবিলা খাওয়া বন্ধ করেছে।নাবিলা ছেলেটার ভাবসাপ
বোঝার জন্য আবারো একটা বিস্কুট নিলো।
ওমা একি ছেলেটা তো আবার একটা বিস্কুট নিলো।
কিছুক্ষন এভাবেই চলতে থাকলো।নাবিলা একটা নিচ্ছে তো
ছেলেটাও একটা নিচ্ছে।নাবিলাও বিষয়টা সহ্য করে যাচ্ছে আর
রাগে খিটবিট করছে।নাবিলা ভাবছে এর আগে কখনো এমন
ছ্যাচড়া দেখিনি।অনেক রকমের ছ্যাচড়া দেখেছে কিন্তু এই
ছেলেটার মত বিস্কুট ছ্যাচড়া দেখেনি।
এক পর্যায়ে বিস্কুটের প্যাকেটে আর মাত্র একটা বিস্কুট পড়ে
আছে।নাবিলা বিস্কুট টা নিচ্ছে না তার কারন ছেলেটা কী করে
দেখার জন্য।একটু পরেই ছেলেটা বিস্কুট হাতে নিলো।
নাবিলা ভাবছে কত্ত বড় অভদ্র আমার প্যাকেটের বিস্কুটা আমার
নেয়ার অধিকার,কিন্তু ছেলেটা এমন ভাব করছে যেনো
বিস্কুটের প্যাকেটটা তার।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই ছেলেটা নাবিলা কে অবাক করে
দিয়ে বিস্কুট টা দুই ভাগ করে ফেললো।অর্ধেকটা নাবিলার হাতে
ধরিয়ে দিয়ে বাকি অর্ধেকটা ছেলেটা খেতে খেতে উঠে
পড়লো।
নাবিলা এক দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটার
চলে যাওয়া দেখছে।কী আজব ছেলেরে বাবা।
কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে এলো নাবিলা। হঠাৎ-ই তার খেয়াল
হলো তার ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গিয়েছে।নাবিলা দ্রুত গতিতে
গিয়ে ট্রেনে উঠল।তাড়াহুড়োর মাঝে নাবিলা ভুলেই গিয়েছে
তার হাতে এখনো সেই বিস্কুটের অর্ধেকটা রয়েছে।নাবিলা
কিছুক্ষন মনে মনে ঘটনাটা ভাবল আর মুচকি মুচকি হাসি দিতে দিতে
বিস্কুটের অর্ধেকটা খেয়ে নিলো।
কিছুক্ষণ পরেই নাবিলা পানি খাওয়ার জন্য ব্যাগ থেকে বোতলটা
বের করে দেখতে পেলো তার কেনা বিস্কুটের প্যাকেট
টা ব্যাগেই রয়ে গেছে,নাবিলা ভাবছে তাহলে কী সে ঐ
ছেলের বিস্কুট খেয়েছে,নাহ নাবিলার আর ভাবতে পারছে না।
সে নিজে ভুল করে অন্য একটি ছেলেকে বকা
দিয়েছে,নিজের কাছেই এখন সে ছোটবনে যাচ্ছে।নিজে
নিজেই এখন কেমন লজ্জিত লাগছে তার কাছে।
নাবিলা মনে মনে ভাবছে ছেলেটাকে একবার সামনে পেলে
ক্ষমা চেয়ে নেয়া যেতো।কিন্তু সেই সুযোগ কী আর
আছে,কোথায় পাবে সেই ছেলেটা কে। তার নাম ঠিকানা কিছুই
তো জানে না নাবিলা।নাবিলা পানি খেয়ে নিয়ে ঐসব চিন্তা বাদ দিয়ে
এখন ট্রেনের জানালার ভেতর থেকে আসা বাতাসটা কে অনুভব
করছে।আর তার সাথে নাবিলার খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে।
ট্রেন দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে তার আপন ঠিকানায়।।
দেখতে দেখতে নাবিলা তার গন্তব্য পৌছে গেলো।নাবিলা
ট্রেন যেই নামতে যাবে ঠিক তখনই পড়ে যাওয়ার উপক্রম
হলো,কিন্তু অজানা কোন একটা হাত তাকে ধরে ফেললো।
নাবিলা তাকিয়ে দেখলো সেই ছেলেটা যার বিস্কুট সে নিজের
মনে করে খেয়ে ছিলো।নাবিলা নিজেকে সামলিয়ে নিলো
কিছুক্ষনের মধ্যেই।পরক্ষনে দেখলো সেই হাতগুলো আর
তাকে ধরে নেই।
নাবিলা এদিক ওদিক খুজতে লাগল সেই ছেলেটা কে,তাকে যে
ভীষন রকমের দরকার নাবিলার।ছেলেটার কাছ থেকে যে
তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।সে না জেনে বুঝে ঐরকম একটা
কাজ করে ফেলেছে।নাবিলা ভীষন লজ্জিত তার জন্য।
অনেক খোজাখুজির পরেও ছেলেটা কে পেলো না নাবিলা।
কিছু সময়ের জন্য পুরো স্টেশন খুজে ফেললো তার চোখ
দুটি কিন্তু কোথাও পেলো না সেই ছেলেটা কে।হঠাৎ করে
কেমন উধাও হয়ে গেলো।
নাবিলা মনে মনে বলছে এগুলো কী স্বপ্ন নাকি সত্যি।
ছেলেটার সাথে দেখা হয়েছে সেটাও এক অদ্ভুদ ভাবে।
কী অন্য রকম ছেলে একটা।কোন কথাও পর্যন্ত বলে না।হঠাৎ
আসে আবার হঠাৎ করে চলে যাচ্ছে।ক্ষমা চওয়ার সুযোগটা
পর্যন্ত পাচ্ছে না। অবশেষে নাবিলা হতাশ হয়েই তার
হোস্টেলের উদ্দেশ্য রওনা হলো।
নাবিলা তার ক্লাসের খুবই ভাল ছাত্রী।তবুও আজকে স্যার তাকে
বকা দিছে কারন সে ক্লাসে অমনোযোগী ছিলো,তার কারনটা
অবশ্য সেই ছেলেটা।নাবিলা তার ক্যাম্পাসের এককোণে বসে
আছে।কিন্তু পরক্ষনে তার চোখ দুটো কাউকে দেখে
আটকিয়ে গেলো,,নাবিলা ভুল দেখছে নাতো,নাহ সে ঠিকই
দেখছে,,দ্রুত গতিতে সে ঐ ছেলেটার কাছে চলে
গেলো–
–এই যে শুনুন? (নাবিলা)
–জি আমাকে বলছেন? (ছেলেটা)
–আপনার নামটা জানতে পারি?
–আই লাভ ইউ।
–মানে কী,আমি আপনার নাম জানতে চেয়েছি।
–আমার নাম মাহিন।
–তাহলে প্রথমে ঐ কথা বলাটার মানে কী?
—ভালবাসি তাই বলেছি।
–দেখুন আমার এসব একদম পছন্দ না।গতকাল আমি একটা ভুল
করেছি তাই সরি বলতে আসছি।আর প্রথম দেখায় একটা
মেয়েকে কিভাবে ভালবাসার কথা বলেন।
–প্রথম দেখা না,আমি তোমাকে অনেকদিন ধরেই চিনি।তোমার
বাসা খুলনা,আর আমারও।
–আর আপনি আমার ক্যাম্পাসে কী করছেন।
—কী বলো,এই ক্যাম্পাস টা আমারও,আমি তোমার এক বছরের
সিনিয়ার।
–ও আচ্ছা,, সরি গতকালকের জন্য।
>কথাটা বলেই নাবিলা চলে আসলো রাগে খিটবিট করতে
করতে।যতটা ভাল ভেবে ছিলো ছেলেটা কে ঠিক ততটাই
অভদ্র।এমন বেহায়া ছেলে দুটো দেখেনি নাবিলা।
এরপর থেকে প্রতিদিনই মাহিন নাবিলা কে ফলো করে।নাবিলাও
বেশ অসস্তিবোধ করে,তার কারন তার দিকে কেউ ড্যাব ড্যাব
করে তাকিয়ে থাকে।নাবিলা ক্যাম্পাস থেকে বের হলেই তার পিছু
পিছু আসতে থাকে মাহিন।আজকেও তার বীপরিত হয়নি,তবে
নাবিলাও ছাড়ার পাত্র না–
–কী ব্যাপার প্রতিদিন ফলো করেন কেনো আমাকে? (নাবিলা)
–যাতে অন্য কেউ চুরি করে নিয়ে না যায় তোমাকে? (মাহিন)
—এই নেন বিশ টাকা,আমাকে আর পাহাড়া দিতে হবে না।
–দেখো তোমাকে যদি অন্য কেউ চুরি করে তাহলে আমি
বিয়ের আগেই বিধবা হবো।
–মানে কী?পুরুষ মানুষ বিধবা কিভাবে হবে?
—তা বলতে পারব না।
–অসহ্য,, দেখুন এসব আমার ভাল্লাগে না।আর আপনাকেও আমার
পছন্দ না।
>নাবিলা মুখে এই কথা গুলো বলে চলে আসলেও মাহিন সে
পছন্দ করা শুরু করেছে।তার বেশ ভালই লাগে মাহিনের পাগলামী
গুলো।
আরো অনেক বার নাবিলা কে ভালবাসার
কথা বলল মাহিন কিন্তু বার বার নাবিলা খুব সুন্দর করে মাহিনকে ফিরিয়ে
দিয়েছে।
.
কিছুদিন ধরে নাবিলার আশে পাশে মাহিন কে
আর দেখা যাচ্ছেনা। এদিকে অজনা
শঙ্কায় নাবিলার আবচেতন মন ছটফট
করছে। কারণ নাবিলাও যে মাহিন কে ভালবেসে ফেলেছে।
নাবিলা ভাবছে মাহিন কে এতোটা ঘোড়ানো ঠিক হয়নি।
.
মাহিন এর কথা ভাবতে ভাবতেই কোথা থাকে মাহিন এসে হাজির-
–কী আমাকে খুজছো বুঝি?
–না,না,তোমাকে কেন খুজবো?
–তাহলে আমার বন্ধুদের কাছে আমার কথা জানতে চেয়েছিলে
কেনো?
–এমনিতেই। (একটু লজ্জা মাখা মুখ নিচু করে বলল নাবিলা)
–ঠিকআছে তাহলে চলে যাচ্ছি।
–নাবিলা মাহিনের হাত ধরে মাহিন কে জড়িয়ে ধরে বলল-কোথায়
যাচ্ছেন?
—দেখি অন্য কাউকে পাই নাকি.
—একদম মেরে ফেলবো অন্য কারো পিছু ঘুরলে।(কাঁদো
কাঁদো গলায়)
–তাহলে কার পিছে ঘুরবো।
—আমার পিছে। (একটু আহ্লাদি কন্ঠে)
–তাহলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।
>>নাবিলা মাহিন কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। শুরু হলো
দুজনের ভালবাসার এক নতুন প্রহর।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা