—-সকাল থেকে মায়ের একটাই বাক্য “আজ তোকে দেখতে আসবে, অন্তত শ্যাম্পু কর চুলগুলো”। যাহ তোর ওদের সামনে শাড়ি পরতে হবেনা।
— আমিও দ্বিতীয় বার কথা না বাড়িয়ে শ্যাম্পু করে চুল শুকাতে ফ্যানের নিচে বসলাম।
খোলা চুল বাতাসে উড়ছে। মা মাথায় হাত দিয়ে বলল, “আচ্ছা তন্দ্রা ছেলেটা তো সবদিক থেকে ভালো তবে তোর আপত্তি কোথায়”? কই আপত্তি মা, আমি কিছু বলেছি! নাহ তা বলিসনি কিন্তু আমি তো মা আমার চোখ কি সহজে ভুল কিছু দেখে! আমি গলা কাঁপিয়ে বললাম, হুমমম। মা কি বুঝলো জানিনা, হঠাৎ শব্দ করে বললেন, জানিস তন্দ্রা তোর বাবা বলছিলো ছেলেটা খুব লম্বা। তুই তো আবার লম্বা ছেলে পছন্দ করিস বলছিলি একবার আমায়।
এখন ভাল্লাগেনা মা। ওমা সেকি এসব পছন্দ পরিবর্তন হয় না কি! চুপ করে রইলাম। আর একটা কথা তোর বাবা আরও বলছিলো, ছেলেটা দেখতে নাকি ফর্সা। কিন্তু তুই তো আবার কালো ছেলে পছন্দ করিস। এখন ফর্সাই ভাল্লাগে। কি হলো তোর? যাই বলছি সব বিপরীতটাই বলছিস। সেরকম কিছুনা “মা” সময়ের সাথে চাহিদা তো বদলে যায়, আমার ব্যতিক্রম তো হওয়ার কথা নয় কি বলো? অত হিসেব বুঝিনা, রেডি হয়ে নে পাত্রপক্ষ এলো বলে। বলতে বলতে ওরা বিকেলে তিনটের দিকে আসলো। খুব সাধারণ ভাবে আমি তাদের সামনে গেলাম। যদিও বাবা মা দুজনেই ক্ষেপে রয়েছেন আমার সাজ দেখে। বোনরাও খুব মন খারাপ করে আছে, ওদের ধারণা এবারও বিয়েটা হবেনা।
–বাবা ডাকতেই ওড়নাটা পেছন থেকে গায়ে জড়িয়ে পাত্রপক্ষের সামনে বসলাম।
যদিও মাথায় ঘোমটা নেই আমার। ছেলের মায়ের প্রথম প্রশ্ন! তুমি তো চাকরি করো মা, কোথায় থাকতে চাও? এরকম প্রশ্নের মানে কি এক দেখায় মেয়ে পছন্দ হয়েছে আমি বুঝতে পারিনি। জ্বী মানে! ছেলের বাবা বললেন, আসলে বিয়ের পর তুমি ট্রান্সফার হওয়া পর্যন্ত বাবার বাড়ি না শশুরবাড়ি থাকতে চাও?
–জ্বী শশুরবাড়ি।
উনারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল, মাশাল্লাহ সুন্দর কথা। আর কোন প্রশ্ন না করে ছেলের বাবা বললেন,মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে। এবার আপনারা চাইলে এগোনো যায়। কথাটা শুনে বুকের ভেতর ধ্বক্ করে উঠল। কেমন যেন বমি পাচ্ছিল, মাথা ঘুরছে।
আমি উঠতে গিয়ে উঠতে পারিনি। কিন্তু চোখের জল কেনো যেনো একটু বেরিয়ে পড়লো। আমার মা এবার বলছিলেন, আমার মনে হয় ওরা দুজন একটু আলাদা কথা বলে নিলে হতো। সবাই সায় দিতে আমরা আলাদা ঘরে বসলাম। ছেলের বলা প্রথম কথা!”কাউকে ভালোবাসলে সহজে ভুলে যাওয়া যায়না, চোখের জলটা আগে মুছুন”। একটু অবাক হয়ে বললাম, আপনারও বুঝি কাউকে ভুলতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। তাই ভুলতে বুঝি নতুন জীবনে পা দিতে চাইছেন!
জ্বী না! তবে আপনাকে দেখে মনে হয়, আপনার ভেতরের অনেক কষ্ট কাউকে না পাওয়ার। আমি এরকম একটা মানুষই খুঁজছিলাম। যে ভালোবাসার জন্য হাহাকার করবে, আর আমি তার পাশে বন্ধুর মতো সারাজীবন থাকবো। প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললাম, আচ্ছা, আপনি তো বেশ লম্বা আপনার সাথে দাড়ালে আমাকে বেমানান লাগবে সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই আপনার পছন্দের তালিকায় লম্বা মেয়ে?
আমি আপনার বায়োডাটা দেখে তবেই সরাসরি এসেছি।বউ হিসেব যে আমার হবে তার মাথাটা ঠিক আমি আমার সে জায়গায় চাই যেখান থেকে হৃদয়ের সব অনুভূতি কান পেতে শোনা যায়। সেক্ষেত্রে আপনিই বেটার আমার জন্য। ছেলেটার কথায় মুগ্ধতা আছে। এবার মনে হচ্ছিলো নতুন করে কিছু ভাবা যায়। যার জন্য এতটা বছর অপেক্ষা করলাম সে যখন ফিরিয়ে দিলো তখন তাকে ভেবে সময় আর কত পার করবো!
আমার ভাবনায় একরাশ সংকোচ নিয়ে ছেলেটা বলল, আপনি যে এত সাধারণ হয়ে বাবা মায়ের সামনে গিয়েছিলেন, ব্যপারটায় আমি মুগ্ধ। আমি জানি কারো জন্য সাজার আগ্রহ এখন আপনার নেই। কিন্তু বিশ্বাস করুন, যদি আপনি রাজি থাকেন তবে আপনার হৃদয়ের রং ফিরিয়ে আনতে এই দুটো হাত ধরার অনুমতি পাবে কি এই মানুষটা? এত্ত সুন্দর কথা দেখতে এসে আমি আরও চমকে গেলাম। এবার ভদ্রলোক বললেন, একটা কথা না বললেই নয়, “আপনি কত মায়াবি জানেন আপনি! আর সে মায়ার কারণ আপনার ঠোঁটের নিচের তিল।
আমার এবার মনে হলো, যাকে হারিয়ে ফেলেছি সে যতটা আমায় খুঁটিয়ে চিন্তা করেনি, ঠিক ততটা ভালোবাসা নিয়ে কেউ একজন আমার জন্য ভাবছেন। উনার থেকে বেটার, পারফেক্ট কাউকে আর আমি পাবনা। হাসি দিয়ে বললাম, চলুন নিচে যাই। হুম, কিন্তু আমাকে কি আংটি পরানোর দায়িত্ব দেওয়া যায় কিছু তো বললেন না! সব যদি আমরাই বলি, মুরব্বিরা কি বলবে? শুনুনঃ তন্দ্রা আপনি তো কিছুই বললেন না! আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে?
–যে মানুষটা আমার কষ্টের ভাষা বোঝার দায়িত্ব নিতে চাইছে তাকে তো পছন্দ করা যায়। কিন্তু ? কিন্তু কি !
পছন্দ করার প্রাথমিক সাহস দেখিয়েছি তবে পুরোপুরি বিশ্বাস করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। হুম আমি জানি, “যতটা কষ্ট আপনি পেয়েছেন, ঠিক সহজে কাউকে বিশ্বাস করা আপনার পক্ষে সম্ভব ও নয় “। তবে আপনার দুটো হাত ধরার অনুমতি যদি পাই, তবে সারা জীবন আপনার বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করে যাবো। আমায় কি ততটা যোগ্য ভাবা যায়? আবির সাহেবের মুখে এ কথা শুনে আনন্দে চোখে জল বেরিয়ে পড়ল। আসলে আমরা কি ভাবি আর উপরওয়ালা কি ভাবেন এই ভেবে!