খুব মিস করি তোমায়

খুব মিস করি তোমায়

—–ঐ দাড়া তুই(রাগন্তিত হয়ে।.(মিম)
—দুস্ত আমি কিছু করিনাই(ভয়ে ভয়ে)।(হৃদয়)
—ঐ তুই দৌড় দিবিনা দৌড় দিলে খবর আছে আজ তর।(মিম)
—আমি কিছু করিনাই। (হৃদয়)
—কিছু করিস নাই ভালো কথা তরে দাড়াইতে বলছি ঐ খানেই দাড়া। আজ যদি দৌড় দেস তাহলে তর এক দিন কি আমার এক দিন।(মিম)
—আমি আর এমন ভুল করবো না। (হৃদয়)

এই বলে হৃদয় খিচ্চা দৌড় দিলো।মিম তার পিছন পিছন ছুটতে লাগলো আর বলতে লাগলো।

—–তরে বলছিলাম দৌড় না দিতে আজ তরে ধরতে পারলে কি যে করবো আল্লাহ জানে।(মিম)

হৃদয় দৌড়াচ্ছেই কারন সে জানে মিম আজ তার বারো টা বাজাবে।হৃদয় দৌড়াচ্ছে আর বার বার পিছন ফিরে দেখছে মিম কে।হঠাৎ কিছু একটার সাথে হৃদয় হোচট খেয়ে পড়ে গেলো আর মাথাই অনেক আঘাত পেলো।
হৃদয় জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।প্রায় অনেক ক্ষন পরে হৃদয় এর জ্ঞান ফিরলো।হৃদয় দেখতে পেলো সে তার রুমে শুয়ে আছে আর তার বিছানার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে মিম।

—-কি রে তরে না বললাম দৌড় না দিতে।এখন কোথাই যাবি তুই।(মিম)
—দেখ মিম অমন করে তাকাবি না আমার দিকে তকে দেখে আমার খুব ভয় লাগে।(হৃদয়)
—-আমায় যখন এতোই ভয় পাস তাহলে আমার কথা শুনিস না কেন।কত বার দৌড় দিতে মানা করলাম।(মিম)
—তখন দৌড় না দিলে তো তুই আমার বারো টা বাজিয়ে দিতি।(হৃদয়)
—তো দৌড় দিয়েই কি লাভ হলো।এখন কোথাই যাবি তুই।এখন তর তের টা বাজাবো।(মিম)
—দুস্ত মাফ প্লিজ আর কখনো এমন ভুল করবো না তুই যা বলবি তাই করবো।(হৃদয়)
—ঐ তরে না বলছিলাম ঐ তানিসা নামের মেয়েটার সাথে কথা না বলতে।(মিম)
—দুস্ত আর বলবো না ঐ মেয়ের সাথে কথা প্রমিস করলাম।(হৃদয়)
—আর যদি কখনো দেখি ঐ মেয়ের সাথে কথা বলতে তাহলে তর মুখ আমি সেলাই করে দিবো।(মিম)
—আচ্চা দিস।তর জন্য কতটা ব্যথা পাইলাম আজ। নে এবার নিজের বউ এর মতো আমার সেবা যত্ন করে আমাকে সুস্থ কর তাড়াতাড়ি।(হৃদয়)

—কি বললি তুই।(মিম)
—না মানে তুই তো আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড তাই না তো আমায় একটু সেবা যত্ন কর।(হৃদয়)
—ওকে দাড়া তর আজ সেবা যত্ন করি।(মিম)
—-এই না থাক লাগবো না তর সেবা করা।তুই সেবা করলে আমি সুস্থ না হয়ে অসুস্থ হবো আরো।(হৃদয়)
—-হুম বুঝতে পেরেছিস।এই আমি বাসায় যাবো এখন পরে আবার আসতাছি।(মিম)
—-ওকে যা।(হৃদয়)

এই বলে মিম চলে গেলো। মিম আর হৃদয় দের বাসা পাশাপাশি।সেই ছোট বেলা থেকেই তাদের বন্ধুত্ব।এক জন আরেক জন কে ছাড়া থাকতেই পারেনা।তাদের দুজন কে দেখলে মনে হয় যেন প্রেমিক আর প্রেমিকা।মিম অনেক রাগী মেয়ে। হৃদয় মিম কে খুব ভয় পায়।হৃদয় কে অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখলে মিম খুব রেগে যায়।আজ কলেজ হৃদয় তানিসা নামের এক মেয়ের সাথে একটু কথা বলেছিলো আর এটা মিম দেখে ফেলেছিলো।এর পর যা হলো আপনারা তো দেখতেই পেলেন। প্রায় ৭ দিন পর হৃদয় এখন পুরোপুরি সুস্থ।কলেজ ক্যাম্পাসে হৃদয় আর মিম বসে আছে আর গল্প করছে।

—এই হৃদয় কখনো যদি আমি তকে ছেড়ে চলে যায় তখন কি করবি।(মিম)
—কেন রে ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি।(হৃদয়)
—না নাই তবে যদি একেবারে মরে যায় তখন যেতেই হবে তকে ছেড়ে।(মিম)

হৃদয় এই কথা শুনে খুব রেগে গেলো আর মিম এর চুল টেনে ধরলো।

—এই আরো বলবি এসব।(হৃদয়)
—-এই চুল ছাড়। (মিম)
—না ছাড়বো না, বল আরো কোনো দিন এসব বলবি।(হৃদয়)
—এই ব্যথা পাইতাছি ছাড়, ওকে আর বলবো না। (মিম)
—এই বারের মতো ছেড়ে দিলাম।(হৃদয়)
—এই জানিস তুই কাল না তর বাবা মা আর আমার বাবা মা আমাদের বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছিলো।আমাদের নাকি বিয়ে দিয়ে দিবে।(মিম)
—-হুম জানি মা বলছে তকে নাকি আমার বউ বানাবে।কিন্তু তকে বিয়ে করলে তো আমার জীবন টা তেজ পাতা হয়ে যাবে।(হৃদয়)
—–কি বললি তুই।(মিম)
—না বললাম তকে বিয়ে করলে আমার জীবন টা ঝাক্কাস হয়ে যাবে।(হৃদয়)
—এই কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবিনা।চল বাসাই চলে যাবো।(মিম)
—-হুম চল হবু বউ।আর বিয়ের পরেও কি আমায় তুই করে বলবি।(হৃদয়)
—না সব সময় না কিন্তু যখন রেগে যায় তখন বলে ফেলতেও পারি।চলেন জামাই।(মিম)

এই বলে তারা বাসায় চলে গেলো। আসলে তাদের বাবা মা বুঝতে পেরেছিলো যে হৃদয় আর মিম একে অপর কে ছাড়া থাকতে পারবে না।তাই তারা হৃদয় আর মিম যাতে এক সাথে সারাজিবন থাকতে পারে তাই তাদের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।সময় হলে তাদের বিয়ে দিয়ে দিবে। হৃদয় আর মিম এর দিন গুলি ভালোই কাটছিলো।প্রতিদিন ই কিছু মিষ্টি ঝগরা,হালকা অভিমান আর মাঝে মাঝে মিম এর দৌড়ানি সব মিলিয়ে তাদের দিন গুলো অনেক ভালোই কাটছিলো। বেলা প্রায় ১২ টা বাজে হৃদয় ঘুমিয়েই আছে।কারন প্রতিদিন ই হৃদয় এর ঘুম ভাঙে মিম এর ডাকে।কখনো বিছানায় পানি দিতো বা কখনো কানের কাছে বাশি বাজিয়ে ঘুম ভাঙায় হৃদয়।হৃদয় ঘুমিয়েই আছে, এমন সময় হৃদয় এর মা হৃদয় কে ডাক দিলো।

—এই হৃদয় এই হৃদয় উঠ তাড়াতাড়ি(হতাশার স্বরে)।(মা)
—কি হয়ছে মা এতো সকাল সকাল ডাকছো কেন।(হৃদয়)
—–এখন বারো টা বাজে আর তুই বলছিস সকাল।(মা)
—কি বলো আজ মিম এখনো আমাদের বাসাই আসে নাই।(হৃদয়)
–না আসবে কিভাবে আমি এই মাত্র শুনলাম সকালে নাকি মিম তার বোন কে নিয়ে কোথাই যেন ঘুরতে গিয়েছিলো তখন নাকি তার এক্সিডেন্ট হয়ছে।(মা) এই কথা শুনে হৃদয় লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লো।

—–কি বলো মা,মিম এখন কোথাই সে ঠিক আসে তো।(হৃদয়)
—মিম এখন হাসপাতালে তার অবস্থা নাকি বেশি খারাপ।(মা)

হৃদয় এর মাথাই যেন আকাশ ভেঙে পরলো।সে দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো।হৃদয় অবশেষ হাসপাতালে আসলো।এসে দেখতে পেলো মিম এর বাসার সবাই কাদছে।হৃদয় তাদের কাছে জানতে চেষ্টা করলো মিম এর অবস্থা কেমন।কিন্তু কেও কিছু বলতে পারলো না।অপারেশন থিয়েটার এ মিম।ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলেই অবস্থা জানা যাবে।হৃদয় এর খুব টেনশন হচ্ছে।এমন সময় ডাক্তার বের হলো।

—ডাক্তার মিম কেমন আছে ঠিক আছে তো সে।(হৃদয়)
—না মানে। (ডাক্তার)
—না মানে কি ডাক্তার সে ঠিক আছে তো।(হৃদয়)
—আসলে সে মাথাই অনেক আঘাত পেয়েছে।অনেক রক্ত ক্ষরন হয়েছে।আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।আসলে বলতে গেলে রোগীর অবস্থা বেশি ই খারাপ।(ডাক্তার) ডাক্তার এর এই কথা কথা শুনে হৃদয় কি করবে বুঝতে পারছিলো না।

—ডাক্তার তার সাথে কি একবার দেখা করা যাবে।(হৃদয়)
—-২৪ ঘন্টা পর পারবেন দেখা করতে যদি সম্ভব হয়।(ডাক্তার)

এই বলে ডাক্তার চলে গেলো।হৃদয় এর খুব কান্না পাচ্ছিলো।খুব কষ্টে কান্না চেপে রাখছিলো হৃদয়।এমন একটা দিন হৃদয় কে দেখতে হবে এটা হৃদয় কল্পনাও করেনি।প্রায় ২৪ ঘন্টা পর।

—-ডাক্তার এখন কি অবস্থা।(মিম এর বাবা)
—বেশি ভালো না রোগীর জ্ঞান ফিরেছে।কিন্তু এখনো সঙ্কা মুক্ত না।আরো একটা বড় সমস্যা হয়েছে।….(ডাক্তার)
হৃদয় দাঁড়িয়ে ডাক্তার এর কথা শুনছে।কিন্তু ডাক্তার এর এই কথা শুনে হৃদয় ডাক্তার এর কাছে আসলো আর উত্তেজিত হয়ে বললো।

—-কি হয়ছে ডাক্তার কি সমস্যা হয়ছে মিম এর।(হৃদয়)
—প্লিজ,আপনারা ভেঙে পরবেন না।(ডাক্তার)
হৃদয় এর বাবা মা ও এসেছে হাসপাতালে।ডাক্তার এর এই কথা শুনে সবার মুখেই চিন্তার ছাপ।
—কি হয়ছে ডাক্তার মিম এর।(,হৃদয়)
—আসলে রোগী তার মাথায় সব চেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছে আর কোথাও বেশি আঘাত পাইনি।তার জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু কথা বলতে পারছেনা। সে বুঝতে পারছে কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা।সে তার কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।…(ডাক্তার) ডাক্তার এর কথা শুনে সবার মাথাই যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।সবাই কাদছে।হৃদয় কি বলবে আর বুঝতে পারছেনা।

—ডাক্তার শুধু একবার তার সাথে দেখা করা যাবে প্লিজ ডাক্তার।… (হৃদয়)
—হুম কিন্তু বেশি লোক যাবেন না।আর রোগীর কাছে যেয়ে কেও কান্না কাটি করবেন না এতে আরো বিপদ হতে পারে। (ডাক্তার)

ডাক্তার অনুমতি পেয়ে হৃদয় আরো কয়েক জন ভিতর এ গেলো।হৃদয় দেখতে পেলো মিম এর সারা মাথায় ব্যান্ডেজ,মুখে অক্সিজেন মাস্ক।হৃদয় মিম এর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।হৃদয় খেয়াল করলো মিম এর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।সে বুঝতে পারলো মিম তাকে দেখেই কাদছে।হৃদয় এর ও খুব কান্না পাচ্ছিলো কিন্তু খুব কষ্টে কান্না চেপে রাখলো কিন্তু কান্না চেপে রাখলেও কি চোখের পানি লোকানো যায়।হৃদয় বুঝতে পারলো মিম তাকে কিছু বলতে চাইছে।কিন্তু বলতে পারছেনা।মিম ইশারার মাধ্যমে হৃদয় এর কাছে খাতা আর কলম চাচ্ছে।হৃদয় নার্স এর কাছ থেকে খাতা আর কলম নিয়ে মিম কে দিলো।হ্রদয় দেখতে পেলো মিম খাতায় কি যেন লিখছে।হৃদয় এটাও বুঝতে পারলো খুব কষ্ট হচ্ছিলো মিম এর লিখতে।হৃদয় বার বার বারন করছে মিম কে লিখতে।তারপরেও মিম লিখেই যাচ্ছে।অবশেষে মিম হৃদয় কে সেই খাতা দিলো।হৃদয় খাতার লেখা গুলো পড়তে লাগলো।

জানিস হৃদয় আমি মনে হয় আর বাচবোনা।তর সাথে সারাটা জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম সেটা মনে হয় আর হবেনা।আমি জানি তকে খুব বিরক্ত করতাম কিন্তু তুই সব হাসি মুখে মেনে নিতি।খুব মিস করবো তর সাথে কাটানো দিন গুলি কে।তুই ভালো থাকিস জানি আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবিনা তাই ভালো থাকার চেষ্টা করিস।নিজের খেয়াল রাখবি।আমায় ভেবে ভেবে কাদবিনা।তর সাথে হয়তো আর কোনো দিন ঝগড়া করতে পারবোনা আর তকে দৌড়ানি দিতে পারবোনা।খুব খুব খুব মিস করবো তকে।আমি চলে গেলে ভাবিস না তুই।ছায়ার মতো সব সময় তর পাশে থাকবো হয়তো তুই দেখতে পাবিনা।ভালো থাকার চেষ্টা করিস তুই মিম এর লেখা গুলো পরে হৃদয় আর কান্না চেপে রাখতে পারলো না।হৃদয় কাদছে আর বলতে লাগলো।

—কিছু হবে তর আমি আছি তো।…(হৃদয়)

হৃদয় খেয়াল করলো মিম এর কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তাই হৃদয় চিৎকার করে ডাক্তার কে ডাক দিলো। ডাক্তার সবাই কে বের করে দিলো সেখান থেকে। মিম অপারেশন থিয়েটার এর ভিতরে।সবাই বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।হৃদয় এর খুব কান্না পাচ্ছে।কি করে সে মিম কে ছাড়া থাকবে সেটা ভেবে তার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
প্রায় ৩০ মিনিট পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলো।সবাই ডাক্তার কে ঘিরে ধরলো।

—ডাক্তার এখন ঠিক আছে তো।(হৃদয়)
—না মানে। (ডাক্তার)
—না মানে কি ডাক্তার আমার মিম ঠিক আছে তো।(হৃদয়)
—-i am sorry.আমরা যথা সাধ্য চেষ্টা করেছি কিন্তু বাচাতে পারিনি।(ডাক্তার)

হৃদয় এই কথা শুনেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। আজ প্রায় ৭ দিন হয়ে গেছে মিম মারা গেছে।হৃদয় এসেছে মিম এর কবর জিয়ারত করতে।কবর জিয়ারত শেষে হৃদয় কাদছে আর মিম এর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলছে।

—জানিস তুই কেও আর এখন আমার বিছানায় পানি ঢেলে বা কানের কাছে বাশি বাজিয়ে ঘুম ভাঙায় না।
—কেও আর আমায় বলেনা ঐ মেয়ের সাথে কথা বলবি না।
—কেও আর আমার সাথে এখন ঝগড়া করেনা।
—-কেও আর এখন আমাকে দৌড়ানি দেই না।
—তকে কখনো ভুলতে পারবো না।
—-খুব মিস করি তর সাথে কাটানো দিন গুলো কে।
—-খুব মিস করি তকে।

যেখানেই থাকিস তুই খুব ভালো থাকিস।

THE END

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত