ভাইয়ার বউ চুরির ব্যাপারটা এলাকার সবার মধ্যে গুঞ্জন ফেলে দিলো।ভাইয়া নাকি আরেকজনের বউকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে।ভাইয়ার সাথে যেই মেয়েটি আমাদের বাড়ি এসেছে সেই মেয়েটি লাল শাড়ি পরে লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে।নতুন বউদের মতোই লাগছে তাকে।ঘটনা পুরোপুরি শোনার জন্য আমি ভাইয়াকে বললাম-
-ভাইয়া,তুমি নাকি বউ চুরি করে এনেছো?
ভাইয়া হেসে বললো-
-কে তোকে এসব বলেছে রে?
-বাহিরের মানুষজন বলাবলি করছে।
-আমি কারো বউ চুরি করি নি।তোর ভাবীকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলো।আমি তোর ভাবীকে সেখান থেকেই লুকিয়ে আমার সঙ্গে করে নিয়ে এসে কাজী অফিসে বিয়ে করেছি।যদিও আরেকজনের হবু বউ ছিলো।সেটা বলতে পারিস।এর বেশী কিছু না।
আমি ভেবেছিলাম মা এসে ভাইয়ার গালে কষে চড় বসিয়ে দিবেন কিন্তু নতুন বউ নাকি তারও বেশ পছন্দ হয়েছে।
মা তার পুত্রবধূর পাশে বসে বললেন-
-শোনো,তোমাকে আমার ভালো লেগেছে বলেই আমি অঞ্জুকে এই ব্যাপারটায় কিছু বলি নি।আমার জন্য হলেও অঞ্জুর একটা বিয়ের দরকার ছিলো।তুমি আমার সব দায়িত্ব নিয়ে ঘর চালাবে এখন থেকে।
নববধূ হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।পরদিন মায়ের পুত্রবধূ রান্নার কাজেও হাত দিলো।নতুন ভাবীর মজাদার রান্না খাওয়ার আশায় বসে রইলাম।ভাবী বিরিয়ানি রাধলো।স্বাদের বিরিয়ানি টেস্ট করার জন্য আমি আমার ফ্রেন্ডদেরকেও দাওয়াত করলাম।ফ্রেন্ডদের কাছে কেমন লেগেছে তা আমার জানা নেই।কিন্তু বিরিয়ানি একটু চেখে দেখার পরই আমি আবিষ্কার করলাম সেটা প্রচুর লবণাক্ত।জিহ্বায় এমন একটা লবণাক্ত স্বাদের অভিজ্ঞতা হলো যা বলার বাহিরে।আমি কাউকে কিছু না বলে আমার ফ্রেন্ডদের মধ্যে একজনকে খোচা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
-কি রে..খাবার কেমন হয়েছে?
গাধীটা কিছু না বুঝেই বললো-
-ভালোই তো হয়েছে।তোর কি খেতে ইচ্ছে করছে না?না খেতে পারলে এঁটো করিস না।রেখে দে।
-তোর কাছে কি বিরিয়ানি মজা লাগছে?
-মন্দ লাগছে না তো।
আমি বাকরুদ্ধ হওয়ার মতো হয়ে রইলাম।ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
-পরী,আরেকটু বিরিয়ানি দিবো?
আমি ঢোক গিলতে গিলতে বললাম-
-না।আমি বিরিয়ানি তেমন একটা খেতে পারি না।পেটে গন্ডগোল হয়।
আমি বাদে সবাই ঠিকঠাক মতোই খেলো।কেউ লবণ বেশী নিয়ে বিন্দু পরিমাণ অভিযোগও করলো না।আমি খুব কষ্টে বিরিয়ানিটুকু শেষ করলাম।সবার মাঝে আমি যদি লবণ বেশীর অভিযোগ তুলে ধরি তাহলে এতে ভাবী
অপমানিত হতে পারে আর তাই আমি চুপচাপ খাবার মুখে পানি দিয়ে ঢোক গিলে গিলে খাবার শেষ করলাম।সবাই যখন খাবার খেয়ে উঠে পরলো তখন আমি আড়ালে ভাবীকে জিজ্ঞেস করলাম-
-ভাবী,তুমি কি লবণ বেশী খাও?
-কেন?কি হয়েছে?বলো তো..
-বিরিয়ানি অস্বাভাবিক কটা ছিলো।
আমার কথা শোনামাত্রই ভাবী দাঁত দিয়ে জিহ্বায় কেটে বললো-
-সর্বোনাশ..তুমি কি বড় প্লেটের খাবারটা নিয়েছিলে?
আমি বললাম-
-হ্যা।
-ওই প্লেটটা তোমার ভাইয়াকে দিবো বলে ইচ্ছে করেই আমি লবণ বেশী দিয়েছিলাম।কারন তোমার ভাইয়ার ধারণা আমি নাকি ভালো রাধতে জানি না।তার এই ধারণা হওয়ার কারনেই তাকে ভড়কে দিয়ে মজা করতে চেয়েছিলাম।
লবণ বেশীর অভিযোগ না করে ভাবীকে বাচিঁয়ে নিজেকে মহিয়সী প্রমাণ করার আগেই ভাবী আমাকে চমকে দিলো।ভাইয়া বউ চুরি করেছে সেটা ভালো তাই বলে এমন বউ নিয়ে আসবে তা ভাবতেও পারি।ভাইয়াকে সতর্ক করে দিতে হবে বলে আমি ভাইয়ার কাছে ছুটে গেলাম।