—-এই রোহান, এদিকে আয় তো (মিষ্টি)
—- জ্বী আপু বলো
—- এই অসময় এমন নাচতে নাচতে বাড়ি আসলি, কোথায় গিয়েছিলি?
—- আপু আমি তো শুভ ভাইয়ার সাথে ক্রিকেট খেলতেছিলাম।
—- কি!! ঐ পাজি ছেলেটার সাথে? তোকে না বলেছি ওর সাথে কখনো কথা বলবি না।
—- আপু তুমি ভাইয়াকে মোটেও পাজি বলবানা। একমাত্র তুমিই ভাইয়াকে দেখতে পারোনা, তাছাড়া সবাই তো ভাইয়াকে ভালবাসে।
—- হয়েছে হয়েছে তোকে আর ওর পক্ষ নিয়ে উকালতি করতে হবেনা।কত ভালো তা আমার জানা আছে।এখন ভাগ এখান থেকে।
—- হুম।
হ্যালো ফ্রেন্ডস, আমি শুভ। বাসা সাতক্ষীরা। আর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্র। আর এতক্ষণ যাদের ঝগড়া শুনছিলেন তারা হলো মিষ্টি আর রোহান।মিষ্টি দেখতে যেমন মিষ্টি তেমনি ওর কন্ঠটাও তেমন মিষ্টি, শুধু আমার বেলাতেই ও নোনতা আর কর্কস। আমরা ওদের বাসায় ভাড়া থাকি। দুই তলা বিল্ডিং এর উপরের তলায় আমারা আর নিচের তলায় মিষ্টরা থাকে। বিকাল ৫টা, ভাবলাম ছাদ যাই। যেই ভাবা সেই কাজ। চলে আসলাম ছাদে। এসে দেখি মিষ্টি ছাদে দাড়িয়ে আছে। আমি বেশ দূরত্ব রেখে দাড়িয়ে ব্যস্ত শহরের বুকে ছুটে চলা ব্যস্ত মানুষ গুলো দেখতে ব্যস্ত। দুজনেই নিরব, কেউ কারোর সাথে কথা বলছিনা। হটাৎ মিষ্টি বলল ঃ – আপনি ছাদে এসেছেন কেন?
—- কেন ছাদে আসতে নিষেধ আছে নাকি?
—- তা হয়ত নেই, তবে যেখানে দেখছেন একটা মেয়ে একা ছাদে দাড়িয়ে আছে, আর আপনিও চলে এসেছেন। আর আসবেন নাই বা কেন, আপনি তো একটা ছ্যাচড়া।মেয়ে দেখলে আর ঠিক থাকতে পারেননা।
—–(ওর কথার এখন কি উত্তর দেওয়া উচিৎ সেটা এখন বুঝতে পারছিনা। হটাৎ মিষ্টির এমন কথা শুনে নিজের ভেতরই কেমন জানি সংকোজ বোধ হচ্ছে। তারপরেও বললাম) আমি তো বেশ কিছুক্ষন হলো এসেছি, তাহলে এখন কেন একথা বলছেন? আর যতদূর জানি আমি কোন ছ্যাচড়া নই।
—– হুহ, আপনি যে কেমন তা তো সেই কলেজে বুঝতে পেরেছি।
— আপনি আসলে ভু……..( কথাটা শেষ করার আগেই মিষ্টি ছাদ থেকে নেমে গেল)।
আসলে সেদিন কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের নবীন বরন অনুষ্ঠান ছিল।তাই সকালে কোনমত নাস্তা করেই কলেজে চলে আসলাম। নতুন কলেজ, চারপাশে সব নতুন মুখ, নিজেকে যেন কেমন একা একা মনে হচ্ছে। এখন তারাতারি কলেজ অডেটোরিয়ামে যেতে হবে। অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টের সমানের সিড়ি দিয়ে নামতে যাবো, হটাৎ পা মচকে যাওয়ায় সামনে থাকা মেয়েটার উপর পড়লাম। কলেজ ড্রেস দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা ইন্টারের ছাত্রী।
—- হে ইউ, অন্ধ নাকি?
— সরি আপু, হটাৎ পা মচকে যাওয়ায় দূর্ঘটনাটা ঘটেছে।
— বুঝি বুঝি, আপনার মতন ছেলেরা এমনই।
ইচ্ছা করে এসব করেন আর পরে বিশ্বের সব অজুহাত জড় করেন। অসভ্য কোথাকার। আপনার মতন ছেলের জন্য কলেজ নামক পবিত্র স্থান নয়, রাস্তার গলি বা চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়াটাই ভাল মানায়।
—- সত্যিই আমি ই…
—- ঠাসসসস আর একটা কথাও বলবি না।
দূর হ আমার সামনে থেকে, আর কোন দিন যদি আমার সামনে এসেছিস তাহলে তোর খবর আছে। সেদিন কিছু না বলেই সেখান থেকে বাসায় চলে এসেছিলাম। ঐ ঘটনা মনে পড়লে আজও চোখের কোনে অশ্রু জমা হয়, চারদিক কেমন জানি ঝাপসা হয়ে ওঠে। হে খোদা আর কেউ না জানুক তুমি তো সবই জানো, যে আমি ইচ্ছে করে এসব করিনি।
ছাদে আর দাড়াতে ভালো লাগছেনা। তাই রুমের উদ্দেশ্যে পা পাড়ালাম। রুমে এসে ডায়েরিতে নিজের ভেতরের অদৃশ্যমান কষ্টের দৃশ্যমান রুপ দেওয়ার চেষ্টা করছি। দুচোখ দিয়ে ক্রমাগত জল ঝরছে, কারন আপনাকে তীর নিক্ষেপ করা হলে সেটা আপনার শরীরকে ভেদ করবে কিন্তুু কেউ যদি আপনাকে মিথ্যে অপবাদ দেয় তাহলে সেটা আপনার মনকে বারংবার ক্ষত-বিক্ষত করবে। এখন রাত ৮টা বেজে ১৫ মিনিট। হাসপাতাল থেকে কে যেন বাবাকে ফোন করে বলল যে রুপার বাবা নাকি অ্যাকসিডেন্ট করেছে। কথাটা শুনে বাবা মা দুজনেই হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দিল। আমি রুমে শুয়ে আছি। এখন রাত ১০টা বাজে। বাইরে থেকে কেউ দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। মনে হয় বাবা মা এসে গেছে। তাই তারাতারি ফোন রেখে দরজা খুললাম। দরজা খুলে তো অবাক!!
—-একি আপনি এখানে (মিষ্টি এসেছে)
—- আঙ্কেল ফোন করেছিল,
বাবার অবস্থা নাকি খুবই খারাপ। এক্ষুনি ও নেগেটিভ রক্ত লাগবে,কিন্তু কোথাও এই গ্রুপের রক্ত পাওয়া যাচ্ছেনা। আঙ্কেল বলল আপনার রক্তের গ্রুপ নাকি ও নেগেটিভ, তাই আপনাকে হাসপাতালে যেতে বলল।
—- আচ্ছা আমি রেডি হয়ে আসতেছি।
— হুমম।
—- আপনি আপনার রুমে যান, আমি হাসপাতালে যাচ্ছি। (বলেই পা বাড়ালাম)
—- এই যে শুনেন ( পেছন থেকে মিষ্টি ডাকল)
—- হুমম বলেন
—- আমিও আপনার সাথে যাব
—- না থাক, আপনি বাসায় থাকেন সেটাই ভাল হবে।
—- প্লিজ নিয়ে চলেন।
—- একটা চরিত্রহীন লম্পট ছেলের সাথে গেলে আপনারই সমস্যা হতে পারে, আপনি বাসায় থাকেন।
—- এখন এসব কথা বলবার সময় নয়, আপনার পায়ে পড়ি প্লিজ নিয়ে চলেন।
—- ওকে চলেন।
মিষ্টিকে নিয়ে হাসপাতালে এসে মিষ্টির বাবাকে রক্ত দিয়ে রাতেই বাসায় চলে আসলাম। মা বাবা আর মিষ্টি ওখানেই ছিল। ৭ দিন মিষ্টির বাবা হাসপাতালে ভর্তি ছিল। মাঝে মাঝে মিষ্টি ও আমার সাথে ওর বাবাকে দেখতে হাসপাতালে যেত।রিকশায় যখন ও আমার দিকে চেপে আসতো তখন আমি সরে বসতাম। ও আড় চোখে আমার দিকে তাকাত কিন্তু আমি সেটা বুঝেও না বোঝার ভান করতাম। এ ক’দিনে মিষ্টির মধ্য অনেক পরিবর্তন এসেছে। রোহানের থেকে আমার খোঁজ খবর নেয়। আমি কখন কি করছি, কোথায় যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে আমি পাত্তা দেয় না। এমন কি ওর সাথে কথাও বলতাম না। সেদিন বিকালে আমি আর রোহান ছাদে বসে ছিলাম। রোহানকে কবিতা শোনাচ্ছিলাম। এরই মাঝে মিষ্টি যে কখন আমার পিছনে এসে দাড়িয়েছে তা আমি খেয়ালই করিনি। কবিতা শেষ হতেই পেছন থেকে মিষ্টি বলে উঠল
—- বাহ্ দারুণ কবিতা আবৃত্তি করেন তো আপনি। বাড়ির মধ্যে এত্ত বড় রবীন্দ্রনাথ আছে আর সেটা আমি খেয়ালই করিনি।
—- ( মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আবার চোখটা নামিয়ে নিলাম)
—- এই রোহান তোর দুলাভাই কথা কয় নাকেন?
—- আপু দুলাভাই কই?
—- ক্যান চোখ কি তোর হাটুতে নাকি, দেখছিস তোর সামনে বসে আছে। যে এইমাত্র তোকে মিষ্টি করে কবিতা শুনালো।
—– এই রোহান, তোমার আপু এগুলো কয় কি!! পাগল হয়ে গেল নাকি?
—- রোহান তোর দুলাভাই কে বল আমাকে যেন মোটেও পাগল না বলে, তাহলে কিন্তু বাসায় ভাত বন্ধ করে দেব।
—- ইসসস আইছে, ভাত বন্ধ করে দেবে। বললেই হলো না?
—- রোহান তোর দুলাভাই কিন্তু বাড়াবাড়ি করতেছে, এখনও ভাল ভাবে কথা বলতে বল। তা না হলে কিন্তু কপালে শনি থেকে শুক্র সবই আছে।
—- রোহান তোমার আপু আমাকে কি করবে শুনি।
—- রোহান তোর দুলাভাই কে বলে দে, রাতে যখন বাসায় আসবে তখন দরজা খুলব না। সারারাত বাইরে দাড় করিয়ে মশার কামড় খাওয়াবো।
—- আমি তো কিছুই বুঝতেছি না। ও আপু তুমি বিয়ে করলা কবে, আর করলেই যদি তাহলে আমাকে দাওয়াত করলে না কেন? আমি তো তোমার একমাত্র ছোট ভাই। মিষ্টি রোহানের কথা শুনে মিটমিটিয়ে হাসছে। রোহান নিচে চলে গেল।
—- মিষ্টি এটা কি ধরনের ছেলে মানুষি?
—- আমি কোন ছেলে মানুষি করছিনা শুভ।
—- ছেলে মানুষি নয়তো কি?
—- আমি যা বলছি সত্যি বলছি শুভ।
বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি অন্যদের মতন বলবনা আমাকে রাজরানী করেরাখতে, বলবনা সুখ আর ঐশ্বর্যের প্রচুর্যে মুড়িয়ে রাখতে। তুমি তোমার বুকে আমাকে ঠাই না দিলেও তোমার পায়ে আমার এতটুকু জায়গা করে দিও।
—- বাহ্ বাহ্ বাহ্। বাহবা না দিয়ে আর পারলাম না। সত্যিই অসাধারন অভিনয় করো তুমি। দুদিন আগেও যে ছেলেটা তোমারছোখে ছ্যাচড়া ছিল আর আজ সে তোমারকাছে ফেরেশতা!! কাল যে সে তোমারচোখে আরও বড় অপরাধী হবেনা তার কি গ্যারান্টি? নাকি রক্তদানের কৃতজ্ঞতা দিচ্ছ ভালবাসা দিয়ে?
—- এভাবে বলো না, হ্যা আমি সেদিন ভুল করেছিলাম। কারণ তোমাকে যে কথাগুলো বলেছিলাম তার কোনটাই তোমার আচরণের সাথে যায়না। আর আমি তোমার বন্ধুদের থেকেও শুনেছি, তুমি এমন একটা ভাল ছেলেযে কিনা অন্যের খুশিতেই খুশি। প্লিজ তুমি আমাকে তোমার করে নাও।
—- আমি সেটা পারব না। বাই।(ছাদ থেকে রওনা দেব ঠিক তখনি মিষ্টি কাঁদতে কাঁদতে চেচিয়ে বলল)
—- আমি নিজেকে শেষ করে দিলে বিশ্বাস করবে তো যে আমি তোমাকে কতটাভালবাসি। (মিষ্টি ছাদ থেকে লাফ দিতেগেল, আমি দৌড়ে গিয়ে মিষ্টিকেআটকালাম। রাগের মাথায় একটা চড় থাপ্পড় দিলাম)
—- কি করছিলে বোকা মেয়ে, যদি কিছু হয়ে যেত বলেই(মিষ্টিকে জড়িয়ে নিলাম আমার বাহু বন্ধনে)
—- তাহলে কি হতো ( কাঁদতে কাঁদতে বলল মিষ্টি)
—- আমি নিজেই শেষ হয়ে যেতাম।
—- হি হি হি, ইসসস আইছে। ভালবাসেনা আবার এসব কথা কয়।
—- আমিও তোমাকে ভালবাসতাম তবে রাগে আর অভিমানে আর বলা হয়ে ওঠেনি।
—-কিহহহ!!
—- কই কি!
—- ভালবাসতাম মানে কি! এখন বাসো না?
—- আরে পাগলি বাসি তো আর ভবিষ্যতেও বাসব। কারণ সত্যিকার প্রেমিক প্রেমিকারাএকজনকেই ভালবাসে আর সেটা একবারই।
—- আহারে, আসছে আমার প্রেমিক মহাশয়। হি হি হি তাহলে আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।
—–হুুহ্
—- ওই
—-হুমম
—- আমাকেও একটা কবিতা শুনাও না
— উহু। রোহানকে শুনিয়েছি, ওর থেকে শুনো
—না তুমি শুনাও, আর সেটা এখনই।
—এখনই!!
—হুমম
— যথা আজ্ঞা মহারানী
দিন শেষে আমি তোমারি হবো থাকিনা যতই দূরে সন্ধ্যা কালে গান শুনাবো সন্ধ্যা পাখির সুরে। তোমার মেঘলা আকাশে রং ছড়াবো হবো পটে আঁকা জল ছবি আলোর মিছিলে রাঙিয়ে দিতে হবো প্রভাত বেলার রবি। তুমি আমার প্রথম ওগো তুমিই আমার শেষ থাকবো দু’জন পাশাপাশি জীবনে চায় কী আর বিশেষ!