অফিসের মিটিং শেষে পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে দেখি আজকে ও ৩ ঘন্টা লেট!! কল লিস্ট চেক করে দেখি ৪৭ টা কল আর ১১ টা ম্যাসেজ!!বুঝার আর বাকি রইল নাহ যে এই গুলো কার কাজ!!মিটিং এর কারণে মোবাইল টা সাইলেন্ট ছিল তাই কল,ম্যাসেজ আসছে যে বলতে পারবো নাহ!!!
যাই হোক এইবার আসি মূল গল্পে,, আসলে আজকে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সুমি ডেকে বললো যে অন্তত আজকে যাতে লেট নাহ করে একটু তাড়াতাড়ি ই বাসায় আসি,,কি নাকি কাজ আছে।অথচ আজকে অন্যদিনের তুলনায় উল্টো আরো দেরি করে ই ফিরলাম!!
পরিচয় টা দিয়ে নি এইবার,, (আমি আব্দুল্লাহ আল নোমান,,একটা ন্যাশনাল কোম্পানি তে ম্যানাজার পোস্টে এ জব করি,,আর আমার সহধর্মনী সুরাইয়া আক্তার সুমি,,হাউজ ওয়াইফ।আমাদের বিয়ে টা পারিবারিক ভাবে ই হয়েছে,,সেই কাহিনী নাহ হয় আর একদিন বলবো)
আবার আসি গল্পে,,
তারপর আর কি গাড়ি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলাম আর ভাবতে লাগলাম যে আজকে কপাল এ কি আছে,,ভাবতে ভাবতে ৪৮ মিনিট পর বাসায় এসে পৌঁছলাম,,, কলিং বেল বাজিয়ে অপেক্ষা করছি কখন সুমি দরজা খুলবে,,,আশ্চর্য ব্যাপার ১০ মিনিট ধরে কলিং বেল বাজিয়ে ই যাচ্ছি দরজা খুলার কোন নাম নেই,, উপায় নাহ পেয়ে সুমি কে কল দিলাম,,কল ধরছে ই নাহ,,তারপর আব্বু-আম্মু,ছোট বোন ঈশিতা কে ও কল করে যাচ্ছি কিন্তু কারো কল ধরার নাম নাই,,,
চিন্তায় পড়ে গেলাম,,কোন সমস্যা হলো নাহ তো,,নাকি সবাই ঘুমিয়ে গেছে,,আর ঘুমিয়ে যাইলে লাইট সব গুলো ই বা কেন জ্বলবে!!
এমনিতে বাহিরে প্রচুর ঠান্ডা পরতেছে,,সাথে কুয়াশা নাক মুখ দিয়ে ফ্রি তে ডুকতেছে আর সাথে সাথে সর্দি মামার আগমন গঠতে দেরি হলো নাহ!!!৪৯ মিনিট ধরে বাহিরে দাড়িয়ে আছি আর কলিং বেল দিয়ে যাচ্ছি!!!
আর তখন ই মনে হলো যে আজকে তো আমার আর সুমির প্রথম বিবাহ বার্ষিক,,,মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম হায় কি করলাম,, আর কিছু নাহ ভেবে ড্রাইভার কে কল দিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে আসতে বললাম,,গাড়িতে বসে বসে ভাবছি কি গিফট নেয়া যায়,,তার চেয়ে বেশি টেনশন হচ্ছে যে দোকান খোলা পাবো কিনা?
যাই ভাগ্য ভালো ছিল যে আমি আসার পর ই দোকান বন্ধ করার জন্য রেডি করতেছে,,তাড়াতাড়ি যেয়ে একলা নীল শাড়ী কিনলাম ৫০০০ টাকা দিয়ে,,একটা ১০ পাউন্ড কেক,,১ টা ফুলের তোড়া আর অনেক গুলো আচার চকলেট নিয়ে গাড়িতে উঠলাম!! বাসায় পৌঁছে কলিং বেল বাজাতে ই দরজা খুলে দেখি সুমি কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে আর বলতেছে,,
-তো নবাবের কি এতোক্ষনে ই আসার সময় হল?
-নাহ মানে আসলে বস হঠাত মিটিং ডাকলো আর তোমাকে কল করে ও জানানো হলো নাহ!
– থাক আর অজুহাত দিতে হবে নাহ আর নবাবের আজকে রাত টা বাহিরে ই কাটাতে হবে!
– কি বলো,, এতো ঠান্ডায়? অসুস্থ হয়ে পড়বো তো!
-কিচ্ছু করার নাই নবাবজাদা,, এটা ই আপনার শাস্তি।
-আজকের জন্য কি শাস্তিটা মওকুফ করা যায় নাহ?
-নাহ,,কারণ আজকে অপরাধ একটা নাহ দুইটা ই করছেন নবাব।
-কান ধরে বসে পড়ে সরি গো লক্ষি টা
-কোন কথায় কাজ হবে নাহ আজকে বলে দরজা টা লক করে দিলো।
কি জেদি রে,, বাপরে বাপ ১৫ মিনিট পর সুমির কল,,
-কি খুব হচ্ছে তাই নাহ নবাবজাদা
-হুম খুব,মওকুফ করো নাহ আজকের মত
-ওকে একটা সর্তে করতে পারি
-কি সেটা
-সবার সামনে ২০ বার কান ধরে উঠতে বসতে হবে
-ওকে(বাহিরে ঠান্ডা খাওয়া থেকে কান ধরা টাই ব্যাটার)
ভিতরে ডুকে তো আমি অবাক,,বাসায় এতো লোকজন,,আমার বন্ধ রা,,ওর বান্ধবী রা,,শশুর বাড়ির সবাই আরও অনেক আত্নীয়স্বজন,,,
-সুমির কানে কানে বললাম আজকের মত মাফ করে দাও নাহ,,নাহ মানে এতো গুলো মানুষের সামনে কান ধরলে কেমন দেখায় নাহ?
-নাহ,,কথা দিয়েছে এখন করো,,নাহ হয় শাস্তি আরো বাড়বে!!
আর কি করা সবার সামনে ই কান ধরতে হলো!! তারপরের কাহিনী দেখে তো আমি অবাক,,আমার রুম টাকে অনেক সুন্দর করে সাজানো,,ব্যালুন ফুল আরো কত কি!!! যেই আমি আমার কিনা কেক টা এগিয়ে দিতেছি সুমির দিকে তখন ও বলল
-লাগবে নাহ সব কিছুর ব্যবস্হা আগে থেকে ই করা আছে।
আর কি সবাই মিলে কেক কাটলাম,,আর সুমি আমার পুরো শরীর জুড়ে কেক মাখিয়ে দিলো!!বন্ধুরা তো আছে ই,, তারপর একেরপর এক গিফট পেতে পেতে আমি শেষ,,,তারপর সবাই মিলে অনেক মজা করলাম,,খাওয়া দাওয়া শেষে বন্ধুরা চলে গেলো আর বাকিরা আড্ডা দিতাছে,, সুমি কে ডেকে নিয়ে তার গিফট গুলো দিলাম ও অনেক খুশি হইছে। একটুপর বোন ঈশিতা আসলো,,আর তার ভাবিকে কি জানি বললো,,আর তখন ই মহারাণীর আদেশ ওদের নিয়ে বাহিরে ঘুরতে যেতে হবে এখন,,
-আজ নাহ গেলে হয় বাহ বোনটু,,আজকে নাহ বাহিরে অনেক ঠান্ডা
-দেখছি ভাবি নাহ নিয়ে যাওয়ার দান্ধা
-নাহ এখন ই নিয়ে যাবা নাহ হয় এখন আবার ঘর থেকে বের করে দিবো।
-থাক আর লাগবে নাহ,,চলো
তারপর আর কি ওদের নিয়ে গেলাম,,আর ওরা ফুসকা এই সেই খাইলো,,তারপর বাসায় আসলাম। ঘুমিয়ে পড়লাম শরীরটা অনেক দূর্বল লাগতেছে তাই,,এর মধ্যে সুমি এসে জাগিয়ে দিয়ে বললো
-আজ কোন ঘুম চলবে নাহ
-কেন,আমার নাহ শরীর অনেক দূর্বল লাগতেছে
-কোন অজুহাত চলবে নাহ,,আজকের রাত টাকে স্মরণীয় করে রাখবে।
– কিভাবে
-চাঁদ দেখতে দেখতে গল্প করবো
আর কি ও চাদে গিয়ে চাঁদ দেখতেছে আর গল্প করতেছে,,আর আমি মাঝে মাঝে ওর কোলে ঘুমিয়ে পড়তেছি আবার ওর ডাকে জেগে উঠতেছি!!! এভাবে ই চলতেছে আমার রাগী বউটার রাগ গুলো,,কিন্তু তার চেয়ে ভালো চলে আমার প্রতি ওর কেয়ার আর ভালোবাসা গুলো!!চলতে থাকুক ওর এমন রাগ আর চাওয়া গুলো আর আমিও ভালোবেসে তার সব কিছু মানিয়ে নিতে রাজি
সমাপ্ত