ভালবাসার আকঙ্খা

ভালবাসার আকঙ্খা

” আচ্ছা রুদ্র! সব সময় কি শুধু আমার শরীর নিয়ে খেলবে? বিছানায় বসে দোকানের হিসাব করছে রুদ্র। হঠাৎ করে অবনির এমন কথা শুনে রুদ্র কিছুটা ঘাবড়ে যায়। নিজের বউয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করবে না কার সাথে করবে। আর স্বামী স্ত্রীর মিলনকে তো শরীর নিয়ে খেলা বলেনা। হঠাৎ করে অবনি এমন কথা বললো কেনো।

– হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন কেনো অবনি ?
– মনে হলো তাই।
– স্বামী স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্ককে কি শরীর নিয়ে খেলা বলে অবনি?
– আমরা কী শুধুই নামে স্বামী স্ত্রী? না শারীরিক সম্পর্কের জন্য স্বামী স্ত্রী ?
– মানে কী অবনি?
– মানেটা তুমি ভালো করেই জানো রুদ্র।
– তোমার কথার কিছুই আমি বুঝতে পারছিনা?
– আমি এমন কিছু বলিনি যে তুমি বুঝতে পারবেনা।
– আমার মাথায় এসব ঢুকেনা।
– তুমি যখন আমার বুকের মাংসপিণ্ড নিয়ে খেলা করো। তার বাম পাশেই হৃদয় নামে একটা বস্তু আছে এটা জানো তো ?
– তো!
– সেখানে আমি রাত্রি বেলা ছাড়াও দিনের আলোয় কারো অস্তিত্ব অনুভব করি। সেটা কি তুমি বুঝতে চাওনা, না বুঝেও না বুঝার ভ্যান করো।
– আমি দোকানের কাজ নিয়ে ঝামেলায় থাকি, তাই তোমাকে হয়তো সময় দিতে পারিনি।
– তাহলে বিয়ে করলে কেনো? রাত্রি বেলা তো শরীর নিয়ে খেলা করার জন্য পতিতালয় আছে।
– দেখো অবনি! আমি তো এই সংসারের ভালোর জন্যই দিনরাত পরিশ্রম করি।
– রুদ্র তোমার এটাও মনে রাখা উচিৎ, তোমার ঘরেও একজন বউ আছে।

যার একটা মন আছে। যার ইচ্ছে আছে। তারও ইচ্ছে করে স্বামীর সাথে খোলা আকাশের নিচে হাঁটতে। তার সাথে নিজের সুখ দুঃখ গুলোকে ভাগ করে নিতে। বেলা অবেলায় স্বামীকে ফোন করে বিরক্ত করতে। তার সাথে বাহিরে কোথায় ঘুরতে যেতে। তোমার কাজের এতই চাপ যে, তুমি ভুলে যাও তোমার ঘরেও কেউ একজন তোমার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু এটা ভুলে যাওনা, তোমার ঘরে একজনমহিলা আছে। যার শরীর নিয়ে খেলা করতে পারবে। আমাদের বিয়ের ৬মাস হয়েছে এখনও তোমার সাথে কোথায় ঘুরতে যেতে পারিনি। একান্ত কিছু সময় কাটাতে পারিনি। পেরেছি শুধু আমার শরীরের চাহিদা মেটাতে।

কিন্তু রুদ্র শরীরের চাহিদার সাথে সাথে মনেরও চাহিদা মিটাতে হয়। নয়তো এই মানুষটা একটা সময় ভিতর থেকে মরে যায়। বলেই অবনি কান্না করা শুরু করলো। অনেক দিনের জামনো কান্না। অনেক দিনের জামানো কষ্টগুলো এক নিঃশ্বাসের সাথে বের করে দিলো। এখন কিছুটা কেঁদে নিজেকে হালকা করে নিবে। রুদ্রও অবনির কান্না থামানোর কোনো চেষ্টা করছেনা। কাঁদোক! অনেক দিনের জামানো কান্না। কাঁদলে যদি কিছুটা হালকা হয়। আসলে রুদ্র তো এই সংসারের সুখের জন্যই সারাদিন গাধার মতো কাজ করে। টাকা রোজগার করে, তাদের ভবিষতের জন্য। তাই সময় করে উঠতে পারেনা। তারও ইচ্ছে হয় বউকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। বউয়ের সাথে একান্ত সময় কাটানো। খোলা আকাশের নিচে হাতে হাত রেখে দূরে কোথায় ঘুরতে যাওয়া।সকালে ঘুম থেকে উঠে বউয়ের ভেজা চুলের ঘ্রাণ নেওয়ার। কিন্তু ইচ্ছে থাকলে তো আর সবকিছু হয়না।

এভাবেই কেটে গেলো কিছুদিন, তবে সেদিনের পর থেকে রুদ্র নিজেকে অপরাধী মনে করছে। আসলেই তো! অবনি তো আমার ভরসায় তার মা বাবা সবাইকে ছেড়ে আমার কাছে এসেছে।সকল বন্ধন ছিন্ন করে আমার সাথে স্ত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সে তো আমার কাছে তেমন কিছু চায়না। শুধু একটু সময় চায়। এখন রুদ্র কাজের চাপটা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। যতটা সম্ভব দোকানের কাজ দোকানে করে। কাজ শেষ করে, যতটুকু সময় পায় অবনিকে দেওয়ার চেষ্টা করে। সকলে ঘুম থেকে উঠে অবনির ভেজা চুলের ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে অনেক সময় কাজের চাপে আর হয়না। তবুও যথাসাধ্য চেষ্টা করে। এভাবেই একদিন ছুটির দিনে রুদ্র ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ তার মুখের মধ্যে ঠান্ডা ঠান্ডা কিছু অনুভব করলো রুদ্র। মুখে কয়েক ফোঁটা পানি।

চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে উঠলো সে।দেখে সে সদ্য স্নান করে আসা একটা সুন্দর রমণী রোদস্নান করছে। খোলা পিঠ বেঁয়ে চুলের পানি পড়ছে। হালকা সোনালী সূর্যের আলো এসে অবনির গায়ে পড়ছে। পানিতে সূর্যের আলো পড়ায় আরো মোহনীয় করে তুলছে অবনিকে। যেনো স্বর্গ থেকে নেমে আসা পরী। সদ্য স্নান করে ভেজা চুলে যেকোনো রমণীকে স্বর্গের পরীর মতো লাগে স্বামীর কাছে।রুদ্র তখন অবনির নেশায় মাতোয়ারা। মদের নেশা থেকেও এই নেশা ভয়ানক। এই নেশা কোনো বাঁধা মানেনা। কোনো ভয় নেই এই নেশায়।

রুদ্র অবনির কাছে গিয়ে হঠাৎ করেই অবনিকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো। অবনি ইচ্ছে করেই পিঠ খোলা রেখেছে। যাতে করে রুদ্রের নেশা ধরে যায়। অবেলায় ভালবাসা পাওয়ার আকঙ্খা অবনির মনে রয়ে গেছে। তাই অবনির এই আয়োজন। দুজন তখন দুজনের মাঝে হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে অন্য এক ভুবনে। যেখানে নেই কোনো বাঁধা, নেই কোনো ভয়। আজ দুজনার প্রেমে দুজান পাগল। নেশায় মগ্ন দুজান। ভালবাসার আকঙ্খায়।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত