>হ্যালো। (তুহিন)
>>জ্বি, কে বলছেন?(অনু)
এই নাদিম তুই কথা বল।আমি পারবোনা দোস্ত।প্লিজ। তুহিন নাদিমকে ফোন ধরিয়ে দিতে চাইছিল।কিন্ত নাদিম না করে দেয়।
>>কি হইছে কথা বলছেন না কেন??আজবতো (অনু)
>>আমি তুহিন।
>>ওহ, তা আপনি ফোন দিছেন কেন?আর নাম্বার কোথায় পেলেন?
>>আপনি নাকি আর স্যারের কাছে পড়তে আসবেন না?(ভয় নিয়ে বলল।)
>>না,তো?
>>কেন আসবেন না?কিছু হয়েছে?কেও কি কিছু বলেছে?
>>ব্যাপার কি?আজ আপনি আমার যাওয়া না যাওয়া নিয়ে এত জিজ্ঞেস করছেন হটাৎ?কখনো হাই অথবা হ্যালো বলেন নি স্যারের কাছে।
>>না, মানে নাদিম বলল যে আপনি আর আসবেন না তাই আরকি ভাবলাম খোজঁ নিয়ে দেখি কেন?
নাদিমকে আবার ফোনটা ধরিয়ে দিতে চায়।নাদিম আবার অস্বীকার করলেও তুহিন ওর কাছে ফোনটা রেখে কাপঁতে শুরু করে।
>>ওহ,না আসলে আপনার কি?
>>ওর কিছুইনা অনু।(নাদিম)
>>আরেহ নাদিম তুমি?
>>হ্যা।উনার শরমে হাত পা কাপাঁ শুরু করছে।
>>হিহিহিহি, এত শরম পেলে ফোন কেন দিছে?উনার কাছে ফোনটা দেও।
নাদিম তুহিনকে ফোন দিতে চায়, তুহিন উল্টাদৌকে উসাইন বোল্টের মত দম লাগানো দৌড় দেয়।একদৌড়ে বাসায়।
বাসায় যেয়ে সাথে সাথে রেফ্রিজারেটর থেকে হাফ লিটারের ঠান্ডা পানি বের করে এক নিমিষেই পান করল।হাত পা এখনো কাপঁছে।হার্টবিট উঠানামা করছে প্রচন্ড গতীতে।যদিও অনুর সাথে কথা বলার সময়ের সাথে এখনকারটা হাজার ব্যবধান।
অনু আর তুহিন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরে।একই কলেজে। দুজন দুজনকে পছন্দ করে।আর দুজনই সেটা জানে।অথচ আজ পর্যন্ত কেও কারো সাথে পড়ার বিষয় ছাড়া কথা বলেনি। আজ হটাৎ অনু কোচিং এ আর আসবেনা কথাটা শুনে মনের ভিতর ক্ষত সৃষ্টি হয়।যে মন ভরে আর অনুর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবেনা।কোন এক কারনে বন্ধু নাদিমকে বলে অনুর সাথে কথা বলে সমস্যাটা জানতে।কিন্ত নাদিম বলে দেয় সে সাহায্য করবেনা।করলে ওকেই একা করতে হবে।নাদিম শুধু ফোন করিয়ে দিবে কথা তুহিনকেই বলতে হবে।তুহিন অনেক ভেবেচিন্তে রাজি হয়। পরেরদিন কলেজ থেকে ফিরার সময় রাস্তায় তুহিনকে আটকায় অনু আর তার বান্ধবী জান্নাত।
>>তো তুহিন সাব কেমন আছেন?(জান্নাত)
>>এইত ভাল।আপনি?
>>ভালোই। আপনেরত এখন অনেক সাহস।
>>কোথায়??কি বলছেন?আর সাহস থাকতেই পারে।ছেলে হয়ে জন্মেছি সাহস আমার থাকবেনাত কি থাকবে?(মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল)
>>ওহ তাই নাকি?সাহসটা আরেকটু বাড়িয়ে কাওকে ফোন দিয়েন।নাহলে ফোন দেওয়ার দরকার নেই।বুঝছেন?(অনু,হাসি হাসি ভাব নিয়ে)
>>জ্বি আচ্ছা।
>>কোথায় যাচ্ছেন?
>>বাসায় আর কোথায় যাবো?
>>ব্যাপার কি আজ এত ভাব?কোনদিনত এমন ভাব নিতে দেখিনাই।(জান্নাত)
>>কোথায়?আর কি বলছেন?সাইড দেন বাসায় যাবো।
>>বাসায়তো এমনিও যাবেন ওমনিও যাবেন।আসেন একটু সামনা সামনা ফোনে কথা বলি।
>>জান্নাত বাদ দেসনা।কি করছিস এসব।যেতে দেনা ছেলেকে।
>>ওহ বাদ দিব?আমার বান্ধবীর মনে খুব কস্ট লাগছে?তাইনা?
>>আমি আসি।(তুহিন)
>>এই কোথায় যাচ্ছেন? দাড়ান দাড়ান।
তুহিনের হাত ধরে জান্নাত টান দেয়।তুহিন অন্যদিকে তাকিয়ে হাত ছুটাতে চেষ্টা করে।
>>হাত ছাড়েন।প্লিজ
>>না না, আজ আপনার সাথে প্রেম করব।
>>জান্নাত বেশি হচ্ছে ছেড়ে দে বলছি ওকে।
>>ছাড়বোনা।কি করবি?
>>দেখবি?
>>হুহ
>>এই দেখ।
অনু জান্নাতের সবগুলো চুল এলোমেলো করে দেয়।জান্নাত তাড়াতাড়ি তুহিনের হাত ছেড়ে নিজের চুল সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পরে।অন্যদিকে তুহিন ছাড়া পেয়ে চৌদ্দপুরুষের নাম স্বরন করতে করতে দৌড় দিতে থাকে।
তুহিনের দৌড় দেখে দুই বান্ধবী হাসতে হাসতে শেষ।
>>বেচারার কি অবস্থা হইছে দেখ।(জান্নাত)
>>আসলেই বেশি করে ফেলছিস।(অনু)
>>আমি বুঝিনা কি বুঝে যে এই গাধাটাকে তোর ভাল লাগল।
>>প্রেম করার জন্য গাধাই উপযুক্ত।জানিসনা এটা?
>>প্রেম?তাহলে তোকেই প্রপজ করতে হবে ও কোনদিন করবে বলে মনে হয়না।
>>হ্যা রে।আজ পর্যন্ত চোখে চোখ রেখে কেমন আছি পর্যন্ত বলেনি।অসুবিধা কি?আমি প্রপজ করলেই বা কি হবে?তবুও যদি গাধাটাকে সারাজীবনের জন্য পাওয়া যায়।
>>তা ঠিক।তা কবে করছিস?
>>এক সপ্তাহ সময় নিলাম তোর থেকে।এর মধ্যে ও প্রপজ না করলে আমি করব।
>>তুই যদি একবছর সময় নিতে ওকে দিয়ে প্রপজ করাতে তাহলেও মানতাম।এক সপ্তাহ?অসম্ভব।
>>দেখাই যাকনা।
>>আচ্ছা চল।
>>হুম
তুহিন ভয়ে শেষ।কাল কলেজ যাবে কিনা সেটা ভাবছে।কিন্তু কালতো কলেজে কিসের যেন একটা প্রোগ্রাম আছে।যার ভার অনেকটাই ওর উপরে কারন ও ওর ক্লাসের ক্যাপ্টিন। পরেরদিন কলেজে গেল।অনুকে দেখতে পেলনা।ভাবল হয়তো অসুস্থ তাই আসেনি।কিন্তু টানা তিনচারদিন কলেজে দেখা গেলনা অনুকে।তুহিন পাগলের মত খুজঁতে লাগল, অন্যদিকে অনু স্যারের কাছেও প্রাইভেটে আসেনা। তুহিন এবার চিন্তা করলো দেখা হলেই অনুকে প্রপোজ করবে।তাই অনু যেই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে তার আশপাশ দিয়ে হাটছে।বুকের হার্টবিট বাড়ছে আর কমছে।কি করবে বুঝে উঠতে কষ্ট হচ্ছে।সাথে সাথে কয়েকটা বন্ধুকে ফোন দিয়ে সেই জায়গায় ডেকে আনলো।
>>কিরে দোস্ত কি হইছে?(নাদিম)
>>অনুকে প্রপোজ করব।(তুহিন শরমে এক্কেবারে ভেনিশ)
>>হাহাহাহাহাহাহাহাহা(সবগুলা ফ্রেন্ড নিজেরা নিজেরা মিলে হাসা শুরু করে দেয়।)
>>হাসছিস কেন?
>>তুই প্রপোজ করবি কথাটা শুনে।
>>হাসার কি আছে?আজব।
>>একটা কথা বলি সামনে একটু পুকুর আছে।তুই যদি বলতি ওইটায় ১০০০ডুব দিবি আমরা সেটা বিশ্বাস করব।কিন্তু এইটা বিশ্বাস করতে পারবোনা।
>>আচ্ছা দেখ।আজ আমি ওরে প্রপোজ করেই ছাড়বো।বলছিত বলছিই।
>>আমরা বুঝতাছি ব্যাপারটা।তুই এমনিতেই টেনশনে।দাড়া আমরা ফুল এনে দিচ্ছি।আর কিছু লাগবো?
>নাহ।
>>হাহাহাহাহাহা(আবার হাসা শুরু করে দেয় সবাই)
>>ধ্যাত।
প্রায় ১ঘন্টা অপেক্ষা করার পরও অনুকে দেখলোনা।এইবার কি করবে সেটা ভেবে মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে তুহিনের।
>>দোস্ত চল জান্নাতের বাসায় যাই।ওরে দিয়ে অনুকে ডাকাইতে পারব।(নাদিম)
>>ভাই তোর দুইটা পায়ে ধরি। অন্যকোন মেয়ের বাসায় যাই কিন্তু ওর বাসায় যাইসনা।ইডেনের মেয়েরাও ওর থেকে ভাল।(তুহিন)
>>কিন্তু ও ছাড়াত অনুর বাসায় কেও যায়না।
>>তা অবশ্য ঠিক।তাহলে চল যাওয়া যাক।দেখি কি হয়।যা হবার হবে।
>>বাহ আজ এত সাহস।
>>চুপথাক আর কাজ কর।
সবাই মিলে জান্নাতের বাসায় যাওয়ার জন্যে রওনা দেয়।কিন্তু শর্ত থাকে যে শুধু তুহিনই জান্নাতকে ডাক দিবে।
তুহিনের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।জান্নাতের বাসার জানালার সামনে যেয়ে তুহিন জান্নাতকে ডাক দেয়।কিছুক্ষন পর জানালায় অনুকে দেখতে পেল।তুহিনের অবস্থা খারাপ।একটু পর দুজনই নিচে আসে।
>>কি হইছে?? (জান্নাত)
>>এই আস্তে বল।(অনু)
>>তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই অনু(তুহিন)
>>ও মাই গড। আপনি থেকে তুমি??(জান্নাত অবাক)
>>হ্যা বলো।
>>যদি মাঠের ওদিকে যেতে তাহলে ভাল হত।
>>আচ্ছা চল।
মাঠে যেতেই তুহিনের বন্ধুরা তুহিনের কাছে আসে।
>>এই বান্দরগুলো এখানে কেন?(অনু)
>>এমনিতেই।(তুহিন)
>>মনেত হচ্ছে আমাদের কিডন্যাপ করবা।
>>আরেহ নাহ।
>>হ্যা জানি।জান্নাত আছে।হাজার চাইলেও পারবানা।
>>হুহ।
তুহিন পকেট থেকে একটা গোলাপ ফুল বের করে অনুর সামনে বসে আই লাভ ইউ বলবে এমন সময় গোলাপ ফুলে রক্ত দেখে ঘাবড়ে যায়।তারপর নাকে হাত দিয়ে দেখে নাক থেকে রক্ত পড়ছে।প্রচন্ড পরিমানে।অনু আর জান্নাত অবাক।তুহিনের বন্ধুরা ছুটে আসল।ততোক্ষনে তুহিন জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে ভয়ে।জ্ঞান যখন ফিরলো তখন দেখলো হাসপাতালে। পাশে ওর আব্বু,আম্মু।আর অনু,জান্নাত,নাদিম বাকি বন্ধুরা একদিকে দাঁড়িয়ে আছে।কিছুক্ষন পর জানতে পারে এমনিতেই ঠান্ডা থাকায় আর মাথায় প্রচন্ড টেনশন নেওয়ার ফলেই মাথায় রক্তাচাপের সৃষ্টি হয়।
আর তুহিন এমনিতেই ভীতু প্রকৃতির তাই রক্ত দেখেই সেন্সলেস হয়ে যায়।দুইদিন বাসা থেকে বের হয়না অসুস্থ থাকার জন্য।পরেরদিন কলেজে গেলে অনু ওর পথ আটকায়।
>>আমাকে প্রপোজ করতে চাইছিলা সেদিন?(অনু)
>>হ্যা।(মাথা নিচু করে)
>>আমি বাঘ না ভাল্লুক?যে এত ভয় পাও?
>স্যরি।
>>বাই।আর কোনদিন আমার সামনে আসবানা।
>>এই কি বলেন? আপনাকে না দেখলে রাতে ঘুম হয়নাত।
>>আবার আপনি??ভাল তো ভালোনা?
>>আজ প্রপোজ করব আবার সিউর।এক্কেবারে সিউর
>>করবে মানে?এখন করতে প্রবলেম কি হ্যা?
>>ফুল নাইতো।
>>হায়রে গাধারাম।ভালবাসার কথা বলতে ফুল লাগে কে বলছে?
>>লোকে।
>>লোকের সাথেই প্রেম কর।আমি গেলাম।
>>প্লিজ।
অনু চলে যাচ্ছিল।এমন সময় পিছন থেকে তুহিন “আই লাভ ইউ অনু”বলে চিৎকার দিল। অনু থমকে যায়।আশেপাশের পরিবেশটাও যেন থমকে যায়।তুহিনের নিশ্বাসের গতি দ্বিগুন হতে লাগল। অনু এইবার তার গাধারামকে টেনশনে আবার সেন্সলেস হতে দিতে না চাওয়ায় দৌড়ে যেয়ে জড়িয়ে ধরল।চারপাশটা ওদের ভালবাসার সাক্ষী হয়ে থাকল।পাখিরা কিচিরমিচির আওয়াজ দিয়ে ওদের ভালবাসাকে স্বাগতম জানাল।