ভালোবাসার গল্প

ভালোবাসার গল্প

জহির সাহেব তার সামনে বসা মেয়েদুটোর দিকে তাকিয়ে আছেন। খুব সাধারন চেহারার দুটো মেয়ে। কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু একটা আছে যেটা অসাধারণ। তিনি এই অসাধারন ব্যাপারটাই খুজে বের করার চেষ্টা করছেন।
মেয়েদুটোর মধ্যে একজন মাথা নিচু করে বসে আছে। এই ঘরে ঢোকার পর থেকে একটিবারের জন্যও চোখ তুলে তাকায়নি। মেয়েটি শ্যামবর্ণ, ছিপছিপে গড়নের, বেশ লম্বা। এই মেয়েটিই রোগী। নাম মনিকা চৌধুরী। অপর মেয়েটি হয়ত মনিকার বোন বা বান্ধবী। সে দেখতে মোটামুটি ফরসা, মায়া মায়া মুখ। আসার পর থেকে ছটফট করছে। যেন সুস্থির হয়ে বসা তার ধাতে নেই। চোখ বড় বড় করে তার টেবিলে রাখা যন্ত্রপাতি দেখছে।

জহির সাহেব চট করেই তাদের মধ্যেকার অসাধারণ ব্যাপারটা ধরে ফেললেন৷ ঘরে ঢোকার সময় মনিকার সাথের মেয়েটি তার হাত শক্ত করে ধরেছিলো। শুধু ধরার জন্য ধরা না, এটা সাপোর্ট দেয়ার জন্য ধরা। তার হাত ধরে মনিকা নিশ্চিন্তে এগিয়ে যাচ্ছে, কোথায় কি আছে দেখার প্রয়োজন বোধ করছেনা। এমনকি এখানে যে এসেছে তাতেও সম্ভবত সাথের মেয়েটির ভূমিকা বেশি। সমবয়সী হলেও মনে হচ্ছে এরা মা মেয়ে। মা অতি যত্নে মেয়েকে আগলে রাখছে। জহির সাহেব বললেন, কি সমস্যা খুলে বল। তুমি বলছি। ছোট হবে অনেক। সমস্যা নেইতো? মনিকার সাথের মেয়েটি বলল, না না কোনো সমস্যা নেই।

— তুমি কে হও ওর?
— আমি জেরিন, মনিকার বান্ধবী। আমরা একসাথেই পড়ি।

জহির সাহের একটু মাথা নেড়ে মনিকার দিকে তাকিয়ে বললেন, বল। মনিকা কিছু বললনা। জহির সাহেবের কথা শুনলো কিনা তাও বোঝা গেলোনা। জেরিন বলল, আমি বলি? ও আসলে অনেক জহির সাহেব বাঁধা দিয়ে বললেন, যার সমস্যা সে বলবে। আমি মনিকার মুখ থেকেই শুনতে চাই। মনিকা এবার সামনে বসা লোকটার দিকে তাকানোর চেষ্টা করল। কিন্তু কিছু বলতে পারলোনা। জেরিন আবারো বলল, ও বলতে পারবেনা। আমি বলছি। আমি সবটাই জানি…

জহির সাহেব হাত তুলে তাকে থামালেন। বললেন, কিছু মনে করোনা, তুমি একটু বাইরে যাবে? আমি ওর সাথে একা কথা বলতে চাই। তুমি চলে গেলেই ও কথা বলতে পারবে। জেরিন অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে গেলো। মনিকা তাকে আটকালোনা। জেরিন বের হয়ে যাওয়াট সাথে সাথে জহির সাহেব মনিকাকে ধমকের স্বরে বললেন, কথা বলতে পারোনা তুমি? তোমার কথা অন্যকেউ কেন বলে দেবে? তাকাও আমার দিকে। বলো, কি হয়েছে মনিকা তাকালো। জহির সাহেবের চোখ দেখে যেন ভরসা পাচ্ছে। কয়েকবার চেষ্টা করে বলল, আমি ইদানিং সবকিছু কেমন যেন ভুলে যাচ্ছি…

— আর?
— আমার মাথা ঠিকমত কাজ করেনা। অনুভূতিও কাজ করেনা। একটা কাজ এখন করলে আবার পরমুহূর্তে ভুলে যাই।
— কবে থেকে সমস্যা কি করে সব খুলে বলো।
— সমস্যার শুরু হয় রোজার ছুটির পর ভার্সিটিতে যখন আসি তখন থেকে। পরীক্ষা ছিলো। সারারাত পড়লাম।

তারপর সকালে পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখি কিচ্ছু মনে নেই। এমনকি আমার সাবজেক্টের সবচেয়ে সহজ প্রশ্ন, থিওরিগুলোও মনে নেই। কেমন সব ফ্যাকাসে লাগছে, মাথা ঘুরছে..
জহির সাহেব পানি এগিয়ে দিলেন। পানি খেয়ে আবার বলতে শুরু করলো মনিকা..

— সেদিন আর পরীক্ষা দেয়া হয়নি। বাসায় আসার পরপরই সব মনে পড়ে যায়। তখন দেখি যা কোশ্চেনে এসেছিলো সব আমি পারি অথচ এরপর আমি দিন তারিখের হিসেব ভুলে যেতে থাকি, মাথায় যন্ত্রণা হত, কখনো কখনো বন্ধবীদের চিনতেও পারতামনা। অদ্ভুত ব্যবহার করতাম। এসব দেখে আমি হল ছেড়ে বাসায় চলে যাই। বাসায় টিকতে পারিনা মাথা ব্যথায়। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। কেউ কোনো রোগ ধরতে পারেনি। মা অনেক কবিরাজও দেখিয়েছেন। হাত-পা-গলায় গাদা গাদা তাবিজ ঝুলেয়ে রেখেছিলাম। কিছুতে কিছু হয়নি। জেরিন জোর করে এখানে নিয়ে এলো। ওর ধারণা আমার মানসিক কোনো সমস্যা। আপনাকে দেখেও আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আপনিই পারবেন আমাকে আবার সুস্থ করে দিতে।

জহির সাহেব মনোযোগ দিয়ে পুরোটা শুনলেন। মনিকা কাঁদছে। কান্না থামা পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করলেন। তারপর বললেন, তোমাকে আমার কিছু প্রশ্ন করার আছে। হয়ত সমস্যাটা আমি বুঝতে পারছি।

— হ্যাঁ করুন।
— তোমার কি জেরিন ছাড়া আর কোনো ভালো বন্ধু আছে?
— আছে।
— ছেলেবন্ধু?
— জ্বী।
— নাম?
— মুহিব।
— তার সম্পর্কে বলো। কি করে বন্ধুত্ব হলো, কবে থেকে.. সব।
— জেরিনের কলেজের বন্ধু। একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আমরা। তখনই আমার সাথে তার বন্ধুত্ব হয়।

মুহিব  পরিচয়ের শুরু থেকেই আমাকে পছন্দ করতো। তবে আমাদের সম্পর্ক খুব বেশিদিনের না। তিন/ চারমাস ধরে চলছিলো। তারপর আমার অসুখটা হলো। ওকে সহ্য হতোনা একদম। অনেকদিন কথাও হয়না। তবে জেরিনের সাথে কথা হয়। আমার খবর রাখে। আমার কথা বলতে ইচ্ছে হয়না।

— হুম ! জেরিন কি তোমার অসুস্থতার পর থেকে তোমার সাথেই থাকছে?
— হ্যাঁ।
— ওর পড়াশুনা?
— জানিনা। ও নিজে থেকেই থাকছে। আমি থাকতে বলিনি, যেতেও বলিনি।
— তুমিতো এখন যথেষ্ট সুস্থভাবে কথা বলছো!

মনিকা যেন একটু অবাক হলো। তারপর বলল, হ্যাঁ, আজ অনেকদিন পর আমার ভালো লাগছে। এত কথা অনেকদিন বলিনা। এমনকি যেগুলো বলেছি তার সবগুলো কথা আমার মনেও থাকেনা সবসময়।

— মাথা ব্যথা করে?
— দিনে খুব বেশি না, রাতে অসহ্য যন্ত্রণা হয়। চিৎকার করে কাঁদি মাঝে মধ্যে। অনেক রাত জেরিন জেগে আমাকে ধরে বসে থেকেছে।
— এর মাঝে একবারও সুস্থ থাকোনি কখনো?
— বাসায় যাওয়ার পর দুদিন ভালো ছিলাম। সব মনে থেকেছে, বাইরে ঘুরতে গিয়েছি, মুহিবের সাথে কথা বলেছি, জেরিনের সাথে মন খুলে গল্প করেছি। তারপর আরও খারাপ হয়েছে যেন…

— তুমি কোথায় থাকবে এখন?
— হলে। ভালো না হলে চলে যাবো আবার বাসায়।

তোমাকে এখন আমি কয়েকটা কথা বলবো যেগুলো তোমাকে স্ট্রিক্টলি মানতে হবে। তাহলেই শুধু সুস্থ হতে পারবে।

— আমার সমস্যাটা কি মানসিক?
— নাহ। অন্যকিছু। আমি যা বলছি শোনো…

প্রথমে এখান থেকে হলে যাবে। তারপর কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে যাবে কোনো আত্মীয় বা বন্ধুর বাসায়। নিজের মা বাবাকেও কিছু জানাবেনা, জেরিনকেও না। তিনদিন থেকে আবার হলে চলে আসবে। আশা করি তোমার সমস্যার সমাধান তুমি নিজেই করতে পারবে।

— শুধু এইটুকুি?
— হুম। এইটুকুই ঠিকমতো করতে হবে। তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে। আশা করি এর মধ্যে ব্যাপারটা তুমি বুঝে যাবে।
— ঠিক আছে। তাই করবো। এখন আসি?
— এসো। আর একটা কথা মনে রেখো, এই পুরো ঘটনাটা ভেতরের আর বাইরের কেমিক্যাল রিয়াকশন ছাড়া কিছুই নয়।

তিনদিন মনিকা তার স্কুলের বান্ধবী রিক্তার বাসায় ছিলো। রিক্তা সিলেটে থাকে। সেদিন হলে পৌঁছানোর পরপরই সে চলে গিয়েছিলো সিলেট। জেরিন গোসল করতে গিয়েছিলো। এই সুযোগে সে বের হয়ে এসেছে। ফোন বন্ধ করে রেখেছিল, কাউকে কিচ্ছু জানতে দেয়নি। রিক্তার নাম্বার বাড়ির কারো কাছে বা জেরিনের কাছে নেই। তারা সেখানে খোঁজও করেনি। এই তিনদিন আশ্চর্যভাবে মনিকা খুব ভালো ছিল। ঠিক অসুখ হওয়ার আগের মত। তাকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, দুদিন আগেও তার পাগলপ্রায় অবস্থা ছিল। রিক্তার সাথে সময়টাও আনন্দে কেটেছে। তবে এই তিনদিন মনিকা প্রচুর ভেবেছে। শুরু থেকে শেষ সবটা ভেবে সে বুঝতে পেরেছে আসলে তার সাথে কি হয়েছিলো।

ক্যাম্পাসে ঢুকেই সে সবার প্রথমে হলে যায়। জেরিন নেই। এইসময় থাকার কথাও না। সে সোজা ভেতরে ঢুকে জেরিনের জিনিসপত্র দেখতে থাকে। দুই বান্ধবী খুব ভালো করেই জানে একে অপরের জিনিস কোথায় রাখে। জেরিনের কয়েকটা জামার নিচেই পেয়ে যায় একটা ছোট্ট শিশি। এটাই সে খুঁজছিলো। শিশিটা হাতে নিয়ে স্মিত হাসে মনিকা। তারপর সেটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিজের জিনিসপত্র যা ছিল সব গুছিয়ে নেয়। অনেক সময় নিয়ে সুন্দর করে একটা চিঠি লেখে। সেটা জেরিনের একটা বইয়ের ভেতর রেখে বের হয় হল থেকে।

ক্যাম্পাসে জেরিনের একটা প্রিয় জায়গা আছে। ছায়াঘেরা সেগুন গাছের নিচে। সেখানে একটা সিমেন্টের বেঞ্চ আছে। সেটায় বসে সে, জেরিন আর মুহিব কতো গল্প করেছে! মনিকা জানে, এখন ক্লাস নেই জেরিনের। সেখানেই তাকে পাওয়া যাবে। সে সোজা রাস্তা দিয়ে না গিয়ে অন্যদিক দিয়ে গেলো। হ্যাঁ, মুহিব আর জেরিন বসে আছে। তারা মনিকাকে দেখতে পেলোনা। জেরিন খুব হাসছে, আহ্লাদ করে কথা বলছে, মুহিবের একটা হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। মুহিব খুব একটা সাড়া দিচ্ছেনা। তবে মনিকা জানে, কিছুদিন পর ঠিকই দেবে। ভালোবাসার মানুষটাই না থাকলে সেই ভালোবাসা বেশিদিন বাঁচেনা। তা সেই ভালোবাসা যত বেশিই হোক না কেন! আর অন্য কেউ যদি জায়গাটা পূরণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় তবে আগের মানুষটাকে ভুলতেও সময় লাগেনা।

মনিকার কেন যেন ততটা কষ্ট হলোনা যতটা হওয়ার কথা ছিল। জেরিনের ঔষধটা বোধহয় এই প্রভাবটা তার মধ্যে পুরোপুরি ফেলেছে। তার এখন অনুভূতি খুব কম হয়। মনটা পাথরের মত শক্ত হয়ে গেছে। মানসিক ডাক্তারের চেম্বারে হয়ত মানুষজনের ভিড় থাকেনা কখনোই। জহির রায়হানের চেম্বারেও রোগী দেখা গেলোনা। মনিকা এসিস্ট্যান্ট লোকটাকে বলতেই সে তাকে ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিলো। জহির সাহেব মনিকাকে দেখে একটু হাসলেন। বললেন, জানতাম তুমি আজ আসবে। তা কি পেলে? মনিকা ব্যাগ থেকে ঔষধের শিশিটা বের করে দেখালো। জহির সাহেব কিছুক্ষণ হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখলেন। খানিকটা একটা টিউবে ঢেলে কি যেন পরীক্ষা করলেন। তারপর মনিকার সামনে এসে বসলেন।

বললেন, এটা একধরণের ড্রাগ। খুব কড়া। সচরাচর পাওয়া যায়না। যারা অনেক বেশি নেশা করে অভ্যস্ত তারাই এটা নিতে পারে। সেক্ষেত্রে তুমি কোনো ধরণের নেশা করতেনা। আর তোমাকেই এটা দিনের পর দিন খাবারের সাথে মিশিয়ে দেয়া হতো। স্মেল নেই বলেই চলে। তাই বুঝতে পারোনি। কড়া ড্রাগের ইফেক্ট তোমার উপর প্রথমদিন থেকেই হয়েছিলো। তাই এরকম পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলে। আর নিয়মিত ড্রাগ দেয়ার জন্যই জেরিন তোমার সাথে থাকতো সবসময়। তবে মজার ব্যাপার হলো এই ড্রাগটা অন্যসব ড্রাগের মত শরীরে বাসা বেঁধে তাকেনা। যখন নেয়া হয় তখন নেশা হয়, কিন্তু নেশা চলে যাওয়ার পর আবার এটার জন্য শরীর টানেনা। এই তিনদিন কি তোমার কোনো ধরণের খারাপ লেগেছে?

— একদমই না।
— হুম। আমি এটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু জেরিন এই ড্রাগ পেলো কোথায়?
— ওর বড়মামা ফার্মেসিস্ট। তিনি এসব নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেন। জেরিন এবার ঈদে তার মামা বাড়িতে ছিল। খুব সম্ভবত সেখান থেকেই পেয়েছে। কিন্তু আমি ডাক্তার দেখিয়েছি কয়েকজন। তারা কেন ধরতে পারলেননা?
— তোমার শরীরে এরকম ড্রাগ থাকতে পারে তারা বুঝতেই পারেনি। এটা এমনভাবে রক্তে মিশে থাকে যেটা নির্দিষ্ট টেস্ট না করালে ধরা অসম্ভব।
— ওহ! জহির সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, শুধু একটা ছেলের জন্য এতকিছু কেন করলো?

— ও মুহিবকে ভীষণ ভালোবাসে। আমাকে শুরু থেকেই বলতো একটা স্বপ্নের মানুষ আছে তার। সেই মানুষটিকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন, মানুষটাকে পাবার স্বপ্ন সারাদিন ওকে ঘিরে রাখতো। আমাকে সব বললেও কখনো এটা বলতোনা যে সেই মানুষটি কে! আমি অনেক জিজ্ঞাসা করেও জানতে পারিনি। শুধু বলতো মানুষটাকে একদিন তার মনের কথা বলবে। লজ্জায় বলতে পারতোনা।

আমার সাথে যখন মুহিবের সম্পর্ক শুরু হয় তখন জেরিন সেটা ভালোভাবে নেয়নি আমি বুঝতে পারতাম। আমাকে মুহিবের নামে অনেক আজেবাজে কথাও বলতো যাতে আমি মুহিবকে ছেড়ে দেই। কিন্তু ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে তখন বেস্ট ফ্রেন্ডের কথাও কানে তুলিনি, তার কষ্টটাও চোখে পড়েনি। ভালোবাসার মানুষটাকে অন্যের হতে দেখতে পারেনি জেরিন। তাই হয়ত জহির সাহেব ভেবেছিলেন মনিকা হয়ত কাঁদবে এখন। কিন্তু সে কাঁদলোনা। শক্ত হয়ে রইল। জহির সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখন কী করবে?

— চলে যাবো এখান থেকে। সব গুছিয়ে নিয়ে এসেছি। জেরিনকে একটা চিঠি লিখে এসেছি। তার নতুন জীবনে আমি বাঁধা হতে চাইনা।
— তার মানে?

তুমি জেরিনের সামনে গিয়ে তাকে প্রশ্ন করবেনা, সে এমনটা তোমার সাথে কী করে করতে পারলো?
মনিকা হাসলো শব্দ করে। বলল, আপনার কখনো বিশ্বাস ভেঙেছে? খুব কাছের মানুষ ধোঁকা দিয়েছে কখনো? জানেন, একটা মানুষ যখন মনের খুব কাছাকাছি হয়, আর সেই মানুষটাই যখন মনটা ভেঙে দেয়, তাও অপ্রত্যাশিতভাবে, তখন তার মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছেটা থাকেনা। আমি জেরিনের সামনে গিয়ে তাকে প্রশ্নটা করতে পারবোনা। সত্যিই পারবোনা। পুরোটা তো আমি জানিই। জেরিনের সামনে সব বললে ও কেমন রিয়েক্ট করবে সেটা দেখার আমার কোনো ইচ্ছেও নেই!

— এত সহজে ক্ষমা করে দেবে?
— ক্ষমা করবো কিনা জানিনা।

তবে ওর সাথে কোনোভাবে আর যোগাযোগ রাখতে চাইনা আমি। চিঠিতে সব বুঝিয়ে লিখে এসেছি। জানেন, মেয়েটা ভীষণ বোকা। আর দুর্বল। ও চিঠি পড়ে অনেক কাঁদবে। সারাজীবন অনুশোচনা করবে। আবার খুশিও হবে। ও যে আমার খুব খারাপ চাইত তা নয়। ফ্রেন্ডশিপ হওয়ার পর থেকে আমার অনেক সাহায্য করেছে। সব বিষয়ে সাপোর্ট করেছে। অনেক আগলে রেখেছে। আমি ভালো স্মৃতিগুলো নিয়েই বাঁচতে চাই। প্রতিশোধ নিতে চাইনা। ভালো থাকুক ও।

— আর মুহিব?
— মুহিবকে ভালো রাখবে জেরিন। হয়ত আমার থেকেও বেশি ভালো রাখবে।
— আর তোমার কি হবে?
— আপাতত জানিনা। বিদেশ চলে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। দেখি কি হয়।

উঠে দাড়ালো মনিকা। বলল, আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন। আপনাকে আমি কখনো ভুলবোনা। আজ আসি জহির সাহেব তাকিয়ে আছেন মনিকার গমন পথের দিকে। তার কেন যেন ভালো লাগছে। খুব ভালো লাগছে। প্রতিশোধ নিলে হয়ত পুরো ব্যাপারটা এত সহজ, সুন্দর হতোনা…!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত