– এই ছেলে এদিকে আসো তো। তুমি রাফি না?
সিনিয়র আপুর হঠাৎ এমন ডাকে ভয়ে ভয়েই কাছে গিয়ে বললাম,
— জী আপু, আমি রাফি ।
— তুমি কাল ফেসবুকে রিকুয়েস্ট পাঠাইছো, তার উপরে আবার আমায় পোক মারছো কেন?
— সরি আপু।
আমার ভয়ার্ত ভাব দেখে উনি আরো মজা নিতে শুরু করলেন,
— কত মেয়েকে রিকুয়েস্ট দাও?
–কি যে বলেন আপু। মেয়েদের আমি,,,,….
— থাক থাক, এখন বলবে মেয়েদের রিকুয়েস্ট দিইনা, কথা বলিনা, সব ছেলের স্বভাব এটা বলা!
— তা না আপু।….
— তা নয় তো কি? আর প্রতিদিন এখানে এই সময়ে দাড়িয়ে থাকো কেন? মেয়েদের দেখার জন্য?…..
— তা নয় আপু।
— তা নয় হুম?
এখন আবার আপু ডাকা হচ্ছে। তাকাও তো লুকিয়ে আড় চোখে, ভাবছো দেখিনা। আমি তোমার এক বছরের সিনিয়র। মাইন্ড ইট!…
–জ্বী….
— জ্বী কি? কিছু বলার নাই? ফেসবুকে নিশ্চই মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারো, আর এখন ভেজা বেড়ালের মত দাড়িয়ে আছো। আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিলাম। উনি বকা দিচ্ছিলেন আর ঠোটের কোনে যে মুচকি হাসি ফুটছিল তা নিচ থেকে, আড় চোখে লক্ষ্য করছিলাম। মুচকি হাসি দেখে মনে একটু সাহস এলো…..
— আচ্ছা আপু সরি। আর এখানে আসব না। যাই এখন কথাটা বলেই দ্রুত হেঁটে চলে আসলাম। লজ্জ্বা পাচ্ছিলাম, মনটাও খানিকটা খারাপ হয়ে গেলো, এরকম না বললেও পারতো। তাড়াতাড়ি ফেসবুকে ঢোকে রিকুয়েস্ট ক্যান্সেল করতে গেলাম। দেখি একসেপ্ট হয়ে গেছে তিন চার দিন ভার্সিটি যাইনি। সন্ধ্যাবেলা একটা অপরিচিত ফোন আসলো। অপরিচিত কন্ঠ।
— এই ছেলে, চিনতে পারছো?…..
— না তো, কে আপনি?
— চিনবে কি করে? কয়টা মেয়ের সাথে কথা বলো?
— আরে কে আপনি ভুলবাল কি বকছেন। আজব তো।
— চুপ। আমি হলাম সে।
— সে কে?
— যাকে রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছো…….
–ওওওওওও আপু,,…
— কেন কয়জন আপাকে রিকুয়েস্ট মারছো, যে ইতস্ততো ভাব করছো।
–সরি। বুঝতে পারিনি, আপনার সাথে আগে ফোনে কথা হয়নি তো, তাই চিনতে পারিনি। আপুর নাম তিতলী সিনিয়র ক্রাশ আমার।যাহোক সিনিয়র আপা এবার বললেন,
— কি ব্যাপার তোমাকে ওখানে আর দেখি না যে,
— আপনিই তো না করলেন থাকতে।
— না করলেই আসবে না? ফাজিল ছেলে। আর শুনছি তুমি নাকি সবাইকে বলে বেড়াচ্ছ আমার উপর ক্রাশ তুমি। তিতলী আপুর ডিরেক্ট এই প্রশ্নে অনেকটা লজ্জ্বা পেয়েই চুপ থাকলাম।কি রকম ডেঞ্জারাস মেয়েরে বাপ।
— কি হলো চুপ কেন?….
— ইয়ে মানে, কি যে বলছেন।…..
— সাহস তো তোমার কম নয়, মাইর চিনো?…..
— আপু ওরকম কিছু না।…..
— তো কিরকম কিছু?…..
— না কিছু না।…….
— কাল দেখা করবা ওকে? লাইব্রেরীতে।……
— জ্বী।…..
— মনে থাকে যেনো। সকালে ঘুৃম থেকে উঠেই কয়েকটা বন্ধুকে ফোন দিলাম
– দোস্ত ঝামেলা তো হয়ে গেছে, লাইব্রেরীতে থাকিছ তোরা। যদি কিছু করে, এই গুন্ডি আপুর প্রতি ভরসা করা যায় না, যে ডেঞ্জারাস বড় ভাই অথবা স্যারদের যদি কিছু বলে সকালে মনকে অনেক শক্ত করে ভার্সিটিতে গেলাম। লাইব্রেরীতে বন্ধুদের নিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি সিনিয়র ক্রাশ বসে আছে। কোন বড় ভাই নাই, সাথে কয়েকটা বান্ধবী। সবাই মুচকি হাসছে। আমি যে কতটা বোকার মত„ বাজে ধারনা মনে পুষেছিলাম তা বুঝতে দেরি হলোনা। যাহোক, আমাকে দেখেই উনি এগিয়ে আসছেন।
–এই ছেলে এত দেরী হলো কেন? কতক্ষন ধরে অপেক্ষা করছি।
— জ্যামে আটকে গেছিলাম
— জ্যামে নাকি অন্য মেয়ের সাথে ছিলে, যাইহোক এত ভয় কিসের?
— না না ভয় কিসের?…..
–তাহলে বন্ধুদের নিয়ে আসতে কেন হলো?
— না ওরা এমনি আসছে।
তিতলী একটু দুরে যেতে বলল আমায়। দুজন মুখোমুখি দাড়িয়ে চুপচাপ। এই প্রথম খানিকটা লজ্জ্বায় মাখা মুখ দেখতে পাচ্ছি তিতলীর । সাথে ঠোটের আড়ালে হাসি। একটু লাজুক কন্ঠে বলল,
— সত্যি ভালবাসো, নাকি ভাওতাবাজি? একটু লজ্জ্বা পাইলাম, মাথা নিচু করে উত্তর দিলাম
— জানিনা,,,,,,,
— আমি তোমার সিনিয়র না?
— জ্বী।
— বেয়াদব!! এসব কি তাহলে? খুব স্বপ্ন দেখা হচ্ছে আমায় নিয়ে?
— জ্বী না, মানে,,,
— আবার কথা বলে বেয়াদব।
কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছিল। খুব খারাপ অনুভব করছিলাম। নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কপালের মাঝে কারো হাতের ছোয়া অনুভব করলাম। কে যেন ঘামটুকু মুছে দিচ্ছে। মুচকি তৃপ্তির হাসি হেসে কেউ একজন বলছে,
— এই বোকা ছেলে, এভাবেই সারাজীবন ভয় পাবে আমাকে, ওকে? সারাজীবন আমাকে অনেক মুল্য দিবে। আমার শাসনে থাকবা, ঠিক আছে? আমিও সেদিন মাথা নেড়ে সায় দিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর,,,,তারপর কি হলো, না জানাই থাকুক। কিছু মুহুর্ত বর্ননা করা যায়না। কেবল অনুভব করতে হয়,,,,,