ট্রেন ছাড়ার কথা ৯ টা ৫০ মিনিটে ! আমি হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এখনও মিনিট দশেক বাকি আছে । মানুষ জন ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্লাটফর্মের উপর ঘোরাফেরা করছে ! কেউ কেউ আবার বগির ভেতরেই নিজেদের সিট নাম্বার টা খুজতে ব্যস্ত !
কয়েকটা ছেলেমেয়ে কে দেখলাম খুব হইচই করে বগিতে উঠতে । ট্যুরে যাচ্ছে সম্ভবত ! আমিও ছাত্র অবস্থায় বেশ কয়েকবার ট্যুরে গিয়েছিলাম বন্ধুদের সাথে ! সেই সময় টাই অন্য রকম ছিল !
আবারও জানলা দিয়ে বাইরে তাকালাম । চোখ দুটো এমন কাউকে খুজছে যাকে কোন ভাবেই দেখার কোন সম্ভাবনা নেই । তবুও চোখ দুটো তাকে খুজছে । কেন, কে জানে !
মানুষের মন টা আসলেই বেশ অদ্ভুদ ! কথায় আছে মানুষ হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে লজিক্যাল প্রানী কিন্তু এই মানুষেরাই সব ইলজিক্যাল আর ইরেশনাল কাজ, চিন্তা-ভাবনা গুলো করে !
মাঝ বয়সী এক লোক আমার পাশে এসে বসে পড়লেন ! আমি তার দিকে না তাকালেও লোকটা নিজের ব্যাগটা সিটের উপর রাখতে রাখতে বললেন
-আজকাল কার ছেলে মেয়েরা ! আমাদের সময় এমন ছিল না !
আমি কোন কথা না বলে বাইরে তাকিয়ে রইলাম ! আসলে আমার কোন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না ! মনটা সামিয়ার দিকেই পরে আছে । আজকে একটু আগে যে কাজটা করলাম সেটা কি করা ঠিক হয়েছে ?
জানি না ! ঠিক হয়েছে কি না কিন্তু কেন জানি নিজেকে সংবরন করতে পারি নি ! আর হয়তো এই সুযোগ আসবেও না !
-দেখেছেন ভাই সাহেব, এই এই মেয়ে গুলা একা একা যাচ্ছে যদি কিছু হয়ে যায় ! তখন ?
ভদ্রলোক দেখি অন্যের ছেলে মেয়েদের জন্য বেশ চিন্তিত !
-আমার মেয়ে যদি এমন কিছু করে তাহলে চাপকিয়ে পিঠের চামড়া তুলে দেবো ! সব কিছু সবার জন্য না !
আমি তবুও কোন কথা বললাম না ! কেবল কিছুটা সময় ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে আবারও জানলার দিকে তাকালাম ! তারপর চোখ বন্ধ করে ফেললাম ! সামিয়া এতোক্ষনে নিশ্চয় চলে গেছে ! আমার জন্য অপেক্ষা করার কোন কারনই নেই ! তবুও মন বলছে ইস যদি করতো !
কেন ?
কেন করবে ?
মাঝে মাঝে ই প্রশ্নটা আমি মাঝে মাঝেই নিজেকে করি ! কেন অপেক্ষা করবে আমার জন্য ! আমার স্ত্রী বলে ?
নাহ ! পরে মনে হয় কেবল বিয়ে করলেই স্বামী কিংবা স্ত্রী হওয়া যায় ?
সম্ভবত না ! আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন ! যা আমাদের ভেতরে কোন দিনই ছিল না ! তাহলে কেন একটু মন খারাপ লাগছে ?
কেন আমি ওকে আশা করে আছি !
আমার জানা নেই ! আসলেই জানা নেই !
একটু দুলুনি দিয়েই ট্রেন টা যাত্রা শুরু করলো ! যে ছেলে মেয়ে গুলো প্লাট ফর্মের উপরে দাড়িয়ে ছিল হুড়মুড় করে উঠে পড়লো ! পাশের বসা ভদ্রলোক কে দেখলাম আবার বিরক্তিতে গজগজ করতে শুরু করেছে ! এমন একটা ভাব যেন ছেলে মেয়ে গুলো বিরাট কোন অন্যায় করে ফেলেছে । ন
আমি একটু নিশ্চিন্ত হলাম ! যাক ! এখন আর কোন সমস্যা নেই ! একটু আগে মনের ভেতরে যে সুক্ষ একটা ভাবনা কাজ করছিল যে সামিয়া হয়তো আসবে ! এখন সেটা থেকে মুক্ত ! আমি আবারও চোখ বন্ধ করলাম ! ওকে নিয়ে ভাবা বন্ধ করতে হবে ! সামনের দিনের জন্য এই ভাবনা গুলো মোটেই আমার জন্য ভাল কিছু হবে না ! তার চেয়ে বরং সামনের ছুটিটা আমি কিভাবে কাটাবো আর কোথায় কোথায় যাবো সেটা নিয়ে একটু চিন্তা করা যাক !
আজ থেকে দু সপ্তাহ একেবারে নিজের মত ! ইচ্ছে মত ঘোরাঘুরি তারপর মুক্তি ! সামিয়ার কাছ থেকে একেবারে দুরে যাবো তখন !
তখন কেন বলছি ? আমার তো মনে হয় আজকে একটু আগে থেকেই আমি ওর কাছ থেকে দুরে চলে এসেছি ! আর হয়তো ফিরে যাবার কোন পথ নেই । সব পথ নিজেই আমি বন্ধ করে দিয়েছি !
সামিয়া ! নামটা মনে হতেই বারবার কেবল পুরানো দিনের কথা মনে পরে যায় ! কট কথা মনে পরে !
মাস ছয়েক আগেই ওর সাথে বিয়ে হয়েছিল ! পারিবারিক ভাবে ! ভাল ফ্যামিলি আর আর বড়লোক বাবার মেয়ে ! কিন্তু বিয়ের শুরু থেকেই ওর সাথে আমার বনিবনা হয় নি ! বনি বনা বলতে যে আমাদের ঝগড়া হত এমন না ! আসলে ওর সাথে আমার দেখা হত খুব কম ! ও থাকতো নিজের মত । আমি থাকতাম আমার মত ! ভাগ্য ভাল যে বাবা মা কেউই আমার সাথে থাকে না তাহলে হয়তো ব্যাপারটা আরো অন্য দিকে যেতে পারতো ! অবস্থা আরও খারাপ হতে পারতো ! সেদিকে যায় নি ভাল হয়েছে !
আমি সারাদিন অফিসে থাকতাম আর ও থাকতো ওর বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ! বিয়ের প্রথম দিনের সেই কথা আমাকে সে পরিস্কার করেই বলে দিয়েছিল যে তার স্বাধীনতায় আমি যেন কোন বাধা দেওয়ার চেষ্টা না করি ! আমি অবশ্য করি নি ! কি দরকার !
আমি সারা জীবন ঝামেলা এড়িয়ে চলেছি ! এবারও ঝামেলা এড়িয়েই চললাম ! আমরা ঠিক মত কাছেই আসতে পারলাম না যে বলবো আমাদের মাঝে দুরুত্ব বাড়তে লাগলো ! সেটা তো সব সময়ই ছিল ! তবুও সব কিছু একটা ব্যালেন্সে ছিল !
কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে একটা ব্যাপারে আমাকে একটু নাড়া দিয়ে ছিল বেশ ভাল করেই । সামিয়ার সম্ভবত কারো সাথে এফেয়ার চলছে ! সারাদিন পর বাসায় আসার পর ওর ফোনে খুব ফোন আসতে শুরু করলো ! আগে বাসায় থাকায় অবস্থায় ও আমার সাথে টুকটাক কথা বলতো ! সেটাও কমে গেল ! একদিন রাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি ও পাশে নেই । বারান্দা থেকে কথা বলার আওয়াজ আসছে ! আর এক দিন আমি নিজ চোখেই দেখলাম ও একটা ছেলের সাথে ফার্স্ট ফুডে বসে গল্প করছে । ফোন দিলাম । বলল যে ওর বাবার বাসায় যাচ্ছে !
অন্য সব কিছু মেনে নিলেও এটা কেন জানি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না ! কোন ভাবেই নিজের মন কে বুঝ দিতে পারছিলাম না যে সামিয়া অন্য কারো সাথে …. পরশুদিনই ভাবলাম একটা দফারফা করে ফেলা দরকার ।
রাতে খাবার পরে ও যখন শোবার ঘরের দিকে যাচ্ছিলো তখনই ওকে বললাম
-একটু কথা ছিল !
-এখন ? আমার ঘুম আসছে !
-বেশি না ! ১০ মিনিট লাগবে ! এই টুকু লেট হলে খুব সমস্যা হবে ?
সামিয়া অনিচ্ছা সত্ত্বেও শোফায় গিয়ে বসলো ! আমি বসলাম ওর মুখোমুখি ! কয়েকটা মুহর্ত চলে গেল কোন কথা না বলেই ! আমি খানিকটা দম নিয়ে ঠিক করে নিলাম কি বলবো আর কিভাবে বলবো !
-কিছু বলবা না ?
-হুম !
একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে শুরু করলাম !
-দেখো আমি ঘোরপ্যাঁচ কম বুঝি ! যা জানতে চাইবো, কিংবা যা বলার আছে সোজাসুজি বলবো ! আশা করি তুমিও সোজাসুজি কথা বলবে ! আর কিছু না ! ঠিক আছে ?
আমার গলার কন্ঠ স্বরে কিছু একটা ছিল যে দেখলাম সামিয়ার মুখ টা যেন একটা সিরিয়াস হয়ে গেল ! আমি সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম
-তোমার কি কারো সাথে কিছু চলছে ? প্লিজ আমি সত্য টা জানতে চাই !
সামিয়া কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! কিছুটা দ্বিধা যেন ওর চোখে দেখতে পেলাম !
আমি আবারও বললাম
-দেখো আমি ব্যাপারটা হয়তো বুঝতে পারছি ! যাক, সমস্যা নেই । তুমি কি চাও সেইটাই আসল ব্যাপার ! জোর করে কেউকে ধরে রাখা সম্ভব না ! সেটা আমি জানি ! তাই লুকোচুরি করে লাভ নেই !
আবারও কিছুটা সময় ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম ! ও ততক্ষনে চোখ নামিয়ে ফেলেছে ! মনে হল ওকে আর বিব্রত করে লাভ নেই ! আমি আমার কথা বলে ফেলি ! আমি বললাম
-আমি পরশুদিন সপ্তাহ দুয়েকের জন্য একটু ঢাকার বাইরে যাবো ! তুমি এই সময়ের ভেতরে একটু ভাবো ! কি করবে ? কার সাথে থাকবে ! ঠিক আছে !
সামিয়া তখনই আমার দিকে তাকালো ! আমি আবারও বললাম
-এভাবে এক সাথে না থাকাই ভাল !
বলে চুপ করে রইলাম ! সামিয়ে আরও কিছুটা সময় আমার সামনে বসে থেকে উঠে চলে গেল ! আমি ঐ রাতে আর শোবার ঘরে গেলাম না ! শোফার উপরেই রাত টা কাটিয়ে দিলাম ! কেন বুকের ভেতরে হঠাৎ করেই একটা কষ্ট লাগছিলো ! কোন কারন নেই তবুও ওকে হারানো কষ্ট অনুভব করছিলাম ! আজিব একটা অনুভুতি !
পরের দিন ওর সাথে আমার দেখাই হল না ! মাঝে মাঝে ও রাত করে বাসায় আসে ! আমার অফিস থাকে তাকে তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হয় ! সকালে উঠে দেখি ও ঘুমিয়ে আছে ! আমি আবার চলে যাই ! আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ও ঠিকই আমার পাশে ঘুমিয়ে আছে । কখন এসেছে আমি টের পাই নি !
কিছু সময় ওর ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম ! মাঝে মাঝেই এমন করে তাকিয়ে থাকতাম ওর দিকে ! কেমন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হত নিজের কাছে ! এখনও হল ! সাথে একটা কষ্টের অনুভুতিও !
জলদি জলদি অফিস থেকে ফিরে এসে দেখি সামিয়া তখনও বাসায় আছে । এমন সাধারনত হয় না ! আমি গোছগাছ করতে লাগলাম ! সন্ধ্যার একটু পরে যখন বের হব দেখলাম সামিয়া আমার সাথেই বের হল । ওর পরনে একটা সাদা রংয়ের টি-শার্ট আর কালো টাইট জিন্স ! গলায় একটা কালো স্কার্ফ !
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-কোথাও যাচ্ছো ?
-হুম ! তুমি ট্যুরে যাচ্ছো, আমিও ! গাজিপুরে ! আজকে থাকার প্লান !
মন টা একটু খারাপ হল ! নিশ্চয়ই সেই ছেলেও যাবে ! ওর সাথে ঘুরবে ! কথা বলবে আর ….। আমি আর কিছু ভাবলাম না ! যাক ! আমার কিছু করার নেই ! হঠাৎ সামিয়া বলল
-চল তোমাকে নামিয়ে দেই !
-কোথায় ? স্টেশনে ?
-হ্যা !
-আরে দরকার নেই !
-কোন সমস্যা নেই ! আমার হাতে এখনও বেশ খানিকটা সময় সময় আছে ! আবার কবে দেখা হবে ঠিক নেই !
আমি আর মানা করলাম না ! আসলেই তো ! আবার কবে দেখা হবে ঠিক নেই ! আদৌও ঠিক মত দেখা হবে কি না কে জানে !
পুরো রাস্তা কোন কথাই বললাম না ! সামিয়ে নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত আমি বাইরে তাকিয়ে রইলাম ! কি দেখছিলাম আমি নিজেই জানি না ! যখন স্টেশনে চলে এলাম তখনই মন খারাপ টা হঠাৎ করেই বেড়ে কেন জানি ! বুকের ভেতরে হুহু করে উঠলো ! ইচ্ছে হল ওকে জড়িয়ে ধরে বলি তুমি আমার সাথে চল ! আমার নতুন করে শুরু করি সব কিছু ! একবার হয় নি তো কি হয়েছে আরেকবার হবে ! দুজন মিলে একটু চেষ্টা করলেই হবে !
কিন্তু চাইলেই কি সব কিছু করা যায় !
ওর কাছ থেকে দুরে চলে যাচ্ছি ভাবতেই কষ্ট হতে লাগলো ! অদ্ভুদ রকমের কষ্ট ! আমরা দুজনেই চুপচাপ কয়েকটা মিনিট বসে রইলাম । সামিয়াই আগে কথা বলল !
-অপু !
-হুম !
-তুমি খুব ভাল একটা ছেলে ! এটা জানো কি !
-তুমিও ভাল একটা মেয়ে !
-তাই ?
এই বলে সামিয়া হেসে ফেলল ! তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে আামকে জড়িয়ে ধরলো ! তখনই একটা অদ্ভুদ কাজ করে ফেললাম
সামিয়ার কপালে চুম খেলাম !
তারপর কপাল থেকে ওর ও ঠোঁটে ! গুভ বাই কিস ! সামিয়া একটু অবাক হলেও কিছু বলল না !
-ভাল থেকো !
-তুমিও !
দরজা খুলে বেরিয়ে স্টেশনের রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগলাম ! পেছনে ফিরে তাকাবো তাকাবো না করেই ঠিকই তাকিয়ে ফেললাম ! দেখি ও জানালা দিয়ে আমার দিকেও তাকিয়ে আছে ! একবার ইচ্ছে হল দৌড়ে গিয়ে ওর কাছে চলে যাই । বলি সব কিছু ঠিক করে নিতে !
কিন্তু জানি সেটা কোন ভাবেই হবার নয় ! কেবল হাত নাড়লাম ওর দিকে তকিায়ে ! তারপর ঘুকে গেলাম স্টেশনের ভেতরে !
ট্রেন টা বেশ জোরেই চলতে শুরু করেছে । ঘন্টাখানেক পার হয়েও গেছে । আমি এতোক্ষন চোখ বন্ধ করেই ছিলাম । অদ্ভুদ ভাবেই দেখছি এখনও সামিয়া ছাড়া আর কিছু ভাবছি না ! আচ্ছা যখন ফেরৎ আসবো তখন আসলেই ও চলে যাবে ?
জানি না ! তবে চলেই যাবে মনে হয় !
হইচই শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি সামনের ছেলে মেয়েদের গ্রুপ টা গান ধরেছে ! শিরোনাম হীনের গান ! বগির কিছু মানুষ ট্রেনের তালে তালে সেটা শুনছে ! আমার পাশের ভদ্রলোক দেখলাম সেই বিরক্ত মুখেই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে !
-আচ্ছা এরা সারা রাতই এমন করবে ? আমাদের ঘুমাতে দিবে না !
-চিন্তা করবে না । ট্যুরে যাচ্ছে তো একটি চিৎকার চেঁচামিচি করবেই !
-তাই বলে আমাদের শান্তি দিবে না ! এটা কোন কথা !
আমি হেসে বললাম
-একটু স হজ ভাবে নিন ! বয়স কম না ওদের ! ছাত্র থাকা কালে আমিও এমন করেছি ! আর আমার মনে হয় আপনিও এমন টা করেছেন !
লোকটা কিছু বলল না আর । তবে আমি যে ছেলে মেয়েদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছি এটা তিনি মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না !
-টিকেট !
টিটি সাহেব চলে এসেছে । আমি টিকেট বের করে টিটি সাহেবের দিকে দিতে যাবো তখনই একটা অদ্ভুদ দৃশ্য দেখলাম !
সমিয়াকে দেখতে পেলাম বগির দরজার কাছে ।
বগির প্রত্যেকটা যাত্রীর চোখ ওর দিকে ! বিশেষ করে ওর টাইট ফিটিং ড্রেস সবার দৃষ্টি কেড়েছে ! টিটি সাহেবও দেখি ওর দিকে তাকিয়ে আছে । আমার পাশের ভদ্রলোকের চোখও সেদিকে ! আমার কেবল মনে হল আমি স্বপ্ন দেখছি !
সামিয়া সরাসরি আমার দিকে এল ! আমার সামনে দাড়িয়ে বলল
-ব্যাগ নাও !
-কি !
টিটি সাহেব বলল
-আপনাকে ব্যাগ নিতে বলতেছে !
আমা রপাশের ভদ্রলোক নিজের হাতে আমাকে ব্যাগ এগিয়ে দিলেন ! আমি রোবটের মত ব্যাগ কাধে নিলাম !
সামিয়া আমার হাত ধরে বগির থেকে বেরিয়ে গেল ! আমি ওর পেছন পেছন হাটতে লাগলাম ! আমার তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না ! বারবার মনে হচ্ছে সিটে বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরেছি নিশ্চয় ! নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছি ! স্বপ্ন ছাড়া অন্য কিছু হতেই পারে না !
ও আমাকে এসি কম্পার্টমেন্টের দিকে নিয়ে গেল ! একটা কেবিনের দরজা খুলে আমার নিয়ে ভেতরে চলে এল !
ক্যাবিনের সিটে দেখি ওর ব্যাগ পড়ে আছে । ব্যাগটা আমার পরিচিত ! ওর নীল রংয়ের ব্যাগ প্যাক টা ! যেটা একটু আগেই আমি স্টেশনে ওর পাশেই দেখেছি ! আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না । ও এখানে কেন ?
আমি কেবল বলতে শুরু করেছি
-তুমি এখানে ? তুমি….
সামিয়া আমাকে আর কিছু বলতে দিল না ! গাড়িতে বসে যে মৃদু ভাবে ওর ঠোঁটে চুম খেয়েছিলাম ও সেটা কে যেন আরও গভীর করে তুলল ! সত্যি বলতে কি এতো গভীর ভাবে এর আগে ওকে চুম খাইনি !
আমার কেবল মনে হচ্ছিলো যে আমি নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছি ! অবশ্যই স্বপ্ন দেখছি ! এটা সত্য হতে পারে না ! নাকি পারে ?
আমি জানি না !
কত টা সময় পার হয়েছে আমার লক্ষ্য নেই কেবল অনুভব করলাম যে ও আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে । মাথা রেখেছে আমার বুকে ! আমি আর কিছু চিন্তা করতে পারছি না ! যদি স্বপ্ন হয় তাহলে হয়তো একটু পরেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে ! দেখবো সেই ছেলে মেয়ে গুলো তখনই হইচই করছে বগির ভেতরে ! চিৎকার করে গান গাইছে আর নিজেডের ভেতরে হাসাহাসি করছে ! আর আমার পাশের ভদ্রলোক বিরক্ত চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে !
আর যদি সত্যি হয় তাহলে চোখ খোলার পরেও হয়তো দেখবো সামিয়া আমার বুকের মাথা রেখে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে আছে ।