ভালবাসি খুব

ভালবাসি খুব

—এই শুভ্র দাড়া।(মায়া)
-পিছনে ফিরে একটু চমকে আবার পা বাড়ালাম।
-এই ছেলে তোকে দাড়াতে বলছি না।
-উফফ ভাঙা মাইকের মত ঘ্যাড় ঘ্যাড় করছিস
কেন?
-কি আমি ভাঙা মাইক?
-হ্যা তাই।
-দেখ সবসময় ইয়ার্কি মারবি না।
-আমি আবার কখন ইয়ার্কি করলাম।
-একেবারে ন্যাকামি করবি না।
-আজিব এখানে ন্যাকামির কি হল?
-ন্যাকামি না তাই না।এই তুই কি আমায় একটুও শান্তিতে থাকতে দিবি না?
-আজিব তোর একটা কথাও আমি বুঝতে পারছি না।
-বুঝতে পারছিস না নাকি সব জেনেও না বোঝার ভান করছিস?
-আরে বলবি তো কি হয়েছে?

-কে লিখেছে এটা?(খাতা বের করে বেরল)
-ইয়ে মানে…
-ইয়ে মানে কি?কেন লিখেছিস তাই বল।
-আমি যে লিখেছি তার কোন প্রমান আছে?
-হ্যা আছে।
-কি?
-তোর হাতের লেখা আমি চিনি।তাছাড়া তুই ছাড়া এমন কাজ আর কেউ করতে পারেনা।
-বললেই হল।পৃথিবীতে আমি ছাড়া কি আর কোন ছেলে নেই?
-হ্যা হল।তুই কি চাস বলতো?
-সত্যি বলব?
-হ্যা বল।
-তোকে চাই?
-কি বললি তুই?তোকে আর কতবার বলব আমার মন গলানো অত সহজ নয়।আমি ওসব প্রেম ভালবাসায় ইন্টারেস্টেড নই।

-একবার প্রেমে পড়ে দেখ তোকে চাঁদ এনে দিব।
-থাক।বাংলা ফিল্মের ডায়ালগ বন্ধ কর বেয়াদপ।
-সত্যিরে তোকে পেলে লেখাপড়াই ছেড়ে দিতাম।শুধু তুই আর আমি আর কেউ নয়,উফফ কি সুন্দর হবে বলতো।
-চুপ শয়তান।তোর এই কু মতলব কখনই পূরন হবেনা।
-কেনরে তুই এমন করিস কেন?
-শুভ্র তুই থামবি না আমি চিৎকার করব।
-কেন আমি কি তোর হাত ধরেছি নাকি যে চিৎকার করবি।
-এটার থেকেও জঘন্য কাজ।জানিস তোর এই লেখা দেখে আমার বান্ধবীরা কত হাসি ঠাট্টা করেছে।
-কেন?আমরা প্রেম করছি ওদের সহ্য হচ্ছেনা?
-চুপ।

-কেন?
-শুভ্র আমি আর তোকে সহ্য করতে পারছিনা।
-তাহলে বিয়ে করে নে।
-দেখ শুভ্র আমি কিন্তু,প্রিন্সি
পালের কাছে কমপ্লেইন জানাব এবং প্রয়োজনে তোর বাসায় জানাব।
-হ্যা জানাতে পারিস কোন সমস্যা নেই।
-তুই জানিস না আমি কিন্তু সত্যিই এটা করতে পারি।
-জানি তো।
-জানিস মানে,এমন নির্লজ্জের মত কথা বলছিস কেন?
-ভালবাসি বলে আত্মবিশ্বাস আছে।
-যেমন?
-তুই কখনো এটা করতে পারবি না।
-দেখ শুভ্র তুই ফাজিল হলেও লেখাপড়ায় ভাল বলে সব সময় মাফ করে দেই।কিন্তু তোর বাড়াবাড়ি কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
-বুঝতেই যখন পাচ্ছিস তকন একবার বল না ভালবাসি।
-ভালবাসি বলব।তাও আবার তোকে?
-কেন আমি কি আবুল নাকি যে ভালবাসি বলতে পারবিনা?
-তার থেকেও জঘন্য।
-তাহলে আর কি এই জঘন্য মানুষটাই তোকে বিয়ে করছে দেখে নিস।(বলেই হাঁটা দিলাম)
-এই শুভ্র দাড়া বলছি…

চলে আসলাম।আর একটু দাড়ালে ঝগড়াটা চরম সীমায় পৌছে যাচ্ছিল।একটু পরে রাস্তার মাঝখানেই হয়ত সিনক্রিয়েট করত।কারন এরকম করতে করতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি।সত্যিই মাঝে মাঝে ভাবতে অনেক অবাক লাগে মেয়েটার পিছনে এতদিন ঘুর ঘুর করছি একটু ভালবাসা পাব বলে।কিন্তু রাজিই হয়না।তবু অবাক লাগে মেয়েটিকে এত জ্বালাই তবুও কখনো কাউকে কিছু বলেনা।অন্য কেউ হলে এতদিনে আমাকে দেখিয়ে হাজারটা প্রেম করত।কিন্তু মায়া সত্যিই আলাদা।

মায়া আমার ক্লাসমেট।ক্লাসমেট বললে ভুল হবে।ক্লাস নাইন থেকে পিছনে ঘুর ঘুর করছি।নাহ আমরা বন্ধু নই।তবে এর থেকেও আরও কিছু।আমরা এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।প্রথম যেদিন বলেছিলাম ভালবাসি সেদিন মিষ্টি মুখেই না বলেছিল।হ্যা কষ্ট পেয়েছিলাম অবশ্য তবু পিছু ছাড়িনি।সেই থেকে জ্বালিয়ে যাচ্ছি। মেয়েটা নীরব মুখে সব সহ্য করে।আস্তে আস্তে আমরা তুমি থেকে তুই তে এসে পৌছেছি।তবুও নিজেরাও জানিনা নিজেদের মধ্যে কি সম্পর্ক। তারপরেও সারাদিন দুষ্টুমি করে যাই। আজ ক্লাসে গিয়ে দেখি রাফি(দোস্ত)নোট তুলছে মায়ার খাতা থেকে।মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলল। একটা পৃষ্ঠায় বড় করে লিখে দিলাম আই লাভ ইয়ু মায়া।আর কি কি করে জানি ওর বান্ধবীরা টের ক্ষ্যাপিয়ে দিয়েছে। সারা ক্লাস আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছিল। ক্লাস শেষ হতেই ডাকতে শুরু করল।মেয়েটাকে এত ভালবাসি তবুও মনটা বুঝতেই পারিনা।

পরের দিন কলেজে ক্লাসে ঢুকতেই ডাক পড়ল। প্রিন্সিপাল জরুরি তলব পাঠিয়েছেন।মনে মনে বুঝতে পেরেছি কি হতে চলেছে। ভয়ে ভয়ে অফিসে ঢুকেই দেখি মহারানী হাজির। চোখের দিকে আড়োচোখে তাকিয়ে দেখি মুচকি হাসছে।অতঃপর প্রিন্সিপাল মহাশয় যা বলার বলেই দিলেন।কান তো ধরতেই হল মাফ ও চাইতে হল এবং এই আমার লাষ্ট চান্স।কষ্ট পেয়েছি অনেকটা তবুও কেমন অদ্ভুত কারনে ভালই লাগছে এটা ভেবে যে আমি আজ অপরাধী হয়ে গেলাম।হ্যা অনেকটাই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম মেয়েটার সাথে।ভুলেই গিয়েছিলাম জোর করে সবকিছু পাওয়া যায় না।হয়ত আমি মাফ নাও চাইতে পারতাম তবু এতটুকু আমার করা উচিৎ ছিল মেয়েটির কাছে।

আমি মোটেও অনুতপ্ত নই।আমি দোষী ছিলাম শাস্তি পেয়েছি।তাই ভুল শুধরে নিয়েছি।নিয়মিত ক্লাস করি। সবকিছুই আগের মত শুধু ওকে দেয়া সময় গুলো মাঝে মাঝে ফুরাতে চায় না।নাহ আমি ভুলিনি ওকে। প্রতিদিনই তো লুকিয়ে দেখি।কত হাসি খুশি থাকে মেয়েটি।এটাই তো চেয়েছিলাম আমি।সারাদিন ক্লাস করে বাসায় ফিরি। কলেজে থাকাকালীন সময়টুকু শুধু বন্ধুরাই থাকে। স্বাভাবিক জীবনে কতটা আসতে পেরেছি জানিনা তবে মায়ার হাসি মুখটা দেখে সব কিছু ভুলে যাই। একমাস এভাবে চলে গেল।সন্ধ্যায় শুয়ে আছি। ফোনটা বেজে উঠল।স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি আননোন নাম্বার। দুইবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করলাম…

-হ্যালো শুভ্র।(মেয়েলি কন্ঠ)
-জ্বি কে বলছেন?(আমি)
-বাহ একদিনে আমাকে ভুলে গেলে?
-দুঃখিত আপনি কে বলছেন?
-বাহ এত সহজে ভালবাসার মানুষটিকে ভুলে গেলে?
-আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
-বুঝতে হবে না।শোন আমাকে একটা ছেলে ডিষ্টার্ব করছে তাকে থ্রেট করতে হবে।
-আজিব আমি চিনিনা জানিনা,তাছাড়া আমি কি মাস্তান নাকি যে থ্রেট করব।
-হ্যা করবে।
-কেন?
-আমি বলছি তাই।
-আপনি কে?আপনার কথা কেনইবা শুনতে যাব।
-আমি তোমার….
-কি?
-কিছুনা রাখছি।

টুট টুট টুট আমি বুঝতে পেরেছি মায়া ফোন করেছিল। যে কথাটি বলল সবটুকুই মিথ্যে।তবে অবাক লাগছে এটা ভেবে মায়া হঠাৎ তুই থেকে তুমি করে বলল কেন।একদিন আমার দিকে আড়চোখে তাকায় বুঝতে পারি তবুও নিশ্চুপ থাকি। হয়ত জ্বালাতন করতে চাইনা। পরেরদিন ক্লাস শেষে বাসায় ফিরছি…

-শুভ্র দাড়াও।(মায়া)
-না শোনার ভান করে হাটা দিলাম।
-শুভ্র দাড়াতে বলছি।
-দাড়িয়ে গেলাম।
-কি হয়েছে তোমার?
-কিছুনা।
-কিছুনা তো আমাকে এড়িয়ে চল কেন?
-আমি আবার তোমাকে কখন এড়িয়ে চললাম।
-হ্যা এড়িয়ে চলতো কদিন আগে তো পিছনে ঘুর ঘুর করতে সারাদিন জ্বালাতে, সেদিনের ওই ঘটনার পর থেকে তুমি আমার সঙ্গে ভালভাবে কথা তো দূরে থাক তাকাও পর্যন্ত না।

-এমনি আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
-তোমাকে একটা কথা বলব সময় হবে শোনার।
-হুম বলতে পার।
-সেদিন প্রিন্সিপালকে কে রিপোর্ট  করেছিল জানিনা।আমাকে ডেকে নেওয়ার পর দেখি তোমাকেও ডাকা হয়েছে।আমি ভেবেছিলাম বলব ঘটনাটা মিথ্যে তবু তুমি আগে থেকে বললে এটা তুমি করেছ। বিশ্বাস কর সেদিন আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।তোমার কাছে মাফ চাইব তবু সুযোগ দিলেনা।আমি সত্যিই খুব দুঃখিত।

-আচ্ছা ঠিক আছে।আসি।
-শুভ্র শোন।
-হুম বল।
-আমি রাজি।(বলেই মাথা নিচু করল)
-রাজি মানে বুঝলাম না।
-যার জন্য এত কিছু।

যার জন্য সেই ক্লাস নাইন থেকে আমার পিছে ঘুরছ।যার জন্য অন্য কোন কলেজে ভর্তি হওনি,যার জন্য গ্রুপ চেইঞ্জ করলে,যার জন্য একই ব্যাচে পড়তে যার জন্য প্রতিদিন ছুটে যেতে বাসার সামনে,আমি আর অবহেলা করতে পারছিনা বিশ্বাস কর। আমি পরাজিত তোমার ভালবাসার কাছে।এ কদিনে বুঝেছি হাসি ঠাট্টা হলেও কতটা জড়িয়ে গেছি তোমার সাথে।আমি সত্যিই রাজি তোমার কাছে ধরা দিতে।

-কিন্তু আমি রাজি নই।
-তাহলে এত কিছু করলে কেন?
-জানিনা।
-তুমি সত্যিই কি ভালবাস না।
-জানিনা।(বলেই হাটা দিলাম)
-শুভ্র তুমি এভাবে চলে যেতে পার না।
(কেঁদে কেঁদে)
-কেন পারি না?
-কারন কেউ একজন তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা।
-আমিও তো এ কথাটি তাকে বলেছিলাম একদিন।
-সেদিন অবুঝ ছিল বলে সত্যিকারের ভালবাসা দূরে ঠেলে দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আজকে আমি আর হারাতে চাইনা।

-হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।
-হাতে হাত রেখে কেঁদে ফেলল।
-ভালবাসি বলবেনা?(মায়া)
-নাহ বলবনা।
-কেন?
-তুমি আগে বল।
-মেয়েরা আগে বলে নাকি?
-বলেনা এখন বলবে।
-পারব না।
-পারতে হবে।
-ভালবাসি খুব।
-আমিও ভালবাসি।

হাত ধরে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।মাঝে মাঝে চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।এটাই তো চেয়েছিলাম। ওকে নিয়ে কিছু সুখের মূহুর্ত কিছুটা পথ পাশাপাশি চলব। সত্যিই আমি পেয়েছি তাকে। প্রিয়জন দূরে গেলে বোঝা যায় মর্ম। ভালবাসা তখন বেদনায় ভরিয়ে তোলে।কিছুটা আকাংখা মনটাকে কুঁড়ে খায়।মনে হয় সব ভুলে বলে দেই না বলা কথাটি।পাড়ি দেই নতুন স্বপ্নের পথে।।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত