—এই শুভ্র কোথায় তুমি?(ইপ্সিতা)
-এই তো আছি।(আমি)
-আছি মানে কোথায়?
-এইতো বাইরে।
-কিইই,তোমাকে হাজারবার মানা করা শর্তেও তুমি এত রাতে আড্ডা দিতে বের হয়েছ।
-না মানে ইয়ে ঐ বন্ধুরা ছাড়ল না তো তাই আসতে হল।
-একেবারে মিথ্যা বলবা না তুমি নিজের ইচ্ছায়ই আসছ।
-বিশ্বাস কর বন্ধুরা জোর করল তাই….
-তাই বলে এত রাতে,সিগারেট কয়টা খেয়েছ
এ পর্যন্ত সত্যি করে বল।
-বিশ্বাস কর একটাও খাইনি আমি ওসব খাইনা।
-বিশ্বাস করব তোমাকে,আমি নিজের চোখে দেখেছি তোমাকে খেতে।
-মোটেও না,এখন কেউ পিক দেখে ওসব বিশ্বাস করে নাকি?
-পিক দেখে বিশ্বাস করা যায়না,তবুও আমার নিজের আপন ভাই দেখেছে তোমাকে সিগারেট খেতে।
-ওটাই তো মহাঝামেলা।(বিড়বিড় করে বললাম)
-কি বললে?
-কই কিছু না তো।
-একেবারে কথা লুকাবেনা,কি বলেছ সত্যি করে বল?
-আমি বললমা যে ও বাচ্চা ছেলে হয়ত আমার মত কাউকে দেখে ভেবেছে আমি।
-মোটেও না আমার ভাই বাচ্চা নয় সে ক্লাস এইটে পড়ে,যথেষ্ট বুদ্ধি আছে।
-এটাই তো সমস্যা।(বিড়বিড় করে বললাম)
-কিছু বললে?
-না।ডিনার করেছ?
-ডিনার করব না তো কি তোমার জন্য বসে থাকব।
-হুম ঘুমাও তাহলে।
-ঘুমাব মানে?তুমি আগে বাসায় যাবে তারপর।
-আমি তো বাসায় চলে এসেছি।
-কখন?
-এইমাত্র।
-দেখ শুভ্র সবসময় ফাজলামো করবানা,বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে।
-আজিব আমি আবার কোথায় বাড়াবাড়ি করলাম।
-সারাদিনে তো টো টো করা ছাড়া কোন কাজ নাই,তারপর রাত হলে গলিতে দাড়িয়ে আড্ডা মার,আঙ্কেলের ঘাড়ে বসে খেয়ে চলেছ তোমার লজ্জা করেনা।
-ও হ্যালো এদিকটায় নাক না গলালেও চলবে,আমার বাপের ঘাড়ে বসে আমি খাব তাতে তোমার কি?
-লজ্জা করে না তোমার?
-আজিব বাপটাতো আমারই,এখানে লজ্জা আসল কি করে?
-তুমিআসলেই একটা আমড়া কাঠের ঢেকি।
-জানই যখন আমার কাছে পড়ে আছ কেন,ভাল জব করা ছেলে দেখে বিয়ে করে ফেল।
-কিইই,কি বললে তুমি?তোমার এত্ত সাহস হয় কি করে?
-বাহ,সারাদিন জ্বালিয়ে মার জব কর,জব কর বলে,যখন দেখছ যে আমার দ্বারা কিছু হবে না তখনভাল একটা ছেলেকে বিয়ে কর।
-তুমি একটা কুত্তা।
-হ্যা কুত্তি।
-তোমার সাথে কথা নেই।
-হ্যালো হ্যালো টুট টুট টুট
আমি শুভ্র।অনার্স কম্প্লিট।বাবা মায়ের একমাত্র আদর্শ সন্তান না বলে শয়তান বললেই ভাল হবে। লেখাপড়া শেষ করেও বাপের হোটেলে পড়ে আছি।যার কারনে জি এফ মানে ইপ্সিতার কাছে সবসময় প্যারায় থাকি।
জব কর,জব কর বলে মাথা খারাপ করে ।জবটা কি মুখের কথা,শার্ট প্যান্ট পরে ইন্টারভিউ রুমে ঢুকলাম আর হয়েগেল।এখনতো আর মেধা যাচাই হয়না।যাই হোক আমিওনা বলে দেই।আসলে জব করতে মন চায় না।নিজের স্বাধীনতা বলে কিছুই থাকেনা,পরাধীন জীবন।এরথেকে এই আছি বিন্দাস,ঘুরে ফিরে ভালই আছি।অন্ততবন্ধুগুলোরে তো সময় দিতে পারছি।কিন্তু এই যে মহারানী ইপ্সিতা ক্লাস নাইন থেকে পিছনে লেগে আছে। অদ্ভুত একটা মেয়ে।নিজে থেকেই প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিল।আমি তো স্ট্যাচুর মত দাড়িয়েছিলাম।এরকমটাও হয়।যাই হোক সেই থেকে চলছে,চলছে মানে প্রেম করছি।
দুজনের বাসায় জানাজানি হয়ে গেছে।কিন্তু সমস্যা ওই একটাই বেকার ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দিবেন না আমার হবু শ্বশুর আব্বা।এজন্য সারাদিন শুধু ঘ্যান ঘ্যান করে। আমিও সহজে দমবার পাত্র নই। কিছুক্ষন আগে এক বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে গলিতে বসে কার্ড খেলছিলাম।ইপ্সিতা ফোন দিয়েছে। এই মেয়েটা যে কিভাবে বুঝে যায় আমি এখন বাসায় নেই।মিথ্যে যে বলব,আম্মুর কাছ থেকে খবর নিবে।ও জানে আমি সিগারেট খাই।জানবেই না কেন,ওর একটা ফাজিল ভাই আছে।কয়েকদিন আগে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে সিগারেট ফুকছি,কিভাবে যেন সুকৌশলে একটা পিক তুলে নিয়েছে।এর পর কিছুদিন ব্লাকমেইল করে অনেক কিছু খেয়েছে।কিন্তু কপাল খারাপ থাকলেযা হয় আর কি,ইপ্সিতা কিভাবে যেন দেখে ফেলে। সেদিন দিয়েছিলাম কানের উপর কয়েকটা ওর ভাইয়ের।
ভাইয়া ভাইয়া বলে হাত ধরে বলে আমি কিছু জানিনা আপু আমার মোবাইল চেক করে মাঝে মাঝে।কি বলব আর যা হবার তা তো হয়েই গেছে।মুখের উপর তিনটি থাপ্পড়ের ব্যাথা এখনো আছে।তারপরেও আম্মুর কাছে নালিশ যাওয়ায় পকেট খরচ একেবারে কমে গেছে। এই মেয়েটা সারাক্ষন শুধু জ্বালায় রাখে। আর দেরি না করে উঠে পড়লাম।ওদিকে তো মহারানী রাগ করে ফোন কেটে দিল।এখন সুইচড অফ বলছে।নিশ্চয়ই কোন না কোন সমস্যা সৃষ্টি করে রেখেছে। বাসায় এসে কলিং বেলে চাপ দিলাম।রাত আনুমানিক ১১:৩০।আব্বু সম্ভবত ঘুমিয়েছে কিন্তু আম্মু জেগে আছে। দরজা খুলল কিন্তু,স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। আব্বুর মত কে দাড়িয়ে আছে সামনে,হ্যা আব্বুই তো। নিশ্বাস চেপে ভিতরে ঢুকলাম।আব্বু তখনও রক্তচক্ষু নিয়েতাকিয়েআছে।তারপর ধীর গতিতে দু এক পা এগোতেই,
-এত রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলে?(আব্বু)
-আব্বুর দিকে ফিরে ভদ্র ছেলের মত মাথা নিচু করেদাড়িয়ে আছি।
-কিছু জিজ্ঞাসা করেছি তোমায়?
-এই তো আব্বু রায়হানের বাসায় গিয়েছিলাম।(রায়হান আমার ক্লোজ ফ্রেন্ডের নাম)
-কি জন্য গিয়েছিলে?
– এইতো আব্বু রায়হানের জন্মদিন ছিল তাই।
-তো কেমন কাটল জন্মদিন,শুধু কি সিগারেট দিয়েই জন্মদিন পালন করল না আরও কিছু ছিল।
-আব্বুর এমন কথা শুনে আমার তো স্ট্রোক হওয়ার উপক্রম।বলে কি উনি।
-ছি ছি ছি তুমি আমার সামনে মিথ্যে বলছ।
-আব্বু বিশ্বাস করেন।
-থাক…আর কিছু শুনতে চাই না।
যাও খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।গম্ভীর মুখে ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসলাম।আম্মু খাবারদিয়েছে খাওয়া শুরু করলাম।মাঝকানে আম্মুরমুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
-আম্মু কি ব্যাপার বলতো আব্বু ওভাবে কথা বলল কেন আমার সাথে।
-ইপ্সিতা ফোন করেছিল।
-ভাত মুখেই আটকে গেল।কিইইই
-হুম ফোন করে তোর আব্বুকে বলে দিয়েছে তুই কোথায়ছিলি।(মনে মনে নিজেকে থাপ্পড় মারতেইচ্ছে করছে কেন যে রাগিয়ে দিলাম ওকে)
-বেশি কিছু বলে নি তো।
-বলেছে,তুই সিগারেট খাস কেন?
-কোথায় সিগারেট খাই?মিথ্যে বলেছে।
-মোটেো না মেয়েটা মিথ্যে বলতেই পারেনা,আমাকে বলেছে তুই নাকি ওকে কি একটা খারাপ কথা বলেছিস।
-আজিব আমি আবার কি খারাপ কথা বললাম। বুঝিনা নিজের ছেলের থেকে ওকে কেন এত বিশ্বাস কর।
-বিস্বাস না করে উপায় আছে।সত্য কথাগুলো একমাত্র ওই মেয়েটাই বলে।
-ধ্যাত ভাল্লাগে না।
বলেই উঠে পড়লাম,পিছন থেকে আম্মু ডেকে বলল কাল তোকে দেখা করতে বলেছে ইপ্সিতা।আম্মুর দিকে ঘুরে তাকালাম তারপর আবার নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালাম। কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা। ডিজিটাল বউমার ডিজিটাল শাশুড়ি।জামাইকে দেখা করার কথা শাশুড়িকে বলে দিয়েছে।এই মেয়ে সব পারে।
যা ভেবেছিলাম তাই বাসায় জানিয়েছে। কিন্তু অনান্যবার আম্মুকে বলে, এবার আব্বুকে বলেছে।আব্বু তো ভীষন রেগে আছে।সিগারেট খাওয়ার কথাটাও তোকে বলতে হল।ফোন দিলাম সুইচড অফ।কিছুক্ষন পর ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম।জানি কোথায় যেতে হবে।মহারানীর সাথে প্রতিদিন যেখানে দেখা করি।এই প্রচন্ড রৌদ্রের মাঝে দৌড় করিয়েই ছাড়ল। না গেলে আবার বাসায় ফোন দিয়ে উল্টা পাল্টাবলবে।কচ্ছপ গতিতে হাটতে হাটতে পৌছালাম গন্তব্যে। ওইতো বসে আছে।কিন্তু আগে আসার কথা আমার ও দেখি আগে আগেি এসেছে।সামনে গিয়ে বত্রিশটা দাঁত বের করেি হো হো করে একটা হাসি দিলাম।আমার দিকে ফিরেই ঠাশ…….
-কি হল? এটা আমাকে কাল সারা রাত কাঁদানোর জন্য। ঠাশ এটা আমাকে খারাপ কথা বলার জন্য।
-আমি কি খারাপ ক…..
-ঠাশ..এটা রাতে বাসার বাইরে থাকার জন্য
-কি হচ্ছে টা কি(লাল হয়ে যাওয়া মুখটা চেপে ধরে বসে আছি)
-ঠাশ..এটা সিগারেট খাওয়ার জন্য। প্রচন্ড রাগে আর ব্যাথায় উঠে পড়লাম। হাত টেনে ধরেছে ইপ্সিতা।
-কোথায় যাচ্ছ?
-জানিনা।(রাগী সুরেই বললাম)
-ব্যাথা পেয়েছ?
-না।(কি বেহায় মেয়ে ইচ্ছেমত থাপ্পড় মেরে গাল লাল বানিয়ে ফেলে বলছে ব্যাথা পেয়েছ)
-কাল আমাকে ওই কথা বললে বলেই তো মাথাটা গরম হয়ে গেল।
-কোন কথা যার জন্য এতকিছু।
-অন্য ছেলেকে বিয়ে করতে বললে কেন?
-ঠিকই তো বলেছি।
-আবার বলছ?যাও আর কখন তোমার সামনেআসব না। (বলেই হাত ছেড়ে দিয়ে সামনে এগোতে চাইল)
-এবার আমিই হাত ধরে বললাম।কোথায় যাচ্ছ?
-জানি না।
-রাগ করেছ?
-না।
-তুমি ওভাবে জবের কথা বললে বলেই তো বললাম।
-তো কি তুমি তাহলে জব করবে না।
-ইচ্ছা তো সেরকমই।
-তার মানে আমাকে বিয়ে করবে না বললেই পারতে। (কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল)
-কি আজিব জব না করলে তোমাকে বিয়ে করা যাবেনা।
-দেখ শুভ্র তুমি খুব ভালভাবেি জান আব্বুর শর্তের কথা। তাছাড়া জব না করলে বিয়ের পর আমাকে কি খাওয়াবে।
-কেন আমি যা খাই।
-তুমি আসলেই একটা যাচ্ছে তাই।
-আচ্ছা আমি জব করব।
-সত্যি।
-হুম।
-প্রমিজ।
-হুম।
অতপর তার খেয়াল হল আমার মুখটা লাল হয়ে আছে তার থাপ্পড়ের আঘাতে।ছাতার নিচে বসিয়ে মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
-তুমি কাঁদছ কেন ব্যাথা তো পেলাম আমি।(ও কাঁদছে)
-এত বুঝতে হব না।এি শোন আর কখনও সিগারেট খাবেনা,রাতে আড্ডা দিতে পারবেনা।
-কিন্তু…..
-কোমল হাত এবার শক্ত হয়ে ব্যাথা স্থানে চেপে ধরল। ব্যাথায় চিৎকার করে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে সব মানলাম।
-এইতো ভাল ছেলে।বলেি কাঁদে মাথা রাখল।
জানিনা এই রৌদ্রের মাঝে মেয়েটা এত রোমান্স খুঁজে পায় কোথায়।ার জানতেও চাইনা।বেশি জানতে গেলে ফাসিয়ে দিবে। তিনমাস পর,, সেদিন যেভাবেই হোক বলেছিলাম জব করব,অনিচ্ছা সত্বেও জব করতে হচ্ছে এখন।একটা প্রাইভেট ফার্মে জব পেয়েছি।জব পাওয়ার পাচদিন পরেই বিয়ে। সব মিলিয়ে এখন আমি পরিপূর্ন।তবে প্যারা দেওয়া অভ্যাসটা ইপ্সিতার যায়নি।
বিয়ের আগে যে শাষন করতে পারেনি এখন তা করে।সিগারেটের নাম শুনলে খাওয়া বন্ধ ার খেলে তো কথাই নেই,মাঝে মাঝে পুরানো বন্ধুগুলোর সাথে নামেমাত্র দেখা হয় আড্ডা তো দূরের কথা। ঠিকমত গোসল,খাওয়া দাওয়া,অফিসে যাওয়া সব মিলিয়ে কড়া শাষন।মাঝে মাঝে অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলে হাজারটা প্রশ্ন।উফফ এমন ভাবে জীবন চলে। তবে হ্যা মেয়েটি নিজের মত করে ভালবাসতে জানে। ছুটির দিনগুলোতে ওকে নিয়ে সেই পুরানো জায়গায় যেতে হয়।হ্যা আমরা স্বামী স্ত্রী তবুও পুরানো দিনগুলি হয়ত ভুলতে চাইনা বলে সেখানে গিয়ে সারাটি বিকেল কাটাই।জীবনের সবটুকু পাওয়া এখন এই মেয়েটি।
যে হাসাতেও জানে কাঁদাতেও জানে।বেঁচে থাকার মত একটা অবলম্বন।যদিও আব্বু আম্মু আমার থেকে ওকে অনেক বেশি ভালবাসে তবুও আমার খুব ভাললাগে।আমি মাঝে মাঝে ওর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকি,হূমায়ুন আহমেদ স্যারের কথাটি খুব মনে পড়ে,রাগী মেয়েরা নাকি সত্যিই অনেক ভালবাসতে জানে। আমি পেয়েছি সে লুকিয়ে থাকা ভালবাসা।মাঝে মাঝে খুনশুটি ঝগড়া মান অভিমান সব মিলিয়ে নতুনভাবে ভালবাসতে পারে মেয়েটি।আমি সেই সব সুখীদের মাঝে একজন যারা সত্যিই ভাগ্যবান।