অফিস থেকে ফিরতে আজ একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছে অভ্র। রুমের সামনে এসে সেই কখন থেকে কলিংবেল বাজাচ্ছে তবে দরজা খোলার নামই নেই। এদিকে খুব ক্লান্তি লাগছে অভ্রর। অভ্র বুঝতে পারছে যে আজ বউটা খুব বেশিই রাগ করেছে কারণ আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলেছিল। ঠক করে দরজা খোলার আওয়াজ হলো আর সাথেসাথেই বুকে কিছু একটা অনুভব করলো অভ্র।অভ্রর পাগলি বউটাই অভ্রকে জড়িয়ে ধরেছে। মুহূর্তেই অভ্রর সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। অভ্র ঈশাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “এই পাগলি ছাড়ো কেউ দেখে ফেলবে তো” তবুও ঈশা বুকে মাথা রেখে চুপটি করেই আছে।
— এই পাগলি আমার ঘরে তো যেতে দেবে না কি? (অভ্র) তবুও চুপ করে আছে ঈশা। অভ্র ঈশাকে জড়িয়ে ধরেই ঘরে ঢুকে গেল।
কিছুক্ষণ পর…..
— অনেকক্ষণ তো হলো এবার ছাড়ো। (অভ্র)
— না ছাড়বোনা,আমাকে অনেক কষ্ট দিছো তুমি একদম ছাড়বোনা হু। বলেই আরো শক্ত করে অভ্রকে জড়িয়ে ধরল ঈশা।
— আরে আমার শরীরটা একদম ঘামে ভেজা,আগে ফ্রেশ হয়ে আসি? (অভ্র)
— চুপ,একদম চুপ। ঘামে ভেজা তো কি হয়েছে? আমি তোমাকে এভাবেই ভালোবাসি। বুকে মাথা রেখেই ঈশা বলল।
— পাগলি বউটা আমার
বলেই অভ্র ঈশাকে কোলে তুলে রুমে চলে গেল। ঈশাকে খাটে শুইয়ে দিয়ে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিল। তারপর অভ্র ফ্রেশ হতে চলে গেল অপরদিকে কপালে ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়ে ঈশারও সারাদিনের সব অভিমান পানি হয়ে গেল। খাট থেকে নেমে মুচকি হেসে ঈশা রান্না করতে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে অভ্র দেখে ওর পাগলি বউটা রুমে নেই তাই অভ্র রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো। রান্না ঘরের দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে দেখে বউটা মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে।আগুনের লালচে আলোতে ঈশার ঘেমে যাওয়া মুখটা খুবই মোহনীয় লাগছে অভ্রর কাছে।নাকের পাশের ফোঁটা ফোঁটা ঘামের বিন্দু গুলো আগুনের আলোতে মুক্তোর মতো জ্বলছে। নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনা অভ্র। পা টিপে টিপে রান্না ঘরে প্রবেশ করেই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঈশাকে। হঠাৎ এমন জড়িয়ে ধরাতে কেঁপে ওঠে ঈশা আর রাগি সুরে বলে,
— ঐ পাগল আবার এসেছো শয়তানি করতে হু…..অভ্র ঈশাকে জড়িয়ে ধরেই বলে,
— আমার বউকে আমি ধরেছি তাতে তোমার কি হু?
–আরে বাবা দেখছ না রান্না করতেছি ছাড়ো তো এখন। (ঈশা)
— রান্না ঘরে প্রেম করার মজাই আলাদা। তাইতো ছাড়বোনা। (অভ্র)
— ছাড়ো বলছি না হলে খবর আছে কিন্তু হু (ঈশা)
— ছাড়বোনা বলছি তো ছাড়বোই না (অভ্র)
ঈশা কোন রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে খুন্তি নিয়ে ধাওয়া করে আর ভয়ে অভ্র তো ভৌঁ-দৌড়। অভ্রর এমন পাগলামি দেখে মুচকি মুচকি হাসে ঈশা আর মনে মনে বলে,
— পাগল একটা।
ঘরে এসে খাটে শুয়ে পরে অভ্র তারপর ভাবে একবছর আগের সেই কথা,,,,,,তখন সবে মাত্র একটা চাকরি পেয়েছে অভ্র।অমনি পরিবারের সবাই বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে।অভ্রকে বলেছিল যে, তোর পছন্দের কেউ আছে কিনা আর থাকলে জানাতে।তবে অভ্র ছোট থেকে এতটাই ভীতু ছিল যে, একটা প্রেমও করতে পারেনি। তাই অবশেষে পরিবারের পছন্দেই ঈশার সাথে বিয়ে হয় অভ্রর। ভয়ে ভয়ে বাসর ঘরে ঢুকে অভ্র দেখে ঈশা ঘোমটা দিয়ে চুপটি করে বসে আছে। ভয়ে অভ্রর হার্টবিট যেন বেরেই যাচ্ছিল তাই কোন কথা না বলেই চুপচাপ শুয়ে পরে। মাত্র ঘুম ঘুম ভাব হয়েছে অভ্রর ঠিক তখনই টিশার্টের কলারে টানা হ্যাচড়ায় ধড়ফড় করে উঠে বসে অভ্র।
— কিক…কি হয়েছে ছা ছাড়েন আমাকে অভ্র ভয়ে ভয়ে বলল।
— ছাড়বো না। (ঈশা)
— কে আপনি আর ছা..ছাড়বেন না কেন? (অভ্র)
— কিইইইহ ! আমি কে নাহ ! ডেংডেং করতে করতে বিয়ে করে এনে এখন বলছো কে আমি? (ঈশা)
— ওহহ আপনিই তার মানে আমার বউ ? (অভ্র)
— হ্যাঁ বউ। (ঈশা)
— আমার না ঘুম পাচ্ছে, ঘুমাই ? (অভ্র)
— কিইইইহ! ঘুমাবি মানে!
আমার অনেক দিনের শখ বরের সাথে বাসর রাতে বসে বসে আমার সব মনের কথা শেয়ার করবো আর তুই কিনা ঘুমাবি? রেগে গিয়ে ঈশা বলল
— আচ্ছা ঠিক আছে বলেন শুনছি। (অভ্র) ঈশা বলতে শুরু করে,
–কলেজ লাইফে যখন বান্ধবিরা সব প্রেম করতো তখন খুব হিংসে হতো যে আমার কেন বয়ফ্রেন্ড নেই?
কিন্তু আমার একটাই শখ ছিল যে, আমি বিয়ের পর আমার বরের সাথে প্রেম করবো। তাই আর প্রেম করা হয়ে ওঠেনি। আর আপনি কয়টা প্রেম করেছেন? (ঈশা)
— কয়টা!!!
ইয়ে মাম মানে আমার প্রেম করতে খুব ভয় লাগে তাই করা হয়নি। (অভ্র) অভ্রর এমন বোকা বোকা কথা শুনে খিলখিল করে হাসে ঈশাআর মুগ্ধ নয়নে অপলক চেয়ে থাকে অভ্র আর ভাবে,
–এতোটা সুন্দর করেও কি কেউ হাসতে পারে?
–জানেন তো আমার না বড্ড শখ ছিল যে আমার বরটা যেন বোকা বোকা হয়।
কারণ বোকা ছেলেরা নাকি খুব রোমান্টিক হয়।তা আপনার কেমন মেয়ে পছন্দ? (ঈশা)একবার আপনি আবার তুমি আবার তুই এমন কথা শুনে অভ্রর কেমন যেন অবাক অবাক লাগছে। তাই কি বলবে বুঝতেই পারছেনা।
— কি হলো বলো। (ঈশা)
— আমার একটু রাগি আর চঞ্চল মেয়েই ভালোলাগে বলেই লজ্জায় মাথাটা নিচু করে নেয় অভ্র।
ঈশা যে এত কথা বলতে পারবে তা ভাবতেই পারেনি অভ্র !বাসর রাতেই মেয়েটা এমন ভাবে কথা বলছে যেন, দুজনের হাজার বছরের চেনাজানা। ঈশা ওর পছন্দ, অপছন্দ আরো নানা কথা বলছে তো বলছেই। এদিকে প্রচন্ড ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে খাটে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পরে অভ্র। আর একা একা বকবক করতে করতে কারো সাড়া না পেয়ে ঈশা তাকিয়ে দেখে অভ্র ঘুমিয়ে গেছে। খুব রাগ লাগে ঈশার। তবে অভ্রর ঐ বাচ্চা বাচ্চা মুখটার দিকে তাকিয়ে সে রাগ আর বেশিক্ষণ টিকে না। ঈশা অভ্রকে খাটে শুইয়ে দিয়ে নিজেও শাড়ি চেন্জ করে এসে শুয়ে পড়ে। অভ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে ঈশা
–ছেলেটা কি নিষ্পপ আর বোকা বোকা হিহিহি
মনের মধ্যে হাজারো জল্পনা কল্পনা করতে করতেই ঘুমিয়ে যায় ঈশাও।বাইরে লোকজনের কথার আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে যায় অভ্রর। চোখটা খুলেই দেখে ঈশা ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। ঈশার প্রতিটা নিঃশ্বাস অভ্রর গলাতে গিয়ে লাগছে।এই প্রথম কোন মেয়েকে এতটা কাছ থেকে দেখছে অভ্র বুকটা ধকধক করছে। অভ্র আর উঠতে চেয়েও উঠলোনা। অপলক ভাবে চেয়ে থাকে ঈশার ঐ নিষ্পাপ মুখের দিকে । ঘুমটা ভেঙে ঈশা তাকিয়ে দেখে দুটো চোখ অপলক ভাবে ওর দিকে চেয়ে আছে। খুব লজ্জা লাগে ঈশার কারণ ও এখনো অভ্রকে জড়িয়ে ধরেই আছে। ঈশা একটু নড়াচড়া করতেই ভয়ে তাড়াতাড়ি উঠে বসে অভ্র আর লজ্জাতে লাল হয়ে বলে,
— আ..আমি কিন্তু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকিনি
আপনি জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন তাই আমি উঠতে পারিনি। অভ্রর এমন বোকা বোকা কথায় না হেসে পারেনা ঈশা। একটা একটা করে দিন চলে যায়। পরিবারের থেকে বিদায় নিয়ে শহরে চলে আসে দুজনে। আর এ কয়টা দিনেই ঈশা অভ্রকে অনেক অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। ঈশা যেমন একটা বর চেয়েছিল অভ্র ঠিক তেমন। আর তাই এই বোকা বোকা ছেলেটাকে ঈশার একটু বেশিই ভালোলাগে। আর অভ্র যে ঈশাকে ভালোবাসেনা তা না। তবে অভ্র প্রকাশ করতে লজ্জা পায়। ঈশার পাগলামি আর দুষ্টামি খুব খুব ভালোলাগে অভ্রর। এভাবে খুব অল্প দিনেই দুজন, দুজনাকে খুব বেশিই ভালোবেসে ফেলে। ঈশার কেয়ার, অভ্রর বোকামি আর দুজনের ভালোবাসা দিয়ে গড়া ছোট্ট সংসারটা ঠিক যেন একটা ভালোবাসার অনন্য উদাহরণ হয়ে যায়।
— এই পাগল বর সেই কখন থেকে দেখছি একা একাই কি যেন ভাবছো আর মুচকি মুচকি হাসছো কি হয়েছে হু ? ঈশা অভ্রর পাশে এসে বসে বলল। ঈশার কথা শুনেই ভাবনায় ছেদ পরে অভ্রর।
–না এমনিই হাসছি (অভ্র মুচকি হেসে)
— উহু কিছু তো একটা হয়েছেই, বলো বলছি (ঈশা অভিমানী সুরে) অভ্র ঝট করে ঈশাকে হ্যাচকা টানে বুকে ফেলে দেয় তারপর কপালে একটা ভালোবাসা এঁকে দিয়ে বলে,
–ভাবছিলাম এই পাগলিটাকে কিভাবে যে পেলাম সে কথা। অভ্রর বুকে মাথা রেখে চুপটি করে শুয়ে থাকে ঈশা।
কিছুক্ষণ পর…
— এই পাগলি অনেক খিদে পেয়েছে চলো খেতে দিবে চলো চলো। (অভ্র)
— আর একটু থাকি। (অভিমানি সুরে ঈশা)
–পাগলি একটা
বলেই অভ্র শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঈশাকে।তারপর কোলে করে খাওয়ার ঘরে চলে যায়।ঈশা একটা প্লেটে খাবার বেড়ে নেয় তারপর দুজন একে অপরকে খাইয়ে দেয়। ভাবছেন দুজন এক প্লেটে কেন খায়? ঈশার কথা যে, এক প্লেটে খেলে ভালোবাসা বাড়ে তাই দুজন এক প্লেটেই প্রতিদিন খায়। খাওয়া শেষে অভ্র উঠে যাবে ঠিক তখনই ঈশা চকাস করে অভ্রর গালে একটা ঝাল চুমু দিয়ে রান্না ঘরে দৌড়ে চলে যায়। ঈশার এমন ছোট্ট ছোট্ট পাগলামি ভরা ভালোবাসা গুলো খুব ভালোলাগে অভ্রর। মাঝেমাঝে ভাবে
–জানিনা জীবনে কি ভালো কাজ করেছিলাম যার জন্য এমন একটা বউ পেয়েছি।
ঘরে এসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে অভ্র। কিছুক্ষণ পর ঈশার আগমন। ঈশা শুধু এদিকে-ওদিকে ছুটাছুটি করছে দেখে অভ্র বলল,
— কিছু কি বলবে? ঈশা আমতা আমতা করে বলে,
— আজ আকাশে অন্নেক বড় চাঁদ উঠেছে খুব সুন্দর জোসনা। চলোনা ছাদে যাই?
–অনেক রাত হয়েছে আর আমিও কাজ করছি তুমি শুয়ে পড়ো তো। (অভ্র) অভ্রর এমন কথা শুনেই মনটা খারাপ হয়ে যায় ঈশার। মুখটা ভার করে খাটে চুপটি করে বসে থাকে। পাগলিটার মন খারাপ দেখেই বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে অভ্রর। তাড়াতাড়ি ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়। তারপর ঈশাকে কোলে নিয়ে বলে,
–পাগলিটা কি বুঝে না যে, তার মন খারাপ হলে আমি কষ্ট পাই।
–আমি কি বলবো তুমিই তো কষ্ট দিলা। (অভিমানি সুরে ঈশা)
কোলে করেই অভ্র ঈশাকে নিয়ে ছাদে চলে যায়।সত্যি আজ আকাশে অনেক বড় চাঁদ উঠেছে!ছাদটা জোসনার আলোতে ঝলমল করছে। ঈশা অভ্রর কোল থেকে নেমে ছাদের একদম কিনারায় চলে যায়। তারপর বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে হাতের ইশারায় বলে,
–দেখো কি সুন্দর চাঁদ দেখো দেখো?
— হুমম ঠিকই বলছো চাঁদটা সত্যিইইই খুব সুন্দর (অভ্র) ঈশা তাকিয়ে দেখে অভ্র ওর দিকে অপলক চেয়ে আছে তাই বলে,
–ঐ ঐ তুমি তো আমার দিকে তাকিয়ে আছো (ঈশা রাগ করে)
–হুমম।
আমার কাছে তোমার চেয়ে সুন্দর আর কিছুই নাই। (অভ্র) ঈশা আলতো করে অভ্রকে জড়িয়ে ধরে আর বলে,আমি সত্যিই খুব সুখি যে তোমাকে পেয়েছি। অভ্র ঈশাকে কোলে নিয়ে ছাদের দোলনাতে গিয়ে বসে। আর ঈশা অভ্রর বুকে মাথা রেখে বলে,
— জানোতো অভ্র আমার চাওয়া গুলো কেন জানি তুমি খুব সহজেই বুঝে যাও। খুব ভালোবাসো তাইনা?( ঈশা)
— ভালোবাসি কিনা জানিনা রে পাগলি তবে তুমি আমার আত্মার আত্মা যাকে ছাড়া সবকিছুই অচল। (অভ্র)
–জানোতো তুমি যখন অফিসে চলে যাও তখন খুব একা একা লাগে আমার বড্ড মনে পড়ে তোমাকে।(ঈশা)
— তাহলে তো তোমার একাকিত্ব দূর করতে নতুন অতিথি আনতে হবে। (অভ্র মুচকি হেসে)
— নতুন অতিথিটা আবার কে?( ঈশা)
–না মানে একটা ছোট্ট বাবু নিলে কেমন হয়? জিভে কামর দিয়ে অভ্র বলল।
— কিইইহ ! শয়তান
বাবু নিবা না? আমি নিতে দেবোনা। বাবু নিলে তখন তুমি আমার চাইতে বাবুকেই বেশি ভালোবাসবা। লাগবেনা আমার বাবু হুহ (রাগি সুরে ঈশা)
— এটা কেমন কথা? আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি আর বাসবো। (অভ্র)
— নাহ বলছি তো না। বাবু নিবো না। (ঈশা)
— ওওওহ আচ্ছা (মনটা খারাপ করে অভ্র) ঈশা মাথাটা তুলে তাকিয়ে দেখে অভ্র মুখটা ভার করে আছে।
–আচ্ছা বাবা এতো অভিমান করা লাগবেনা বাবু নিবো লজ্জামাখা সুরে ঈশা বলল। আর কথাটা কানে যেতেই মনটা ভালো হয়ে যায় অভ্রর। আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে,
— কিইইই! সত্যিই তুমি বাবু নিবা?
— হ্যা নিবো। তবে………( ঈশা)
— তবে আবার কি? (অভ্র)
— তবে আরো পাঁচ বছর পর (ঈশা)
— কিইইইইইহ !! পাঁচ বছর !! ( অভ্র) অভ্রর গোমড়া মুখটার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসে ঈশা।
–হ্যাঁ পাঁচ বছর।
এই পাঁচ বছরে তুমি আমাকে অনেক অনেক ভালোবাসবা আর তারপর আমরা বাবু নিবো। তবে পাঁচ বছর পরও আমাকে ভালোবাসতে হবে শুধু তখন একটু কম হলেও চলবে। (ঈশা) ঈশার এমন কথা শুনে মনটা ভরে যায় অভ্রর। ঈশাকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে, –পাগলি একটা এমন পাগলিও কি কেউ আছে? যে কিনা নিজের বাবুকেও বরের ভালোবাসার ভাগ দিতে চায়না।
–বাহ রে আমার বরের সব আমার এটার ভাগ কেন কাউকে দেব হুহ (ঈশা) আনন্দে মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হয়না অভ্রর। ঈশাকে বুকের সাথে আরো বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ওদের এই দুষ্টুমি ভরা ভালোবাসা দেখে হিংসে করে আকাশের অজস্র তাঁরা।
হিংসে করে চাঁদটাও। নিঝুম জোসনা রাতের ঝিঁঝিঁ পোকারা দূর থেকে ওদের এই ভালোবাসা দেখে করতালি দেয়। সময়টাও ওদের এই পাগলামি ভরা ভালোবাসা দেখে থমকে যায়। থমকে যায় বিশাল আকাশটাও। অভ্র তাকিয়ে দেখে বুকে মাথা রেখে পাগলি বউটা পিচ্চি বাবুদের মতো ঘুমিয়ে গেছে। চাঁদের আলোতে মুখটা খুব মায়াবি লাগছে। কপালে একটা ভালোবাসা এঁকে দিয়ে কোলে নিয়ে ঘরে চলে আসে অভ্র। তারপর বুকের উপর নিয়েই জড়িয়ে ধরে ঘুমের দেশে চলে যায়। ভালোবাসাটা যেন এভাবেই সারাটা জীবন থাকে সেই দোয়া করি।