বাসর ঘরে, আনিতার প্রথম কথা ছিলো, আপনার কি পূর্বে কারর সাথে কোন রিলেশন ছিলো?? নতুন বউ এর মুখের এমন কথা শুনে অবাক হয়ে যায় আসিফ। কারণ এইসব প্রশ্ন ত সচরাচর বর তার বউকে করে থাকে আনিতা ২য় বার একই প্রশ্ন করলো এবার আসিফ আনিতার দিকে না তাকিয়ে, মাথা নিচু করে, হুম বলে আনিতা কিছু বললো না। কিছুসময় নিরবতা কাজ করলো ২জনের মাঝে।
আপনি কি তাকে এখনও ভালোবাসেন??(আনিতা) আসিফ এবার মাথা উঠায়ে, কিসব প্রশ্ন করছেন?? উত্তর টা দিন…(আনিতা) নাহ বাসি না…(আসিফ) সত্য??(আনিতা) আসিফ এবার মুখ নামিয়ে, নাহ। বাসি এখনও আনিতা এবার খাট থেকে নেমে বালিশ টা নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লো আরে আরে আপনি কি করছেন??(আসিফ) আমি আপনার সাথে এক খাটে ঘুমাতে পারবো না…(আনিতা) মানে কি??(আসিফ) মানে পরিষ্কার। আর শুধু ঘুমানো না, আপনার সাথে আমার কোন রিলেশন ও হবে না ততদিন অবধি, যতদিন না আপনি আপনার প্রাক্তন প্রেমিকাকে ভুলতে পারেন….(আনিতা) আসিফ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আনিতার দিকে আনিতার চোখ থেকে পানি পড়ছে। এমন মানুষ কে আমার জীবনে দিলা যে কিনা রিলেশনশিপে ছিলো, ভালো কিন্তু তাই বলে এখনও তিনি তার প্রাক্তন কে নাকি ভুলতেই পারেনি।
আসিফ কিছু না বলে ঘুমায়ে যায় পরের দিন থেকে আনিতা আসিফ কে এভোয়েড করে। শুধু আসিফের কাজটুকু করেই, আসিফের কাছ থেকে সড়ে আসে প্রায় ৩ মাস এমন ভাবে চলে একদিন আসিফ আনিতার হাত ধরে টেনে, সমস্যা কি তোমার?? এভোয়েড করছো কেনো?? ভুলে যেও না আমি তোমার স্বামী আনিতা আসিফের হাত ছাড়িয়ে, জি জানি এবং মানিও। ত আমার থেকে দুরে থাকো কেনো??(আসিফ) আপনি কি ভুলতে পেরেছেন আপনার প্রাক্তন কে??(আনিতা) X gf X gf my Foot…What’s your problem… (আসিফ) আনিতা এবার আসিফের চোখের দিকে তাকিয়ে, আপনি কি জানেন আপনি প্রথমেই একটা ভুল করেছেন??
ভুল মানে??(আসিফ) বিয়ের পূর্বে প্রেম ভালোবাসা হারাম, যেটা আপনি করেছেন….(আনিতা) আসিফ এবার চুপ করে যায় এখন আপনি আপনার প্রাক্তন কে ভুলতেই পারেনি। এই অবস্থায়, যদি আমার সাথে আপনি থাকতে চান, বা আমি আপনার সাথে কোন রিলেশন করি, তাইলে ত আমার ভুল হবে তখন। যেচে পড়ে, আমার হিসাবের খাতায় যেনার গোনাহ লিখতে চাই না।
আনিতার চোখে পানি আসিফ ত নিরব চোখে আনিতার দিকে তাকিয়ে আছে এই কয়েক দিনেই এমনিতেই মেয়েটার প্রতি কেমন যেনো একটা মায়া জমেছে। মায়া টা এতটা পরিমানে বেড়ে গিছে যে অফিসে গিয়েও মনে হই আনিতার ফোনে একবার কল দেয়, কিন্তু আনিতার জন্যই আসিফ ওকে কল দেয় না আপনি আপনার মন থেকে ওনাকে বের করে দিন আমি আপনাকে আমার স্বামী রুপে পুরোপুরি গ্রহণ করবো.(আনিতা) কথাটা বলেই আনিতা চলে যায় আফিস চুপচাপ বসে পড়ে বেডের উপর রাত্রে হঠাৎ আসিফ জেগে দেখে, ফ্লোরে তে আনিতা নেই। পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে, টেবিলের উপ্রে মুখ গুজে আনিতা ডায়েরি তে কিসব লিখছে…
রাত তখন প্রায় ১ টা বাজে আসিফ কিছুটা অবাক হলেও পরক্ষনে ব্যাপার টাকে গুরুত্ব না দিয়ে, আবার ঘুমিয়ে যায় পরের দিন সকালে অফিসে যাওয়ার আগে টেবিলের উপরে থাকা হাত ঘড়িটা নিতে গিয়ে পাশে ডায়েরি টা দেখতে পেয়ে, আশেপাশে চোখ বুলিয়ে, নিজের অফিস ব্যাগের মধ্যে ডায়েরি টা নিয়ে নে অফিসে এসে প্রথমেই আগে ডায়েরি টা খুলে পড়তে শুরু করে আজ আমার জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিন, আমার বিয়ে, বিয়ে টা পুরোপুরি হুট করেই হয়ে যাচ্ছে,জানি না কপালে কি আছে। আমার মানুষ টা কেমন সেটাও ত জানি না…সঙ্কা হচ্ছে যদি…..
হুম আমার ওইদিনের সঙ্কা টাই ঠিক হলো…. আমার জীবন টাতে কি শুধু পরীক্ষায় লিখে রেখেছো মালিক…এই দিক দিয়েও শুরুতেই আমি জীবনের কাছে হেরে গেলাম। কারন মানুষ টা যে আমার না…অন্যকারর আজ অনেক কিছু বলেছি ওকে। আমি জানি ও অনেক কষ্ট পেয়েছে, কিন্তু তার থেকে বেশি কষ্ট আমি পেয়েছি, কারন আমি যে ওকে হুম আজ বলতে কোন দ্বীধা নেই যে, আমি ওকে ভালোবাসি । সত্যি খুব বেশিই ভালোবাসি। কিন্তু জানি না কবে আমি মানুষ টার মন পাবো যদি ও কোন দিন আমাকে ভালোও বাসে ত আগে ওকে কয়েক টা শর্ত পূরণ করতে হবে, ১) নামাজ পড়তে হবে(বাধ্যতামূলক) ২) আমাকে ভালোবাসতে হবে ৩) অন্য কারর দিকে তাকানো যাবে না, ৪) কোন হানিমুন হবে না, এর পরিবর্তে হজ্ব করতে যেতে হবে ৪) আর শেষে, আমার বাচ্চাদের…ইসসস আর কিছু লিখা নেই আসিফের মুখে হাসি ফুটে উঠে….
পাগলী একটা, অজান্তেই মুখ থেকে বেরোয়ে আসে জানে না, কেনো যেনো আনিতাকে ফোন দিতে ইচ্ছা করছে খুব…ফোন টা হাতে নিয়ে কল দেয় আনিতা কে, ওপাশ থেকে কঠিন কন্ঠে, বলুন (আনিতা) কিছুসময় চুপ করে রইলো আসিফ…তারপর মুচকি হেসে ফোন টা কেটে দেয় সেদিন রাত্রে বাসায় গিয়ে, আফিস প্রথমে আনিতা কে খুজে, তারপর যখন সামনে আনিতাকে দেখতে পায় তখন চুপ করে কিছুসময় আনিতাকে দেখে, তবে কিছু না বলে রুমেতে চলে আসে আনিতা কিছুটা অবাক হই রাত্রে আসিফ ঘুম থেকে জেগে দেখে আনিতা ডায়েরি টাতে লিখছে… ভাগ্যিস, মনে করে আগেই ও টেবিলের উপর ডায়েরি টা রেখে দিয়েছিলো পরের দিন থেকে আসিফ কেমন যেনো অন্যরকম হয়ে গেলো, নামাজ এক ওয়াক্তও বাদ দেয় না, আনিতাকে আনিতার অনুমতি ছাড়াও কেয়ার নিতে চাই আনিতা মাঝে মাঝে চিন্তা করে ওনার কি হয়েছে??
একদিন রাত্রে, এই নাও….(আসিফ) আনিতার হাতে ৪ টা টিকিট এটা কি??(আনিতা অনেকটা স্বাভাবিক ভাবেই আসিফের সাথে কথা বলে) আসিফ পায়ের মোজাটা খুলতে খুলতে, ওমরা হজ্বে যাবো আনিতার নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না….আনন্দে ওর চোখ থেকে পানি পড়ছে…কারন ওর ডায়েরিতে লেখা ওর মনের সব ইচ্ছাগুলোই কেমন ভাবে যেনো আসিফ পূরণ করছে কা’বা ঘরের সামনে আনিতা আর আসিফ দাঁড়িয়ে আছে, বাবা মা সামনের দিকে কিছুটা এগিয়ে আছে আসিফ আনিতার আংগুল টা ধরে,…বলে, শেষের ইচ্ছাটা পূরণ করতে দিবা না আনিতা আসিফের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কি দিবে না সুযোগ?? এরপরেও কি প্রমাণ চাও ভালোবাসি কিনা??(আসিফ) আনিতার চোখ থেকে পানি পড়ছে…তবে দুঃখের না, আনন্দের।
আসিফ আনিতার চোখ থেকে পানি মুছে দিয়ে, আনিতাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ২ জন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হাতটা শক্ত করে ধরে রাখে, আর আসিফ বলতে থাকে, এরপরের বার কিন্তু আমার মিষ্টিপরী টাকে নিয়ে আসবো আনিতা লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নেয় বেঁচে থাকুক তাদের ইচ্ছা, আসা, আকাক্ষা, আর বেঁচে থাকুক এমন হাজার টা প্রবিত্র ভালোবাসা…