—ও বউ শুনছো??(আমি)
—…….(লিমা)(নিশ্চুপ)
—কি হলো বউ তুমি কি কালা হয়ে গেলে না কি??
—কাকে বলতেছিস এসব,??
—কেন তোমাকেই তো বললাম।
—চুপ বেয়াদব কোথাকার।আমি কোন কালের বউ লাগি তোর??
—আরে জান, তোমার সাথে তো ৬ মাস হলো বিয়ে হয়েছে।আর তুমি আমাকে তুই করে বলতেছো কেন??
—কুত্তা তোরে কি জান সোনা বাবু ব্লা ব্লা।এসব বলবো??
—হুমমম, এসবই বলবে তো।
—হুরও আর কাজ কাম নাই তো।
—হ্যাঁ তাই তো।তুমি তো কোনো কাজই করো না।
—ওহ তাই।তাহলে তোরে রান্না করে খাওয়ায় কে??
—কেন তুমিই তো রান্না করো।
—তাহলে বললি কেন যে আমি কাজ করি না।
—না মানে এমনি।
—ভালো।
—চলো আমার ক্ষিদে পেয়েছে।খাবার দাও।
—খাবার কোথায় পাবো?
—কেন রান্না করো নি??
—নাহ্।
—কেন??
—আমি তো কোনো কাজ করি না।তাই।
—আরে সেটা তো এমনিই বললাম।মজা করছি।
—আমিও মজা করে রান্না করি নাই।
—ধ্যাৎ ভাবলাম আজকে তোমাকে নিয়ে শপিং এ যাবো।কিন্তু তা আর হলো না।
—সত্তিইইই।আমি তো মজা করে বললাম রান্না করি নাই।আজকে তোমার স্পেশাল বিরিয়ানি রান্না করছি।
—ধন্যবাদ জানু।যাও খাবার ব্যাবস্থা করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।আর শোনো।
—কী??
—না মানে বলছিলাম কি তোমাকে না মজা করেই বলছি শপিং এ যাবো।
—কি বললি কুত্তা।
—এভাবে কেউ নিজের স্বামীকে গালি দেয়।
—হারামজাদা তোকে কি বলবো তাহলে।
—তুই হারামজাদি, কুত্তি, পেত্নি।
—তোরে আজকে খাইছি ঝাড়ুটা কই গেলো।
মাইরালা কেউ বাঁচাও।আজকে বোধ হয় আমার রুম থেকে বের হয়ে সোজা দৌড়।বাড়ির বাইরে এসে পড়েছি।যাক রাগ কমলে তারপর আসবো। আমার শর্ট নাম জীবন।ফুল নাম না জানলেওসমস্যা নেই।আমি একটা বেসরকারি অফিসে বসের চেয়ারে বসে থাকি।মানে বস। আমার আর লিমার বিয়ে ৬ মাস হলো।বিয়ে হয়েছে লাভ ম্যারেজ।পরিবারের সম্মতিতে।আর ওর আমার মাঝে সম্পর্ক ছিলো এমনই। বেষ্ট ফ্রেন্ড+প্রেমিকা+বউ হলে যেমন হয় আর কি।চারদিক থেকে প্যারা দিয়ে তেজপাতা বানিয়ে ফেলবে জীবন। উপরের ঘটনাটা একটু বলা দরকার।আজকে শুক্রবার অফিস ছুটি।তাই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলাম।কিন্তু ঘুমের তেরোটা বাঁজিয়ে দিলো আমার প্যারা থুক্কু বউ।তাই মেজাজ গরম হয়ে গেলো।কয়েকটা ঝাড়ি দেই তাই রেগে ছিলো।বাট রাগ ভাঙ্গাতে গিয়ে আরও রাগিয়ে দিলাম।এখন আমার কপালে কি আছে আছে আল্লাহ্ই জানে।বাট আপনারা দোয়া কইরেন যাতে মেরে আবার হসপিটালে যেন ভর্তি করে না দেয়।
বাইরে আসার পর আনমনে হেটে চলেছি।মনে হলো ক্ষিদে পেয়েছে।কিন্তু পকেটে তো একটা কানাকড়িও নাই।ও হ্যাঁ বুদ্ধি পাইছি। লিমার সিম তো আছে আমার ফোন এ। বিকাশে না কি টাকা আছে।টাকাগুলো বের করতে বলেছিলো।বাট বের করা হয়নি এখনো। পিন নাম্বারও তো বলেছে কাল রাতে।হাহা পেয়ে গেছি টাকা। ফ্লেক্সিলোড এর দোকানে গিয়ে টাকা ক্যাশ আউট করলাম।১০০০ টাকা ছিলো। পুরোটাই ক্যাশ আউট করলাম। একটা রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম।হাল্কা।বাকি টাকাটা পকেটে রেখে দিলাম। বাসা থেকে আসছি ১০ টা বাজে। এখন ১টা বাজে।আবারও পেটের মধ্যে ইদুর দৌড়াচ্ছে।তখনই আম্মুর নাম্বার থেকে কল। কলিজা শুকিয়ে গেলো।কারন আম্মুকে ভয় পাই খুব।ছোটবেলা থেকেই।যাক বাদ দিন। আরেকদিন বলবো আম্মুকে নিয়ে।
—হ্যালো আম্মু(আমি)
—হুম কোথায় তুই?(আম্মু)
—এইতো চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।(আমতা আমতা করে বললাম)
—এখনি বাসায় আয়।বউমা সকাল থেকে এখনোও কিছু খায় নি।
—কেন?
—বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি আয়।ভুলে গেছস না কি আগের দিনের কথাগুলো।
—সরি আম্মু আসছি।
—গুড।
এখন কি আর করার।রাজ দরবারের রানির উপদেশ চিরধার্য্য থাকিবে। বাসায় আসার পর।দরজা খোলাই ছিলো।চুপি চুপি ঢুকলাম।সোজা রুমের দিকো গেলাম। দরজা খুলে দেখি কেউ নাই ভেতরে।পেছনে ঘুরতেই ধাক্কা খেলাম কারো সাথে।চোখ তুলে দেখি আমার ঝাল বউ রেগে অগ্নি চক্ষু করে আছে।কিছু বলার আগেই আমার টি-শার্ট এর কলার ধরে টেনে রুমের ভেতর নিয়ে গেলো।দুম করে দরজা লাগিয়ে দিলো।ভয়ে তো আমি শেষ।আবার আমাকে কিছু বলার সুজোগ না দিয়ে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার উপর উঠে গলা চেপে ধরলো।
—আরো কষ্ট দিবি আমাকে বল??(ঝাল বউ)
—আহ্ লাগছে।আর তোমাকে কষ্ট দিবো না সরি।(আমি)
—সত্তি তো??
—হ্যাঁ সত্তি সত্তি সত্তিই তিন সত্তি।
—বিশ্বাস করি না।
—ছেড়ে দাও না মেরে ফেলবে না কি।
—হ্যাঁ তোকে মেরেই ফেলবো আজকে।
—আমি মরে গেলে তোমাকে জ্বালাবে কে??
—কি আবার জ্বালানোর কথা।আজকে সত্তি সত্তিই মেরে ফেলবো।
—আচ্ছা সরি আর বলবো না।তোমাকে জ্বালাবো না।কষ্ট দেবো না।কিন্তু ভালোবাসবো ওকে।
—হুম মনে থাকে যেন।
লিমা আমার গলা ছেড়ে বুকের উপড়েই শুয়ে থাকলো।কিছুক্ষণ পর ফুঁপিয়ে কাঁন্নার আওয়াজ পেলাম।দেখি আমার জান আমার বুক ভিজিয়ে দিচ্ছে কাঁন্না করে।
—কি হলো বাবু তুমি কাঁন্না করতেছো কেন?? (আমি)
—আমি তোমাকেই খুব মারি, কষ্ট দেই তাই না।(লিমা)
—আরে কে বললো।আমি তো কষ্ট পাই না। আমি তো এগুলোকে ভালোবাসা ভাবি। প্লিজ কাঁন্না থামাও।
—আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।
—আরে তুমি তো কোনো ভুলই করো নাই।আর মাফ করবো কি।
—এইতো তোমাকে মারলাম।গলা চেপে ধরলাম।
—তোমার নরম হাত দিয়ে মারলে আমাকে লাগে না জান।
বরং ভালোই লাগে।কষ্ট তখনই পাই যখন তোমার চোখ থেকে পানি পড়ে। লিমা হয়তো কিছু বলার ভাষায় খুজে পেলো না।আমার বুকেই মাথা দিয়ে থাকলো।কিন্তু হঠাৎ মনে পড়লো লিমা সকাল থেকেই কিছু খায় নি।
কোনো রকম তুলে সবাই মিলে এক সাথে লান্স করলাম।লান্স করার পর শপিং এ গেলাম সবাই মিলে।আব্বু আম্মু লিমা আর আমার পিচ্ছি একটা ভাই আছে ওকে নিয়ে।শপিং শেষে আব্বু আম্মু আর ছোটকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম।আমি আর লিমা গেলাম একটা পার্কে।প্রকৃতির সাথে একটু সময় কাটাতে। বাই বাই ভলো থাকবেন।আর আমার জন্য দোয়া করবেন।যাতে কোনো এক লিমাকে সত্তিই এভাবে পাই।