ভালোবাসার গল্প

ভালোবাসার গল্প

—কালকে একদম সকাল সকাল আমাকে ফোন দিয়ে জাগায়ে দিবা, বুঝছো কি বলছি?
– হুম বুঝছি কিন্তু আমি যদি না উঠতে পারি? তখন.?
– আজকে বিকালে যেনো কোন ব্রেন্ড এর সিগারেট ফুকাইতেছিলা?
– আবার ওইটা?
-আন্টি ভালো আছে তো?
– কে বলছে আমি উঠতে পারবো না? আমি তো প্রতিদিন অনেক সকালে উঠি
– আচ্ছা সেটা কালকেই দেখা যাবে
– আচ্ছা।

আল্লাহ হাফেজ নির্জনা মুচকি হেসে ফোন টা রেখে দিলো ও খুব ভালোভাবেই জানে যে পাগলটা কখনো আগে উঠতে পারবেনা ওকেই ফোন দিয়ে উঠাতে হবে পাগলটা কে তবুও আকাশকে ব্ল্যাকমেইল করে সে মজা পায় নির্জনা আর আকাশ পাশাপাশি দুই বির্ল্ডিং এ থাকে দুইজনতারা দুইজন ই জানে যে তারা একজন আরেকজন কে অনেক ভালোবাসে কিন্তু কেও কাওকে বলেনা তবুও তারা কোনো দিক দিয়ে এক জোড়া লাভ বার্ড এর চেয়ে কম যায় না। আজকে বিকালে আকাশ কে সিগারেট খেতে দেখে ফেলেছে নির্জনা তখন থেকেই নির্জনার হাতে চঞ্চল আকাশ কে শান্ত করে নিজের কথা শোনানোর বিস্কুট আকাশ কথা শুনতে না চাইলেই ওই যে বিকালে….

আকাশ শুয়ে শুয়ে ভাবছে কি দরকার ছিলো আজকে ছাদে উঠার কার মুখ দেখে আজকে ঘুম থেকে উঠলাম পরেক্ষনেই তার মনে পড়ে যায় তার বিছানার সামনেই আয়না,প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই যার সামনে গিয়ে আকাশ নিজেকে নিজেই বলে গুড মর্নিংআকাশ হ্যাভ এ নাইস ডে সুতরাং সকালে নিজের মুখ ছাড়া অন্য কারো মুখ দেখার সুযোগ নেই। এই মুহুর্তে আকাশ এর মনে হইতেছে অভাগা যেদিকে তাকায় নদী শুকায় যায় তার হয়েছে এমন দশা মেয়েটা কত্ত প্যারা দেয় একটা ভুল পাইলেই হলো অইটা নিয়া ১ মাস এর বেশী জ্বালাবে। ও জানেই আমার আর ঘুমের মধ্যে এক মধুর সম্পর্ক তারপরো তার কড়া আদেশ কালকে তাকে নিয়ে সকাল সকাল বেরুতে হবে। কালকে বাংলা পুঞ্জিকার প্রথম দিন,নববর্ষ আর কি। ম্যাডাম কে নিয়ে পান্তা খেতে যেতে হবে তাই সকালে উঠতে হবে আর ওনাকেও জাগাতে হবে। মগের মুল্লুক পাইছে।

এইটা ভাবার সাথে সাথেই তার কানের কাছে ভেসে ওঠে আজকে বিকালে যেনো কি করছো? উফ থাক ঘুমানো দরকার নাইলে সকালে না ঊঠতে পারলে বাসায় এসে হাজির হবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আশংকা হয় আকাশের ((ইউ আর মাই পামকিন পামকিন হ্যালো হানি বানি))) সকাল সকাল ফোন এর এই রিংটোন শুনে আকাশের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায় প্রথমত এত সকালে কে ফোন দিলো আর তার ওপর এই রিংটোন মেজাজ চরমে নিয়ে যাচ্ছে, নিশ্চই বৃষ্টির কাজ পিচ্চি টা কে যতই বলি আমার ফোন না ধরতে ততোই নিয়া গুতায় কিন্তু এত সকালে কে ফোন দেয় ঘুম ঘুম গলায় হ্যালোওওওওও? তোর আম্মারে আমি আজকেই বলতাছি তুই সিগারেট খাস কুত্তা কতক্ষন ধইরা ফোন দিতাছি ধরোছ না কেন? আজকে শুধু আয় তুই তোরে টুট টুট টুট আকাশ রে কেও মনে হয় এই মুহুর্তে পেছোনে একটা জোরে লাথি মারলো যার ফলে আকাশ এর ঠেলা গাড়ী টাইপ শরীর টা বি এম ডাব্লু তে পরিণত হলো কোনোমতে দাত ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে নীল পাঞ্জাবী টা পরতে পরতে দৌড়।

নীল শাড়ী আর নীল পাঞ্জাবী পরা দুটি মানুষ প্রজাতির প্রানী কে একটি রিক্সায় একসাথে দেখা যাচ্ছে কিন্তু সমস্যা হলো দুইজন ই সাইলেন্ট মুড এ আছে আকাশ ভাবলো জেনারেল মুড অন করা দরকার মেয়েটা অন্যদিক মুখ ঘুরিয়া আছে মনে হয় কাদতেছে মেয়েটা আকাশের একটু খারাপ লাগলো ভালোবাসার মানুষ টা মুখ ফিরায়ে আছে বলে কথা নির্জনা শোনো বলে যখনই নির্জনার কাধেহাত রাখলো আকাশ এর মন চাইতাছিলো রিক্সা থেকে লাফ মারি কেডায় কয় এই মাইয়া কাদে ? কোনো কান্নাকাটি নাই চোখ দুইটা আগুন এর মত জ্বলতেছে আর মেয়েটা রাগে ফুসছে নির্জনা আসলে আমি স সরি বলা শেষ না করতেই আকাশের চুল ধরে প্রতি মিনিটে প্রায় পঞ্চাশ টা করে উপরে নিচে উপরে নিচে টানাটানি কুত্তা আমাকে কতক্ষন ওয়েট করাইছোস আমিগরমে ঘামি আর তুই আরামে ঘুমাস আম্মাগো আব্বাগো আল্লাহ আমাকে বাচাও। নির্জনা বইন আমার ছাইড়া দে মাথা তো ছিড়া গেলো আর জীবনেও ঘুমামু নাহ

– কি কি কি কি কি? কি বললি?

আমি তোর বোন? ( এগুলা বলতে বলতে অসহায় বালকটির শরীরের উপর হাজার খানেক ঘুষি দিয়ে শান্ত হলো বালিকা টি) একটি টেবিল এর মাঝামাঝি ইলিশ পান্তার বাটি দুই পাশে দুইটা মানুষ প্রজাতির প্রানী আকাশ আর নির্জনা আকাশের মন চাইতেছে ইলিশ টা খায়া ফেলি যে গন্ধ বের হইছে কিন্তু এতগুলা মাইর খেয়ে একটু রাগ না করলে গোটা প্রেমিক জাতির অপমান হয় এইটা চিন্তা করে সে প্রেমিক জাতির সম্মান রক্ষায় এখন রাগ করে অন্যদিক ঘুরে আছে কিছুক্ষন নীরবতার পর নির্জনা বললো

– আমার কিন্তু ক্ষুধা পাইছে
– আকাশ চুপ ( কিন্তু মনে মনে বলতেছে তারাতারি রাগ ভাঙা আমি মইরা গেলাম ক্ষুধায়)
– কথা কানে যায় না? ভদ্র ছেলের মত যা বলছি শুনো নাইলে কিন্তু ওই যে গতকাল বিকালে?
– আকাশ চুপ।

( মনে মনে বলতেছে মাফ কইরা দে আম্মুরে বলিস নাহ) নির্জনা মনে মনে ভাবছে একটু বেশীই খারাপ ব্যাবহার হয়ে গেছে ছেলেটা অনেক কষ্ট পেলো মনে হয় নির্জনা উঠে গিয়ে আকাশ এর পাশে গিয়ে বসলো। আকাশের হাত টা ধরে

– রাগ করছেন আকাশ সাহেব?
– নাহ ( মনে মনে : ন্যাকামি না কইরা তাড়াতাড়ি সরি বল ক্ষুধায় পেট শেষ হইলো))
– রাগ করেনা আমার কলিজা টাহ একটু খেয়ে নাও বাবু? প্লিজ? তুমি যদি খাও তাহলে আমি যে তোমাকে ভালোবাসি এইটা আমি আজকে তোমার কানে কানে বলবো কিন্তু খাও প্লিজ

– আচ্ছা খাচ্ছি বলেই আকাশ ৪ মিনিট এর মধ্যে পান্তার বাটি খালি করে দিয়ে তৃপ্তির হাসি দিয়ে যখনই উপরের দিকে তাকালো। আবারো সেই অগ্নি চক্ষু ক্ষুধার জন্য আকাশ এর মনেই নেই ওর সাথে আরেকজন আছে। বিপদের পূর্বাভাস পেয়ে আকাশ দৌড়ে গিয়ে আরেকবাটি পান্তা ইলিশ এনে নির্জনা কে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়ার জন্য হাত বাড়ালো আর বলতে লাগলো সরি আসলে অনেক ক্ষুধা লেগেছিলো তো তাই নির্জনা এবার হেসে দিলো

– তুমি ভালো হবা কবে বলো তো?
– যেদিন তুমি আমার চুলটানাটানি বন্ধ করবা আর আরামের ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটাবা
– ওই কি বললি আরেকবার বল
– কিছুনা মানে খাও অনেক ক্ষুধা লাগছে মনে হয় তোমার আকাশ নির্জনা কে খাইয়ে দিচ্ছে আর অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছে মেয়েটা অনেক ভালোবাসে আমাকে হাসলে মেয়ে টা কে অদ্ভুত সুন্দর লাগে ফর্সা গাল গুলো হাসার সময় কিছুটা লালবর্ণ হয় যা আকাশ এর মনে ভালোভাবেই ভালোবাসার ঝড় এর গতি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এত মারে কেন আমাকে মেয়েটা মাইর এর মধ্যে ভালোবাসা খুজতে যাওয়া টা যে মোটেই বীরপুরুষ এর লক্ষন নয় সেটা জানার পর ও আকাশ মুচকি মুচকি হাসে

– ওই তুমি হাসো কেন?
– তুমি মুখ গোমড়া করে খাচ্ছো এজন্য আমি হাসতেছি তাতে যদি একটু স্বাভাবিক হয় তোমার মুখ নির্জনা কিছু বলেনা তখন চুপচাপ খেয়ে যায় ভদ্র মেয়ের মত

– আকাশ আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দেই তাইনা?
– আমি এখন একদম ইমোশোনাল হওয়ার মত মুডে নাই (আকাশের হাত দুইটা জোরে চেপে ধরে কান্না কান্না চোখে)
– অনেক পচা আমি?
– নাহ.!
– তোমাকে এত মারি এত জ্বালাই তবুও কখনো বিরক্ত হও না কেন?
– বিরক্ত হলে যদি হারায়ে যাও
– হারাবোনা..!
– সবাই বলে
– কথা দিলাম
– সবাই বিশ্বাস ভাঙে
– তারমানে?

ওই তুই আর কয়টা মাইয়ার সাথে রিলেশন করছোস সত্যি কইরা বল ((আকাশ এর এখন মন চাইতাছে নিজের গালে নিজেই থাপড়াই কার সাথে আমি এক বালতি আবেগ নিয়া কথা বলতাছি এই মাইয়া যে সারাজীবন আমারে জ্বালাবে এইটা আমি ভালোভাবি জানি তারপরো কেন নিজের পা এ নিজে কুড়াল মারলাম)))

– বিলিভ করো তুমি ছাড়া আর কোন মাইয়ার দিক কোনো চিপা দিয়াও তাকাই নাই। কি যে বলো তুমি
– তোরে দিয়া বিশ্বাস নাই এখনি আমাকে প্রপোজ কর এক্ষুনিইইইই…!!!!
– পরে করবোনি? বাসার ছাদ এ? এখানে কত্ত মানুষ
– তুই করবি কিনা? তুই প্রপোজ করবি আর আমি এইডা ভিডিও কইরা রাইখা দিবো। আমাকে ছাইড়া যদি ভুলেও গেছোস তো এই ভিডিও তোর বাসায়….
– আবার ভিডিও কেন?
– করবি কিনা?

একটা ছেলে একটা মেয়ে কে প্রপোজ করছে এক ঝাক মানুষ এর সামনে মেয়েটার এক হাত এ মোবাইল আরেকহাত দিয়ে মুখ এমন ভাবে ধরে আছে মনে হয় লজ্জা পাচ্ছে ((আকাশ এর মনে হইতেছে এই মাইয়া রে তুইলা ঢেল মারি কিন্তু এই মুহুর্তে সে নিরুপায়))

– কি হলো প্রপোজ করো?
– করতেছি তো জানিনা তোমাকে বিশাল দালানে রাখতে পারবো কিনা কিন্তু ছোট কুড়ে ঘড়ে….

– ওই দাঁড়াও
– কি হলো?
– এইটা অনেক গল্পে পড়ছি নতুন কিছু বলো ( আকাশ এর মন টা চাইতেছে ১ গ্লাস পানিতে ডুইবা মইরা যাই)
– প্রপোজ টাও শান্তি মত করতে দিবা না?
– আচ্ছা করো

এক প্লেট ফুচকা অর্ধেক তোমার অর্ধেক আমার এক টা রিক্সার অর্ধেক তোমার জায়গা অর্ধেক আমার জায়গা একটা আইস্ক্রিম এর অর্ধেক তোমার অর্ধেক আমার বিয়ের পর আমার নিজের বিছানারও অর্ধেক আমার অর্ধেক তোমার কিন্তু তুমি পুরা আস্তটাই আমার আই লা ভু

– ইয়েএএএএএএএ
– কি হইলো?
– অনেক সুন্দর হইছে।

এখন চলো আমরা আজকে সারাদিন অনেক ঘুরবো ফুচকা খাবো আর আমাকে না নীল চুড়ি কিনে দিতে চাইছিলা এত্ত গুলা আর আমরা না….

– ওই আমার আন্সার কই?
– আমরা না কত্ত মজা করবো আজকে আমরা মুখোশ কিনবো গালে নববর্ষ আকাবো
– আমার আন্সার কইইইইইই?
– নাগরদোলায় উঠবো, বাশি কিনবো
– বুঝছি তোমারে আমি ভালো করেই চিনি এখন তুমি আন্সার দিবানা তাইতো?
– আমরা হাতির পিঠে উঠবো, সার্কাস দেখবো
– আল্লাহ্….!!!!!

ঠিক আছে চলো তারপর নীল পাঞ্জাবী পরিহিত একটি বালক আর নীল শাড়ী পরিহিতা একটি বালিকা দুজন দুজন এর হাত শক্ত করে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে কিছু কিছু ভালোবাসা একটু অন্যরকম হয় নির্জনা আর আকাশ হয়ত আমাদের চোখের আড়াল হয়ে যাবে কিন্তু আমাদের মনে থেকে যাবে তাদের পবিত্র ভালোবাসার কিছু স্মৃতি একটু রাগ একটু অভিমান একটু হাসি অনেকটা বিশ্বাস মিলেই তো ভালোবাসা ভালোবাসার প্রাথমিক সংজ্ঞা হয়তো এটাই ভালো থাকুক হাজার হাজার নির্জনা,আকাশ সারাজীবন বেচে থাকুক পবিত্র ভালোবাসা গুলো

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত