এক ছোট ভাইয়ের জীবনের গল্প

এক ছোট ভাইয়ের জীবনের গল্প

রাত্রে সুয়ে ফেসবুক চালাচ্ছি।হঠাৎ একটা ছেলের আইডি থেকে মেসেজ আসে।ছেলেটার মেসেজের রিপ্লে দেই।
ছেলেটা বলে ভাইয়া আপনার ফোন নাম্বারটা কি দেওয়া যাবে?
আমার নাম্বার নিয়ে আপনি কি করবেন?
ভাইয়া আপনার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে।প্লিজ নাম্বারটা দিন।
ছেলেটাকে আমার নাম্বারটা দিলাম।
কিছুক্ষণ পর.. ছেলেটা ফোন করলো।
ভাইয়া আমি মেহেদী।
জ্বি বলুন।
ভাইয়া আমি আপনার থেকে ছোট তাই আমাকে তুমি করে বললে খুশি হবো।
আচ্ছা।তুমি কি যেন বলবে বলছিলে।
আমি যা বলবো তা আমার জীবনের গল্প।আপনি আমার জীবনের লিখবেন তো।
আমার ভাল লাগলে লিখবো।
ধন্যবাদ ভাইয়া।আর আমি গল্প বলা শুরু করলে মাঝে প্রশ্ন করে থামাবেন না।
আচ্ছা থামাবো না।
ছেলেটার গল্প শুনে আমার অনেক কষ্ট লাগলো।কিন্তু তাকে তো কথা দিয়েছি লিখবো।তাই মেহেদীর গল্পটা লিখলাম।


চার বছর আগের কথা।
রোজার ঈদে তিন বন্ধু মিলে সাভার মিনি চিড়িয়াখানায় ঘুড়তে যাই।ঈদের পর অনেক লোকের সমাগম।বন্ধুরা মিলে অনেক মজা করছি।

হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখে আমার চোঁখ আটকে যায়।মনে হয় মেয়েটা আমার সমবয়সী হবে।আমি একদৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি।

মেয়েটা বুঝতে পারে আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি।মেয়েটা আমাকে দেখে একটা সুন্দর হাঁসি দিয়ে তাকিয়ে থাকে।

হাঁসিটা আমার মনের ভিতর গেঁথে যায়।অনেকক্ষণ মেয়েটার সাথে চোঁখাচোঁখি হয়।এক কথায় মেয়েটাকে প্রথম দেখায় ভাল লেগে যায়।

ভাবলাম কাছে গিয়ে মেয়েটার সাথে কথা বলবো।তখন বন্ধুরা এসে বলল, এখন তারা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ দেখতে যাবে।

তাই ওদের সাথে আমাকেও যেতে হবে।আমি যখন চলে যাচ্ছিলাম তখনও মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।

ইচ্ছা করছিল দৌড়ে গিয়ে বলি,বালিকা তোমাকে প্রথম দেখায় আমার ভাল লেগেছে।কিন্তু বন্ধুদের জন্য মেয়েটাকে মনের কথা বলা হলো না।
স্মৃতিসৌধ এর ভিতরে অনেক ঘুরলাম।কিন্তু মনটা সেই নাম না জানা মেয়েটার কাছে ছিল।
অনেক ঘুরাঘুরি শেষে বাসায় আসলাম।কিন্তু মেয়েটাকে ভুলতে পারছি না।
চোঁখ বন্ধ করলে মেয়েটাকে দেখতে পাচ্ছি।আমি কি তাহলে মেয়েটাকে প্রথম দেখায় ভালবেসে ফেলেছি?
আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম, মেয়েটার পরিচয়, কোথায় থাকে কিছুই তো জানি না।ওকে কেনো ভালবাসতে যাব?
কিন্তু মন তো মানছে না।
মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে কিছুদিন কেঁটে গেলো।
পাশের এলাকায় প্রাইভেট পড়তে আসছি।স্যারের বয়স কম,তাই সবার সাথে বন্ধুর মতো ব্যবহার করে।

একটু আগেই চলে আসা হয়েছে।তাই একটু স্যারের সাথে গল্প করছি।
হঠাৎ রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখি পার্কের দেখা সেই মেয়েটা এদিকে আসছে।মেয়েটা আমাকে দেখে অবাক হলো।

মেয়েটা আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার মিষ্টি হাঁসিটা দিয়ে চলে গেল।আবার মেয়েটার হাঁসির প্রেমে পড়ে গেলাম।
প্রথমবার মিস করছি কিন্তু এবার করা যাবে না।তাই মেয়েটার পিছু নিলাম।কিছুদূর যাবার পর একটা বাসার ভিতর চলে গেল।

কিছু বলতে পারলাম না।কিন্তু বাসাটা তো চিনলাম।অন্তত মেয়েটার বাসার সামনে আসলে তাকে তো দেখা যাবে।
সেদিন খুশি মনে বাসায় চলে যাই।এরপর থেকে প্রায় দিন মেয়েটার বাসার সামনে যাই শুধু ওকে একবার দেখার জন্য।
অনেক কষ্টে মেয়েটা নাম জানি।ওর নাম সুমাইয়া।
প্রায় দিন সুমাইয়ার সাথে দেখা হয়।
ও আমাকে দেখে কোনো কারণ ছাড়া হাঁসে।ওর হাঁসি দেখে আমি লজ্জা পেয়ে যাই।
তবে এখন পর্যন্ত ওর সাথে কথা বলি নাই।
দেখতে দেখতে কুরবানির ঈদ চলে আসে।সাহস করে ঈদের দিন ওর সাথে কথা বলি আর প্রপোজ করি।
সুমাইয়া সাথে সাথে আমার প্রস্তাবে হ্যা বলে  দেয়।
একদিকে ঈদ আরেকদিকে সুমাইয়ার হ্যা বলাতে অনেক খুশি হই।
খুব সুন্দর ভাবে ওর সাথে দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।এককথায় বলে বোঝাতে পারবো না।
সুমাইয়ার সাথে কথা হয় দিনে দুবার।স্কুলে যাবার সময় একবার আর আসার সময় একবার।
প্রায়দিন বিকেলে ওর বাসার সামনে যাই ওকে একবার দেখার জন্য।এরজন্য আমাকে এক দুই ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে হয়।

ওকে এক পলক দেখার পর সব কষ্ট নিমিষেই ভুলে যাই।আমাদের দু জনের মাঝে মান অভিমান হয় আবার আপনা আপনি ঠিক হয়ে যায়।

আমার আর সুমাইয়ার ভালবাসা দেখতে দেখতে ৩ বছর পার হয়ে যায়।
হঠাৎ ওর মাঝে পরিবর্তন বুঝতে পারি।আগের মতো আমার সাথে কথা বলতে চায় না।আমাকে আরো এড়িয়ে চলতে চায়।

এভাবে এক মাস চলে যায়।এর মাঝে সুমাইয়া আরো বদলে যায়।আমি খোজ নিয়ে জানতে পারি ওর আরেকটা ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে।
আমি দেখি নাই তাই অন্যের কথা বিশ্বাস করিনি।একদিন প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছি।হঠাৎ গলির মাথায় চোখ পড়ল।

তাকিয়ে দেখি সুমাইয়া একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।এই দৃশ্য দেখে আমি ঠিক থাকতে পারিনি।চোখ দিয়ে পানি চলে আসে।

অনেক কষ্ট নিয়ে বাসায় চলে আসি।রাতে অনেক কান্না করি।পরেরদিন মনকে শক্ত করে সুমাইয়াকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি ছেলেটি কে?
সুমাইয়া বলে পাশের বাসার বড় ভাই।
আমি ওর কথা অন্ধের মতো বিশ্বাস করি।কারণ আমি ওকে অনেক ভালবাসি।
এভাবে আরও একমাস চলে যায়।আমি সুমাইয়ার সাথে কথা বলতে চাইলে ও নানা অজুহাতে আমাকে এড়িয়ে চলে যায়।

ওর আচরণে অনেক কষ্ট পাই কিন্তু ওকে কিছু বলি না।দুই দিন সুমাইয়াকে দেখি না।তাই ওকে দেখার জন্য ওর বাসার সামনে যাই।

কিছুক্ষণ পর দেখি সেই ছেলেটা আমার দিকে আসছে।
এরপর যেনো না শুনি সুমাইয়াকে বিরক্ত কর।(ছেলেটি বললো)
কেনো ভাইয়া? কি হয়েছে?(আমি)
সুমাইয়া আমার গার্লফ্রেন্ড আর ও আমাকে বলছে তুমি ওকে বিরক্ত কর।
আমি এই কথা বিশ্বাস করিনি কারণ আমার বিশ্বাস ছিল সুমাইয়া আমাকে অনেক ভালবাসে।আমি অনেক বিশ্বাস করতাম।
আমি বললাম, সুমাইয়া যদি নিজে এসে এই কথা বলে তাহলে আর কোনো দিন ওকে বিরক্ত করবো না।
সেইদিন সন্ধ্যায় সুমাইয়া ঐ ছেলের সাথে এসে বলে, দেখো মেহেদী তোমাকে আর আমার ভাল লাগে না।

আমি একে ভালবাসি।আর আমাকে বিরক্ত করবে না।
ওর মুখে এই কথা শুনে আমি অনেক কান্না করি।
আমার স্যার বলল, মেহেদী তুই কাঁদিস না।আমি জানি তুই ওকে অনেক ভালবাসিস।কিন্তু ওই মেয়ে তা বুঝলো না।
আজ কেন যানি মনে হচ্ছে কি পেলাম জীবনে।যাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেছিলাম।তার কাছ থেকে ধোকা খেলাম।

মনে হচ্ছে জীবনের শেষ সময় চলে এসেছে।আপন মানুষ দূরে চলে যাচ্ছে।আজ বুকটা অনেক ব্যাথা করছে।

নিজের মনকে প্রশ্ন করলাম এভাবে আর কতদিন?
এই ঘটনার পর থেকে আমি আর ঐ এলাকায় যাইনি। ঐ ঘটনার পর এক বছর হয়ে গেছে।তাও ওর জন্য এখনও কাঁদি।
আমি এখনও আমার অতীতকে ভুলতে পারিনি।ওর কথা মনে পড়লে চোঁখে পানি চলে আসে।

আমি এখনও বুঝতে পারিনি কেন আমার সাথে এমন করলো? আমি তো কখনও ওকে কষ্ট দেইনি।আমার ভালবাসা তো মিথ্যা ছিল না।

আমি ওকে অনেক ভালবাসতাম।এখনও আগের মতো ভালবাসি।তবে এখন সেটা মনের ভিতরে রেখে।আর ভবিষ্যতেও ভালবেসে যাব।

সুমাইয়া তুমি ভাল থেকো।আমি কোনোদিন তোমার কষ্টের কারণ হয়ে দাড়াবো না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত