বিয়ে

বিয়ে

— দোস্ত চল ফুচকা খাই।(রিয়া)
— ফুচকা খাই মানে.?(আমি)
— ফুচকা খাবো।
— এইমাত্র না খাইলি.?
—তো কি হইছে আবার খাবো চল।
— না লেট হইয়া যাইতাছে,মেসে ফিরতে হবে।
—তুই আছিস তোর মেস নিয়া।আমি ফুচকা না খাইলে মইরা যাবো।
— তো মর তুই আমি গেলাম।
—তুই যাবি নাতো.?
— না
— তাহলে আমি একাই যাই।
— আচ্ছা যা।বাই।
— আব্বে কই যাস, চল আমিও যাবো।
— আচ্ছা আয়।

রিয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।রিয়া ওর বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে।একসাথেই পড়ি এইবার অনার্স ৪র্থ বর্ষ। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম।রিয়ার সাথে প্রতিদিনই কলেজ শেষ করে ফুচকা দোকানে যাওয়া লাগে।তারপর সন্ধা হওয়ার আগ পর্যন্ত ছাড় নাই।অনেক বাহানা বানিয়ে তারপর আসতে হয়।কিন্তু মানুষ হিসেবে অনেক ভালো। যাই হোক রাত নয়টা পর্যন্ত ভালোই চলছিলো পড়াশোনা।কিন্তু এর মধ্যেই রিয়ার ফোন।

—কিরে ফোন দিছোস কেন.? (আমি)
—দোস্ত.!(রিয়া)
— হুম বল শুনতেছি.!
—দোস্ত! (আল্লাদের সুরে)
—হুম বল
— হাসান…
—আব্বে ঢং বাদ দিয়ে বল কি হইছে.?(কিছুটা ধমকের সুরে)
—দোস্ত ফুচকা লাগবে.!
—- আবার.?তুই না ওই দিন বলছিলি আর কোনো রাতে ফুচকার জন্য বলবি না!
—কবে বলছিলাম.?
— ওই মিথ্যা বলবি না.!
— আমি মিথ্যা লি না,হুহ।ফুচকা নিয়ে আয়
— ওই আমি কি তোর বাবার চাকর নাকি.!
—- না,তুই আমার চাকর।ফুচকা নিয়ে আয়।
—- ফোন রাখ, আজ রাতে আর ফোন দিবি না।

কেটে দিলাম ফোনটা।মেয়েটা আসলেই পাগল।ওর সাথে পরিচয়টাও হইছে ওই ফুচকার দোকানে।স্মৃতিটা পুরোনো হলেও তাজা এখনো। তখন অনার্স প্রথম বর্ষে।রিয়া আর আমি একসাথে একক্লাসে পড়লেও কথা হয়নি কোনো দিন। মেয়েদের সাথে মিশতে পছন্দ করতাম না।আর আমার মধ্যেও এমন কিছু নেই যে মেয়েরা এসে আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করবে। একদিন কলেজ শেষে ফুচকা খেতে যাই।সেখানে গিয়ে দেখি রিয়া নামের সেই মেয়েটা বসে আছে। আমি গিয়ে ফুচকাওয়ালা মামাকে ফুচকা দিতে বলি।মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।আমিও কিছুটা অবাক হই। কন্তু ততটা গুরুত্ব দিলাম না। আমি একটা চেয়ার নিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে বসলাম। যখন মামা ফুচকা দিয়ে গেলো।তখনা রিয়া নামের মেয়েটা একটা চেয়ার নিয়ে আমারসামনে এসে বসলো।আর বল্ল…

—আপনি হাসান না.?(রিয়া)
—হুম,কেনো.?
—আপনি আর আমি একই ক্লাসে পড়ি না.?
—হুম।
—তাহলেতো আমি আর আপনি বন্ধু,আমাকে একটা হেল্প করুন না.?
— হেল্প আর আমি.!
—-হুম।
—-আচ্ছা বলুন কি,সাহায্য করার চেষ্টা করবো।
—আপনার ফুচকার প্লেটটা আমাকে দিয়ে দিন।
—মানে.!
—কি দিবেন না,আপনি না বলছিলেন হেল্প করবেন.! তখন ফুচকাওয়ালা মামা বল্ল…
—মামা মি ওনাকে কখন থেকে বলছি টাকা না থাকলে পরে দিয়েন কিন্তু ফুচকা খান। কিন্তু ওনি বাকিও খাবেন না আর ফুচকা নাখেয়েও নাকি যাবেন না।(ফুচকাওয়ালামামা)

—আচ্ছা আমি আপনাকে আরেকটা ওর্ডার দিয়ে দিচ্ছি।(আমি রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বল্লাম)
—আপনাকে এত্তোগুলো ধন্যবাদ.(দুইহাত দিয়ে ইশারা করে দেখালো) কিছুক্ষণ পর মামা ফুচকা দিয়ে গেল….
—আচ্ছা আপনার বাড়ি কোথায়.?(রিয়া)
—-কুমিল্লা, গৌরিপুুুুর।
—-ওহ,ঢাকায় কি পড়ার জন্য আসছেন.?
— হুম।
—ফেমিলিতে আর কে কে আছে.?
—- আমি আব্বু-আম্মু
— ওহ
— আপনার ফেমিলিতে কে কে আছে.?
—- সেইম।
—ওও।
— আপনার আব্বু কি করে.?
—-সরকারি চাকরি।আপনার আব্বু.?
—-বিজনেসম্যান
—ওহ
—- বিলটা দিন।
— কিহ,ও হ্যা দিচ্ছি
— আর আপনি কিন্তু আমার কাছ থেকে টাকাটা পাবেন,আমি শোধ করে দিবো।
— হ্যা অবশ্যই।

সেদিন থেকে ওর সাথে পরিচয়।এরপরদিন সকালে কলেজে দেখা প্রথমবার আমাকে ডাকে কিন্তু টাকাটা দেয়ার জন্য নয়।আস্তে আস্তে সময় যতো যায় ততো ফ্রেন্ডশিপ বাড়তে থাকে।সব সময় বলতো আমি তোর টাকা শোধ করে দিবো। কিন্তু আজ পর্যন্ত। যাই হোক ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম এগারোটার ওপরে বাজে।এমন সময় রিয়ার আম্মুর ফোন….

—-হ্যালো আন্টি, আসসালামু-আলাইকুম।(আমি)
—- ওই শয়তান আমি.!
—তুই.?
—হুম,ফুচকা নিয়ে আসবি নাকি আম্মুকে ডাকবো.?
—ওই এতো রাত করে আন্টিকে জালাবি কেন.?
—তাহলে ফুচকা নিয়ে আয়।
—পারবো না।
— তাহলে আম্মুকে ডাকি।
— ওই শয়তান।
— কি.?
— আমি আসছি, আন্টিকে ডাকিস না।
— আচ্ছা জলদি আয়।
— বাই।

ঢাকা শহর।রাত এগারোটা কিছুই না।তাই বের হলাম।র এটা প্রথমবার না।এর আগেও ঘটছে।তাই অবাক হবারও কোনো কারণ নেই।পথে বেরিয়ে পড়লাম মেস থেকে লুকিয়ে বেরিয়ে। ফুচকা নিয়ে বারটার দিকে ওর বাসার সামনে হাজির হলাম।ওর বাসার নিচে গিয়ে ওকে ফোন দিলাম।

—কিরে আসছোস.?(রিয়া)
— হুম,নিচে আয়।
— দাড়া আসতেছি। কিছুক্ষণ পর ও বের হয়ে আসলো।দিলাম একাটাঠুয়া।
—তুই মানুষ নাকি অন্য কিছু।(আমি)
— ফুচকা দে।(মাাথা চুলকাতে চুলকতে)
— নে,আর কখনো জালাবি ন বলে দিলাম।
— দেখা যাবে।
— হুম গেলাম।
–কই যাস,খাইয়া যা.!
—না তুইই খা বেশি কইরা।
— আমিতো খাবোই।
—খা,বাই
— মন চাইলে খেতে পারিস।
— যা বাগ। বলে চলে আসলাম।পরের দিন কলেজে যাবার পর।
— ওই আমি এইদিকে।(রিয়া)
— তো আমি কি করবো.!(আমি)
— আমিতো মনে করলাম আমাকে খুজছিস।
— কচু।
—হুহ
— আচ্ছা একটা তোর চেহারাতো ভালোই একটা প্রেম করলেওতো পারিস।
—- কেন.?
—- তাহলে আমি মুক্তি পেতাম।
— ট্রাই করছিলাম।কিন্তু কোনো ছেলে রাজি হয় না।
— তাও ঠিক তোর মতো মেয়েকে সামলানো মুখের কথা নয়।
— হম।
— বিয়ে করস না কেন.?
— আব্বু-আম্মু কয়েকটা ছেলে দেখছিলো কিন্তু ছেলে গুলা একদিন আমার সাথে ঘুরার পর না করে দিয়ে চলে গেছে।তাই আব্বু-আম্মু বিরক্ত হইয়া সব দায়-দায়িত্ব আমার হাতেই তুলে দিছে।

—- চল ক্লাসে যাই।

তারপর ক্লাস শেষে আবার মামার ফুচকার দোকান তারপর মেস।এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেলো বছরটা।পরীক্ষাও শেষ।শহরেই থেকে গেলাম চাকরির জন্য।রেজাল্ট পাওয়ার পর চাকরির জন্য এপ্লাই করি।এখন রিয়ার সাথে মাঝে মাঝে দেখা হয়।কখনো এক সপ্তাহে একবার কখনো দুই সপ্তাহে। এর মধ্যই চাকরির জন্য এপ্লাই করা শুরু করি।আর সত্যি বলতে রিয়াকে ভালোবাসি কথাটা বলা প্রয়োজন।ওর বাচ্চামিগুলোকেও খুব মিস করছি ইদানিং।এর মধ্যেই একটা ভালো কম্পানিতে জবটা ফিক্সড হয়। খবরটা পাওয়ার সাথে সাথে রিয়াকে ফোন দিলাম।

— কিরে কি খবর.?(আমি)
— খবর না,তোর কি খবর.?
— বিকেলে দেখা করতে পারবি.?
— ফুচকা খাওয়াবি নি.?
— আয় তুই।
— আচ্ছা। বিকেলে রিয়া আসলো।তবে আজ কিছুটা অন্য রকম লাগছে।সাড়ি পড়তে এই প্রথম দেখলাম ওকে।

— কিরে শাড়ী পরছিস যে.!
— আম্মু বলছে তাই।
— কিহ.!
— আরে মজা করলাম,একটা ছেলে দেখতে আসছিলো।দেরি হয়ে যাবে তাই আর চেন্জ করি নাই।
— তুই এইভাবেই ছেলের সামনে গেছিলি.?
— হুম কেন.?
— না মেকাপ করিস নি তাই বল্লাম।
— আমার ভালো লাগে না।মনে আল্গাতা লাগাইছি মুখে
— তো কি জন্যে ডাকছিস.?
— চাকরি পাইছি।
— সত্যি.!
— হুম।
— তাহলে ট্রটি দে।
— আয়।
— ফুচকা খাবো।
—- আচ্ছা। মামা ফুচকা দিয়ে গেলো
— রিয়া একটা কথা বলবো.!(আমি)
— হুম বল।(একটা ফুচকা মুখে দিয়ে)
— তোর বিয়েটা কেন্সেল করে দিতে পারবি.?প্লিজ।
— কেনো.! অনেক কষ্টে তো একটা ছেলে পেলাম।
— তোর ফুচকা বিলটা আমার ওপর ছেড়ে দে না সারাজীবনের জন্য। রিয়া প্রথমে বুজতে না পারলেও কিছুক্ষণ পর অবাক হয়ে আমার দিকে তাকি বল্ল…..
— তুই কি এইমাত্র আমাকে প্রপোজ করলি.?
— তোর সাথে সারাটা জীবন কাটাতে চাই। (আমি)
— কিন্তু তাহলে ওই ছেলেটার কি হবে।
— তুইই ভালো জানিস।
— আচ্ছ মনে কর আমি তোকে বিয়ে করলাম। বিয়ের অনেক বছর পর একদিন মাঝরাতে তোকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বল্লাম আমি ফুচকা খাবো তখন তুই কি আমাকে বকা দিবি না ফুচকা এনে দিবি।

— প্রথমে বকা দিবো তারপর যখন রাগ করে বান্দায় চলে যাবি তখনি চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে ফুচকা এনে তোর রাগ ভাঙ্গাবো।
— সত্যিতো.?
— হুম
— তাহলে চল বিয়েটা করে নেই।
—- তোর আব্বু-আম্মু.?
— তোকে ছাড়া সবাই জানে তোকেই বিয়ে করছি.
— কিহ
— হুম চল।সব শুধে আসলে হিসাব মিলিয়ে নিবো বিয়ের পর।এতোদিন এতো কষ্ট দিছিস সব হিসাব চুকিয়ে নিবো চল।

{সমাপ্ত}

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত