সকাল সকাল মারিয়ার (আমার জিএফ) নাম্বার থেকে ফোন আসলে আমি অনেকটাই ভরকে যাই। করণ মারিয়া আমাকে জীবনেও ফোন দেয়না। আর আজকে ফোন দিলো? কুচতো গরবর হে..ফোন রিসিভ করে বললাম….
–হেই মারিয়া ম্যা রুবেল বলরায়ু।
-ফাইজলামি রাখো…
–ওখে রাখলাম। আজকে হঠাৎ ফোন দিলা, কারণ কি?
-আমার বিয়ে ঠিক হইছে।
–কয় তারিখ?
-সামনের মাসে।
–বিরিয়ানি রান্না হবেতো?
-মানে…?
–অনেকদিন বিরিয়ানি খাইনা, তাই ভাবলাম তোমার বিয়ের দিন খাব।
-তুমি কি আমার সাথে ইয়ার্কি করছো?
–মোটেও না, আমি ফাইজলামি করছি।
-কিইইইই….
–হ্যা..আমি ফাইজলামি করছি।
-কেনো?
–ইটস্ মাই গার্লফ্রেন্ড গত অধিকার।
-মানে…?
–ও তুমি বুঝবেনা।
-উফফফফ…আচ্ছা বাদ দাও কি করো?
–ভাত খাচ্ছি।
-কি দিয়ে?
–হাত দিয়ে।
–আমি বলছি কি দিয়ে?
-তরকারি দিয়ে।
–দেখো আমি কিন্তু ফাইজলামি একদম পছন্দ করিনা।
-আজব আমি কোথায় ফাইজলামি করলাম?
–এবার বলো কি তরকারি দিয়ে খাচ্ছ?
-বাজারকৃত তরকারী দিয়ে।
–হোয়াট?
-বাজার থেকে কিননে নিয়ে আসছি তরকারী।
–হারামজাদা আমি বলছি তরকারীর নাম কি?
-তরকারীর নাম বলতে পারছিনা, তবে খুব স্বাদ হয়েছে। একটু ঝাল লাগে, খেতে মজা। ভাত দিয়ে খাচ্ছি আরকি…তুমি খাবা? হা করো আমি খাইয়ে দেই।
–রুবেইইইইল্ল্যাঅ্যাঅ্যা বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু।
-আচ্ছা কমকম বলি। তরকারীতে মাছ দিছি, মাছের কাঁটা খাবা?
–হারামি, বদমাইশ, ইতর, ফোন রাখ…।
-কি হলো ওয়াজ করছো কেনো?
–তুই আর আমার সাথে কথা বলবিননা?
-একশবার কয়াম, সমস্যা?
–টুটটুট (উগান্ডার গালি দিয়ে ফোন কেঁটে দিলো।)
আহারে! আজকে বোধহয় মেয়েটির সাথে একটু বেশিই করে ফেলেছি। ইসসসস মেয়েটি কত রাগ করছে আল্লাই জানে। এখন রাগ ভাঙ্গাবো কেমনে, বুঝতে পারছিনা। ফোন দিলাম সুইচ অফ। ফেসবুকে ঢুকলাম আমাকে ব্লক দিছে। তার আগে কিছু গালি দিছে। নো সমস্যা, আই এম অব্যস্থ। মারিয়া একটা জিনিসে খুবই দূর্বল। সেটা হলো চিঠি। ওকেচিঠি দিলে যতই রাগ থাকুক না কেনোএকনিমিষেই টুপ করে কমে যাবে। কিন্তু চিঠি আমি দেইনা কারণ একবার চিঠি মারিয়ার বাবার হাতে গিয়েছিলো। আর হবু শ্বশুর ফাদার আমাকে আদর করে বাসায় ডেকে নিয়ে পেট ভরে বিরিয়ানি খাওয়াইছিলো। তারপর আমাকে দিয়ে এক বালতি পানি তুলিয়ে সেখানে গুনে গুনে ৭০+ বার চুবিয়েছিলো। নাহহহহ চিঠি দেওয়া যাবেনা। তাহলে উপায় কি? অনেক চিন্তাভাবনা করলাম কিন্তু কোন বুদ্ধি পেলাম। অবশেষে চিঠি লেখায় মনস্থির করলাম। যা হবার হবে। চিঠি লেখা শুরু করলাম।
প্রিয়া মারিয়া ওরফে গুলুগুলু ওগো জানুউউউ, বেইবিইইইই, সোনামনি,টুনটুনি তুমি হুদাই এত রাগো ক্যান? তুমি জানোনা আমি তোমায় কত্ত ভালোবাসি। জানো যেদিন আমি তোমায় প্রথম দেখেছি সেদিনই আমি তোমার প্রেমে পরেছি। তারপর একদিন তুমি স্কুলের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তিরিং বিরিং করে বান্দরের মত নাচ্ছিলা মনে আছে সেই কথা? আমি তোমার সেই বান্দরনী মার্কা নাচ দেখে কতবার বার যে অজ্ঞান হয়েছি আমার মনে নেই। কবিতা আবৃতি করার সময় যখন সবাই তোমাকে হাত তালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলো আমি তখন “হারামজাদি স্টেজ থেকে নাম” বলে চিৎকার করেছি। তুমি যখন গান গাচ্ছিলে সবাই তোমাকে ভুয়া ভুয়া বলেছিলো। তুমি মন খারাপ করছিলে তাইতো আমি একাই শিস বাজিয়ে ওয়ান মোর ওয়ান মোর বলে চিল্লিয়ে তোমাকে উৎসাহ দিয়েছি।
বিনিময়ে তুমি আমাকে স্পিকার দিয়ে ঢিল দিয়েছিলে। ঢিলটা আমার কপালে লেগে আলুর মত ফুলে উঠেছিলো। আমি সেটাকে ভালোবাসা মনে করে নিজের কপালে নিজেই বাইরাতাম। প্লিজ তুমি আর রাগ করেথেকোনা। তুমি রাগ করলে আমার প্রসুর বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পকেটে টাকা নাই। আর রাগ করে থাইকোনা। ইতি তোমার আদরের পুল্টুসু রুবেল। চিঠি নিয়ে একদৌড়ে গিয়ে মারিয়াদের বাসার সামনে গেলাম। বাসায় ঢোকারসাহস পাচ্ছিনা। একটু পর দেখলাম মারিয়ারছোট বোন। আমি ওকে ডাক দিয়ে আস্তে করে বললাম চিঠিটা মারিয়াকে দিতে। যাতে কেউ না দেখে। আর আমাকে ফোন দিতে। দীর্ঘ পঁচিশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরে মারিয়া আমাকে ফোন দিলো। হ্যালো বলতেই মারিয়া বলল….
-রুবেল তুমি আমাকে এত ভালোবাসো?
–হরে পাগলি এত ভালোবাসি।
-আচ্ছা তাহলে আমাদের বাসার ভিতরে আসো।
–তোমার বাবা যদি চুবায়?
-আরে বাবা বাসায় নেই।
–ওকে যাচ্ছি।
তারপর নাচতে নাচতে মারিয়াদের বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি মারিয়া মুচকি মুচকি হাসছে। আমিও বিনিময়ে আবুল মার্কা হাসি দিলাম। মারিয়ার দাদি সোফায় বসা ছিলো, বললাম….
–হেই দাদি কি অবস্থা? আছুইন কিবা?
দাদি আমার কথায় লজ্জায় টুইটুম্বুর হয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। দাদির এমন কাণ্ড দেখে অবাক হয়ে গেলাম। মারিয়াকে বললাম….
–দাদির কি হয়েছে?
-জানিনা…
–তাহলে লজ্জা পেল কেনো?
-কি জানি।
–ওহহহ।
-আচ্ছা চলো?
–কোথায়?
-রুমে বসে কথা বলি?
–ওকে চলো। (খুশিতে গুলুগুলু)
আমরা রুমে যাচ্ছি আমাদের সাথে দাদিও যাচ্ছে। আমি কৌতূহল বসত মারিয়াকে বললাম….
–দাদি কোথায় যাচ্ছে?
-আমাদের সাথে।
–কেনো?
-আরে আসুক মুরুব্বী মানুষ।
তারপর সবাই মিলে রুমে গেলাম। আমি মারিয়ার খাটে বসে পরলাম। আমার পাশে প্রায় গা ঘেসে দাদী বসলো। দাদি মাথা নিচু করে আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে বসে আছে। আমি মারিয়ার দিকে তাকালাম। মারিয়া চোখ দিয়ে ইশারা করলো। যাতে বোঝা যায়, আরে বসে থাকো। হঠাৎ মারিয়া বলল….
–শোন তুমি যে চিঠি টা দিয়েছো আমি সেটা দাদিকে বানিয়ে বানিয়ে শুনিয়েছি।
-মানে…?
–মানে বলেছি তুমি দাদিকে পছন্দ করো?
-হোয়াট….
–দাদি তোমরা প্রেম করো আমি আসছি।
-কোথায় যাচ্ছ?
–আমার সাথে ফাইজলামি করার মজা বোঝ।
এই বলে মারিয়া দৌড়ে চলে গেলো। তারপর তাড়াতাড়ি করে দরজার সিটকানি বাইরে থেকে আটকিয়ে দিলো। এমন পরিস্থিতিতে আমি পুরাই আবুল হয়ে গেলাম। দাদির দিকে তাকিয়ে দেখি সে মুচকি হাসছে। আমার অবস্থা তখন ভয়াবহ। দাদি বলল….
–কিগো নাগর আমায় ভালোবাসো?
-আসলে দাদি চিঠিটা মারিয়াকে দেওয়া হয়েছিলো।
–থাক থাক আর ঢং করতে হবেনা।
-দাদি আমি সত্যি বলছি।
আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে দাদি এক্কেবারে ঘেসে আসলো। আমি ভয়ে ঢোক গিলে সরে আসলাম। দাদিও সরে আসলো। দাদি বলছে “এই নাগর লজ্জা পাচ্ছ?” আর আমি ঢোক গিলছি। আরেকটু সরতেই কাইত হয়ে খাট থেকে ফ্লোরে পরে গেলাম। দাদি আমাকে ধরতেই আউউউউউউ বলে সরে গেলাম। আমি বললাম….
–প্লিজ দাদি আপনি এমন কইরেন না।
-ইসসস নাগরটা বুঝি লজ্জায় পায়, আসো আমি লজ্জা ভেঙ্গে দিচ্ছি।
–দাদি আপনের পায়ে পরি….
-এমন করছো কেনো? কতদিন তোমার দাদুর সোহাগ পায়নি, আসোনা একটু নাগর।
–আসতাগফিরুল্লাহ, দাদি ছিঃ কি বলেন এইগুলো।
-তুমিই তো চিঠিতে লিখেছে আমাকে তুমি ভালোবাসো তাহলে এমন করছো কেনো?
–দাদি মারিয়া উল্টাপাল্টা বলেছে।
-উহু না তুমি আসো।
আমি রুমের মধ্যে ছোটাছুটি করছি। দাদি আমাকে ধরার চেষ্টা করছে। আমার অবস্থা শেষ। দৌড় দিব সেই বুদ্ধিও নেই। কারণ বাইরে থেমে দরজা আটকানো। অপর দিকে বাইরে থেকে মারিয়া হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। দাদি কাছে এসেই আচমকা কাতুকুতু দিলেন। আমি ভয়ে আম্মাগোওওওওও বলে চিৎকার দিলাম। দাদি তার হাতের লাঠি দিয়ে পেটে ছোট গুতা দিলেন। আমারর চোখে পানি। আমারে বাঁচাওগো নানি। তোমারে দিমু আমি মানি। আজকে যে কপালে দূর্দশা আছে সেইটা আমি জানি। উপায়ন্তর না পেয়ে দৌড়ে গিয়ে খাটের নিচে ডুকলাম। দাদি উকি দিয়ে বলছে…..
–কি হলো নাগর আসো…?
-দাদি মাফ চাই..
–এমন করো কেনো? আসো আমি তোমার লজ্জা ভেঙ্গে দেই।
-দেখুন দাদি আমার ইঞ্জিন যুবক আর আপনার ইঞ্জিন বুড়ি আমাদের ম্যাচিং খায়না। প্লিজ দাদি আমরে মাফ করেন। (ইঞ্জিন বলতে মনকে বোঝানো হয়েছে )
–উহু না।
আমি খাটের নিচ থেকে দাদির কাছে মাফ চাচ্ছি। কিন্তু দাদি নাগর বলে আমাকে ডাকছে। অপরদিকে মারিয়া হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছি। জীবন শেষ হয়ে যাবে তবুও দাদির কাছে ধরা দিবনা।
–কি হলো নাগর বের হও?
-নাহহহ আমি যামুনা।
আল্লাহ এবারের যাত্রায় আমারে বাঁচাও। মুই আর জীবনে ফাইজলামি করুমনা। (রিপোস্ট)