এক টুকরো সুখ

এক টুকরো সুখ

অফিসের ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার খেয়ে নিজের চেয়ারে এসে বসলাম। একটু বিশ্রাম নিতেই নিধীর ফোন আসে। নিধী এইসময়ে প্রতিদিন ফোন করবে। জিজ্ঞেস করবে খেয়েছি কি না। হয়ত আজও তার কোন ব্যতিক্রম হবেনা। মোবাইল রিসিভ করে কানের কাছে নেয়ার পর নিধীই প্রথমে সালাম করে বসলো। আমি সালামের উত্তর দেয়ার পর সে চুপ হয়ে থাকলো। বুঝলাম না, আজ জিজ্ঞেস করবে না? চুপ হয়ে আছে কেন? বাধ্য হয়ে আমাকেই বলতে হলো “এইমাত্র খেলাম।

এখন চেয়ারে বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। তুমি খেয়েছো?” সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বুঝলাম আমি ভুল সময় ভুল প্রশ্ন করে বসেছি। নিধী আমার আগে কোনদিনই খায়নি। একথা আমি জানি। তারপরও জিজ্ঞেস করি। কেন করি এটাও জানি। নিধীকে বললাম “আচ্ছা আমি স্যরি। এখন তুমি খেয়ে নাও। রাখছি তাহলে?” একথা বলার পরও নিধী কোন কথা বললোনা। ভাবতে লাগলাম। নিধী চুপ হয়ে আছে কেন, নিধী কি কোন কিছু বলতে চায় আমাকে, ওর নিজের মধ্যে কি সংকোচ কাজ করছে? এইসব ভাবনার উপর ভিত্তি করে নিধীকে বললাম “তুমি কি কিছু বলতে চাও আমায়?” এবার নিধী নিঃশ্বাস ছেড়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো “আপনি কি করে বুঝলেন আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই?” আমি ছোট্ট করে একটা হাসি দিয়ে বললাম “দুটো বছর পার হয়েছে নিধী আমাদের বিয়ের। এই দুটো বছরে তোমায় কি পরিমাণ বুঝেছি আমি নিজেও জানিনা। তোমার নিঃশ্বাস কি জন্য বের হয়েছে, কি কারণে বের হচ্ছে এই দুটো বছরে হয়ত কিছুটা বুঝতে শিখেছি। আচ্ছা বাদ দাও এগুলা। বল কি বলতে চাও?” নিধী আবারও নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো “আজ কি একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে পারবেন? আব্বু আম্মু বাড়ি থেকে আসছে।

আসলে আপনার জন্য খুব বড় ধরনের একটি সারপ্রাইজ আছে। আসলে দেখতে পারবেন। তাড়াতাড়ি আসবেন” এইটুকু বলেই নিধী ফোন কেটে দিল। আমি মোবাইলটা টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে হেলান দিলাম। কি হতে পারে সারপ্রাইজ? আবার খুব বড় ধরনের? আম্মু আব্বু তো সেদিনই এসে কয়েকদিন থেকে গেলেন। এখন আবার কি কারনে আসলেন? সম্ভবত এই সারপ্রাইজের জন্য। কিন্তু সারপ্রাইজটা কি হতে পারে? “কি ব্যাপার আবিদ সাহেব? কিসের এত চিন্তা নিয়ে বসে আছেন। জানেন! কখন থেকে আমি বসে আছি?” নাহিদ ভাই আমার কাছের একটি চেয়ারে বসে এগুলো বললেন। বুঝতেই পারিনি, উনি কখন থেকে যেন এসে বসে আছেন। আমি উনার প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বললাম “নাহিদ সাহেব কেমন আছেন?”

উনি মুখে একটু হাসি ভাব এনে বললেন “এইত ভাই। কোনরকমে দিনরাত যাচ্ছে ভালোই। আপনি যে কাল বলেছিলেন আজকে বলবেন। এজন্যই আসলাম” উনার কথা শুনে আমি হাসলাম। নাহিদ ভাই আমার অফিসের কলিগ। উনি নতুন বিয়ে করবেন। মেয়েও ঠিক এবং দিন তারিখও ঠিক হয়ে আছে। সেজন্য বাসর রাতের গল্প শুনার জন্য আমাকে কয়েকদিন ধরে জালাচ্ছিলেন। তাই কাল বলেছিলাম আজ সময় করে বলবো। আমি উনার ঘাড়ে হাত দিয়ে মুখে হাসি রেখে বললাম “বাসর রাতের গল্প শুনতে হলে তো ভাই পার্টি দিতে হয়” উনি আমার হাত ঘাড় থেকে নামিয়ে হাতে ধরে বললেন “তাহলে আর কি চলেন ক্যান্টিনে?” ক্যান্টিনে এসে কফির অর্ডার দিলে আমি বলতে লাগলাম “বিয়েটা আম্মু আব্বুর ইচ্ছাতেই হয়েছিল। আমি জীবনে কোন প্রেম করিনি তাই আম্মু আব্বুর পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করতে রাজি ছিলাম। জানতাম না আম্মু আব্বু আমার জন্য পর্দানশিন এবং কওমী মাদরাসার শিক্ষায় শিক্ষিত মেয়েকে পছন্দ করে রেখেছিলেন। বাসর রাতে যাওয়ার আগেই জেনেছিলাম এই কথা। আমার খুব ভালো লেগেছিল এই কথা শুনে। তখনই ভালো লাগা কাজ করছিল আমার সহধর্মিণীর প্রতি। মনে হয়েছিল আমি স্বপ্নের মধ্যে এই কথাগুলো শুনেছি।

আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ আমিও খুব করে চাইতাম যে আমার সহধর্মিণী এরকম শিক্ষায় শিক্ষিত হোক, যে আমাকে বুঝবে, আমাকে বুঝাবে সঠিক আর মিথ্যে। কোরআন হাদীস দিয়ে দেখিয়ে দিবে এটা সঠিক পথ ঐটা খারাপ। যাইহোক আমি মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকর আদায় করতে করতে নিজের ঘরের দিকে গেলাম। রুমে ঢুকার পর নিধী মানে আমার স্ত্রী আমার কাছে এসে সালাম করে দাড়ালো। আসলে ঐসময় আমার স্ত্রীকে দেখে আমার মুখ দিয়ে কেন কথা বের হয়নি সেটা আমি আজও বুঝতে পারিনা। আমার স্ত্রী যখন ঐসময় মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে তখন আমি একপ্রকার নেশার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম।আমার স্ত্রী তেমন সুন্দর নয়। শ্যামলা রঙ্গের চেহারা কিন্তু তবুও আমার মনে হয়েছিল ওর চেহারাটা একধরনের আলো। যেই আলোর কারণে আমার সারা রুম আলোকিত হয়েছিল সেই আলোর কারণে আমার মনটাও আলোকিত হয়ে গেছিল।

আমাকে তখন তার কাছে কি মনে হয়েছিল বুঝতে পারিনি, হয়তো সে ভেবেছিল আমি কি বোবা নাকি? আমার এমন অবস্থা দেখে সে নিজেই অবাক হয়েছিল আর হয়তো লজ্জা পেয়েছিল যার কারণে নিচের দিকে তাকিয়ে বলেছিল “এত গভীরভাবে কি দেখছেন? সারা জীবন তো পড়ে আছে এত গভীরভাবে চেয়ে থাকার। এখন না হয় চলুন দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করি?” আমি কিছু বলিনি। সে আমার দিকে তাকিয়ে আমার ডান হাত তার দুহাত দিয়ে ধরে ওয়াশরুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো। তারপর একসাথে অজু করে নামাজ আদায় করলাম দুজন। নামাজ পড়ে আমি বেলকনিতে এসে দাড়িয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ পর সেও এসেছিল বেলকনিতে। বেলকনির গ্রীলে হাত দিয়ে ধরে বলেছিল আমায় “আপনার কি পছন্দ হয়নি আমাকে?” আমি তার এই কথার মধ্যে খুব কষ্টের ছাপ পেয়েছিলাম। তার এইকথাটা বলার ভঙ্গি দেখে আমারও কষ্ট হয়েছিল। হয়তো ভেবেছিল তার চেহারা অর্থাৎ তার সৌন্দর্য আমার পছন্দ হয়নি। আমি আর কিছু ভাবতে পারিনি।

আমার মাথায় আসেনি ওর এ কথার উত্তর কি হলে ও খুশি হবে। তখন আমি তার কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে বলি “হে আমার সহধর্মিণী! তুমি যখন আমার হাত ধরেছিলে তখন কি জানতে আমার মনে কি ধরনের অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল? তখন আমি চেয়েছিলাম এই হাতটি যেন না ছাড়ে আমার হাত। যখন ছেড়ে দিলে তখন কষ্ট লেগেছিল মনে। কিন্তু আমি মনে মনে প্রতীক্ষা করেছি যে, কখনও যদি তুমি এদুটি হাত ছেড়ে চলে যাও আমি ছাড়বনা কোনদিন। ধরে রাখবো তোমার দুটি হাত প্রতিটা সময় প্রতিটা দিন। আমাকে কি একটি সুযোগ দেবে তোমার হাতটি ধরে সারা জীবন আগলে রাখার?” আমার কথা শেষ হওয়ার পরে দেখি নিধী কাদছে। অন্য দিকে মুখ করে কাদছে। তার ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করার আওয়াজ আমার কানে এসে ভেদ করছিল। তাকে আমি বাধা দেয় নি। কিছুক্ষণ কাদতে দিয়েছি। আমি বুঝিনি কেন কেদেছিল সে। আমি কিছুক্ষণ পর বলি “কি হলো! আমার যে পায়ে ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে তা কি তুমি বুঝতে পারছ না?” তৎক্ষনাৎ সে পিছনে ফিরে আমাকে উপরে উঠালো। তারপর আমার বুকের মধ্যে তার মুখ লুকিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ঐ মুহুর্তে এসব হয়ে যাবে আমি ভাবতে পারিনি।

আমার কথার উত্তর তখন আমি পেয়েছিলাম তার এই জড়িয়ে ধরার কারণে। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পরে সে আমায় কি বলেছিল নাহিদ সাহেব জানেন!” নাহিদ ভাই ঘোরের মধ্য থেকে বের হয়ে উচ্ছসিত কণ্ঠে বললেন “কি বলেছিল আবিদ সাহেব” আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম “সে বলেছিল “আমি ভাবিনি কোনদিন আপনার মত একজন মানুষকে আল্লাহ তাআলা আমার জীবনে উপহার হিসেবে দিবেন। আমার জীবনের যতটুকু হায়াত দান করেছেন মহান আল্লাহ তাআলা ততটুকু হায়াত শেষ হওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আমি আপনার হাত ধরে থাকবো ইনশাআল্লাহ।” তারপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে রুমের ভিতর চলে গেছিল। এইমুহুর্তে হয়ত সে খুব লজ্জা পেয়েছিল। হঠাৎ করে কোথা থেকে জানি মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত ইচ্ছে তৈরি হয়ে যাবে আমি ভাবিনি। ইচ্ছে হয়েছিল নিধীর লজ্জা মাখা মুখটি একনজর দেখার।

কিন্তু আমি যাইনি। আমি গ্রিলে হাত ধরে আকাশের দিকে তাকাই। আমি অনুধাবন করি নিধীর কথা গুলো। কত সুন্দর করেই না সে কয়েকটা শব্দ বলেছিল। তার বলা সেই কয়েকটা শব্দই আমার মনে বিশ্বাস নামের জায়গাটা সে দখল করে নিয়েছিল। আমি আরও কিছুক্ষণ পর রুমে চলে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি সে রুমের ভিতর নেই। ভাবলাম হয়ত সে বাথরুমে গেছে নাহলে রুমের বাইরে গেছে। আমি সোফায় বসে রইলাম। একটু পরে সে আসলো। তার হাতে একটি কফির মগ। আমাকে দিয়ে বলেছিল “আমি একটা কথা বলি?” আমি তাকে “হ্যা” সূচক ইশারা দিয়ে কফির মগ হাতে নিয়েছিলাম। সে বলেছিল “ভার্সিটিতে পড়ে কোন স্টাইলিস ছেলে তো বাইকের পিছনের সিট খালি রেখে চলতে পারেনা তাই-না?” সে এই কথা বলে উত্তরের অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকলো। আমি তার কথাকে মাথায় নিয়ে খেললাম। বুঝার চেষ্টা করলাম সে কি বলতে চাচ্ছে। এভাবে ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলার কি আছে।

মেয়েরা এত ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলে আমি তখনই জেনেছিলাম। আমি বলি “এত ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলে বলতে পারো যে আপনি কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম করেছেন অথবা কয়টা মেয়ের জীবনের সাথে আপনার জীবন জড়িত?” আমার কথা শুনে সে একটা হাসি দিয়ে মুখ নিচের দিকে করে নিয়েছিল। নাহিদ সাহেব! তার সেই লজ্জা মিশ্রিত হাসির সম্মুখীন হয়েছিলাম আমি সেই সময়। তখন আমার মনের মধ্যে খুব ভয়ংকর ভালো লাগা অনুভূতির ঝড় শুরু হয়েছিল। কত সুন্দর করেই না সে হেসেছিল। তারপর আমি তাকে বলি “আমি জেনে শুনে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারতে যাইনি নিধী। তুমি হয়তো প্রেম করোনি পাপ কাজ বলে। বিয়ের আগে প্রেম করা হারাম কাজ বলে। কিন্তু আমি এসব কিছুই চিন্তা করিনি। আমি ভেবেছি, যে মেয়েকে আমি ভালোবাসতে যাবো অথবা যে মেয়ে আমার সাথে প্রেম করতে চাইবে সে মেয়ে অন্য কারো সাথে প্রেম করতে চাইবে না এটা আমি বিশ্বাস করিনা।

যদি আমার মন নিয়ে সেই মেয়ে অন্য কারো সাথে প্রেম প্রেম খেলায় লিপ্ত হয়ে যায় তখনকার সময়ের ‘আমি’কে আমি ভেবেছি। তখন আমার জীবনের কথা আমার জীবন ধ্বংসের কথা ভেবেছি। এইসব ইত্যাদি ভেবে আমি প্রেম নামের অবৈধ অশালীন সম্পর্কে জড়িত হতে যাইনি।” এইটুকু বলে আমি আমার হাতের মগে থাকা অর্ধেক কফিটুকু নিধীর দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। নিধী স্তম্ভিত হয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমাকে দেখছিল।” “তারপর” আমি ঐটুকু বলে যখন একটু চুপ হয়ে থাকলাম তখন নাহিদ ভাই ‘তারপর’ বললেন। আমি তাকে বললাম “তারপর আর কি ভাই? আর কত গল্প শুনবেন? তারপরের রাতও এভাবেই গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছিলাম।” নাহিদ ভাই উচ্চ সূরে হাসি দিয়ে ওয়েটার কে ডেকে ঠান্ডা কফি পরিবর্তন করে গরম কফি নিয়ে আসতে বললেন।

আমি দাড়িয়ে আছি আমার বাসার দরজার সামনে। একবার কলিং বেল বাজিয়েছি। আমার ভিতরের ধক ধক শব্দের আওয়াজ বাইরেও শুনা যাচ্ছে। ভিতরে গেলে কি হবে। কি হবে সেই সারপ্রাইজটা। এই টেনশনে আমার সময় যাচ্ছে এখন। নিজেকে অস্থির মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর নিধী এসে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে থাকলো। আমি তার মুখের মায়াভরা হাসির দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি কি হচ্ছে এভাবে তাকিয়ে হাসছে কেন। কোথাও কোন কিছু পাইনি। না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে ইশারায় জিজ্ঞেস করি “কি ব্যপার? হাসছো কেন?” এভাবে ইশারা দেয়ার পর দেখি তার মায়াভরা মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। সে কিছু না বলে মুখ তার ওড়না দিয়ে লুকিয়ে দৌড়ে রুমে চলে গেল।

আমি দরজা লাগিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। অফিসের ব্যাগ সোফায় রেখে সোফাতেই বসলাম। একটু পর আম্মু কোথা থেকে যেন এসে আমার মুখে মিষ্টি ঢুকিয়ে দিলেন। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। মুখের মিষ্টিটা হাত দিয়ে বের করে আবারও মুখে নিলাম। মিষ্টিটা কোনরকমে খেয়ে আম্মুকে যেই বলতে যাবো “আম্মু কিসের মিষ্টি?” ঠিক তখনই আব্বু এসে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললেন “বাঁদরটা তাহলে এতদিনে বুঝতে শিখেছে যে আমাদেরও নানা নানি হতে ইচ্ছে করে।” আব্বুর কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। আম্মুর দিকে তাকাই। উনি সুখের হাসি হেসে আমায় বলেন “নে আরেকটা নে?” আমি হঠাৎ কেমন যেন হয়ে যাই। আমার ভিতরে হঠাৎ কোথা থেকে অদৃশ্য শক্তি চলে আসে।

সুখের রাজ্য থেকে সব সুখ যেন আমার বাসায় এসে খেলা করতে থাকে। আমি আম্মুকে কি বলবো বুঝিনা। আমার কি বলা উচিৎ মাথায় আসে না। আমার কেন জানি বিশ্বাসই হচ্ছেনা। আমি এমন একটা সুখময় পরিস্থিতির মধ্যে পড়বো ভাবিনি। আমি আম্মুকে চিৎকার দিয়ে জিজ্ঞেস করি “আম্মু সব সত্যি বলছো তো?” আম্মু বললেন “হ্যা রে সব সত্যি। আজকেই ডক্টরের কাছে গিয়ে জেনে আসছি।” আমি আম্মু আব্বুর পায়ে সালাম করে দৌড়ে রুমে যাই। নিধী রুমে নেই। বেলকনিতে আসি। সে গ্রিলে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকে কুলে করে রুমে নিয়ে আসি। আমি যখন তাকে কুলে নেই তখন সে তার মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। জানিনা সে আমার দিকে তাকিয়ে অনুধাবন করতে পেরেছে কি না যে, সে দুনিয়ার কতটুকু সুখ আমায় এনে দিতে পেরেছে।

আমি বাবা হবো। ভাবতেই আমার শরীরের লোম দাড়িয়ে যায়। আমার ভিতর নাড়া দিয়ে উঠে। আমি তাকে বলি “কিভাবে পারলে তুমি আমায় এরকম সুখের অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে?” সে আমার দিকে তাকায়। তার মায়ামায়া চোখ দিয়ে। তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। সুখের জল। এক টুকরো সুখের জল। সে বলে “আপনি আমার জন্য এত কষ্ট করেন। আমায় এত ভালোবাসেন। তা-ই তো আল্লাহ তাআলা আপনাকে আমার দ্বারা আমাদের সুখের রাজ্যের আরো সুখ এনে দিতে রাজা পাঠাচ্ছেন।” সে এইটুকু বলেই আমার বুকে মাথা লুকায়। আমি অনুভব করি তার কথাগুলো। অনুভব করি তার অনুভূতিগুলো। আমি অনুভব করি আমার মনের কথাগুলো। আমার মন বলে “তুই বাবা হবি। তুই কি সেই যোগ্যতা রাখিস?”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত