বিয়েটা বাবা মায়ের ইচ্ছাতেই করেছি। মেয়েকেও একবারের জন্যও দেখতে যায়নি। শুধু বিশ্বাস রেখেছি বাবা মায়ের উপর। মেয়ে পক্ষ আমাকে কম হলেও শতবারের উপরে দেখা হয়েছে। আমার উনার নাম নীলু। নামটা ভিতরে একটা বিশালতা কাজ করে। হয়ত তিনিও বিশাল মনের অধিকারীনি। বাসর রাত নিয়ে প্রায় ছোট থেকেই চিন্তা ভাবনা আর লজ্জা মিশ্রণ ছিল। আর সেই জল্পনা কল্পনা চোখের সামনে..
-নাম কী?
-নীলু।
-আপনার কী এখনও লজ্জা লাগচ্ছে? যদি না লাগে তবে মুখখানা একবার দেখতে চাই..
-(চুপ)
-বাহ! সত্যিই আপনি অনেক সুন্দর। বাবা-মায়ের পছন্দ আছে বলতে হবে। নীলুর সাথে কথার মিতালী গড়ার আগেই জানিয়ে দিল..
-আমার অতীত আছে..
-থাকাটাই স্বাভাবিক।
-স্যরি,আপনাকে আমি মেনে নিতে পারব না।
-মানলাম,আমাকে মেনে নিতে পারবেন না। তবে এটা এত সময় গড়িয়ে যাওয়ার পর কেন? আগেও তো অনেক সময় ছিল?
-বাবা কষ্ট পাবে ভেবে।
বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম। দরজা ওপাশ থেকে আঁটকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জানালা আঁটকাতে ভুলে গেছে। সেই সুযোগে একটু নীলু কে একটু উকি মেরে দেখে নিলাম। কোলবালিশ ধরে ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে।
সারা রাত মশার সাথে গান গেয়ে বেলকনিতে কাটালাম। স্বরণীয় একটি রাত কাটালাম বটে। সকালে নীলু কে ডেকে বললাম,এখন একটু দরজাটা খোলেন। নয়ত সবাই জেনে যাবে। নীলু হা করে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। আমি কোন কথা না বলে বিছানায় পড়ে রইলাম। দুপুরে ঘুম ঘুম চোখে বললাম..
-মা,একটু চা করে দাও তো!
-তোর বউকে পাঠিয়ে দে..
দ্রুত উঠে গিয়ে বাড়ির নিচের দোকান থেকে চা খেয়ে আসলাম। বিয়ের প্রায় এক সাপ্তাহ চলে গিয়েছে। অফিস থেকে এসে রুম ঢুকেই দেখি নীলু কার সাথে যেন কথা বলছে,কিছু বলতে যাব। ঠিক তখনই বিবেগ মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাড়াল। সবাই বলা বলি করছিল,বিয়ে করেছিস কতদিন হল। হানিমুনে না যাস। কিন্তু ঢাকার ভিতরে কোথাও ঘুরে আসতে পারিস তো? ইচ্ছার বিরোধ্যে লড়াই করলাম। কোন এক রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম। দুজনই খুব চুপচাপ। আমি কফি অর্ডার করে ফেবুতে লগইন করলাম। আর নীলু কানে ফোনটা তুলে নিল। আড় চোখে তাকিয়ে বললাম..
-কিছু জানার ছিল?
-বলুন..
-উনার নাম কী?
-কার?
-আপনার বয়ফ্রেন্ডের?
-আদিল।
-নাম্বারটা দেওয়া যাবে?
-০১…….
-কোন পিক আছে আপনার কাছে?
–হ্যাঁ
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেলাম। রাত গভীর হয়ে গেছে। সারাদিনের প্রচন্ড গরমের আভায় রাতের নিরবতায় ড্রীপ ফ্রিজের ঠান্ডা জল ছিঁটিয়ে দিয়েছে প্রকৃতি। অন্ধকারের বুক চিরে কোথাও দুমদাম ফটকা ফুটছে,হয়ত বিয়ের,নয়ত জন্মদিনের। কত শত স্বপ্ন বুনেছি,এমন অন্ধকারছন্ন রাতে সেই মায়াবীনির হাতে হাত রেখে হারিয়ে যাব। যেখানে হাজারও বাহারী সুভ্রতা ছড়ানো ফুলের গন্ধে মাতাল করা রজনীময় রাত। সবার ভাগ্যে সব সয় কি?
প্রচন্ড গরমে ফ্লোরে শরীর এলিয়ে দিলেনই ঘুমের দেশে তলিয়ে যেত দেহ। আর ফ্লোরে এপাশ ওপাশ করছি কিছুতেই দু’চোখ এক হয়ে আসছে না। মানুষ তখনই নির্চিন্তে ঘুমাতে পারে,যখন প্রচন্ড কষ্টে ভিতরটা কুঁকড়ে যায়। আর কষ্টের নীল আভা ছড়িয়ে সুখের প্রকন্ট দোলনায় দোলে। তবে কি,আমার ভিতরটা যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়েছে? কোন হিসেবই মিলছে না। তবুও সব হিসাব মিলানোর পাঁয়তারা চলবে রাত ভর। সন্ধ্যায় বাসায় এসে নীলু কে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হলাম। এই টাইমে কেউ ঘুমায় নাকি?
-নীলু কোন সমস্যা? হতচকিয়ে গিয়ে উওর দিল..
-না।
-এই সময়ে কেউ শুয়ে থাকে?
-একটু মাথা ব্যাথা করছে।
-আদা চা করে দিই? কোন উওর এল না নীলুর থেকে। বুঝতে পারলাম সম্মতি জানাচ্ছে।
-এই নেন। চা’টা গরম গরম খেয়ে নিন।
নীলু একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার চায়ের মগের দিকে। ওর চোখগুলো লাল হয়ে আছে। চা’টা ওর হাতে দিয়েই ফ্রেশ হতে গেলাম।
– এখন কী অবস্থা?
-ভাল। বাহিরে আসব ঠিক তখনই নীলু বলল..
-একটা নাপা এক্সট্রা হবে?
-দেখছি।
হাজার খুজাখুজি করেও পেলাম না। তাই বাসার নিচে ফার্মেসিতে থেকে নিয়ে আসলাম। রুম এসে যখন ওকে ঔষুধ দিতে যাব তখনই দেখলাম ও শীতে কাঁপছে। অনিচ্ছা সত্যেও কপালে হাত রাখলাম। গরমে শরীর একদম পুড়ে যাচ্ছে।
মধ্যরাত পর্যন্ত ওর মাথায় পানি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। সকালে ওঠে দেখি অফিস টাইম লেট হয়ে গেছে। তাই তাড়াহুড়ু করে বের হলাম। বাসস্টপে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ নীলুর নাম্বার থেকে কল পেয়ে বিস্মিত হলাম.. আপনার টাইটা রেখে গিয়েছেন। অফিস শেষে বাসায় যাব ঠিক তখনই কেমন যেন একটি পরিচিত মুখ দেখতে পেলাম। অনেক চেষ্টার পর চিনতে পাড়লাম এটা নীলুর বয়ফ্রেন্ড। কিন্তু ওর হাত ধরে রাখা মেয়েটা কে?
নিশ্চিত হতে নীলুকে ফোন দিয়ে বললাম ওর বিএফ এর পিক এমএমএস করতে। মিলিয়ে দেখলাম আসলেই মিলে গেছে। বুঝার চেষ্টা করলাম ভাই বোন নাকি! কিন্তু আচরনে অন্যরকম বুঝাচ্ছে। কাপলটা রিক্সায় উঠে গেল। আমিও পিছু নিলাম। একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে রিক্সাটা থামল। ওরা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসল। আমি নীলু কে ফোন দিয়ে ঐ রেস্টুরেন্টে আসতে বললাম। প্রায় আধা ঘন্টা পর নীলু আসল।
এমন ঘটনা দেখার পর নীলু বেশ কিছুক্ষন বাকরুদ্ধ ছিল। ভেবে ছিলাম,বাংলা সিনেমার তিশা,বা মিথীলার মত ছেলেটার কলার চেপে এগালে ওগালে দু’চারটা দিয়ে বসবে। এই মেয়ে তার উল্টা,ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিল। অনেক সামলে রিক্সায় বাসায় আসলাম। দুজনের মুখে কোন কথা নেই। অল্প কিছু খেয়েই বিছানায় শুয়ে পড়লাম।এমনিতেই আজ অফিসে লেট হয়ে গিয়ে ছিল। আগামীকাল লেট হলে বস বকাবকি তো করবেই। সাথে চাকরীটাও নিয়ে টানাটানি হবে। সকালে কফি’র ঘ্রানে আর মিষ্টি ডাকে ঘুম ভাঙ্গল..
-এই যে,উঠুন! আজ অফিসে যাবেন না নাকি? আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না।হা করে ছিলাম বেশ কতক্ষণ।
– এমন হা করে থাকলে চা একদম মুখে ঢেলে দিব।
সেই হাসি! যেই হাসিটা দেখার জন্য দিন রাত অপেক্ষা করতাম। রুপকথার অনাকাঙ্খিত সুখ এখন আমার হাতে। আজ পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী আমিই।
-আজ অফিসে না গেলে হয় না?
-কেন?
-শহড়টাকে ঘুরে দেখতাম। অনেকদিন দেখা হয় না।
-আজ থেকে আর চাকরীটাই করছি না..
-জ্বী না। তা হবে না। আমাদের ভবিষ্যৎ আছে না? না,আর অফিস ফাঁকি দাওয়া হবে না,আজ থেকে ভবিষ্যৎ ভাবতে হবে।