—-মিম একটু দাড়াবে?? আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।(নীল)
—-হুম আমিতো দাড়িয়েই আছি, কি বলবে বলো।
—-না মানে, মানে, কথাটা যে কিভাবে বলি ভেবে পাচ্ছি না।(নীল)
—-আরে এমন মানে মানে না করে যা বলবে সরাসরি বলে ফেল। তুমিতো জানোই আমি সরাসরি বলা পছন্দ করি।
—-ইয়ে মানে কথাটা শুনার পর তুমি কি মনে করবে আমি ভেবে পাচ্ছি না।(নীল)
—-তুমি কি বলবে? না আমি এখান থেকে চলে যাবো?
—-হ্যা ব. ব. বলবো। আমি তোমাকে..আমি তোমাকে…(নীল)
—-হুম বলো তুমি আমাকে, তুমি আমাকে..কি বলো?
—-মানে আমি তোমাকে. আমি তোমাকে.. আমি তোমাকে. বলতে চাচ্ছি তোমার বাংলা বইটা কি আমাকে দিবে??(নীল)
—-কি?? এই কথা বলার জন্যে তুমি আমাকে এতক্ষণ দাড়িয়ে রেখেছো? ইডিয়ট একটা। “এই বলে চলে এলাম ওখান থেকে। আর ছেলেটা দাড়িয়ে থেকে চেয়ে চেয়ে আমার চলে যাওয়া দেখল। আজও ভালোবাসার কথাটা মুখ ফুটে বলতে পারলো না।
আমি মিম আর যে ছেলেটার সাথে কথা বলছিলাম ঐ ছেলেটার নাম নীল। আমরা একই ভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ার এ পড়ি। কিন্তু আমি বয়সে নীলের এক বছরের ছোট। দুজনেই একই শহরে এবং কাছাকাছিই থাকি।নীল একটু শান্ত আর খুব কম কথা বলে। খুব প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। আমরা দুজন একই সাথে পড়ি । কিন্তু নীল আমার সাথে একদিনও কথা বলতে পারিনি। একই ইয়ারে পড়ি অথচ কথা বলতে পারিনি। বিষয়টা অনেকটা আশ্চর্যের কারন নীল ক্লাসে কারও সাথেই কথা বলতো না।।” আমার ভার্সিটির বন্ধুরা জানে নীল আমাকে পছন্দ করে কিন্তু বলতে পারে না।আমিও নীল একটু একটু পছন্দ করি। প্রায় ২ মাস এভাবে চলার পর, একদিন আমি ক্লাসে বসে আছি ।তখন-
—-কেমন আছো মিম??(নীল)
—-জি ভালো। তুমি কেমন আছো??
—-হ্যা ভালো, তো তোমার লেখাপড়ার খবর কি, বাসায় সবাই কেমন আছে??(নীল)
—-জি ভালো, আর লেখা পড়া ভালোই চলছে।আর তোমার?
—-হ্যা ভালো।(নীল)
—-তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড??
—-ওকে।
–আজই সর্বপ্রথম নীলের সাথে কথা হলো আমার প্রায় দুই মাস ধরে কথা বলার চেষ্টা করেও বলতে পারিনি। এরপর প্রতিদিন কথা হতো দুজনার। দুজনে একসাথে কলেজে যাওয়া আসা করতাম। এভাবে চলতে চলতে আমরা অনেক ক্লোজ হয়ে যাই। ক্লাসে সব সময় হাসি ঠাট্টা, গল্প গুজব করে কাটাতাম দুজন। এভাবে চলে যায় আরও ছয় মাস। তবুও নীলের মনের কথাটা আমাকেবলতে পারে নি।
— প্রতিদিন ভেবে যেতাম আজ বলবে কিন্তু ওর সামনে গিয়ে দাড়ালে আর বলতে পারে না। এভাবে চলতে চলতে একসময় আমি মনে মনে নীলকে ভালো বেসে ফেলে।
–ক্লাসের সব বন্ধুদের চেয়ে নীল আমাকে গুরুত্ব দিতো বেশি। কারওসাথেই তেমন কথা বলতো না আমার সাথে ছাড়া। নীল জানতো না যে আমি ও তাকে ভালোবাসি। একদিন ক্লাসে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ইরার সাথে ভালোবাসার কথাটা শেয়ার করতেই, তার মাধ্যমেই জানতে পারে.।
—-কি রে মিম কি হয়ছে তোর এমন মন খারাপ করে বসে আছিস ক্যান?(ইরা)
—–কিছু না রে। এমনিতেই বাদ দে। তুই কেমন আছিস বল?
—-আমাকে বলবি না?? আমি না তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড তাও আমাকে বলবি না তোর কি হইছে(ইরা)
—-আমি একটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি রে। কি যে করবো কিছুই বুঝতেই পারছি না
—-কিসের সিদ্ধান্তহীনতা?(ইরা)
—-আমাদের ক্লাশের যে নীল আছে তাকে আমি খুব ভালোবাসি রে কিন্তু আমার ভালোবাসার কথাটা ওকে বলতে পারছি না কোনোভাবেই। কি করবো বল তো? ?
—-হাহাহাহা এই কথা?? হায় রে না বলা ভালোবাসা(ইরা)
—-মানে? কি বলছিস তুই? আর হাসছিস ক্যান?
—-আরে পাগলি নীল ছেলেটা তোকে যেদিন প্রথম দেখেছিলো সেদিন থেকেইভালোবাসে কিন্তু ৮ মাস আগে থেকেই ভালোবাসে কিন্তু সাহস করে কখনও বলতে পারে নি(ইরা)
—-কিহ?? নীলও আমাকে ভালোবাসে?? সত্যি বলছিস??.
—-হুম রে সত্যি(ইরা) এটা জানার পর থেকে নীলের সাথে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় থাকতাম তার কাছ থেকে ভালোবাসার কথা শুনার জন্যে। কিন্তু সে বলতে পারতো না। আমি চেয়েছিলাম নীল আগে তার ভালোবাসার কথাটা বলুক। এরপর কলেজে যখন নীলের সাথে আমার দেখা হতোএবং আমিও কথাটি বলতে পারতামনা। অন্য কথা বলে কথাটি বলে ঘুরিয়ে দিতাম কিন্তু মূল কথাটি বলার সাহস পেতাম না। আর আমি বিরক্ত হয়ে চলে আসতামম ওখান থেকে। আজকে যেমন বলতে পারলাম না। এভাবে প্রায় অনেক বার বলতে গিয়েও বলতে পারিনি দুজনের কেউ। নীল সামনে এসেও ভালোবাসার কথা বলতে সাহস পায়নি এদিকে নীল ভাবে আজ হয়তোবা কথাটি বলবো, কিন্তু বলতে পারেনা।।
–তারপর কিছুদিন পরে ভার্সিটি থেকে শিক্ষা সফরে যায়। আমি রাতের বেলায় মনে মনে পরিকল্পনা করলাম ওখানে গিয়ে কাল তার মনের কথাটা যে করেই হোক শুনবোই। সারারাত অনেক উৎকন্ঠায় পার করে, সকালে যাওয়ার জন্যে রেডি হয়ে গেট থেকে বের হয়েই দেখি নীল বাইরে দাড়িয়ে আছে। আজ লাল শাড়ি পড়েছি। সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ, চুড়ি, চুলটা হালকা সোনালী কালার করা।
–দেখেতে এমনিতেই অনেক সুন্দর তারপর আজকে তোমাকে দেখতে অপ্সরীর লাগছে। (নীল)
—-কি হলো যাবে না? বাসের সময় হয়ে এলো তো।
—-হুম চলো(নীল) (এরপর দুজন একটা রিক্সায় উঠি)
—-তোমাকে আজ একদম অপ্সরীর মতো লাগছে। (নীল)
—-থাক আর পাম দিতে হবে না।
—-না আমি সত্যিই বলছি, আমি তোমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারছিনা।(নীল)
—-আচ্ছা ঠিক আছে থ্যাংকস
তারপর বাসের কাছে চলে আসলে দুজন দুজনার ছিটে বসে পড়লাম। তারপর বাস ছেড়ে দিলো এবং ৩ ঘন্টা পর গন্তব্য স্থলে পৌঁছে গেলো। ওখানে যাওয়ার পর একটা পার্কে ঘুড়তে গেলাম সবাই। ওখান থেকে একটা গোলাপ ফুল কিনলো নীল। পার্কের মধ্যে একটা গাছের নিচে আমি আর আমার কয়েকটা ফ্রেন্ড দাড়িয়ে আছি। তখন নীল এখানে এসে বলল, মিম তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে, কিন্ত এই কথাটা শুনে মনে মনে ভাবলাম আজকে মনে হয় মনের কথাটা বলবে নীল।তাইচোখ ইশারা করতেই ফ্রেন্ডগুলা চলে গেলো এখান থেকে।
তারপর-
—-হ্যা এবার বলো তোমার জরুরী কথা কি??
—-হ্যা। মানে আসলে হয়েছে কি। আমি তোমাকে.. মানে আমি আমিতোমাকে…(নীল)
—-হ্যা বলো, তুমি আমাকে কি কি? বলো।
—-হ্যা, ব. ব. বলছি । ইয়ে মানে আমি তো তো. তো. তো..(নীল)
—-তোতলাচ্ছো কেন?? আমাকে ভয় পাচ্ছো??
—-আরে না তোমাকে কেন ভয় পেতে যাবো। ইয়ে মানে, আমি বলতে চাচ্ছি যে, আমি তো. তো. তোমাকে.. (নীল)
—-আচ্ছা থাক তোমাকে বলতে হবে না..আমি বলছি। তুমি আমাকে ভালোবাসো তাইতো….?
—-হ্যা…(নীল) ঠাস….ঠাস…..ঠাস.। “কথাটি শুনার সাথে সাথে নীলের গালে ঠাস করে একটা চড় মেরে দেই
—-এটা কি হলো মিম, চড় মারলে কেন? (নীল)
—-সামান্য একটা কথা বলতে গিয়ে তুমি এতদিন সময় নিলে।তুমি প্রথম থেকে ভালোবাসো। কিন্তু একদিনও বলতে পারোনি ভালোবাসার কথাটা।আমি তোমায় ভালোবেসে তোমার মুখে ভালোবাসার কথাটা শুনার জন্যে অপেক্ষা করে আছি।
—-আসলে তোমার সামনে আসলে আমার কেমন জানি হয়ে। আমার সমস্ত শক্তি যেন হারিয়ে যায়। সব কথা বলতে পারি কিন্তু এই কথাটা বলতে পারিনা।(নীল)
—-আরে বুদ্ধু এখনতো বলো।
—-আমি তোমাকে ভালোবাসি মিম ।(নীল)
—-এভাবে না, তুমি ফিল্ম দেখো না?? হাটু গেড়ে বসে যেভাবে প্রোপজ করে সেইভাবে করো। “এর পর নীল গোলাপ ফুলটা হাতে নিয়ে হাটুগেড়ে বসে আমাকে বলল,
—-I Love U Meem will you love me?? ” ফুলটা নীলের হাত থেকে নিয়ে বললাম”
—-I Love U Too.বাবু এভাবেই শুরু হয় আমাদের অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প।