বাবাকে জানিয়ে আসলাম,গত সপ্তাহে যে পাত্রপক্ষ আমাকে দেখতে এসেছিলো তাদের সাথে কথা ফাইনাল করতে। তারপর রুমে এসে ফারহান কে কল দিয়ে বললাম-কাল আমরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করছি,ও যেন সব ব্যবস্থা করে রাখে। এখন শান্তি লাগছে খুব। বাবাও খুশি,সাথে প্রেমিকও। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে যাওয়ায় খুব তাড়াহুড়ো লেগে গেল। কোনোরকমে রেডি হয়ে তড়িঘড়ি করে নাস্তা করে বের হতে নিচ্ছিলাম,এমন সময় মা প্রশ্ন করে বসলেন,
– এত তাড়াহুড়ো কিসের আজ? পায়ে জুতো পড়তে পড়তে উত্তর দিলাম,
– আজ খুব ইম্পরট্যান্ট একটা ক্লাস আছে। মিস হয়ে গেলে এই সেমিস্টারে আর পাশ করা লাগবে না।
– ও। সাবধানে যাস। বাসায় কখন ফিরবি?
– আগের টাইমেই। গেলাম….
এদিকে রিক্সায় বসে ফারহান কে একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু রিসিভ করার কোনো নাম ই নেই। ১১ তম কলের সময় বরাবরের মত কেটে দিয়ে কলব্যাক করলো ফারহান। রিসিভ করেই ঝাঁঝালো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
– ফারহান,তুমি কোথায় বলো তো?
– কাজী অফিসে,সব ঠিকঠাক করতে আসলাম। তুমি বের হয়েছো তো?
– আমার বের হওয়া নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। আমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাব। আচ্ছা শুনো,সায়েম ভাই আছে না তোমার সাথে?
– হ্যাঁ আছে। কেন?
– উনার উপর সব দায়িত্ব দিয়ে তুমি সায়েন্স ল্যাব চলে আসো।
– এখন আবার সায়েন্স ল্যাব কেন যাব?
– এত প্রশ্ন কেন করো ফারহান? যা বলছি তাই করো।
প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যে আমি সায়েন্স ল্যাব পৌঁছে গেলাম। তার কিছুক্ষণ পর ফারহানও চলে আসলো। দুজন দুজন কে দেখে মুচকি হাসলাম। আমার দিকে এগিয়ে এসে ফারহান জিজ্ঞেস করলো,
– এখানে আসতে বললে কেন? আমাদের তো ধানমণ্ডি মিট করার কথা ছিল।
– সামনেই আমার ছোট খালামণির বাসা। আগে ওখানে যাব। ফারহান ভ্রু কুঁচকে ফেললো,
– ওখানে কেন আবার? খালামণির কাছে দোয়া নিতে?
– পাগল নাকি তুমি! খালামণি কে জানানো যে কথা,বাবা কে জানানো একই কথা।
– তাহলে?
– খালামণি বাসায় নেই। ময়মনসিংহ গিয়েছেন উনার শ্বশুরবাড়ি তে। কাল ফিরবেন। বাসায় এখন শুধু আমার খালাতো দুই ভাই-বোন আছে। ওদের এক্সাম দেখে ওরা যায় নি। আর ওখানে যাব রেডি হতে।
– রেডি হওয়ার কি আছে? ফারহানের ডান হাতের বাহু আগলে ধরলাম আমি,
– বা রে। আমি কি কুর্তি আর টাইলস পড়ে বিয়ে করবো নাকি! বাসা থেকে শাড়ি পরে বের হলে মা সন্দেহ করতেন। তাই এখন খালামণির বাসায় গিয়ে শাড়ি পরে একটু সাজগোজ করবো। আর আমি জানতাম,তুমি আজকের দিনেও টি-শার্ট আর জিন্স পরে চলে আসবে। তাই পাঞ্জাবী আর শাড়ি আমি ব্যাগে করে নিয়ে এসেছি।
ফারহান মুচকি হাসলো,
– ঠিক আছে চলো।
খালামণির ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল প্রেস করতেই দরজা খুলে দিলো শশী। আমাকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরলো আমাকে। তারপর ফারহান কে নজরে পড়লে ওকে সালাম দিয়ে ভেতরে যেতে বললো। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসলাম আমরা। শশী কে আমি জিজ্ঞেস করলাম,
– সাদাত কি স্কুলে?
– হ্যাঁ। ছুটি হবে বিকেল ৫ টায়।
– ও। এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি দে না শশী। উফ্,কি অসহ্য গরম বাইরে! আমাদের ঠাণ্ডা পানি দিয়ে শশী ভেতরে চলে গেল। ফারহানের কাছে আমি ওর মোবাইল টা চাইলাম,
– তোমার ফোন টা দাও তো ফারহান।
– কেন?
– তোমার নাম্বার থেকে বাবা-মা’র নাম্বারগুলো ব্লকলিস্টে দিবো। সাবধানের মার নেই। তাছাড়া মা তোমার নাম্বার জানেন। ফারহান তার মোবাইল টা আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
– পাসওয়ার্ড?
– ওহ্ স্যরি।
ফারহান প্যাটার্ন লক খুলে মোবাইল টা আবার আমার দিকে এগিয়ে দিলো। কাজ শেষ করে মোবাইল টা টি-টেবিলের উপর রেখে দিলাম আমি। ফারহান আমাকে তাড়া দিতে শুরু করে দিয়েছে এর মধ্যে। আমি মাথা নিচু করে বললাম,
– আমাদের এতদিনের সম্পর্ক টা আজ একটা পরিণতি পেতে যাচ্ছে। তাই এই দিনটা কে আমি স্মরণীয় করে রাখতে চাই আমাদের জীবনে। ফারহান আমার গালে আলতো ছুঁয়ে বললো,
– ঠিক আছে,তুমি যা চাও তাই হবে। মুহূর্তেই আমার মুখটা খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো,
– তাহলে আমার সাথে তুমি এখন ভেতরের রুমে যাবে।
– চলো। এ আর এমন কি!ফারহান উঠে পড়তে নিলে আমি আবার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলাম ওকে,
– উঁহু,কথা শেষ হয় নি আমার। চুপ করে বসো এখানে,আমি তোমার চোখ বাঁধবো। আমার গলায় জড়ানো স্কার্ফ টা দিয়ে ফারহানের চোখ বাঁধতে শুরু করলাম আমি। ফারহান বললো,
– কি যে করছো রিতু,কিছুই বুঝতে পারছি না।
– বুঝতে হবেও না। এখন উঠে দাঁড়াও। আমার কথামতো ফারহান উঠে দাঁড়ালে ওর দু’হাত পেছনে এনে বেঁধে ফেললাম।
– আবার হাত বাঁধছো কেন?
– হাত না বাঁধলে তুমি আমার সারপ্রাইজ নষ্ট করে ফেলবে। ফারহান আহ্লাদের সুরে বললো,
– বড্ড ছেলেমানুষি তোমার,রিতু।
– জানি। এখন চলো।
টি-টেবিলের উপর থেকে ফারহানের মোবাইল আর আমার ভ্যানিটিব্যাগ টা নিয়ে ফারহানের দু’কাঁধে হাত রেখে ঠেলতে ঠেলতে ওকে ভেতরের রুমে নিয়ে গেলাম। টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে ওর চোখের বাঁধন খুলে দেয়ার সাথে সাথে ফারহান চমকে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কেক কিসের? কোনো উত্তর না দিয়ে কেক টা কেটে এক পিস কেক ফারহান কে খাইয়ে দিলাম আমি। ফারহানের ঠোঁটে প্রশস্ত হাসি,
– হাতের বাঁধন খুলবে না?
– খুলবো তো। আগে এখানে বসো তো দেখি।
ধাম করে ফারহান কে পাশের চেয়ারটায় বসিয়ে দিলাম আমি। তারপর জানালার পর্দাগুলো টেনে দিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে ফারহানের মুখোমুখি চেয়ারে এসে বসলাম,
– এমন টা কেন করলে ফারহান? আমার ভালবাসায় কি কোনো কমতি ছিল? আমার প্রশ্ন শুনে ফারহান থতমত খেয়ে গেল,
– মানে? কি করেছি আমি?
– শায়লা,প্রীতি,নেহা এই মেয়েগুলোর জীবন কেন নষ্ট করছো?
– কিসব আবোলতাবোল বলছো? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার গলা কেঁপে আসছিলো,
– পাগলের মত ভালবেসেছি আমি তোমাকে। তোমার জন্য আমি নিজের ফ্যামিলি কে ছাড়তে পর্যন্ত রাজি ছিলাম। আর তুমি এর এই প্রতিদান দিলে? তোমার বিবেকে বাঁধলো না একটুও? ফারহান এবার উত্তেজিত হয়ে গেল,
– রিতু,তোমার মাথা ঠিক আছে? যা বলছো এসবের কোনো প্রমাণ আছে তোমার কাছে? আর আমার হাত বেঁধে রেখেছো কেন এখনো? খুলে দাও এক্ষুণি। ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল আমার। ফারহানের দিকে হালকা ঝুঁকে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
– চুপ,একদম চুপ। গলা উঁচু করে কোনো কথা হবে না এখানে। আজকে তোর দম শেষ। আমার অগ্নিমূর্তি দেখে ফারহান যথেষ্ট ঘাবড়ে গেল। ফারহানের মোবাইল টা হাতে নিলাম আমি,
– প্রমাণ চাস না? দেখাচ্ছি তোর প্রমাণ। ফেসবুকের পাসওয়ার্ড বল্। বিস্ময় নিয়ে ফারহান জিজ্ঞেস করলো,
– প্যাটার্ন লক খুললে কি করে?
– তখন তোর মোবাইল নিয়ে আমি বাবা-মা’র নাম্বার ব্লক করি নি। আড়চোখে কারেন্ট পাসওয়ার্ড টা দেখে নিয়ে প্যাটার্ন লক চেঞ্জ করেছিলাম। এখন পাসওয়ার্ড বল্।
– অসম্ভব।
এই বলে ফারহান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে চেয়ারের সাথে আটকে গেল। এভাবে বারবার চেষ্টা করছে দেখে আমি বললাম,
– লাভ নেই। এমন নড়াচড়া করতে থাকলে প্যান্টের পেছনের অংশটুকু খালাস হয়ে যাবে। চেয়ারে সুপার গ্লু লাগানো আছে। সাথে সাথে ফারহান স্ট্যাচু হয়ে গেল। আবারো পাসওয়ার্ড জিজ্ঞেস করলে সে বলতে অসম্মতি জানালো। ফলে বাধ্য হয়েই ভ্যানিটিব্যাগ থেকে রিভলভার টা বের করে ফারহানের কপাল বরাবর তাক করলাম আমি,
– এবার বল্,গুলি খাবি নাকি পাসওয়ার্ড বলবি? এই বদ্ধ ঘরে তোকে মেরে ফেলতে আমার দু’সেকেন্ড সময়ও লাগবে না। চিৎকার চেঁচামেচি করে গলা ফাটিয়ে ফেললেও কেউ তোকে বাঁচাতে আসবে না এখানে। তাছাড়া এমন কাহিনী তো এখন অহরহ হচ্ছে। তাই না? ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে গড়গড় করে পাসওয়ার্ড বলে দিলো ফারহান,
– flirtingismypassion (ফ্লার্টিং ইজ মাই প্যাশন)
পাসওয়ার্ড টা শুনে কড়াচোখে ফারহানের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম আমি। তারপর মেসেঞ্জারে লগ ইন করে ইনবক্স থেকে একাধিক মেয়ের সাথে সেক্সুয়াল কনভারসেশন আর মেয়েদের ন্যুড পিক উদ্ধার করলাম। রাগে দুঃখে আমার চোখ দুটো ছলছল করছে কিন্তু কাঁদতে পারছি না। নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।
ছবি আর কনভারসেশন ফারহান কে দেখানোর পর সে স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার ভান ধরলো,
– বিশ্বাস করো রিতু,আমি এসবের কিছুই জানি না। এদেরকে আমি চিনিও না। সাথে সাথে ফারহানের দু’গালে কষে দুটো চড় বসিয়ে দিয়ে গলা উঁচু করে জিজ্ঞেস করলাম,
– কুত্তার বাচ্চা আমার সাথে এই প্রতারণা টা কেন করলি? উত্তর দে এমন সময় সায়েম ভাই কল করলে আমি কল টা কেটে দিয়ে টেক্সট করে দিলাম “call u later,I’m busy now”. এরপর ফোনের গ্যালারি ঘেঁটে দুটো মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কিছু ছবি পেলাম। চোখ মুছে ছবিগুলো আমার ফোনে নিয়ে নিলাম। তারপর চেয়ার টেনে আবারো ফারহানের মুখোমুখি বসলাম,
– এবার বল,আমার সাথে ভালমানুষির অভিনয় করার উদ্দেশ্য টা কি ছিল? কই আমার সাথে তো কোনোদিন কোনো লুচ্চামি করিস নাই। নাকি তুই মানুষ চিনিস? কার কাছ থেকে কি আদায় করা যাবে বা পাওয়া যাবে এই জ্ঞানটুকু তোর খুব আছে,না রে? এ.সি রুমেও ফারহান দরদর করে ঘামছে আর মাথা ঝিমাতে ঝিমাতে হাতের ব্যথায় কোঁকাচ্ছে। আমি ওর চুলের মুঠি ধরে ওর মুখ উপরে তুললাম,
– বলবি না? ঠিক আছে,ফরজ কাজ টা এবার করেই ফেলি তাহলে কথাটা বলে আমি বিছানায় পড়ে থাকা রিভলভারের দিকে হাত বাড়ানোর সাথে সাথে ফারহান হাঁপাতে হাঁপাতে মুখ খুলতে শুরু করলো,
– বলছি,বলছি। তোমার বাবার টাকা দেখে তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। তুমি বলেছিলে আমাদের বিয়ের পর তোমার বাবা আমাকে ভাল একটা জব পাইয়ে দিতে পারবে। আর আমি তোমাকে খুব ভালবাসি রিতু। কিন্তু কোনো সুন্দরী মেয়ে আমার প্রতি ইন্টারেস্ট দেখালে আমি “না” করতে পারি না। ওরা তো শুধু আমার এন্টারটেইনমেন্ট,তুমি তো আমার ফারহান কথা শেষ করার আগেই আমার ডান পায়ের হাঁটু দিয়ে ওর পেটে গুঁতো বসিয়ে দিলাম। ফারহান “উুঁ” করে উঠলো।
– তোর এন্টারটেইনমেন্টের আমি ১২ টা বাজাচ্ছি,দাঁড়া।
ফারহানের মোবাইল টা হাতে নিয়ে গ্যালারির আপত্তিকর ছবিগুলো তার কথিত প্রেমিকাদের ইনবক্সে সেন্ড করে দিলাম। আর ফেসবুকে ঢুকে ওর রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করে “ম্যারিড” দিয়ে দিলাম। তারপর ফোন টা সুইচড অফ করে রাখলাম। “পানি পানি” বলে ফারহান এখনো কুঁকিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে কেউ দরজায় নক করলো। রিভলভার টা ব্যাগে ঢুকিয়ে একবার ফারহানের কে দেখে নিয়ে দরজা খুলে দিলাম আমি।
দরজায় দাঁড়িয়ে শশী বললো,
– তিনজনে হবে আপু? আর পাই নি।
– হ্যাঁ হবে। কোথায় ওরা?
– এই এদিকে আসো তোমরা।
শশীর ডাকে তিনজন হিজরা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। শশীর কাছে শুনেছি,এই গলি তে প্রতিদিন ই ওদের যাওয়া আসা থাকে,তাই শশী কে আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম আজ আসলে ওদের আমার কাছে নিয়ে আসতে। ফারহান ওদের দেখে আতংকিত হয়ে বিলাপ শুরু করে দিলো। আমি আমার ভ্যানিটিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকার একটা চকচকে নোট বের করে হিজরাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
– ওর এমন অবস্থা করবে যেন আগামী একমাস ঠিকমতো উঠে দাঁড়াতে না পারে। তোমরা চাইলে হাতের বাঁধন খুলে দিতে পারো তবে সাবধানে প্রতিউত্তরে ওদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠলো,
– কোনো চিন্তা কইরেন না আফা, ছোকড়া রে নাকানিচুবানি খাওয়াইয়া ছাড়বো। ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে ফারহানের কাছে এগিয়ে গেলাম আবার,
– আজকের এই ঘটনা ঘুণাক্ষরেও যদি কেউ জানতে পারে তাহলে আমার ফোনে যে ছবিগুলো নিলাম সেগুলো সব গার্লস গ্রুপে ভাইরাল হয়ে যাবে। তখন তোর ইমেজ আর রেপুটেশনের মায়রে বাপ করে দিবে পাবলিক। এখানে তো সব চার দেয়ালের মধ্যে হয়েছে,কিন্তু গার্লস গ্রুপে তো….। আর হ্যাঁ,তোর রুমমেট সায়েম কে বলে দিস,ওর প্রেজেন্ট গার্লফ্রেন্ড ঈশিতা আমার কাজিন হয়। ঈশিতা কে আমিই বলেছিলাম সায়েম কে প্রেমের ফাঁদে ফেলতে যেন সায়েমের মাধ্যমে ঈশিতা তোর খবরাখবর আমাকে দিতে পারে। গত তিনমাসে তোর কার্যকলাপ আমার কাছে সুবিধের ঠেকছিলো না তাই ঈশিতা কে গোয়েন্দাগিরি তে লাগিয়েছিলাম।
আমি যেমন তোর কাছে সায়েমের প্রশংসা করে সায়েমের কুকীর্তিগুলো তোর পেট থেকে বের করতাম ঠিক তেমনি ঈশিতাও সায়েমের কাছে তোর প্রশংসা করে ওর পেট থেকে তোর কুকীর্তিগুলো বের করতে সক্ষম হয়েছিল। শালা দুটোই এক গোয়ালের গরু। রাত বিরাতে ঈশিতা যখন সায়েমের সাথে কথা বলতো,পাশ থেকে তোর চুম্মাচাটি শুনতে পেতো। সায়েম কে জিজ্ঞেস করলে সে গড়গড় করে সব বলে দিতো। কোনোদিন প্রীতির সাথে,আবার কোনোদিন শায়লার সাথে,এভাবে একেকদিন একেকজনের সাথে তোর ফোনসেক্সের খবর সায়েম ই ঈশিতা কে দিয়ে দিতো। অথচ আমার সাথে কথা বলার সময় রাত ১২ টা বাজতে না বাজতেই তুই ফোন রাখার জন্য অস্থির হয়ে পড়তি। কোনো না কোনো অজুহাতে ঠিক ই ফোন রেখে দিতি। এবার বুঝবি মজা। পেছন ফিরে হিজরাদের উদ্দেশ্যে বললাম,
– এই তোমরা তোমাদের কাজ শুরু করো। আমি বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিচ্ছি। আর কাজ শেষ করে ক্লান্ত হয়ে গেলে টেবিলের উপর কেক রাখা আছে,খেয়ে নিও। যাওয়ার সময় পেছন থেকে ফারহানের আকুতি মিনতি শুনতে পাচ্ছিলাম। ড্রয়িংরুমে টিভিতে মিউজিক চ্যানেলে গান চলছিলো। ভলিউম যতটা সম্ভব বাড়িয়ে দিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি। শশী এসে আমার পাশে বসলো,
– রিতু আপু,মাথাব্যথা করছে তোমার? আমি সামনে ঝুঁকে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না সংবরণ করলাম।
– আমি বুঝতে পারছি তোমার কষ্ট টা। যাকে এতটা ভালবাসতে,তাকে এভাবে শায়েস্তা করতে তোমারও যে খারাপ লেগেছে,তা তো জানি আমি। কিন্তু তোমার সাহস আছে বলতে হবে। খেলনা পিস্তল দিয়ে এতক্ষণ ধরে খেলে চললে।
মুখের উপর থেকে হাত নামিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললাম,
– জানোয়ার টা প্রচণ্ড ভীতু স্বভাবের। আর এই সুযোগটাই আমি কাজে লাগিয়েছি। আমি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে শশীর হাতের উপর হাত রেখে বললাম,
– থ্যাংকস রে। আমি আসার আগেই তুই সব রেডি করে রেখেছিলি।
– আরে থ্যাংকস কেন বলছো! কফি খাবে?
– না। আমাকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দিবি?
শশী মাথা নাড়িয়ে ভেতরে চলে গেল। প্রায় ঘন্টাখানেক পর আমি দরজা খুলে দিলাম। আমাকে দেখে হিজরারা ফারহানের গায়ের উপর থেকে উঠে নিজেদের কাপড়চোপড় ঠিক করতে লাগলো।
– কেক টা আমরা সাথে কইরা নিয়া যাই?
– আচ্ছা।
হিজরাদের বিদায় দিয়ে সদর দরজা টা খোলা রেখে আমি আবার ড্রয়িংরুমে এসে বসলাম। একটু পর পরণের টি-শার্ট টা কোমরে বেঁধে লেংড়াতে লেংড়াতে রুম থেকে বের হয়ে সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেল ফারহান। ওর নাজেহাল অবস্থা দেখে মনে মনে খুব স্বস্তি পাচ্ছিলাম। বাসায় ফিরে ঘরে ঢুকেই ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলাম। গোসল সেরে বের হয়ে ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছিলাম,এমন সময় মা আসলেন,
– তোর চোখ এত লাল দেখাচ্ছে কেন?
– চোখে পানি দিয়েছি তাই হয়তো।
– ও। তোর বাবা কিন্তু ওদের সাথে কথা বলে বিয়ের ডেট ফিক্সড করে ফেলেছেন। আগামী মাসের ২০ তারিখ।
ভেজা টাওয়াল টা মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম,
– বারান্দায় মেলে দিও। ছেলের নাম টা যেন কি?
– হবু বরের নাম ই ভুলে গেলি! তারেক।
– হুম। ভদ্রলোক কে জানিয়ে দিও,আমি তার সাথে একবার বাইরে কোথাও বসতে চাই। মা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,
– কেন? কোনো কুমতলব নেই তো তোর?
– কুমতলবের কি আছে! যাকে বিয়ে করছি,তার সাথে একবার কথা বলে নিবো না?
– সেদিন যখন দেখতে এসেছিলো তখন তো তোদের আলাদা কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তুই ই তো রাজি হলি না।
– কারণ সেদিন আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো না। এখন বললে সমস্যা কি?
– ঠিক আছে। আমি তোর বাবার সাথে কথা বলে দেখি।
সেদিন সারাটারাত আমি ঘুমোতে পারি নি। ভুল মানুষ টা কে নিজের সবটুকু দিয়ে ভালবেসে ফেলার যন্ত্রণায় ছটফট করেছি। আমার বোকা বোকা ভালবাসার কোনো অর্থ যার জানা ছিল না,তার কাছেই নিজেকে জাহির করতে গিয়েছি বারবার। এ ধাক্কাটা সামলে উঠতে নিজেকে একটু একটু করে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হয়েছে আমার। ধাক্কা খেয়েছি,তাই বলে কি বেঁচে থাকা ভুলে যাব? যে চলে গেছে,তার প্রতি সমস্ত পিছুটান ভুলে থাকা শিখতে হবে। যে আমার আবেগ অনুভূতির বিন্দুমাত্র মূল্য দেয় নি,তার প্রতি অনুভূতিহীন হয়ে যাওয়া শিখতে হবে। নিঃসঙ্গতায় ভুগেছি অনেক। সংগী ছাড়া নিঃসঙ্গতার মুক্তি নেই। তাই বিষণ্ণ বিকেলের গরম ধোঁয়া উঠা কফির মগেও আমি সংগ খুঁজেছি। পুরোটা জীবন কাঁচ হয়ে থাকার কারণে বারবার শুধু ভেঙে চুরমার হয়েছি। কিন্তু এবার শুধু পাথর হয়ে থাকবো,চাইলেও কেউ যেন আর সহজে ভাঙতে না পারে।
পরের শুক্রবার বিকালে ধানমণ্ডির একটা রেস্টুরেন্টে ছেলের সাথে দেখা করতে গেলাম। মুখোমুখি চেয়ারে চুপচাপ বসে আছি দুজন। ৫ ফিট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষটার বেশভূষায় আভিজাত্যের কোনো ছোঁয়া নেই। গায়ের রঙ শ্যামবর্ণ,চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, মাথাভর্তি ঘন চুল, খোচা খোচা চাপদাড়ি। সব মিলিয়ে আহামরি কিছু মনে না হওয়ায় আমার পাশে তাকে কতটা মানাবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান হচ্ছিলাম আমি। তারেকের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে তিনিই পাত্রী। লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে আছেন একদম। বিরক্ত লাগছে আমার। টেবিলের উপর রাখা ম্যানুকার্ড টা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
– নিন,অর্ডার দিন।
– আপনি ই দিন। কথা না বাড়িয়ে আমি ই অর্ডারটা দিয়ে দিলাম। তারপর হালকা কেশে কথা শুরু করলাম,
– আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন? ভদ্রতাসূচক হাসি দিয়ে তারেক উত্তর দিলেন,
– কিছুটা। আসলে এভাবে আগে কখনো কোনো সুন্দরী মেয়ের কাছে ইন্টার্ভিউ দিতে আসি নি তো তাই একটু নার্ভাসনেস কাজ করছে।
– কেন? আপনি কখনো প্রেম করেন নি? এর মধ্যে ওয়েটার খাবার নিয়ে চলে এলো। চামচ দিয়ে পাস্তা নাড়াচাড়া করতে করতে তারেক উত্তর দিলেন,
– গ্রামের ছেলে আমি। বাবা-মা কে হারিয়েছি খুব ছোটবেলায়। তারপর মামা-মামীর কাছে বড় হওয়া। সারাদিন মাঠে কাজ করে সন্ধ্যেবেলা পড়তে বসতাম। মামার আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না বলে খুব হিসেব করে চলতে হত। গ্রাম থেকে এইচ.এস.সি পাশ করার পর ঢাকা ভার্সিটি তে চান্স পেয়ে যাই। তারপর ঢাকায় এসে শুরু হয় নতুন জীবনযুদ্ধ। নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেরই চালাতে হত।
৭/৮ টা টিউশনি করার পর নিজে পড়ার সময় পেতাম রাতের বেলা। খুব ক্লান্ত লাগতো তারপরও কষ্ট করে রাত জেগে পড়তাম। ক্যাম্পাসে আমার তেমন কোনো বন্ধু ছিল না। তাদের কাছে আমি ক্ষ্যাত হিসেবে গণ্য ছিলাম। কেউ আমার সাথে মিশতে চাইতো না। শুধুমাত্র ক্লাসের সবচেয়ে ভাল স্টুডেন্ট ছিলাম বলে পরীক্ষার আগে আগে কেউ কেউ খাতির জমাতে আসতো তারপর নোটস নিয়ে যেত। মেয়েদের নজরে পরি নি কোনোদিন। স্ট্রাগল করতে করতে জীবনে বিলাসিতা,ইচ্ছা,আকাঙ্ক্ষা বলে যে কিছু আছে,সেটাই ভুলে বসেছিলাম। প্রেম-ভালবাসা ব্যাপার টা তেমনভাবে কখনো স্পর্শ করে নি আমাকে। কিভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো,সারাক্ষণ শুধু এই চিন্তা করতাম। আশেপাশের চাকচিক্যতার দিকে তাকানোর সুযোগ ছিল না। আর যখন সুযোগ হয়েছে তখন মানসিক ইচ্ছা টা ছিল না। স্যরি,অনেক কথা বলে ফেললাম। আপনি খাচ্ছেন না কেন?
– হুম? হ্যাঁ এইতো খাচ্ছি।
কখন যে আমি তারেকের কথার মধ্যে ডুবে গিয়েছিলাম,টের পাই নি। খেয়াল করে দেখলাম,বেশ গুছিয়ে কথা বলতে পারেন ভদ্রলোক। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যে যার মত বাসায় চলে গেলাম। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ চা নিয়ে বাবার ঘরে গেলাম। বাবা তখন বই পড়ছিলেন। চায়ের কাপ টা বাবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বাবার পাশে গিয়ে বসলাম। বইয়ের পাতা থেকে মুখ তুলে বাবা আমায় জিজ্ঞেস করলেন,
– কিছু বলবি মা? আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। তারপর খানিকক্ষণ সময় নিয়ে জানতে চাইলাম,
– বাবা,তুমি তো চাইলে এর চেয়েও আরো অনেক ভাল পাত্র নিয়ে আসতে পারতে আমার জন্য। আরো বেশি অবস্থাসম্পন্ন,সুূদর্শন পাত্রের খোঁজ ঘটক নিয়ে এসেছিলেন। তাহলে সেসব বাদ দিয়ে এই ছেলের সাথে কেন আমার বিয়ে ঠিক করলে? না,আমি কিন্তু আপত্তি জানাচ্ছি না। তোমার সিদ্ধান্ত কে আমি সম্মান করি। আমি শুধু জানতে চাচ্ছি,এই ছেলের মধ্যে কি এমন দেখলে? ব্যাংকের জব টা ছাড়া আর কি আছে এই মানুষটার? চায়ের কাপে শেষ চুমুক টা দিয়ে আমার মুখোমুখি সোফায় বসলেন বাবা। আমার দু’হাত তার হাতের মুঠোয় বন্দি করে নিলেন,
– ছোটবেলায় তুই যখন আমার হাতের আঙুলে ভর দিয়ে ছোট ছোট পা ফেলে টুকটুক করে পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়াতিস,তখন হঠাৎ আঙুল ফসকে তুই পড়ে যেতে নিলে খপ করে আমি তোকে ধরে ফেলতাম। কোলে নিয়ে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতাম। আমি সাথে থাকলে তুই দৌঁড়ে দৌঁড়ে স্কুলের গেটের ভিতর ঢুকতিস,কারণ তুই পড়ে যেতে নিলে আমি তোকে ঠিক সামলে নিবো,এ ভরসাটুকু আমার উপর তোর ছিল। তাই আমি চাই আমার মতোই আরেকটা ভরসার হাত তোর মাথার উপর থাকুক সবসময়। যে হাত আমার অনুপস্থিতি তে ঠিক তোকে সামলে নিতে পারবে।
এই যুগে যোগ্য হাত পাওয়া সহজ, কিন্তু নির্ভরশীল হাত পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তারেকের মধ্যে আমি সেই নির্ভরতা খুঁজে পেয়েছি। সে হয়তো তোকে আমার মত বিলাসী জীবন দিতে পারবে না, কিন্তু একটা সুন্দর স্বাভাবিক জীবন দিতে পারবে। বিলাসী জীবনযাপনে অসামঞ্জস্যতা অস্বাভাবিকতা থাকে বেশি। তারেকের মত সহজ সরল,মেধাবী,পরিশ্রমী,সৎ,কর্মঠ এবং আদর্শবান ছেলে পাওয়া খুব কঠিন এখন। বাহ্যিকভাবে সে আহামরি কিছু না হলেও,আমার বিশ্বাস তুই যত ওর ভেতরে প্রবেশ করতে পারবি ততই তলিয়ে যাবি। তাছাড়া আমি ছেলের টাকা-পয়সা দেখি নি। কারণ আমার যা আছে সেসব তো তোরই হবে। তুই কি তোর উত্তর পেয়েছিস?
চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টায় আমি বাবার বুকে মুখ লুকালাম।
এরপর থেকে শুরু হল টুকটাক ফোনালাপ। তারেকের সাথে প্রায়ই আমার রাতজেগে কথা হত। সারাদিন পরিশ্রম করে রাতজেগে তিনি আমার প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সব কথা নিরলসভাবে গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। ফারহানের সাথেও আমি রাতজেগে কথা বলতাম,কিন্তু এতটা স্বস্তি পেতাম না,যতটা স্বস্তি তারেকের সাথে পাই। বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে বলে মানুষ টা আমাকে তার সম্পত্তি ভেবে নেন নি। যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে শালীনতার মধ্যে আমার সাথে মিশতেন। দিনের পর দিন এক অজানা ভালোলাগায় ডুবে যাচ্ছিলাম আমি। এর আগেও আমি ভালবেসেছি,তবে প্রেমে পড়ি নি। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে, প্রেম আমার উপর পড়ে গেছে। বাবা ঠিকই বলেছিলেন,তারেকে র যত ভেতরে আমি প্রবেশ করতে পারবো ততই আমি তলিয়ে যাব। তলিয়েই তো যাচ্ছি। অসময়ের গুণগুণ সুরে আমি শুধু তারেক কে ই খুঁজে পাই। তার স্বচ্ছতা আমাকে ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে। তার সহজ সরল অনুভূতির কাছে আমি মাথা নোয়াতে বাধ্য হই। ধীরে ধীরে আমি অনুধাবন করতে লাগলাম- অনুভূতির বিকার ঘটবেই। মানুষের ভালোলাগা,শোক,দুঃখ- সব কিছুই সময়ের সাথে বদলে যায়।
বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। একদিন বিকেলবেলা মা আমাকে তারেকের সাথে শপিং করতে পাঠালেন। প্রথমদিন তাকে দেখে আমার আহামরি কিছু মনে হয় নি। কিন্তু এবার তাকে দেখে মনে হচ্ছে, তার থেকে সুদর্শন পুরুষ পৃথিবী তে আর একটাও নেই। আসলে দেখার জন্যও একটা সুন্দর দৃষ্টি প্রয়োজন,যা আমার আগে ছিল না। শপিং শেষ করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দুজন একসাথে ফুচকা আর টং দোকানের চা খেলাম। বাড়ি ফেরার সময় খুব মন খারাপ হচ্ছিলো আমার। তাকে ছাড়তেই ইচ্ছে করছিলো না। বুঝতে পারছিলাম, মানুষ টা কে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে আমার দিনে দিনে।
আজ আমার গায়ে হলুদ। চারিদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। কত আয়োজন,কত হৈ-হুল্লোড়। কিন্তু এসব আয়োজন আমার কাছে অনর্থক মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে,এসব কিছু গোল্লায় যাক। কতক্ষণে আমি তারেক কে নিজের করে পাবো সেই অপেক্ষার প্রহর গুণছি। ফুলশয্যার রাতে জানালার দিকে মুখ করে বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুলের পাপড়িগুলোর উপর দুজন পাশাপাশি বসে আছি, আকাশে ভরা জোৎস্না। জানালার ফাঁক দিয়ে সেই জোৎস্নার আলো আমাদের গায়ে এসে ঠিকরে পড়ছে। তারেক আমার একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরে চোখে চোখ রেখে বললেন,
– আজ আমরা জোৎস্নাবিলাশ করবো। সারা গায়ে জোৎস্না মেখে পূর্ণতার খেলায় মেতে উঠবো। কেউ কাউকে এতটুকুও ছাড় দিবো না কিন্তু! উফ,কি ভয়াবহ রকমের মাদকতা সেই কণ্ঠে! কামড়ে ছিঁড়ে রক্তাক্ত করে ফেললেও নাকি হৃদয়ের রস নিংড়ানো যায় না,অথচ সামান্য পশমের গায়ে পশম লাগিয়ে চমকে দেয়ার নাম-ই ভালবাসা। তারেকের হাতের স্পর্শে আমি যেন চমকে উঠলাম। সেই রাতে তারেক আমাকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন-শুধু ছুঁয়ে দিলেই ভালবাসা হয় না,তবে ভালবেসে ছুঁয়ে দিলে চার দেয়ালের ঘরটাকেও স্বর্গ মনে হয়।