ভালোবাসার গভীরতা

ভালোবাসার গভীরতা

:- এই উঠো, আরিশাকে স্কুলে নিতে যেতে হবে। (জান্নাত)
:- উঁ… (আমি)
:- উঠো না, দেরি হয়ে যাচ্ছে, মেডামের বকা তো তুমি খাবে না, আরিশাকেই খেতে হবে।
:- কি হয়েছে? এমন করছো কেন? একটু শান্তি মতো ঘুমাতে দাও না।
:- আর কতক্ষণ ঘুমাবে ৭টা বেজে গেছে ৮টা থেকে আরিশার ক্লাস শুরু হবে, উঠো তুমি।
:- আজকে যেতে পারবো না, আমার খুব ঘুম ধরছে, আমি ঘুমাবো।
:- যেতে পারবে না?
:- নাআআআমমমম…
:- যাবে না তো…?
:- …!!
:- কি হলো উঠো?
:- ও আজকে বাসায় থাকুক, ওকেও যেতে হবে না।
:- কি বললে তুমি? আরিশা আজকে বাসায় থাকবে? তোমার এমন করারর কারণে এখন ওকে পড়তেও বসানো যায় না। উঠো! নাহলে কিন্তু ভালো হবে না?

:- …!
:- উঠবে না তুমি?
:- …!
:- আবার ঘুমিয়ে গেছ? তোমাকে কিভাবে উঠাতে হয় আমার খুব ভালো করে জানা আছে, দাড়াও?
:- উহ্,
:- উঠবে না?
:- উঠছি তো ছাড়া? আহহহ্ লাগছে,
:- লাগুক, আমার কথা শুনবে না তো, এটাই তোমার শাস্তি, এবার শুয়ে থাকো।
:- উঠতেছি তো, ছাড়ো না।
:- নাহ্, তুমি উঠো তারপর ছাড়বো।
:- উফ্, লাগছে, তোমার এই অভ্যাসটা কখনো যাবে না?
:- চলেই তো গেছে, এখন তুমি আবার ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করেছো। এখন নামো…!
:- নামতেছি তো, ছাড়ো তুমি, খুব ব্যথা লাগছে।
:- ছাড়বো, আগে তুমি নামো?
:- নামলাম, এবার তো ছাড়বে কি না?
:- কানে ধরো,
:- কি…? আহ্, ধরছি তো।
:- বলো আর কখনো এমন করবে না?
:- কেমন? উহ্, আর কখনো করবো না।
:- প্রতিদিন, আমি বলার আগেই আরিশাকে স্কুল দিয়ে আসবে?
:- আসবো, আসবো, ছাআআআআরো না।
:- ওকে, ছাড়লাম।
:- তোমার মতো এমন বউ আমি আর দেখিনি? এভাবে চিমটি কাটা তোমায় কে শিখিয়েছে? একবার ধরলে ছাড়তে চাও না।
:- আমার বর,
:- আমি কেন তোমাকে শিখাতে যাবো? তারও আমাকে ধরছো।
:- তুমি কি আমার বর নাকি?
:- তাহলে আমি তোমার কি?
:- তোমায় কেন বলব?
:- আমায় বলবে না তো কাকে বলবে?
:- কাউকে না।
:- বলো…
:- না, তোমায় বলবে যাবে কেন আমি?
:- বলবে না।
:- নাহ্,
:- ওকে, আমিও আরিশাকে স্কুলে নিচ্ছি না।
:- কি?
:- তাহলে বলো,
:- না, বলবো না।
:- ঠিক আছে বলতে হবে না।
:- বলছি তো,
:- বলো,
:- আমার বেঁচে থাকার হৃদয় স্পন্দন, আমার কলিজা।
:- তাই বুঝি,
:- হুম
:- তো এগুলো বুঝি একবারে জড়িয়ে ধরে বলতে হয়?
:- হুম হয়।
:- কেন?
:- কারণ এই জড়িয়ে ধরার মধ্যে যে ভালোবাসার গভীরতা লুকিয়ে থাকে তা বুঝা যায়।
:- ও আচ্ছা, কিন্তু ভালোবাসার গভীরতা কেমন হয়?
:- তোমার মাথার মতো হয়। পাগল কি সব প্রশ্ন করছে যেন আমি গবেষক গবেষণা করে দেখেছি।
:- সেটাই তো, তো এখন কি ছাড়া যাবে?
:- নাহ্,
:- ভালোবাসার গভীরতা এখনও বুঝা শেষ হয়নি?
:- ওকে ছেড়ে দিচ্ছি….
:- উঁহু, কোথায় যাচ্ছো?
:- আম্মু আমি রেডি…. (আরিশা)

আরিশা আসার সাথে সাথে জান্নাতকে ছেড়ে দিলাম, মেয়েটা যে ফাকনা ফাকনা কথা বলে, তখনই আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো?

:- পাপ্পা তোমরা কি করছিলে? (আরিশা)
:- কিছু না পাপ্পা? তোমার আম্মু আমাকে… উহ্.. (জান্নাত চিমটি কাটলো) আরে ও জানতে চাইছে বলতে হবে না ওকে।
:- কি বলবে? ওকে কিছু বলতে হবে না? আরিশা তুমি হোকওয়ার্কটা আরেকবার ভালো করে দেখে নাও পাপ্পা রেডি হয়ে আসছে, (জান্নাত)
:- সব ঠিক আছে তো, পাপ্পা বলো না তুমি।
:- আচ্ছা বলছি, তুমি যেমন ভয় পেলে পাপ্পাকে জড়িয়ে ধরো, তোমার আম্মুও ভয়ে পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।
:- আম্মু তুমি ভয় পেয়েছো?
:- হুম, (জান্নাত)
:- কেন? এখন তো সকাল, এখন তো ভূল থাকে না। তাহলে তুমি কেন ভয় পেয়েছো?
:- আরিশা তুমি যেমন তেলাপোকা ভয় পাও, তেমনি তোমার আম্মুও তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়েছে। এখন তুমি যাও, পাপ্পা ফ্রেশ হয়ে আসছি (আমি)
:- আচ্ছা…. (আরিশা)

জান্নাত আমাকে আবার বকার জন্য আঁটি আঁকতেছিলো তখন আমি ওর মুখটা চেপে ধরে বললাম। ‘‘আমি তোমার মত বোকা না, যে আরিশাকে বকা দিয়ে চুপ করিয়ে দিবো, ভালোবাসার গভীরতা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছি, ও বুঝেও গেছে। আমার মেয়ে না’’

:- উঁ… মিথ্যা বলে বুঝিয়ে দিছে।
:- তো সত্যিটা বললে তুমি আমাকে আস্ত রাখতে নাকি?
:- এখন যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও, আরিশার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
:- ওকেয়……!

সময় বেশি নেই তাই তাড়াতাড়ি করে রেডি হতে লাগলাম। দেরি হলে আবার জান্নাতের চিমটি খেতে হবে। জানি না কিভাবে ওর পুরোনো অভ্যাসটা আবার জেগে উঠেছে। ওর সাথে রিলেশন হওয়ার পর থেকেই চিমটি খেয়ে আসতেছি।

:- কি করছো তুমি তাড়াতাড়ি করো না।
:- এইতো আসতেছি তুমি নাস্তা রেডি করো।
:- তাড়াতাড়ি আসো। তাড়াহুড়া করে রেডি হয়ে, জান্নাত আর আরিশার সামনে গেলাম।

:- আমি রেডি (আমি)
:- হুম হা হা হা… (জান্নাত)
:- হাসছো কেন?
:- আয়নায় সামনে থেকে হেটে আসো যাও.
:- কি হয়েছে?

এ বলে তাকাতেই দেখি আমি টি-শার্টটা উল্টা পড়েছি। ওদের হাসি বন্ধ করতে একটু রাগের ভাব নিলাম।

:- পাপ্পা চলো তোমার লেট হয়ে যাচ্ছে। (আমি)
:- নাস্তা করে নাও, তারপর যাও। (জান্নাত)
:- না, নাস্তা এসে করবো।
:- কেন পাপ্পা তুমি নাস্তা করে নাও না?
:- হুম নাস্তা করে নাও, (জান্নাত)
:- বললাম তো এসে করবো।
:- আরিশা তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো পাপ্পা আসতেছে। (জান্নাত)
:- আচ্ছা, আরিশা বের হতেই জান্নাত আমার কাছে এসে কলার ধরে বলে।

:- কি হয়েছে হুঁ, রাগ করতেছো কেন? মাইর চিনো। মাইর দিয়ে বাপের নাম ভুলিয়ে দিবো।
:- তোমার কাছে কি মাইর ছাড়া আর কিছু নেই? সারাক্ষণ মাইর মাইর করো কেন?
:- তোমার মাইর দেয়াই উচিত, টি-শার্টটা উল্টা পড়েছো তুমি আর আমরা হাসলে তাতে দোষ হু, হা করো?
:- কেন?
:- তোমাকে হা করতে বলছি তো।
:- হাআআআ..

জান্নাত নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে, কিন্তু এদিক দিয়ে আরিশার স্কুলের লেট হয়ে যাচ্ছে।

:- হয়েছে, আর খাবো না, চললাম। (আমি)
:- পানি খেয়ে নাও না।
:- আচ্ছা আসি.
:- সাবধানে যেও।
:- ঠিক আছে।

পানিটুকু গেছেই বাসা থেকে বের হয়ে পড়লাম। আরিশার স্কুল যেতে লাগে ১৫ মিনিট কিন্তু আমার হাতে আছে মাত্র ৮মিনিট। তাড়াতাড়ি না যেতে পারলে আরিশাকে মিসের কাছে বকা শুনতে হবে।

:- সরি পাপ্পা আজকে লেট হয়ে গেল। (আমি)
:- ইটস ওকে পাপ্পা, আমি সব দেখেছি।
:- তাই… কি দেখেছো?
:- আমি তোমার টি-শার্টেরর কলার ধরে তারপর আমার মতো করে খাইয়ে দিলো।
:- তাই পাপ্পা..
:- হুম… কিন্তু আমার খেতে ভালো লাগে না তাও আম্মু জোর করে খাইয়ে দেয়।
:- আম্মু তোমাকে খুব ভালোবাসে তো তাই জোর করে খাইয়ে দেয়। না হলে যে আমার আরিশা আম্মুটা বড় হবে না।
:- কেন আমি তো এখন অনেক বড়, হাটতে পারি দৌড়াতে পারি, খেলতেও পারি। স্কুলের ব্যাগ কাদে নিতে পারি।
:- তাই তো, আমার আরিশা আম্মুটা তো অনেক বড়। কিন্তু তোমাকে তো পাপ্পার সমান বড় হতে হবে। না খেলে তো বড় হতে পারবে না।
:- তুমিও আম্মুর মতো কথা বলো।
:- এই যা, জ্যাম! এখন কি হবে? এমনিতে লেট হলো তার উপর জ্যাম পড়ল।
:- পাপ্পা!
:- বলো পাপ্পা।
:- আমি আজকে স্কুল যাবো না।
:- কেন? স্কুল না গেলে আম্মু বকবে তো।
:- না পাপ্পা আজকে স্কুল যাবো না।
:- আরিশা মিস তোমাকে খুব বকবে তখন তোমাকে কান্না করতে হবে। বাসায় গেলে আম্মুও বকবে।
:- লেট করে গেলে মিস আরও বেশি বকে, আম্মুকে বকলে তো তুমি আম্মুকে বকা দিবে।

কিচ্ছু করার নেই আরিশার বায়নার সাথে জ্যামও বায়নায় ধরেছে আজকে আর ছুটবে না বলে। কিন্তু এখন যদি বাসায় যাই জান্নাত আমাকে আস্ত রাখবে না। সকাল থেকে যুদ্ধ করে আমাকে ঘুম থেকে উঠালো, তারপর কতো সুন্দর খাইয়ে দিলো। আর আমি আরিশাকে নিয়ে বাসায় ঢুকলে, হাতে যেটা থাকে তা দিয়েই মার দেয়া শুরু করবে। তাই আরিশাকে নিয়ে সোজা শপিংমলে চলে গেলাম। এত্তগুলা খেলনা, পুতুল কিনে দিলাম ওকে, তারপর বাসার দিকে রওনা দিলাম একদম বরাবর আরিশার স্কুলের ছুটির সময় করে।

:- আচ্ছা আম্মু যদি পাপ্পাকে বকে তখন আম্মুকে পাপ্পা কি বলবো ? (আমি)
:- একদম সহজ, বলবে আমাকে স্কুলে দিয়ে তুমি এগুলো কিনতে গেছ?
:- আরিশা তোমাকে এসব মিথ্যা বলা কে শিখিয়েছে? (একটু রেগে বললাম)
:- নিশা, মনিকা এরাও তো মিসকে অনেক মিথ্যে কথা বলে।
:- তাই বলেও তুমিও বলবে? ওরা তো পচা তাই মিথ্যে বলে তুমি কি পচা?
:- না আমি ভালো।
:- তাহলে আর কখনো মিথ্যা বলবে না।
:- ওকেয়..
:- পাপ্পাকে প্রমিস করো।
:- প্রমিস।
:- বাসায় গিয়ে আম্মুকে কিছু বলবে না। চুপচাপ থাকবে কেমন?
:- ওকে পাপ্পা।

তারপর আর কি? মনে এক গাধা ভয় নিয়ে বাসায় আসলাম। ভাবছিলাম জান্নাত কিছু বুঝতে পারবে না। কিন্তু আরিশার হাতে খেলনা দেখে বুঝে গেছে যে আমি আরিশাকে আজ স্কুল নিয়ে যাইনি। আল্লাহ জানে আমার কপালে কি আছে আজকে? ‘‘এই যা, আমার দিকেই তো আসছে, মুখটা একবারে দৈত্যের মতো করে রেখেছে। আমাকে আজকে আস্ত গিলে খাবে’’

:- দাড়াও, পিছনের দিকে যাচ্ছো কেন? (জান্নাত)
:- …! (চুপ করে দাড়িয়ে গেলাম)
:- তুমি আজকেও আরিশাকে স্কুল নিয়ে যাওনি। তোমার কি মেয়েটাকে নিয়ে একটুও ভাবনায় নেই। এভাবে ওকে রাই দিলে তো মাথা চড়ে বসবে। এমনিতে ওকে খুব কষ্ট করে পড়াতে হয়। তার উপর তুমি ওকে সব সময় আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে রেখেছো। এরপর আর কোনোদিন যদি তুমি এমনটা করো তো আমি তোমার সাথেথাকতে পারবো না।

:- মানে…!
:- মানে টানে করো না, তুমি আরিশাকে নিয়ে না ভাবতে পারো কিন্তু আমি আরিশাকে নিয়ে ভাবি। দিন দিন ওর পড়ালেখা পিছিয়ে যাচ্ছে তাও তোমার কারণে, আমি ওকে যতই শাসন করি তুমি ততই ওকে আদর দাও।

:- সব সময় শাসন করলে হয় না। বাচ্চাদের সুন্দর করে বুঝাতে হয়।
:- আমি ওকে শাসনও করি আদরও করি। তোমার মতো সব সময় প্রশ্রয় দিয়ে চলি।
:- আজকে এমনিতে লেট হয়ে গেছে তার উপর রাস্তায় জ্যাম, সহজে ছুটছেছিলো না, আরিশাও বলছে আজকে স্কুল যাবে না। তাই তো..
:- চুপ করো.. আমার কথাই শেষ কথা, তুমি আর কোনোদিন এমন করলে আমি বাবার বাড়ি চলে যাবো ওকে নিয়ে।
:- ঠিক আছে, ঠিক আছে, এতো রাগ করতে হবে না। ঘামিয়ে গেছি দেখছো না? ঘামটা মুছে দাও। জান্নাত আমার সাথে যতটা রাগ করে তার থেকে অনেক বেশি আমার কেয়ার করে। ঘামটা মুছে দিতে বলতেই শরীর আঁচল দিয়ে কপালের ঘামগুলো মুছে দিলো। মুছা শেষ গাল ফুলিয়ে রান্না ঘরে ঘরে চলে গেল। আমিও একটু পর রান্না ঘরে গেলাম।

:- জান্নাত আজকে বিকালে একটু সাঁজগোজ করবে? (আমি) জান্নাত এমনিতেই অনেক সুন্দর, সাঁজলে আরও বেশি সুন্দর লাগে। আমার কথাটা শুনে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালো। আমিও এই প্রত্যাশায় রইলাম ‘হ্যাঁ’ শব্দটি শুনার জন্য। কিন্তু না?

:- কেন? (জান্নাত)
:- এমনিতেই. (আমি)
:- আমি এমনিতে সাঁজতে পারবো না।
:- এমনিতে না তো, তোমায় অনেকদিন সাঁজতে দেখি না তো, আজকে একটু দেখতে ইচ্ছে করছে।
:- এতো দেখা লাগবে না। এমনিতে দেখছো না? সাঁজার কি আছে?
:- এমনিতে তো দেখি কিন্তু আজকে একটু অন্যরকম দেখতে ইচ্ছে করছে যে?
:- হইচে যাও যাও.. আজকে একবারে ভালোবাসার সাগরে জোয়ার উঠে গেছে।

‘এমন গাড় ত্যাড়া বউ আমি আর কখনো দেখিনি। একটু ভালোবাসার কথা বলতে গেলেও সেটাকে ঘুরিয়ে এভারেষ্ট বানিয়ে দিবে। ধুর..! ভালো লাগে না।’’ খাওয়া দাওয়া শেষে তিনজনই রুমে এসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে টিভি দেখতেছিলাম। আরিশা টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেছে। আমারও আস্তে আস্তে চোখ লেগে আসছে, আমিও ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। প্রায় ঘুমিয়ে গেছি, একটুপরই জান্নাত উঠে গেছে। কিছু বলিনি ভাবছি হয়ত বাথরুমে যাবে। হুম যা ভাবলাম তাই হলো, বাথরুমে গেল। তারপর দেখি মুখ মুছতে মুছতে একবারে আয়নার সামনে এসে বসলো। ‘‘ওমা জান্নাত তো দেখতেছি সাঁজতে বসেছে’’ মেয়েটাও না সত্যি পারে, আমাকে বলেছে পারবে না সাঁজতে এখন দেখি সাঁজতে বসলো। যাইহোক আমিও কিছু বলছি না দেখি কি হয়। মাঝে মাঝে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে, হয়ত ঘুম ভেঙ্গে গেছে কিনা দেখছে। ‘‘উঁহু আমিও কম না, ও তাকাতেই চোখ একবারে বন্ধ করে ফেলি। কে দেখছে? আমি তো ঘুমাচ্ছি? দেখবো কিভাবে?’’ জান্নাত শাড়ি পড়তেছে, ‘‘আরিফ কুল নিজেকে শান্ত রাখ, স্থির থাকো, উঁহুঁ এখন দেখা যাবে না।’’ খুব কষ্টে নিজেকে ঠিক রাখলাম, এতক্ষণে শাড়ি পড়া শেষ হয়ত? তবুও তাকালাম না। ‘‘ওমা আমার শরীর কাঁপছে কেন? ভূমিকম্প শুরু হলো না তো?’’ না তো ভূমিকম্প তো হচ্ছে না। আমার কাধে হাতের স্পর্শ পাচ্ছি। কারণ জান্নাত হাত দিয়ে নাড়ছে। এখন ডাকছেও…

:- এই উঠো.. (জান্নাত)
:- কি….? (চোখ খুলে ওর দিকে তাকাতেই ও সোজা হয়ে দাড়িয়ে গেল)
:- কেমন লাগছে?
:- বলেছিলে না সাঁজতে পারবে না?
:- সারপ্রাইজ! শোয়া থেকে উঠে ওর দিকে যেতেই আমার বুকে হাত দিয়ে বলে…
:- উঁহুঁ ছোঁয়া যাবে না, শুধু দেখবে বলেছিলে?
:- কি?
:- জ্বি, এখন বলো কেমন লাগছে আমাকে?
:- খুব সুন্দর লাগছে আম্মু (আরিশা)

আমি বলার আগেই আরিশা বলে দিলো, আমি বলার চাঞ্জই পেলাম না। আমাকে যেহেতু জান্নাত সারপ্রাইজ দিলো (যদিও আগেই দেখে গেছি) তাহলে আমিও তো ওকে সারপ্রাইজ দেয়া দরকার।

:- আরিশাকে সুন্দর করে সাঁজাও.. আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।
:- কেন?
:- বলবো, তুমি আরিশাকে সুন্দর করে রেডি করো। আমিও রেডি হতে চলে গেলাম, রেডি হয়ে এসে..

:- হয়েছে? (আমি)
:- হুমম… এই হয়েছে? এবার বলো কি সারপ্রাইজ (জান্নাত)
:- আমরা সবাই এখন বাইরে যাবো ঘুরতে,
:- ইয়াহু, আজকে আবার ঘুরতে যাবো অনেক মজা হবে।

আই লাভ ইউ পাপ্পা, উম্মাহ্। আরিশার কান্ডটা দেখে আমি জান্নাত দু’জনই অবাক হলাম। কারণ বিয়ের আগে জান্নাতকে নিয়ে ঘুরতে যাবো বলার পর ঠিক একি ভাবে জান্নাত আমাকে কিস করেছিলো। আর আজকে আমাদের ছোট্ট আরিশা আমাকে কিস করলো। তিনজন সারাবিকাল ঘুরাঘুরি করলাম সন্ধ্যার দিকে গেলাম শপিং করবে বললো জান্নাত কিন্তু ওকে নিয়ে শপিং করতে গেলে যে সময়টা ব্যয় হয় সেই সময়ে আমি এভারেষ্ট জয় করতে পারবো।

:- কি হলো তুমি দাড়িয়ে আছো কেন? (জান্নাত)
:- আমি পারবো না তোমাদের সাথে হাটতে, তোমরা কি কি নিবে নিয়ে আসো আমি এখানে আছি।
:- আসো না পাপ্পা, আর একটুই তো?
:- না পাপ্পা, তোমার আম্মুর সাথে আমি হাটতে পারবো না। পাপ্পার পা ব্যথা হয়ে যাবে।
:- ওকে আরিশা চলো আমাদের সাথে কেউ আসতে হবে না আমরা একাই পারবো। জান্নাত আরিশাকে নিয়ে পুরা শপিংমল ঘুরতেছে, আর আমি বসে বসে ওকে নিয়েই কল্পনায় হারালাম।

:- তোর কপালে কোনো ছেলে জুটবে না? যেভাবে চিমটি কাটিস? প্রথম দিনই ভাগবে? (আনিকা)
:- ঠিক বলেছিস, ওর কপালে বয়ফ্রেন্ড নাই। (সিনথি)
:- জুটবে জুটবে, চোখের ইশারায় পটিয়ে পেলবো না। (জান্নাত)
:- হুম, পারবি ঠিক কিন্তু টিকবে না। (আনিকা)
:- ওকে তোদের দেখিয়ে দিবো।
:- ওকে আমরাও অপেক্ষায় রইলাম। (আনিকা
:- একমাসের মধ্যে দেখাবো, আর সে আমার চিমটি সহ্য করে থাকবে দেখিস।
:- ওকে ওকে দেখবো। (সিনথি)

বেশ কিছুদিন ধরে আমার চোখে একটা মেয়ে পড়তেছিলো খুবই সুন্দর, হাসলে মুখে টোল পড়ে। টোল পড়ার কারণে হাসিটা আরও বেশি সুন্দরে mরুপ নেয়। মেয়েটাতে দেখলেই ওর পিছে পিছে যেতে ইচ্ছে করে, যেতামও কিন্তু মেয়েটা কোনোদিন পিছন ফিরেও তাকায়নি। একদিন ওর মেয়েটার পিছে পিছে যাচ্ছি তারপর হঠাৎ করেই যা হলো তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না..

:- এই দাড়ান!
:- জ্বি.. আমাকে বলছেন?
:- শুনুন বাংলা সিনেমার মতো অভিনয় করতে পারবো না। প্রতিদিন পিছন পিছন আসেন কেন? ভালোবাসেন! তাহলে বলে পেলেন।
:- না মানে?
:- কি মানে মানে করছেন? যা বলার সোজাসুজি বলতে বলেছি।
:- জ্বি….
:- জ্বি কি?
:- ভালোবাসি!
:- চিমটি খেতে পারবেন?
:- মানে? কিসের চিমটি।
:- কাছে আসেন.
:- আহহহ্!
:- এইটাতে বলে চিমটি খেতে পারবেন।
:- উহ্, কেন?
:- আমাকে ভালোবাসলে প্রতিদিন চিমটি খেতে হবে পারবেন তো। না হলে আমি গেলাম। (বলেই মেয়েটা হাটা দিলো, একটু দূর যেতেই হ্যা বলে দিলাম)

:- পাররররবো! আবার আমার কাছে আসলো, চিমটি কেটে বললো।
:- গুড বয়, কাল আমাদের ভার্সিটি যেতে হবে। সকাল দশটায় আমাকে এসে নিয়ে যাবে।
:- কেন? আহহহ্….
:- আমি বলেছি যে শুনতে পাওনি।
:- ওকে আসবো। কিন্তু আপনার নামটা?
:- প্রতিদিন পিছে পিছে ঘুরো আর নামই জানো না। আমার নাম জান্নাত, এখানে থাকি, ঐ যে ওটা আমাদের বাসা, অনার্স ১ম বর্ষ। আর কিছু?
:- আমি আরিফ, গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট, ঐ যে মোড়ে আমাদের বাসা, নাম্বারটা দিবে?
:- ০১৭********, ওকে যাই কাল দেখা হচ্ছে।
:- বাই…
:- বাই..

ও যেমন সুন্দর তেমনি ওর নামটাও খুব সুন্দর জান্নাত, রাতে কল দিয়েছিলাম, ‘‘হাই, হ্যালো, কেমন আছো? বলেই রেখে দিলো’’ পরেরদিন সকালে ওদের বাসার সামনে গিয়ে কল দিলাম।

:- আমি নিচে, আসো! (আমি)
:- একমিনিট আসছি। একমিনিট পরই আসলো।
:- কখন আসছো? (জান্নাত)
:- এই তো মাত্র,
:- আচ্ছা চলো চলো।
:- হেটে যাবে নাকি?
:- ওহ্ সরি, রিক্সা ডাকো!
:- তোমার এতো তাড়াহুড়া কেন?
:- কই কিসের তাড়াহুড়া? কথা বাড়ালাম না, ওর ব্যবহার খুব একটা ভালো মনে হচ্ছিল না। তারপরও ওর সাথে ভার্সিটি গেলাম।
:- এই আনিকা দাড়া! চলো চলো! মেয়ে দুইটার কাছে নিয়ে গেল।
:- এটা আনিকা,
:- হ্যালো।
:- আর এটা সিনথি আমার ফ্রেন্ড।
:- হ্যালো।
:- দোস্ত বয়ফ্রেন্ড আরিফ, জোশ না? পারলাম তো?
:- হুম, পেরেছিস। তো আরিফ সাহেব আপনার কি চিমটি খাওয়ার অভ্যাস আছে নাকি?
:- আর তা হবে না কেন? আমার বয়ফ্রেন্ড না।
:- দেখিস, পরে যেন না পালায়।

ওদের কথা বুঝতেছিলাম না, ওদের দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে হাসি দিচ্ছিলাম। ওরা যাওয়ার পরই জান্নাতক জিজ্ঞেস করলাম কি পারলো সে?

:- ওদের যে বললে কি পারছো কি তা?
:- আরে, ওরা বলছিল আমার নাকি কখনো বয়ফ্রেন্ড হবে না। তাই একমাসের আগেই তোমাকে ওদের দেখালাম।
:- আমাকে নিয়ে বাজি! সরি, আমি পারবো না তোমার সাথে রিলেশনে থাকতে।

কথাটা বলে নিজের মতো করে হাটা শুরু করলাম, কারণ জান্নাত বান্ধবীদের সাথে জেদ করেই রিলেশনে আসছে যখন তখন রিলেশনটা শেষ হয়ে যেতে পারে তাই আমি চলে আসছিলাম।

:- আরে তুমি কোথায় যাচ্ছো? আমি সত্যি কোনো বাজি ধরিনি, ওদের শুধু দেখালাম যে, আমার একমাসের মধ্যে বয়ফ্রেন্ড হবে। আমি সত্যি তোমায় ভালোবাসি।
:- যে রিলেশন তুমি বাজি ধরে করেছো সেটা  কখনো টিকবে না।
:- উফ্ আমি বাজি ধরিনি, কেন বুঝো না তুমি? ওকে তুমি বলো আমি কি করলে বিশ্বাস করবে আমি তোমাকে ভালোবাসি?
:- আমায় এখন বিয়ে করতে পারবে?
:- পারবো।
:- ভেবে বলো?
:- বললাম তো তুমি যদি বলো এখনি তাহলে আমি এখনি বিয়ে করবো. (অনেকটা কান্নার ভাব নিয়ে) জানি মেয়েদের চোখের পানি যখন তখন চলে আসে, তারা যখন চায় তখনি বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে। কিন্তু জান্নাতের কান্না সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে না। ওর চোখ বলে দিচ্ছে আমায় কতটা ভালোবাসে।তখন আর কোনো রাহ না দেখিয়ে জান্নাতকে বললাম।

:- আমি জবের জন্য এপ্লাই করেছি জব হলেই আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
:- ঠিক আছে..

কথাটা বলা দু’মাসের মধ্যে একটা বড় প্রাইভেট কোম্পানীর জব হয়ে গেল। সাথে সাথে জান্নাতকে জানালাম।

:- আমার জব হয়ে গেছে? (আমি)
:- সত্যি?
:- হুম সত্যি… আহহহ্, কি হলো চিমটি কাটলে কেন?
:- না আমলে স্বপ্ন নাকি সত্যি তা দেখছিলাম।
:- সেটা তো নিজেকে নিজের কাটতে হয়। তুমি তো আমাকে কাটলে।
:- ও সরি… আচ্ছা তুমি আমাকে চিমটি কাটো তো।
:- কেন?
:- সত্যি কিনা দেখতে হবে না।
:- আআআআউস, এতো জোরে কাটতে হয়।
:- বেশি জোরে হয়ে গেছে, ওকে সরি।
:- না পাগল।
:- চলো বিয়ে করে ফেলি।
:- এখন?
:- হুম!
:- মাত্র তো জব হলো।
:- তাতে কি হয়েছে?
:- না, কিছু হয়নি।
:- তুমি কখন করতে চাও?
:- ২বছর পর…
:- দু’বছর কি কবরে?
:- তোমার সাথে জমিয়ে প্রেম করবো।
:- তার আগে যদি অন্য কারও হয়ে যাই?
:- গলা টিপে মেরে ফেলবো না।
:- ওরে বাবা কি বলো?
:- হুম।
:- আমাদের হয়ে গেছে, চলো বিল দিবে? (জান্নাত)

বাহ্, এক কল্পনাতেই ওদের শপিং করা শেষ। আসলে সুন্দর মুহূর্তগগুলো সব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। ওকে নিয়ে ভাবছি আর ওর শপিংও তাড়াতাড়ি হয়ে গেল। শপিং শেষেই বাইরেআসতেই, রাস্তার ওপাশে জান্নাত আইসক্রিমশপ দেখতে পেল।

:- ঐ খুব গরম লাগছে আইসক্রিম খাবো। (জান্নাত)
:- মাত্র এসি থেকে বের হলে, বলছো গরম লাগছে।
:- পাপ্পা এসি থেকে বের হলে তো গরমই লাগে। (আরিশা)
:- তাই তো… তুমি খাবে পাপ্পা? (আমি)
:- খাবো তো, তাড়াতাড়ি আনো (আরিশা)
:- আচ্ছা যাচ্ছি.
:- আমি বলায়, কতো এক্সকিউজ দেখাচ্ছে আর মেয়ে বলতেই আচ্ছা যাচ্ছি।
:- আমার পাপ্পা তো খুব ভালো। (আরিশা)
:- শুনেছো তো, কি বলেছে?
:- শুনেছি শুনেছি এখন যাও আইসক্রিম আনো।

আইসক্রিম নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলাম, তখনি একটা ভ্যানের সাথে হালকা বাড়ি খেলাম। ‘‘আরিফ’’ বলে জান্নাত খুব জোরে চিৎকার করলো। মেয়েটা মনে হয় খুব ভয় পেয়েছে। আমারও কি পোড়া কপাল মানুষ পড়ে বাস- ট্রাকের নিচে আমার পড়তেছি ভ্যানের নিচে। জান্নাতের কাছে এসে আমি কিছু বলার আগেই ও শুরু করে দিলো…

:- রাস্তা দেখে পার হতে পারো না, এখন যদি কিছু হয়ে যেতো? তোমার। আসলে কোনো কান্ড-জ্ঞান নেই। কান্ড- জ্ঞানহীন একটা মানুষ। কোথাও লাগেনি তো?
:- আরে না ভ্যানের সাথে বাড়ি খেলে কিছু হয় নাকি?
:- কিছু হয় না? হলে তখন কি হতো। (কান্না করে দিলো)
:- আরে কাঁদছো কেন? কেঁদে না, রাস্তায় মানুষ দেখছে কিন্তু।
:- ও আম্মু কেঁদো না। (আরিশা)
:- আচ্ছা চলো বাসায় চলো।

ওমা গায়ে হাত দিতে ৪৪০ বোল্টেজের মতো ছুড়ে ফেলে দিলো হাতটা। কি আর করার বাসায় গিয়ে রাগটা ভাঙ্গাতে হবে। তাই এখন আরেকটু রাগিয়ে নিই।

:- চলো পাপ্পা আমরা যাই, তোমার আম্মু রাগ করেছে, পাপ্পার সাথে।যাবে না। কথাটা বলতেই, রেগে একবারে লাল হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো। ওকে তাহলে আমরা বাসায় যাই আপনারাও রেষ্ট নেন। টা টা।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত