টেবিলে আমি ঝিম মেরে বসে আছি। গ্লাসে পানি ঢেলে যেই এক গ্লাস পানি খাব ঠিক তখন হাফিজ ভাই বলল “ম্যাডাম আপনাকে মিসকল দিয়েছে।
হাফিজ ভাইয়ের কথা শুনে পানি খাওয়া থেকে একটু বিরতি নিয়ে হাফিজ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। হাফিজ ভাই হলো অফিসের পিয়ন। আমার সাথে উনার খাতির ভালো। আমি সবার সাথেই মিশতে পছন্দ করি। ম্যাডাম মিসকল দিয়েছে এই নয় যে আমাকে মোবাইলে কল করেছে। আসল কথা হলো আমাকে এখন ম্যাডামের রুমে যেতে হবে। এটাই মিসকল। হাফিজ ভাই এমন রসিকতা অফিসের অন্য কারো সাথে না করলেও আমার সাথে করে, এতে আমি কিছু মনে করি না। “হাফিজ ভাই ম্যাডামকে গিয়ে বলেন এখন যেতে পারব না। কাজ আছে। “এই কথা গিয়ে বলব? ম্যাডাম যদি রেগে যায়? আমি গ্লাসের পানি টুকু খেয়ে হাফিজ ভাইয়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম এখনো আমার সামনে দাড়িঁয়ে আছে। গ্লাসে পুনরায় পানি ঢেলে বললাম “আপনি যাবেন আমার সামনে থেকে? না হয় এই পানি আপনার শরীরের উপর এখন পরবে।
হাফিজ ভাই আর কিছু না বলে আমার সামনে থেকে চলে গেল। নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে আমি রেগে আছি। আমি চেয়ারটায় নরে চরে বসে পিসির দিকে মনোযোগ দিলাম। গতকালকের অফিসের কিছু কাজ একটু বাকি ছিল আমার ফোল্ডার অন করে মাইক্রোসফটে কাজ করতে লাগলাম। মিনিট দশেক না যেতেই আমার টেবিলে ঠক ঠক করে আওয়াজ বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখলাম সেই ম্যাডাম আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। অফিসের কলিগদের চোখ আমার দিকে তাক করে আছে। যেন কিছু শোনার অপেক্ষায় আছে যে আমাকে নিশ্চয় কড়া কিছু বলবে অফিসের এইম্যাডাম। আমি একটা ভাব ধরলাম যেন কিছুইজানি না। পিসিতে আবার মনোযোগ দিতেযাব অমন সময় “আপনার প্রবলেমটা কি শুনি? আমি যে আপনাকে ডাক দিয়েছিলাম ঐটা আপনার মাথায় ঢুকে নি? নিজেকে কি মনে করেন।
আমি কিছুই বললাম না। একটু চুপ করে রইলাম। টেবিল থেকে কলমটা হাতে নিয়ে কলমের কাক একবার কলমে লাগাতে লাগলাম আবার খুলতে লাগলাম। অফিসে আমার থেকে যারা উপরের লেভেলে বলতে গেলে ওদেরকে বস বলাও যেতে পারে। আমার বস মানে উনার কথা শুনতে হবে। তবে বসের সব কথা যে শুনতে হবে এমন কোন কথা নয়। যদিও আমি আমার উপরের লেভেলের কর্মকর্তার কোন কথা ফেলে দেই নি কিন্তু এই ম্যাডামের কথা গুলা আমার কেমন যেন লাগে। কন্ঠটা কেমন চিকন সুরে বেজে ওটে। তার উপর বয়সে আমার ছোট তবে অফিসে আমার উপরের লেভেলে কাজ করে। নামটাও পছন্দের রাইসিন। আমিআজো এই ম্যাডামকে দেখিনি। শুধু আমি নাঅফিসের কেউ দেখে নি। সব সময় শাড়ি পড়বে আর মুখে হিজাবের মত পড়ে থাকবে। শুধু চোখ গুলা দেখা যায়। আমি কিছু বলতে যাব ম্যাডাম মানে রাইসিন আবার বলতে লাগল “আপনি পাঁচমিনিটের মধ্যে আমার রুমে আসবেন। আপনার যতই কাজ থাকুক। ঠিক পাচঁ মিনিটের মধ্যেই আমি আপনাকে আমার রুমে দেখতে চাই।
এই কথাটা বলেই আবার নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। আমাকে কথা গুলা এমনভাবে বলল যেমন বড়রা ছোটদের শাসন করে না ঐরকম শোনা গেল। আরে এই মেয়ে নিজেকে কি মনে করে? রাইসিনকে আমি না দেখলেও ওর প্রতি আমার একটা ভাল লাগা কাজ করে বিশেষ করে ওর চোখ দুটোর টানে। হালকা কাজল দিবে চোখে। চোখ দুটোর দিকে তাকালে সত্যিই নিজের প্রতি কেমন একটা অনুভব তৈরি হয়। আমি আর কিছু না ভেবে কয়েক মিনিট পর রাইসিনের রুমে গেলাম। দেখলাম ও ওর রুমের জানলার পাশে দাড়িয়ে আছে। আমি এহেম এহেম করে কয়েকটা কাশি দিলাম। কাশির আওয়াজ শুনেই রাইসিন আমার দিকে ঘুরে ফিরে তাকায়। এর পর নিজের চেয়ারটায় দিকে এগিয়ে এসে বসে। আমিও বসলাম সামনের চেয়ারটায়। আমি বললাম “আমি অনেক ফাইল কমপ্লিট করে আপনার কাছে দিয়ে দিয়েছি। আর যে কয়েকটা বাকি আছে আশা করি কালকের মধ্যে কমপ্লিট হয়ে যাবে।
রাইসিন কোন কথাই বলল না। কেমন একটা দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। আর টেবিলের উপরে একটা গোল চিনা পাথরের মত কিছু একটা থাকে না ঐযে কাগজের উপর রাখা হয় যাতে করে ফেনের বাতাসে কাগজ উড়ে না যায় ঐটা হাতে নিয়ে টেবিলে ঘুড়াতে লাগল। তারপর বলল “আপনি দু দিন আগে আমার সাথে ঐ রকম আচরণ করলেন কেন? এবার আমি একটু চুপ হয়ে গেলাম। আসলে কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না। দু দিন আগের কথা আজ জিজ্ঞেস করছে। আসলে ঐ দিন আমি অফিস আওয়ারের লাঞ্চ টাইমে ক্যানটিনে গেলাম সিঙ্গারা খাচ্ছিলাম। একটু পর আমার চোখ গেল রাইসিনের দিকে দেখলাম আদনান সাহেবের সাথে কেমন হাসি খুশি হয়ে কথা বলছে। আর আদনান সাহেব কফি খাচ্ছিল।
আমার বিষয়টা ভাল লাগে নি। অবশ্য এইটা ঠিক রাইসিন কার সাথে কোথায় যাবে, না যাবে। কার সাথে বসে এক সাথে খাবে সেটা রাইসিনের ব্যাপার। আদনান সাহেব ও আমাদের অফিসে কাজ করে। এই খানে আমার ভাল না লাগার কারন হচ্ছে। এর আগে অনেক বার আমি রাইসিনকে আমার সাথে লাঞ্চ করার জন্যআমন্ত্রন জানাই কিন্তু আমার আমন্ত্রন গ্রহন করে নি। বাসা থেকেই নাকি টিফিন বক্স করে খাবার নিয়ে আসে আর লাঞ্চ আওয়ারের সময় অফিসে নিজের রুমেই বসে বসে খায়। নিশ্চয় আদনান সাহেব রাইসিন কে লাঞ্চে একসাথে খাওয়ার জন্য আমন্ত্রন জানিয়েছে। কিন্তু আদনান সাহেবেরটা গ্রহন করল কেন? আমার আমন্ত্রনে কি কোন ভুল ছিল? না এটা নাও হতে পারে নিশ্চয় রাইসিন আজকে বাসা থেকে খাবার আনে নি। হয়ত রাইসিন খাচ্ছিল আর আদনান সাহেব রাইসিনকে দেখে নিশ্চয় একসাথে খাওয়ার সুযোগটা মিস করে নি।
আমি আর কিছু চিন্তা না করে ক্যানটিন থেকে বের হয়ে আসলাম। লাঞ্চ আওয়ার শেষ হলে অফিসে যখন আবার কাজ শুরু হলো তখন দেখলাম আদনান সাহেব রাইসিনের রুমেযায় এর পাচঁ মিনিট পরেই রুম থেকে দুজনে একসাথে বের হয়ে কোথায় যেন গেল। মানে অফিস থেকে বের হয়ে গেল। আমার কাছে বিষয়টা কেমন জানি লাগল। অবশ্য একটু খারাপ ও লাগল। আচ্ছা ওরা কি দুজন দুজনকে পছন্দ করে? ধুর শালা এই গুলা আমি ভাবছি কেন? এই মেয়ে যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে যাবে আমার কি? কিন্তু আসলেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। অফিসে আর তেমন কাজ করার আগ্রহ হলো না। সত্য বলতে কি এই মেয়েটিকে আমার ভাল লাগে যদিও আমি রাইসিনকে দেখি নি। অফিস আওয়ার ছুটি হওয়ার ঘন্টাখানেক আগেই রাইসিন আর আদনান সাহেব আবার অফিসে ফিরে আসে। রাইসিন ওর রুমে গেলেই আমিও কিছুক্ষন ওর রুমে গিয়ে একটু চুপ করে দাড়িয়ে থেকে সরাসরি বললাম “আদনান সাহেবের সাথে এত খাতির কিসের আপনার? আমার সাথে লাঞ্চ করতে ভাল লাগে না। উনার সাথে করতে ভাল লাগে। ভালই তো চলছে।
আমার কথা গুলা শুনে রাইসিন খানিকটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আসলে আমিও নিজে বিশ্বাস করতে পারছি না কিভাবে বললাম এই গুলা। তারপর আবার বললাম “আর যেন না দেখি আপনাকে আদনান সাহেবের সাথে হাসা হাসি করতে এবং একসাথে কোথাও যেতে। রাইসিন তখনো চুপ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি এমন ভাবে কথা গুলা বললাম যেন আমি রাইসিনের খুব আপন মানুষ “কি ব্যাপার চুপ হয়ে আছেন কেন? কথা বলুন। আপনি আমার সাথে ঐদিন এমন আচরণ করলেন কেন? রাইসিনের কথা শুনে বাস্তবে ফিরলাম। আমি বললাম “ইচ্ছে হয়েছে তাই করেছি। “আপনি আমার কে? আপনার ইচ্ছে হলেই যাকে খুশি তাকে এই গুলা বলতে পারেন না। আমি কি আপনার স্ত্রী হই? আরে এই মেয়ে বলে কি? স্ত্রী? এটা নিয়ে তো আমি ভাবি নাই। আমি রাইসিনকে পছন্দ করি কিনা তা জানি না। তবে আমার ভাল লাগে। আর ভাল লাগা মানেই পছন্দ করা। আমি আর কিছু না বলে চেয়ার থেকে উঠে চলে আসলাম…
সিড়ি দিয়ে বেয়ে দুতলায় উঠে আয়নার গ্লাসটা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকেই রিতিমত অবাক হয়ে গেলাম। আমি যখন একটু অবাক হয়ে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে থাকলামসিকিউরিটি গার্ড মানে আনসার লোকটা আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো। আমি সিকিউরিটি লোকটির বুকের দিকে তাকিয়ে তার শার্টের পকেটের সাথে লাগানো ছোট্ট কার্ডটার দিকে নজর দিলাম। নাম আনিসুল ইসলাম। আমি একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “কেমন আছেন ভাই, ভাল আছেন তো? দিনকালকেমন চলছে? আমার কথাটা শুনে আনিসুল ভাই খানিক্ষন চুপ করে ছিল। কি বলবে মনে হয় ভেবে পাচ্ছে না। আসলে আমি যেভাবে কথাটা বলেছি যেন আমি আনিসুল ভাইকে আগে থেকেই চিনি। সত্য বলতে কি আমি উনাকে চিনিই না। আজি প্রথম দেখলাম। এইখানে আসছি অফিসের একটা কাজে। বলতে গেলে এটাও আমাদের কোম্পানীর দিত্বীয় শাখা। অফিসে মিটিং এ আলোচনা করার পর এমডি স্যার আমাকে ডেকে বলেন…
“সুবন সাহেব বসেন বসেন। আমি চেয়ারটায় বসলাম।
“তা কেমন চলছে অফিসের কাজ কর্ম?
“এই তো স্যার ভালই।
“আই নো।
আপনার কাজ গুলা আমার ভাল লেগেছে। আমি চাচ্ছি নেক্সট মান্তে সামনে যে প্রজেক্ট টা নিয়ে আমরা কাজ করব সেটার দায়িত্ব আপনাকে দিতে চাচ্ছি। কি পারবেন তো? আমি মনে মনে একটু খুশি হলাম। এইভাবে আমাকে দায়িত্ব দিবে আমি ভাবি নাই। “অফকোর্স। আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব। “গুড বেরি গুড। আপনার উপর আমার আস্হা আছে। আচ্ছা কফি খাবেন? আমি বুঝতে পারলাম এখন আমাকে স্যারের সামনে থেকে যেতে হবে। আসলে বড় বড় অফিসার বা বসরা ডিরেক্টলি সামনে থেকে চলে যেতে বলে না। উনারা সামনে থেকে যাওয়ার জন্য একটা ইঙ্গিত দেয়। আমি বললাম “নো স্যার। থ্যাংক্স। আসি। এইটা বলে আমি চেয়ার থেকে উঠে আসছিলাম তখন স্যার আমায় বলল “সুবন সাহেব শোনেন। “জ্বী বলুন। “আপনি এখন আমাদের অফিসের দিত্বীয় শাখায় চলে যান। সেখানে আপনাকে কি কি করতে হবে তা রাইসিন বলে দিবে। আপনি রাইসিন নামের মেয়েটার সাথে দেখা করবেন। ঐ অফিসের দায়িত্বে উনি আছে।
আর অফিসের এই কাজের জন্যই এখানে আসা। আর অবাক হলাম অফিসটা এত সুন্দর ভাবেই সাজানো হয়েছে একে বারে দেখার মত। আমি আনিসুল ভাইয়ের দিকে আবার তাকাতেই আনিসুল বলে ওঠে “আপনি কি আমাকে আগে থেকে চিনেন? “হ্যাঁ চিনি তো আপনি আনিসুল ভাই না? এবার আনিসুল ভাই আরেকটু অবাক হয়ে গেল। আসলে উনি চিন্তা করতেছে কি হচ্ছে উনার সাথে। “হ্যাঁ ভাই আমি আনিসুল। তবে আমি আপনাকে ঠিক চিনলাম না। আমি একটা হাসি দিয়ে আনিসুল ভাইয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে হাত মিলিয়ে বললাম “আমি সুবন। আমি আপনাকে চিনব না কেন? আপনাকে তো সবাই চিনে এই যে পোশাকের উপরে নাম লিখা আছে। মানুষ পরিচিত না থাকলে কি কথা বলা যায় না? এই যে আপনিও এখন আমার নাম জানলেন। “হা হা হা বুঝতে পারছি ভাই। আসলে এই রকম করে কেউ কখনো বলে নাই তো তাই।
তারপর আমি আনিসুল ভাইয়ের সাথে একটা কোলাকুলি করলাম। তখন এই অফিসের প্রত্যেকটা মানুষের চোখ আমাদের দিকে ছিল। যেন চারপাশটা একটু নিরব হয়ে গেল। আমি বললাম “রাইসিন ম্যাডাম আছেন? “হ্যাঁ আছেন। কিন্তু “কিন্তু কিছুই না। আমি এই কোম্পানীর হেড অফিস থেকে আসছি। “ও আচ্ছা। উনি রুমেই আছে। আমি রুমে গিয়েই রাইসিনের সাথে পরিচিত হলাম। তবে একটু কেমন যেন লাগলো মুখ দেখা যায় না। এই রকম অফিসে কেউ এইভাবে কাজ করে? আমি রাইসিনের কথার জবাব না দিয়েই ওর টেবিলের সামনে থেকে চলে এসে আবার নিজের টেবিলে বসলাম। আপনি আমার সাথে এই রকম আচরণ করলেন কেন? এই কথার উওর কি রাইসিন বুঝে না আমি কেন এই রকম করলাম। রাইসিনের সাথে আমার অফিসের দিত্বীয় শাখাতেই পরিচয় হয়। যত দিন ঐ প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেছি ততদিন রাইসিনের সাথেই আমার অনেকটা সময় কেটেছে।
ওর একটা জিনিস আমার বেশ ভাল লাগত সব সময় সব কাজ সাজিয়ে গুছিয়ে করে। নীট এন্ড ক্লিন একদম। চমত্কার একটা মেয়ে। আমি যখন ওর সাথে কথা বলতাম তখন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আমার মনে হতো যেন ওর চোখ দুটো কথা বলছে। এমনিতে তো মুখ দেখা যায় না। তাই ওর সাথে কথা বলতেই চোখের দিকে চোখ পরত। ওর চোখের পাপড়ি গুলা একটা ঝলক দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করত আমার। প্রায় দু মাস অফিসের প্রজেক্ট নিয়ে ওর সাথে আমার চলাফেরা হয়েছে। যখন প্রজেক্ট সাকসেসফুল হলো তখন রাইসিনকে প্রমোশন দিয়ে আমাদের হেড অফিসে নিয়ে আসা হয়। আমাকেও প্রমোশন দেওয়া হয় তবে রাইসিনের পদ থেকে একটু নিচে। এই খানে বসের প্রতি আমি নারাজ। কারন হেড অফিসে যেহেতু আমি আগে থেকেই ছিলাম সেহেতু উচ্চ পদটা আমার জন্য দিলে কি হতো। তবে এটা ভেবে খুশি হলাম যে রাইসিনকে তো আমার একদম কাছ থেকেই দেখতে পাব। ওর সাথে কথা বলতে পারব। এর চেয়ে ভাল কি হতে পারে।
রাইসিনের সাথে আমার আর কথা হয় নি। অফিস শেষে আমি বাসায় চলে আসি। রাতে ঘুমাচ্ছিলাম হঠাত্ ঠিক ভোরের দিকে শরীরটা কাপা দিয়ে উঠল। লাফিয়ে উঠলাম। আমার বিছানার পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা কেপে মেঝেতে পরে ভেঙ্গে যায়। বুঝলাম এটা ভূমিকম্প। আমি কি করব কিছুই বুঝলাম না। যখন বিপদ আসে তখন কি করব মাথায় কোন কিছু কাজ করে না। ঐযে কথায় আছে না, চোর গেলে বুদ্ধী বাড়ে। আমি বিছানা থেকে উঠে দেখি আব্বা আম্মাও সজাগ হয়ে গেছে। আম্মা বলল “সুবন খাটের নিচে ঢুক। আব্বাও কি করবে বুঝতেছে না। সিড়ি দিয়ে নামা এখন সম্ভব না। কিছু করার ওঠার আগেই ভূমিকম্পটা থেমে যায়। তারপরো আস্তে আস্তে বিল্ডিং এর নিচে নামলাম তিনজনে।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং নিচে নামার দশ পনেরো মিনিট পরে মোবাইলে কল আসে। নিচে নামার সময় মোবাইলটা সাথে করে নিয়ে নেই। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি রাইসিনের ফোন। রিসিভ করে হ্যালো বললাম “আপনি ঠিক আছেন? কিছু হয় নি তো? আপনার বাবা মা ঠিক আছে? আমি একটু চুপ করে রইলাম। রাইসিন আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছে যেন ওর সাথে আমার কিছুই হয় নি। “হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। বাবা মা ও ঠিক আছে। আপনি ঠিক আছেন তো? “যাক শুকুর আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের কিছু হয় নি। আমরাও ঠিক আছি। তেমন কিছু হয় নি। তবে রাইসিন পুরো কথাটা শেষ করে নি। যখন আমি বললাম আমার কিছু হয় নি। তখন ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মনে হচ্ছে ওর আপন লোকজনের কোন ক্ষতি হয় নি তাই একটু স্বস্হি হয়ে নিশ্বাসটা ফেলে। কিন্তু তবে কি? “তবে কি হয়েছে বলুন। হ্যালো হ্যালো হ্যালো। লাইনটা কেটে যায়। আমি বেক করলাম দেখি সুইচ অফ। রাইসিনের কিছু হয় নি তো? তবে শব্দটার মানে নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে।
আমাদের বিল্ডিং এর পাশেই একটা ছোট খালি জায়গায় আছে। মূলত এই জায়গাটার মালিক বাড়ি বানাবে বানাবে বলে আর বানাচ্ছে না। তাই জায়গাটা খালি। আর এই জায়গায় আশে পাশের সব বাড়ির লোকজন একত্রিত হয়েছে। আব্বা আম্মাকে ঐখানে রেখে বললাম আমি আসছি তোমরা এখানে থাকো। কোথাও কোন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। অবশ্য ভোর বেলায় গাড়ি পাওয়াও মুশকিল। দৌড়াতে দৌড়াতে আমি রাইসিনদের বাসার সামনে আসলাম। যখন রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে আসলাম রাস্তায় মানুষের আনোগোনা দেখলাম। একটু জিড়িয়ে জিড়িয়ে ওদের বাসার সামনে এসেই একটু হাপাতে লাগলাম কোমড়ে হাত রেখে। ঠিক একটু পর পিছন থেকে “আপনাকে এখানে আসতে বলেছে কে শুনি? আমি পিছনে ফিরে তাকালাম। ততক্ষনে আকাশটা একটু সাদা দেখাচ্ছে। কন্ঠটা খুব পরিচিত মনে হলো। আমি মেয়েটির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম।
“এই ভাবে কি দেখছেন?
আমি তারপরো চুপ করে রইলাম। এই প্রথম আমি রাইসিন দেখলাম। কি আশ্চর্য ভয়ানক মিষ্টি মেয়ে।
“আপনি সত্যি রাইসিন তো?
“কেন বিশ্বাস হচ্ছে না?
আমি কি ঘুমের ঘোরে আছি নাকি স্বপ্নে? আমি একটু রাইসিনের হাত স্পর্শ করলাম। রাইসিন কিছুই বলল না। “এই ভাবে ছুটে আসার দরকার ছিল না। আমি তো বলেছি আমার কিছু হয় নি। বাসায় যান অফিসে কথা হবে পরিশিষ্ট রাইসিনকে দেখার পর ওর চেহারাটা আমার চোখে বার বার ভেসে আসছিল। রাইসিনের ওখান থেকে এসে বাসায় নাস্তা করেই ঘন্টা তিনেক পর অফিসে আসলাম। অফিসে বসে বসে ভাবতে লাগলাম আমি যাকে দেখলাম এটা কি সত্যিই রাইসিন। আজকে সকালে যখন খোলা চুলে রাইসিনকে দেখলাম আমার জগত্ থমকে গেল। তারউপর আমি যখন ওর হাত ধরলাম তখন ও কিছুই বলে নি। তাহলে রাইসিন ও কি আমায় মনে মনে “শোনেন আজকে দুপুরে আজকে আমার সাথে লাঞ্চ করবেন। অফিসে কাজ করার ঘন্টা খানেক পরেই রাইসিন আমার সামনে এসে কথাটা বললো। আর এই কথাটা বলেই রাইসিন ওর রুমে চলে যায়। আজকে হঠাত্ রাইসিন আমার সাথে এত পরিবর্তন কেন? ক্যান্টিনে দুপুরে বসে ছিলাম। রাইসিন একটুপর এসে বলল..
“চলেন
“কোথায়?
“এই খানে না। বাহিরে লাঞ্চ করব।
“এইখানে কি হয়েছে?
“আহা চলেন তো। আমি এইখানে কিভাবে খাব? বুঝতে পারছেন না?
আমি আর কিছু না বলে উঠে পড়লাম। আসলে ঠিক এইখানে খেলে ওকে মুখের কাপড়টা খুলতে হবে। রিক্সায় যখন উঠলাম তখন রাইসিন রিক্সাওয়ালা মামাকে একটা লেকের কাছে যেতে বলে। লেকের পাশে দুজনে বসে রইলাম। আসলে কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। রাইসিন নিরবতা ভেঙ্গে বলল “ঐ দিন আদনান সাহেবের সাথে আমি যেতে চাই নি বিশ্বাস করুন। উনি যখন বলল উনাদের বিবাহে বার্ষিকিতে উনার স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দিতে চায়। প্রথম বিবাহ বার্ষিকি তাই উনি কি দিবে ভেবে পাচ্ছিল না। তাই আমার সাথে আলোচনা করেছিল। তারপর ঐদিন স্বর্নের দোকানে গিয়েছিলাম। জিনিস চয়েস করে দেওয়ার জন্য। আর আপনি আমাকে ভুল রাইসিন পুরো কথাটা শেষ করলো না। ওর চোখের কোনায় পানি জমার দৃশ্য দেখলাম।
আমি ঐদিন ঐ কথাগুলা বলাতে নিশ্চয় রাগ করে আছে আমার উপর।আচ্ছা এখন আমার কি বলা উচিত্? দেখলাম রাইসিন ওর হ্যান্ড ব্যাগ থেকে ছোট্ট টিফিন বক্স বের করলো। তারপর পানির বোতলটা বের করে আমাকে দিয়ে বলল “হাত ধুয়ে নিন। আমি বাহিরের খাবার তেমন খাই না। এই গুলা আপনার জন্যই রান্না করেছি। আপনার সাথে আমি বাহিরে কেন খেতে যাই না নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন। এখন জলদি হাত ধুয়ে নিন। আসলে এই জিনিসটা আমার মাথায় আসে নি ঐদিন তো আদনান সাহেবের সাথে রাইসিন কিছু খাচ্ছিল না। শুধু আদনানা সাহেব কফি খাচ্ছিল। আমি বললাম “আপনি খাবেন না? “না। আপনি খান। “তা কি করে হয়? ব্যাপারটা কি রকম দেখায় না? “আপনি খান। আজকে শুধু আমি আপনার খাওয়া দেখব। আমি একটু চুপ করে থেকে বললাম “এই ভাবে সারাজীবন আমাকে রেধে খাওয়াবেন?
রাইসিন কথাটা শুনে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল। নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে আমি কিসের ইঙ্গিত করেছি। মেয়েটার চোখে সত্যি সত্যি পানি চলে আসছে। আমি একটু সাহস নিয়ে চোখের জলটুকু আলতো করে মুছে দিলাম। তারপর রাইসিন যে কথাটা বলল সেটার জন্য আমি প্রশ্তুত ছিলাম না “দেখি হা করেন খাইয়ে দিচ্ছি। সত্যি বলতে কি রাইসিনকে এইভাবে সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছি আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। খাওয়া শেষে পুরো বিকেলটা রাইসিন আমার কাধে মাথা রেখে বসে ছিল। অফিসে আর লাঞ্চ করে যাওয়া হয় নি। যখন ওর মাথা আমার কাধে রাখল আমার এক অদ্ভুত ভাল লাগার অনুভূতি তৈরি হলো। প্রায় সন্ধ্যা আমি শুধু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। রাইসিন ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ যেন কথা বলছে। এমন চোখের দিকে তাকিয়ে আমি সারাটি দিন কাটিয়ে দিতে পারব।