-ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া!!!!আর কত ঘুমাবি???
-জ্বালাবি বা তো..ঘুমাতে দে…(ঘুম ঘুম কণ্ঠে)
-ঘুমাতে দিবো তাই না..সারারাত শ্রেয়ার আপুর সাথে চ্যাটিং করে এখন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস…
-অই অই,,কি বললি?(তনুর কথায় ঘুম কেটে গেছে)
-যা সত্য তাই বলছি,!!কি ভাবছিস!!আমি কিছু জানতে পারবো না।।।দাঁড়া আম্মুকে বলতেছি..আম্মুউউউউ!!!!
-তুই চুপ করবি,,,যত্তসব ফালতু কথা!!
-ভাইয়া ফালতু কথা বলছি না..আমি সত্যিই বলছি,, আম্মু কে বলে দিবো…
-অই তুই থামবি…এসব আম্মুকে বলতে নাই..বুঝিস না কেন?
-আহারে,,ভাই আমার কত বুঝে..আহা।আচ্ছা শুন আজকে আমাকে নিয়ে ফুচকা খাওয়াবি..
-আচ্ছা তুই কি আমাকে ব্লাকমেইল করতে চাচ্ছিস…
-ধরে নে তাই…
-ভালো হবে না কিন্তু…
-আম্মুউউউ
-থাম তো,,আচ্ছা যা যা বলবি তাই হবে
– ওকে,ভাইয়া,, বিকাল ৪ টায় রেডি থাকিস,,তখন বের হবো..
– ওকে..
– হুম,,,ফ্রেশ হয়ে আয় নাস্তা দিচ্ছি..
-তুই যা আসতেছি…
আমি অভ্র৷ বাকৃবি তে পড়ছি,, এতক্ষন আমার মিষ্টি বোন তনুর সাথে কথা বললাম আমি জানতাম তনু শ্রেয়ার কথা জানতে পারলে আমাকে ব্লাকমেইল করবেই।তবে আমি জানি ও এই কথাটা কখনোই আম্মুকে বলবে না।আমি আম্মুর কাছে বকা খাচ্ছি এটা ও কখনোই সহ্য করতে পারবে ন.।অতএব,আমার কোন চিন্তা নেই.।তবে তনুর এসব ছোট ছোট আবদার গুলো সত্যিই খুব ভালো লাগে।যথাসম্ভব পূরণ করার চেষ্টাই করি।এরই মধ্যে আবার খাওয়ার জন্য ডাকা শুরু করছে। খাওয়া শেষ করে ভার্সিটির পথে ছুটলাম। আগে শ্রেয়ার সাথে দেখা করতে হবে।এতক্ষনে নিশ্চয় বুঝে গেছে শ্রেয়া কে?হ্যাঁ,, শ্রেয়া আমার গফ,,তবে এর চেয়েও বড় ব্যপার হলো ও আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু, যাকে বলে বেস্ট ফ্রেন্ড।ক্যাম্পাসে পৌছেই শ্রেয়াকে খুজতে লাগলাম।বিজয় ৭১ এর সামনে থাকার কথা এখনো আসছে না..সেই ৩০ মিনিট ধরে ফোন দিয়েই যাচ্ছি আর বলছে দুই মিনিট লাগবে।সত্যিই মেয়ে জাতি পারেও বটে..
-এই শুভ্র
-এতক্ষনে আপনার আসার সময় হলো?
-না আসলে আব্বু আসছিলো ক্যাম্পাসে,তাই একটু লেট হলো আর কি?
-তা আংকেল হটাৎ করে ক্যাম্পাসে?
– না,আসবে যে সেটা আগেই বলেছিলো। আমার সাথে অনেকদিন ধরে দেখা হয় না,তাই আর কি?
-অও, আংকেল আসছে আমাকে বলবা না।আমি যাইয়া আমার হবু শশুড়ের সাথে একটু দেখা করতাম..
-আহা,, শখ কত..।
-আমার শখ একটু বেশিই..আচ্ছা চল হাঁটা শুরু করি..(আমরা যখন দেখা করি একসাথেঅনেক্ষন হাঁটাহাঁটি করি)
– হুম,চল আজকে ক্যাম্পাসের বাইরের দিকে যাই..
-আচ্ছা চল।
আমি আর স্নেহা পাশাপাশি হাঁটছি।কারো মুখে কোন কথা নাই।অবশ্য আমরা যখন একসাথে হাঁটি তখন খুব একটা কথা বলি না।।আমার কি অদ্ভুত নিয়ম।হাহাহা.. এসব কথা মনে হতেই কেমন জানি হাসি পায়. যাইহোক..তনুর ব্যপারটা শ্রেয়াকে বলা দরকার৷ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা..
-আচ্ছা শ্রেয়া,একটা কাহিনী হয়ে গেছে..
-কি?
-ভালোই বিপদে পড়ছি..
-আরে কেমনে কি হইছে?
-তনু কিভাবে জানি আমাদের ব্যপারটা জেনে গেছে..।এখন ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করছে…
-হাহাহা
-আজকে নাকি ফুচকা খাওইতে নিয়ে যেতে হবে…
-অও,আচ্ছা যাও,,একমাত্র ছোট বোন তোমার…
-এই তুমি আমাদের সাথে চল না।।বিকাল ৪ টায় রেডি থাকবা..কোন কথা না।
-আরে তোমাদের ভাই বোনের মাঝে আমি কি করবো..
-আরে তোমার হবু ননদ বলে কথা….
-হাহাহা৷.. আচ্ছা ঠিক আছে যাবো
-ওকে,তাহলে পরে তোমাকে ঠিকানাটা টেক্সট করে দিবো নি..
-আচ্ছা ঠিক আছে..অই শুনো ক্যাম্পাসে ব্যাক করা উচিত।একটু পর একটা ক্লাস আছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে চল।
শ্রেয়াকে ক্যাম্পাসে পৌছে দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।বিকেলে আবার ওদের নিয়ে বের হতে হবে।বিকেলের সময়টা হবু গিন্নি আর বোনের সাথে ভালোই কাটবে মনে হচ্ছে। বিকেলে ওদের নিয়ে ঘুরাঘুরিটা বেশ ভালোই লাগলো.।তনুর সাথে শ্রেয়ার বেশভালোই একটা সখ্যতা গড়ে উঠেছে মনেহচ্ছে।সত্যিই আমার বোনটা না সবাইকে কত সহজে আপন করে নিতে পারে।সবার সাথে কত সহজে ফ্রি হয়ে যেতে পারে।তবে আমার একটা রহস্য রয়েই গেলো,তনু শ্রেয়ার ব্যপারটা কিভাবে জানলো।
দেখতে দেখতে ক্যাম্পাস লাইফটাও শেষ হয়ে গেলো।নামের আগে কৃষিবিদলিখাটাও যুক্ত হইছে।এখন মোটামুটি ভালোপজিশনেই আছি।চাকরি নামক সোনার হরিণটাও আছে।তনুর এইচএসসি পরিক্ষাও শেষ। তনু এডমিশন কোচিং করা শুরু করে দিয়েছে। ওর স্বপ্ন ডাক্তার হবে।আমার বিশ্বাস ওর স্বপ্ন পূরণ হবে।তবে ওখন শ্রেয়াকে বিয়েটা করেই ফেলা উচিত।বয়স তো কম হলো না।এখন আবার তনুর ডাক পরলো।কে জানে এখন আবার কি বলবে।
-অই ভাইয়া
-কি হইছে?
-৫০০ টাকা দে না
-টাকা দিয়ে কি করবি?
-বই কিনতে হবে.
– আচ্ছা ঠিক আছে,,এই নে..
-ধন্যবাদ ভাইয়া.. গেলাম আমি..
-এই দাড়া দাড়া..আজকে তোর ক্লাস কয়টায় রে?
-আজকে না ক্লাসটা সন্ধ্যার পর
-কয়টা পর্যন্ত..
-৭টা থেকে ৮:৩০
-আচ্ছা,, একা আসতে পারবি তো..
-ভাইয়া আমি বাচ্চা না..আসতে পারবো..
– ওকে,,যা সাবধানে যাস..
-ঠিক আছে ভাইয়া…
তনুর ক্লাস ৮:৩০ পর্যন্ত। আজকে কেন জানি না বার বার তনুর কথা মনে হচ্ছে।এখন ৭:৫০ বাজে..।আরো ৪০ মিনিট ক্লাস আর বাসায় আসতে আরো ৩০ মিনিট,, তারমানে ও ৯ টার মাঝে বাসায় চলে আসবে..আর কাল তো তনুর জন্মদিন। তনুকে একটা সারপ্রাইজ দেয়াই যায়। তনুরকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য আমরা পরিবারের সদস্যরা মিলে একটা ছোটখাটো পার্টির ব্যবস্থা করলাম..কিন্তু কথা হলো তনু ৯টায় বাসায় আসলে ১২ পর্যন্ত ওকে কিছু জানানো যাবে না। ইতিমধ্যে ৯:২০ বেজে গেছে।এতক্ষনে তো তনুর চলে আসার কথা।কি হলো ব্যপারটা। এখনো কেন আসছে না।ওকে বরং একটা ফোন দেই।
কিন্তু ওর ফোনটাও বন্ধ দেখাচ্ছে ।এইবার সত্যিই খুব চিন্তা হচ্ছে। খুব।।দেখতে দেখতে ১০ টা বেজে গেলো কিন্তু তনুর কোন খবর নেই।আমি আর আব্বু ওর কোচিং ক্লাসে গিয়েও খোজ নিলাম। তনু নাকি ঠিক টাইমেই ক্লাস থেকে বের হইছে.।কিন্তু তনু গেলো কোথায়? কোথায় তনু।।ঘড়ির কাটা যত ঘুরছে তত টেনশন বাড়ছে।১২ টা বেজে গেছে তাও ওর কোন খবর নেই..।থানায় গিয়েও কোন লাভ হলো না..।এত রাতে বোনকে খুজে না পাওয়ার যে কি যন্ত্রণা তা বুঝানো সম্ভব না।সারাটা রাত যে কত কষ্টে কাটলো বলে বুঝানো যাবে না। সকালে একটা খবর পেয়ে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো।শহরের কোন এক ঝোপের পাশে নাকি তনুর নিথর দেহটা পাওয়া গেছে.।কে বা কারা নাকি আমার এই মিষ্টি বোনটাকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছে।এই খবরটা যে কতটা বেদনাদায়ক।।
একজন ভাইয়কে পাথর করে দেওয়ার জন্যে এই খবরটা যথেষ্টতনুর নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে ভাবছি কত না স্বপ্ন ছিলো তার।আমার লাইফের কতটা অস্তিত্ব ছিলো আমার বোন। আমাদের পরিবারের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলো তনু।আজকে জন্মদিন নিয়ে কত প্ল্যান ছিলো।কিন্তু আমাদের এই সমাজের কিছু নিষ্ঠুর মানুষের জন্য আজ তনুকে ধর্ষণের স্বীকার হয়ে প্রাণটাই দিতে হলো।জন্মদিনের দিন ওকে কবরে রেখে আসার যে কত যন্ত্রণা। আর আমাদের সমাজে তো ধর্ষকেরা খুব শান্তিতে, স্বাধীনভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।তাদের আইনের আওতায় আনা নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই।কি আজব সমাজ ব্যবস্থা….সত্ যিই আজব…
সমাপ্ত