আমি কিন্তু তোমায় চিনি নাহ

আমি কিন্তু তোমায় চিনি নাহ

—> আমি ইভা।
—> কোন ইভা?
—> ইভা নামে কয়জন কে চিনো তুমি?
—> উমম…চার জন।
—> কে তারা?
—> দুইজন আমার ফ্রেন্ড, একজন আমার কাজিন, অন্যজন ভাবী।
—> তাহলে তুমি আমাকে চিনো না?
—> নাহ।
—> আচ্ছা, আর ফোন দিবো না।

ইচ্ছে করেই না চেনার ভান করলাম ইভা’র সাথে। কেনো চিনতে যাবো আমি? মেয়ে আমাকে সেদিন যা নয় তা বলল। এমনকি থাপ্পড় দিতে পর্যন্ত ভাবেনি! ইভা’কে আমার প্রচন্ড ভাল লাগতো, এখনো লাগে কিন্তু ওর প্রতি রাগ তো সেজন্য এমনটা বলা। ইভা কে ইউনিভার্সিটিতে প্রথম দেখেই ক্রাস খেয়ে ফেলি। আমি প্রায়ই ওকে ফেসবুকে নক করে বলতাম আচ্ছা তুমি এত সুইট কেনো? ও কোনো জবাব দিতো না। কিন্তু এমনি স্বাভাবিক কথা গুলো ঠিক বলতো। শুধু ওই প্রশ্নটা’রই কোনো জবাব দিতো না।

আমার ফ্রেন্ড সার্কেলে সবাই জানে আমি ইভা কে পছন্দ করি। তাই ওরা এ বিষয় নিয়ে প্রায়ই আমাকে ক্ষেপায়। ইভা’র সাথে সরাসরি কথা বলা হয়ে ওঠে আমাদের ভার্সিটি’র একটা ফেষ্টিভালে, ও সেদিন একটি শাড়ি পড়ে এসেছিলো। ওর প্রতি আমার ভাল লাগা থেকেই আমি সেধে কথা বলতে গিয়েছিলাম। টুকটাক কথা বলছিলাম তবে বেশি সময় না। ফ্রেন্ডরা ওর সাথে কথা বলেছি বলে সেটাকে নিয়ে একটা ফাজলামো করতে শুরু করেছিল। একে একে সবাই এটা জেনে যায়। আমাদের ব্যাচে অনেক বন্ধু তো ফেসবুকে আমাকে নিয়ে পোষ্টও দিয়েছে পোষ্ট গুলো এমন ছিলো।

১। মজনু তাহলে তুই লাইলী কে পেলি। ট্রিট দিবি কবে?
২। আলভি তুই একা একা প্রোপোজ করে ফেললি!

আমি জানতাম তুই একদিন ওকে পাবি। বন্ধুদের এসব পোষ্ট আর আমাকে করা ট্যাগ ইত্যাদি আমাকে খুব কনফিউশানে ফেলে দিয়েছিল। যে এসব হচ্ছেটা কি? সবাই আমাকে নিয়ে কিসব পোষ্ট দিচ্ছে! ব্যাপার টা ভালো ভাবে বুঝতে পারলাম পরদিন ক্যাম্পাসে গিয়ে। ইভা আমাদের ব্যাচমেট সকলে’র সামনে আমাকে চড় মেরে তুচ্ছ করে অনেক কথাই বলেছে। এও বলেছে, “একটা মেয়ে ভাল ভাবে কথা বললে ভাবো সে তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছে? এতো ন্যারো মাইন্ডের কেনো তুমি?”। কথাটা এখনো কানে বাজে আমার। কিছুদিন ঘুমাতে পারিনি পর্যন্ত । ঠিকমত ক্লাসে যাইনি। ক্লাসটেষ্ট গুলোও মিস হয়েছে। ডিসিশান নিলাম আর কারো সাথে মিশবো না, নিজের মত ক্লাসে যাবো ঠিকমত স্যাডি করবো। ইভা বার বার ফোন করছে। ওর সাথে আর কথা বলবো না চিন্তা করেও কয়েব বার রিংটোন টা বাজতে রিসিভ করে বললাম।

—> কে বলছেন?
—> আমি ইভা।
—> সরি চিনিনা।
—> এমন করছো কেনো? একবার সরি বলতে চান্স দিবেনা তুমি?
—> কিসের সরি? কেনো দিবো?
—> তুমি না আমার সাথে ভাল করে কথা বলতে, এখন এমন করছো কেনো?
—> ঠিক ভাবেই বলছি।
—> আলভি এত রাগ ঠিকনা। কাউকে একটু ক্ষমা চাওয়ার চান্স দিতে হয়।
—> দেখুন আমি আপনাকে চিনিনা, এমনকি কারো সাথে মেলাতেও পারছিনা।

প্লিজ আমাকে আর ফোন দিবেন না। ফোনটা বন্ধ করে রেখে একটা ঘুম দেবো কিন্তু ইভা’র কথা গুলো বার বার মনে পড়ছে। মেয়েটা আমাকে সেদিন সবার সামনে যেভােব অপমান করলো। তাতে আমি খুব ভেঙ্গে পড়েছি। নিজের কাছেই কতটা ছোট হয়ে গেছি তা বলে বোঝাতে পারবোনা।

পরদিন ক্লাসে একটা প্রেজেন্টেশন ছিলো। সেটা ঠিকমত দিয়ে ব্যাগটা কাধে তুলে নিতেই। ফ্রেন্ডরা ঘোষনা করলো, সবাই যেন না চলে যাই কারন আজ একটা ফ্রেন্ডের বার্ড ডে, তাই সে সবাইকে ট্রিট দিবে। আমি তবুও ব্যাগটা নিয়ে বের হয়ে যাবো ফ্রেন্ডরা আসতে দিচ্ছিলো না। ভার্সিটি’র অডিটোরিয়ামে নিয়ে গেলো। আগে থেকেই সেখানে সব ব্যাচমেট উপস্থিত। আমি সবার পেছনে গিয়ে বসলাম। ইভা কে দেখতে পেলাম। প্রথমবার দেখার পর আর তাকাচ্ছিনা। ও হয়ত আমাকে খেয়াল করেছিল নয়ত না। একটু পর একটা ফ্রেন্ড সবার সামনে দাড়িয়ে বলল, “আজকে ইভা’র জন্যই সবাই এখানে উপস্থিত, ইভা কিছু বলতে চায় সবাই যেন চুপ থাকে”। আমি ওর দিকে তাকাচ্ছিলাম না। কিন্তু কথাগুলো ঠিক শুনছিলাম। “ফ্রেন্ডস আজকে সবাইকে একসাথে এখানেডাকার একটা কারন আছে। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ এখানে আসার জন্য”

কিছুক্ষন একটু থামলো, একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলতে থাকে, “আসলে আমার একটা ভুল হয়েছে অবশ্য বিশাল ভুল বলতে পারো। ওই যে বসে আছে আলভি তাকে তোমরা অনেকেই চেনো। ও খুব ভালো একটা ছেলে। ও আমার জাস্ট ফ্রেন্ড, আমরা ক্লাসমেট সে হিসেবে আমাদের কথা হয়েছে, কিন্তু সেটা নিয়ে ব্যাচে কত রকমের কথা হয়েছে, আর তাই একটা ভুল বোঝা বুঝি’র জন্য আমি ওর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। তাই আজ আমি ওর কাছে সেজন্য ক্ষমা চাইছি, তবুও ও যদি চায় আমাকে যেকোনো শাস্তি দিলে তা আমি মাথা পেতে নিতে রাজী। কিন্তু তার আগে আমাকে একটি বার ক্ষমা করে দিক কারন আমি অনেক বড় ভুল করেছি”।

দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছেড়ে, একটু শ্বাস নিয়ে বলে উঠলো “আলভি তুমি প্লিজ একটিবার আমাকে ক্ষমা করতে পারো?”। সময়টা যেন হটাৎ থমকে গেলো। ও এমন ভাবেই কথাটা বলল যেটা আমার কলিজায় গিয়ে বাধলো। অডিটোরিয়ামে উপস্থিত প্রতিটা চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই আমার উত্তর শুনতে চায়। অনেকেই ইশারায় বলছে যেন ক্ষমা করেদেই। আমি বসা থেকে উঠে দাড়ালাম। ইভা অশ্রু চোখে তাকিয়ে আছে। পা বাড়িয়ে ওর দিকে গিয়ে নিজের ব্যাগটা কাধে ঠিকমত নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। সবাই অপেক্ষা করছে এবার কি হবে, প্রত্যেকেই খুব আকর্ষন নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি এত সময় বিষন্ন হয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন কেনো যেন সব মেঘ হারিয়ে গেছে। মনের মাঝে বিন্দু মাত্রও রাগ লাগছে না ওর প্রতি। আমার চোখের দিকে তাকাতে পারছেনা ইভা। হয়ত শাস্তি মাথা পেতে নেবার জন্য চোখে চোখ মেলাতে পারছেনা। তাই বললাম “আমার দিকে তাকাও ইভা”। চোখটা মুছে তাকালো। ওর চোখে চোখ রেখেই বললাম”শাস্তি দেয়ার কিছুু নেই ইভা। তুমি ক্ষমাচেয়েছো এই অনেক”। ইভা চোখ দুটো আবার মুছলো।

-“তুমি সত্যি ক্ষমা করেছো তো?
-“হ্যা সত্যি

কথাটা বলেই একটু স্মাইল করলাম। ইভাও স্মাইল করলো। সেখানে উপস্থিত সকল ব্যাচমেটে’র মুখে হাসি দেখলাম খুব ভালো লাগলো। আমি বেড়িয়ে পড়লাম অডিটোরিয়াম থেকে। আজকে বুক ফুলিয়ে চলতে ভাল লাগছে। এখন আর কেউ ক্ষেপাবে না আমাকে। আমি আবার সবার চোখে চোখ রেখে চলতে পারবো। পরিশিষ্টঃ ঠিক রাত ১১.৪৫ মিনিটে ইভা’র নাম্বার থেকে একটা ফোন এলো। বেশি সময় রিং বাজতে নাদিয়ে রিসিভ করলাম।

—> আমি ইভা।
—> সরি চিনিনা।
—> তখন না সরি বললাম? এখন আবার কি হলো?
—> কিসের সরি? আর কে বলছেন আপনি?

একটু দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে হলো। সেজন্যই এমনটা করতে মন সায় দিলো। ইভা’র কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারলাম ও খুব অবাক হচ্ছে।

–> “কেনো ফোন দিয়েছেন?
–> “আলভি হটাৎ কি হলো? তখন সবার সামনে ক্ষমা করে দিলে তো।
–> “কখন, আর কি বলছেন এসব?
–> “এখন আমারই খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু।
–> “আশ্চর্য না চিললে জিগ্গাসা করবো না?
–> “তুমি আমাকে চিনো না? তাহলে কাকে চিনো?
–> “যাকে চেনার তাকে চিনি আপনাকে চিনিনা।

কলটা কেটে গেলো। হয়ত রাগ করেছে। এমন করলে রাগ করা টা স্বাভাবিক। দিনেই তো আমাদের সব প্রবলেম সল্ভ হয়ে গেল তবে রাতে এমন কথা শুনলে রাগ করা স্বাভাবিক। আমার মনটা আজ অনেক হ্যাপি। কতদিন পর ঠিকমত একটু হাসলাম, একটু দুষ্টুমি করলাম। এমনকি বিকেলেফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডাও দিয়েছি। ইভা আবার কল দিলো।

–> “আমাকে তুমি চিনো না তাইনা? কি অভিনয় শুরু করছো তাইনা? আমাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে? কি পেয়েছো টা কি তুমি?”
–> “না কিছু পাইনি তো, অভিনয় কেনো করবো আশ্চর্য! কে আপনি?”

সরাসরি মুখের ওপরেই মেয়েটা বলে ফেলে, “আমি তোমার ইভা, যাকে তুমি পছন্দ করো, ভালবাসো, যার সাথে কথা বলার জন্য মনটা ছটফট করে তোমার। যাকে তুমি জিগ্গেস করো সে এত কিউট কেনো” দুষ্টুমি করে বললাম “ওহ তুমি? কেমন আছো?

“এখন চিনতে পারছো তাইনা? ভালোই অভিনয় করতে পারো, প্রেম করছো কয়টা বলো তো?
“আমি প্রেমটেম করিনা”
“ওই আমাকে ভালবাসবে?
“এটা কি তুমি জিগ্গেস করছো নাকি ধমকাচ্ছো?
“ধমকাচ্ছি আমার প্রশ্নের উত্তর দাও
“আমরা নাহ জাস্ট ফ্রেন্ড তখন বললে?
“ওটা এমনি বলেছি যাতে কেউ কিছু না বোঝে। তাছাড়া সবাইকে সব জানাতে হয় না।
“তা ঠিক।
“তাহলে বলো?
“কিচ্ছু বলার নেই। তুমি কি কিছু বলবা?
“আমি তো বলবো না,

আজ বৃহস্পতিবার নাহ? কাল তো দেখা হবেনা পরশু তোমার খবর নিবো আমি। “আচ্ছা নিও। গুড নাইট ইভু। ফোনটা কেটে দিলো সে। মেয়েদের এই একটা স্বভাব আমার ভালো লাগেনা। তবে ওর ব্যাপার টা অন্য রকম। চোখটা বুজে অাছি ঘুমই আসছেনা আমার। একটু আগেই ঘুমে চোখ ভেঙ্গে আসছিলো। এখন বার বার মনে হচ্ছে পরশু আমার খবর আছে। আমি জানি ইভা আমার খবর করে ছাড়বে।

“আবার কি হলো? তখন না কেটে দিলে?
“আমি জানি তোমার ঘুম আসছেনা।
“তুমি কি করে বুঝলে???

কথাটা বলা’র সময়ই, দড়জার ওপাশে বাবার কন্ঠ শুনলাম “কিরে রাত বেরাতে কার সাথে কথা বলা হচ্ছে শুনি? রাত টা শেষ হোক, কাল তোর খবর নিয়ে ছাড়বো আমি”।

দ্রুত ফোনটা কেটে দিলাম। কোনো শব্দ করলাম না আর। ইভা কে জাস্ট একটা মেসেজ করে চুপ করে শুয়ে পড়লাম। বাবা তখনো চেচাচ্ছে। আমি জানিনা সারাদিন আমার সাথে কেনো এত চেচামেচি করে বাবা। কিন্তু মনে’র মধ্যে ভীষন ভয় কাজ করছে, অাগামী কাল বাবা আমার খবর নিয়ে ছাড়বে, আর পরশু ইভা আমার খবর নিয়ে ছাড়বে। তাহলে কি উনাদের চক্করে আমি মাঝখানে স্যান্ডউইচ হয়ে গেলাম যে সবাই আমার খবর নিতে চায়!!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত