শুভ হোক আগামীকাল

শুভ হোক আগামীকাল

অনেকদিন থেকে একটা মেয়েকে খুব কাছ থেকে দেখছি। হুটহাট কান্না করে চলে। নিয়ম নেই কোনো। ইচ্ছেমত সে কাঁদে। এইত সেদিন বরপক্ষ মেয়েটাকে দেখতে আসছিলো। যখন মেয়েটাকে বরের সামনে রাখা হলো তখন মেয়েটা নিয়ম করে কেঁদে চললো। কি আছে এই কান্নাতে। কি এমন মজা পায় মেয়েটা। এসব আমাকে কখনো ভাবায় না। তবে একটা জিনিস খুব ভালো করে বুঝতে পারলাম। মেয়েরা কষ্ট পেলে কান্না করে মনকে হালকা করে ফেলে। পক্ষান্তরে ছেলেরা। ছেলেরা মেয়েদের মত কাঁদতে পারেনা বলে কষ্টকে মনের ভিতর পুষে রাখে। আহ কী অদ্ভুদ ব্যাপার স্যাপার।

ঘরে বসে বসে সেদিন ইভান ভাইয়ের গান শুনছিলাম। আমার একটা মানুষ হইল না যে আগাগোড়া জানবে আমারে। ডাটা অন রাখা ছিলো। হঠাৎ মেসেঞ্জারে হ্যালো টোনে মেসেঞ্জার চেক করলাম। একটা ছেলে নম্বার দিয়ে বললো ভাইয়া একটু কল দিবেন প্লিজ। আপনার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে। কিছুক্ষণ পর আমি ছেলেটাকে কল দিলাম। সালাম করে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করে বলতে লাগল আসলে ভাইয়া আপনার কাছ থেকে কিছু সাজেশন চাই। তারপর বলল আমার জীবনে সুমি নামের একটা মেয়ে ছিলো। খুব পছন্দ করতাম তাকে। মেয়েটা ও ঠিক আমাকে পছন্দ করত। এতটুকু পর্যন্ত আমি আর সুমি ঠিকই ছিলাম। তার প্রত্যেকটা বাহানা আমি পূর্ণ করার চেষ্টা করতাম। আমি সব সময় তাকে হাসি খুশিতে দেখতে চাইতাম। কিন্তু এ কয়েকদিন থেকে মেয়েটা একদম ও আমার সাথে কথা বলতে চায়না। মিশতে চায়না। ফোন দিলে সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকে। আমি তথ্য নিয়ে জানতে পারলাম সে এখন আরেকটা ছেলেকে পছন্দ করে। এবং সামনের মাসে তাদের বিয়ে।

আমি কতক্ষণ চুপ হয়ে রইলাম। কীভাবে আমি তাকে সান্ত্বনা দিবো। কীভাবে একথাটা ও বলব ভুলে যাও। কাউকে খুব সহজে ভুলে যাওয়ার উপদেশ দেয়া যায়। তবে নিজের ক্ষেত্রে কেউ-ই ভুলে থাকতে পারেনা। আসলে এরকম সিচিউশনে মাথা ও কাজ করা থেকে বিরত থাকে। অবশেষে বললাম দেখ ভাই। আমরা যখন একটা বীজ বোপন করি তখন কিন্তু আমাদের জানা থাকেনা বীজ থেকে গাছ বের হবে কিনা। যখন গাছ বের হয় তখন আমাদের অজানা থাকে গাছ বড় হবে কিনা। যখন বড় হয় তখন ফল আসবে কিনা এখানেও আমাদের ডাউট হয়। বীজ থেকে গাছ হলো। গাছ ও বড় হয়ে গেলো। কিন্তু এখনো ফল দেয়না। তখন আমরা গাছের গোড়ায় পানি ঢালি। ভাবি হয়ত পানি ঢাললে ফল আসবে। কিন্তু না। তাতেও কাজ হলোনা। তখন আমরা কী করি? সার দিয়ে থাকি। তাতেও কাজ না হওয়াতে অবশেষে বড় গাছটাকে আমরা বাধ্য হয়ে কেটে ফেলি।

ঠিক তেমনি একটা মেয়েকে তুমি পছন্দ করতে ঠিক। মেয়েটার সাথে কাটানো অনেক স্মৃতি ছিলো ঠিক। তাকে নিয়ে দেখা প্রত্যেকটা স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করার ও ইচ্ছে ছিলো ঠিক। তুমি ভালোবাসার যে বীজ বোপন করেছিলে এটা থেকে গাছ হইছে। গাছ ও বড় হইছে। এখন ফল দেওয়ার একদম নিকটবর্তী জায়গায় উপনীত হয়েছে। তবে ভালোবাসার গাছে ফল ধরেনি। এখন শুধু একটা কাজ করতে পারো। গাছের গোড়ায় পানি ঢালতে পারো। মানে তাকে মানানোর চেষ্টা করতে পারো। তাতেও যদি কাজে না আসে। তাহলে গাছের গোড়ায় সার দিয়ে দেখতে পারো। মানে তার জন্য অপেক্ষা করতে পারো।

যদি এটাও ফেইল হয়। তাহলে গাছকে কেটে ফেলো। অর্থ্যাৎ তাকে ভুলে যাও। আর নতুন করে আরেকটা বীজ লাগিয়ে দেখো। কাজে আসে কিনা। যা হবার তো হয়ে গেছে এত ভেবে কি লাভ বলো। আমি জানি ছেলেটা আমার কথাগুলো তেমন গভীর ভাবে অনুধাবন করেনি। তবে ফোন রাখার আগে একটা কথা বলেছিলাম। আমরা যাকে চাই তাকে পাইনা। যাকে পাই তার মুল্য দেইনা। এটাই নিয়ম। প্রিয়মানুষগুলি চলে গেলে সান্ত্বনা দিয়ে সবাই বলে যা হবার তো হয়ে গেছে। সবকিছু ভুলে যাও। তবে যে চলে যায় সে কিন্তু ফিরে এসে বলেনা যা হবার তো হয়ে গেছে। আগের সবকিছু ভুলে গিয়ে নতুন করে শুরু করি। উভয় ভুলে যাও দেখতে লিখতে ঠিক একই। তবে একটার মধ্যে অনন্দ নিহীত অন্যটার মধ্য ব্যর্থতাত ছাপ।

সেদিন একটা মেয়ে জিজ্ঞাসা করলো ভাইয়া আপনি এতকিছু কিভাবে বুঝেন। আপনি কী কাউকে কোনোদিন ভালোবেসেছিলেন। আমি মেয়েটার কথা শুনে মৃদু হেসে বললাম ভালোবাসার মানেটা বুঝতে হলে আগে মা-বাবার ভালোবাসার দিকে তাকাতে হবে। আসলে ভালোবাসা বাসি হয়ে গেলেই ভালোবাসা বোঝা যায়না। এটা অনুভব করার জিনিস। একদম মন থেকে অনুভব করতে হয়। ভালোবাসা মানে তুমি কারোর হাত ছেড়ে দিয়েছো বলে জিতে গেছো এটা না। বা কারোর হাত পেয়েছো বলে তোমার ভালোবাসার জিত। মোটেও এরকম কিছুই না। বরং তুমি কারোর হাত ছেড়ে দিয়ে তার ভালোবাসার কাছে হার মেনেছো। বা কারোর হাত পেয়েছো মানে তাকে বোঝার জন্য কিছু সময় তুমি পেয়ে গেলে। সত্যি কথা ভালোবাসার মধ্যে প্রতিযোগিতা চলেনা। হাজারো ব্যস্ততায় প্রিয়মুখের মৃদু হাসি দেখে ভুলে যাওয়া ব্যস্ততা কি।

এটাই ভালোবাসা। হাজারো পরিশ্রমে প্রিয়জনের পাঠানো এক টুকরো খাবার খেয়ে ভুলে যাওয়া কষ্ট কি। এটাই ভালোবাসা। ভালোবাসা মন থেকে অনুভব করে দেখো। মন বলে দিবে তুমি কতটুকু পরিমাণ ভালোবাসতে পারবে। আমি আমার মা বাবার ভালোবাসা দেখেছি। একে অপরকে মানিয়ে চলতে দেখেছি।
হাজারোর সাইক্লোনে মা বাবার পাশে ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। অনুপ্রেরণা যোগায়। একে অপরকে বোঝায়। বোঝে। আমি কাছ থেকে মায়ের ভালোবাসা শিখেছি। আর বাবার ভালোবাসা অনুভব করেছি।

হাত ছেড়ে কেউ চলে গেলে ভেঙ্গে পড়া চলবেনা। এ ডায়লগ সচরাচর অনেকেই দিয়ে থাকেন। তবে বস্তুতপক্ষে কেউ-ই এই ভেঙ্গে পড়া থেকে বিরত নন। সবাই ভেঙ্গে পড়ে কেউ কম কেউ বেশি। কারোর সাথে আপনি তিনদিন ছিলেন। তার মানে কমপক্ষে ৩০০ মাসের জন্য তার সাথে কাটানো প্রত্যেকটা স্মৃতি আপনার মাথায় ঘ্যানঘ্যান করবে। কারোর সাথে আপনি যতদিনই কাটান না কেন তার কথা আপনার মনে হবেই। কোনোভাবে তাকে ভুলে থাকা সম্ভব না।

হ্যাঁ একটা জিনিস হতে পারে তার জায়গায় অন্য কাউকে বসিয়ে কষ্ট লঘব করতে পারেন। তবে ঐ মানুষটাকে নিজের ধ্যাণ থেকে সরানো প্রসিব না। আপনি ব্যস্ত থাকেন ঠিক। অবসর সময়ে সে আপনাকে বারবার প্যারা দিবে। যদি মন থেকে আপনি কাউকে ভালোবাসেন তাহলে সে আপনাকে কষ্ট দিবেই।

সত্যিকথা হলো মন থেকে কাউকে ভালোবাসতেছেন। সুতরাং কষ্ট পাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন। সে যেই হোক আপনার বউ বা প্রেমিকা। একটু কষ্ট তো আপনাকে অনুভব করতেই হবে। তবে হ্যাঁ একটা জিনিস আছে। প্রিয়জনের দেয়া সব কষ্টকে কষ্ট মনে হয়না। কিছু কষ্টতে মিষ্টি ও আছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত