ইসস অভিটা এতো নিরামিষ কেনো? ধুর! এতো সুন্দর করে সাজুগুজু করলাম একবার তাকায় ও না।আমি নির্লজ্জের মতো কতোবার ওর সামনে দিয়ে যাচ্ছি ওর একটু নজরে পড়ার জন্য। হুহ একবার তাকালে কি হয়।যাহ আর চেষ্টা করবোনা চলেই যাই। অভি আমার ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড, ও ইউ এস এ তে থাকেদু বছর হলো গিয়েছে, ভাইয়ার বিয়ে উপলক্ষে দেশে এসেছে। ওরা স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড তাই একেবারে ছোটো থেকেই আমাদের বাসায় যাতায়াত ছিলো। ওকে আমার সবসময় থেকেই ভালো লাগতো। কিন্তু কখনওই বুঝার সুযোগ দি নাই।আসলে লজ্জা আর ভয় দুইটাই একসাথে কাজ করতো। আগে তেমন একটা ফিলিংস না বুঝলেও এবার ভিষনভাবে ফিল করছি তাকে।
আমি চাইছি সেও আমাকে ভালোবাসুক, ওর প্রতি আমার ফিলিংস ভালোবাসাটা একটু বুঝুক। তাই নানা ভাবে তাকে ইমপ্রেসড করতে চেষ্টা করছিলাম। ভাইয়ার পুরো বিয়ের ফাংসান এ কতো ভাবে যে তাকে নিজের প্রতি ঝুকাতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু গাধাটা একবার তাকায়ওনা হুহহ। আজকে অভি ওর ফ্যামিলি আর আমাদের ফ্যামিলিকে ডিনার ট্রিট দিয়েছে। ভাইয়া আর আমার নতুন ভাবির উদ্দেশ্যে। অনেক সাজুগুজু করেছিলাম আজকে ভাবলাম অভি আমাকে দেখে মুগ্ধ হবে, তারপর বলবে, তাহা তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছেআমিতো চোখ ফেরাতে পারছিনা। কিন্তু ধ্যাত! গাধা হাধারামটা একবার ও তাকালোনা। নিজেকে এখন বাংলা সিনেমার সাইড নায়িকার মতো মনে হচ্ছে, সাইড নায়িকাদের যেমন পুরা মুভিতে মনমে লাড্ডু আর ফিনিসিং এ এসে মন ভেঙে যায়, আমার অবস্হাও এখন ঠিক তেমনই। শেষমেশ এই ভাঙ্গা মন নিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম।
অভি দেশে এসেছে আজকে প্রায় একমাস হতে চললো, এই একমাসে কত অভিনয় ই না করলাম ওকে পাবার জন্য কিন্তু কোনো লাভই হলোনা। ওর কাজ হলো দরকার হলে একটু আধটু কথা বলবে তাও স্ট্রেইট কাট হুহ পুরাই আনরোমান্টিক একটা, আচ্ছা আমি যে তাকে এতো ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছি, সে কি বোঝেনা? নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে? নাকি ও অন্য কাউকে পছন্দ করে, এতো হ্যান্ডসাম কিউট ছেলের তো গার্লেফ্রন্ড ও থাকতে পারে তাইনা? কান্না পাচ্ছে অনেক এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম টের পাইনি। সকালে যখন ঘুম ভাঙলো পাশের রুম থেকে অনেক কথার আওয়াজ শুনলাম।
— অভি আর কটা দিন থেকে যাওনা বাবা
— আন্টি থাকার তো ইচ্ছে ছিলো কিন্তু ছুটি শেষ হওয়াতে চলে যেতে হচ্ছে।
— ও আচ্ছা তো নেক্সট কবে আসছো বাবা?
— এখনও তো বলতে পারছিনা আন্টি
— মাঝে মাঝে এসো আমাদের কে দেখে যেও
— অবশ্যই আন্টি নিজের জন্মস্থান কে ভূলে কি থাকতে পারবো?
— হুম সেটাই
মানে কি অভি চলে যাচ্ছে? না এটা হতে পারেনা ও চলে গেলে আমি কি করবো? আমি তো ওকে অনেক ভালোবেসে ফেললাম।ওকে ছাড়া থাকবো কি করে আমি? অজান্তেই কখন যে কান্না আরম্ভ করলাম বুঝতে পারিনি। এখানে দাড়িয়ে থাকলে কারোর আর বুঝতে বাকি থাকবেনা তাই রুমে চলে এলাম।কিছুতেই চোখের পানি কন্ট্রোল করতেপারছিনা। আচ্ছা আমি এতো কেনো কষ্ট পাচ্ছি আমিও তো ওকে কখনও বলিনি ভালোবাসার কথা। একবার কি বলে দেখবো?নানা যদি সরাসরি না করে দেয় তখন তো আরো কষ্ট পাবো। মন টা খুব খারাপ কিছুই ভালোলাগেনা, আকাশ টাওমেঘলা মেঘলাএই ওয়েদারটা এমনিতে অনেক ভালোলাগে আমার। কিন্তু আজকে কেনো জানি খুব পেইন লাগছে। ছাদে এসে দাড়িয়ে আছি, বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে। ভিজতে ইচ্ছা করছে অনেকদিন ভিজা হয়নি বৃষ্টিতে। এদিকে অভির কথা ভাবতেই চোখের পানি আটকাতে পারছিনা কিছুতেই। হঠাৎ,,
— এহেম এহেম এতটা অবাক হলাম বলে বঝাতে পারবোনা।
— অভি ভাইয়া তুমি?
— হ্যা আমি
— কি ব্যাপার বৃষ্টি আসবেতো এখানে কি করছো?
— আসুক ( আজ কেনো জানি ওর সাথে ও কথাবলতে ইচ্ছা করছেনা)
— চলে আসো ঠান্ডা লেগে যাবে
— লাগলে লাগবে, তবুও ভিজবো আজকে আমি
— আমি কাল চলে যাচ্ছি, তোমাকে তো বলা হয়নি
— আমাকে বলার কি আছে?
— তাহা তুমি আমার সাথে রেগে আছো?
— না
— তাহলে এভাবে কথা বলছো কেনো?
— ……. …. ……..
— তোমাকে এমন গোমরা মুখে মানায়না
— আর কিছু বলবে?
— হ্যা অনেক কিছুই তো বলতে চাই
— মানে?
— তার আগে বলো তুমি আমার উপর এমন রেগে আছো কেনো?
— কই নাতো?
— তুমি এমন রেগে থাকলে আমি অনেক কষ্টপাবো।
— কেনো?
— ….. ….. ( নিশ্চুপ )
— কি হলো?
— চলো দুজন একসাথে বৃষ্টিতে ভিজি
— না আমি একাই ভিজবো তুমি যাও
— ইসস আমার বউটা একা ভিজবে আর আমি এতো রোমান্টিক মোমেন্ট টা মিস করি কিকরে?
— মানে কি তোমার বউ কোথায় পেলে?
— এই যে আমার সামনেই তো দাড়িয়ে
— মানে ?
— ইসস এখন ন্যাকামো হচ্ছে না? সারাক্ষণ আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য কতো চেষ্টা ই না করলে আর এখন এক্কেবারে ইনোসেন্ট লুক
— (খুব লজ্জা পেয়ে যাই)
— ওরে আমার লাজুক কুমারী টা
— তার মানে তুমি সব বুঝতে পারতে?
— অবশ্যই সব বুঝতাম আর মজা নিতাম
— ফাজিল কোথাকার নিজে তো আমাকে একটুও ভালোবাসোনা, আবার আমার কষ্ট দেখে মজা নাও হুহ
— তুমি আসলেই একটা বোকা, আমি তো তোমাকে সেই প্রথম থেকেই ভালোবাসি। তাই তুমি যখন আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য এসব করতে আমি খুব মজা পেতাম। ভেবেছিলাম তুমি হয়তো নিজ থেকেই কিছু বলবে। আমি লজ্জায় আর খুশিতে সব গুলিয়ে ,ফেলছি ওর দিকে তাকাতে পারছিনা।
— জানোকি? তুমি ই সেই যাকে ভেবে আমার সকাল হয়, যাকে ভাবতে ভাবতে ঘুমুতে যাই, আমার প্রতিটা সপ্নে যার বসবাস, ওগো মায়াবিনী তুমি আমার সারাজীবনের বৃষ্টি তে ভেজার সঙ্গি হবে কি? এবার আমার সপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরে এসো প্লিজ।
আমি যেনো সপ্ন দেখছি, সে আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে আমাকে এসব বলছে। সত্তিই অবিশ্বাস্য । যতটা চেয়েছি তার চেয়েও অনেক বেশি পেয়ে গেছি,, আমার এতো কান্না পাচ্ছে কেনো? আবেগে কেঁদে ফেলেছি আমি। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো এমন একটা মুহূর্ত কে যেনো আরো রোমান্টিক করে তুললো। সে হাত বাড়িয়ে দিতেই আমি তার বুকে ঝাপিয়ে পড়লাম।