আমি আরেক বার ভাবলাম আমার যাওয়াটা কি ঠিক হবে! প্রেমাকে প্রথম দেখেছিলাম আশুরার কারবালার দিন। আমি ভেবেছিলাম প্রেমা শিয়া! হোসেনী দালানের সামনে ঠিক কালো জামা গাঁয়ে দিয়ে মেয়েটা আশুরার দলের মিছিল যাওয়া দেখছিলো। ওর সাথে ওর কিছু বান্ধবী দেখতে পেয়েছিলাম। আমি ধরেই নিয়েছিলাম ও শিয়া জাতের। এটোটাই ভালো লেগে গিয়েছিলো যে লালবাগের একটা বন্ধুকে বলে উঠলাম মেয়েটার নাম আর নাম্বারটা জোগার করে দিতে হবে। বন্ধু আমার বল্লো,”সমস্যা নাই।আমার খালাতো বোনের বান্ধবী।ওর থেকে নিয়ে আমি তোকে দিয়ে দিবো।” আমি এক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটারো আমার দিকে লক্ষ্য করতে বেশি সময় লাগলোনা! আমাকে তাকিয়ে থাকা দেখে মেয়েটা ইশারা করে বুঝালো,কি! এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?” আমার মেয়েটার ইশারা দেখেই বুঝা হয়ে গিয়েছিলো খুব চালু মেয়ে! আমি হেসে আস্তে করে বন্ধুটাকে নিয়ে সেইখান থেকে কেটে পড়েছিলাম।
সেইদিন রাতেই সেই বন্ধুটার ফোন থেকে মেসেজ আসলো,”মামা মেয়েটার নাম প্রেমা,আর ০১৭৮******** এই নে ওর নাম্বার। কাজে লেগে যা।” আমি আর দেড়ি না করে ফোন দিয়ে বসলাম। ফোন ধরতেই খুব মলিন শুরে কানে ভেসে আসলো,”হ্যালো!” আমি বল্লাম,”আপনিকি প্রেমা?” মেয়েট বল্লো,”জ্বি আমি প্রেমা।চিনলাম না তো আপনাকে,কে আপনি?” আমি আর পরিচয় না দিয়ে একেক টা প্রশ্ন করেই যাচ্ছিলাম। এইভাবেই ওর মাঝে পরিচয়ে আগ্রহটা রেখেই না পরিচয় দিয়ে দিনকে দিন কথা বলে যাচ্ছিলাম। প্রতিদিন জেরা করতো আমার পরিচয়টা জানার জন্য।
আর আমি বলতাম তুমি ভেবো বলো। ও একেক জনের নাম বলতো। ও ভেবেই নিয়েছিলো আমি ওর কাছেরি কেউ। যতটা কথা বলে বুঝেছিলাম মেয়েটা চালু হোলেও খুব সচেতন একটা মেয়ে। কিন্তু আমাকে চেনার তাগিদে খুব আগ্রহ ওকে গ্রাস করে দিচ্ছিলো। এই আগ্রহটা ওকে গ্রাস করতে করতে এতোটাই গ্রাস করে ফেলেছিলো যে,ওকে আমার জ্বালে আটকাতে সমস্যা হলোনা। এখন আমি যেইভাবেই বলি সেইভাবেই বাজে। খুব বিশ্বাস জুগিয়ে নিয়েছিলাম ওর মাঝে। ভিতরে ভিতরে যে কতটা পরিমাণ প্রেম জমিয়ে রেখেছে আমার জন্য,তা ওর কথা শুনেই বুঝতাম। বলতে গেলে ভিতরে ভিতরে আমিও ছারখার হয়ে যাচ্ছিলাম।এমন অবেলায় পাওয়া মেয়েটাকে এতোটা দুর্বল বানিয়ে হাতপা খুঁটিয়ে আমি এখনো কি করে বসে আছি! আমি প্রেমাকে ফোন দিলাম ও বল্লো,”একটু আগেইতো ফোনটা রাখতে বল্লে!এখন কেন ফোন দিলে? তুমি এমন কেন?”
“আমি খুব খারাপ তাই না!
“হুম।
“ওকে আমার পরিচয়টাই তো এখনো জানোনি।কত ডিস্টার্ব করলাম এই সাড়ে পাঁচ মাস।যাও আর জালাবোনা। আগে বলতে না তোমাকে যেনো না ফোন দেই। যাও আর দিবোনা। “দেখো বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু! অযথা আমাকে এইসব বলে কষ্ট দিচ্ছো।আমি এখন কি এমন করলাম? আমি চুপ করে রইলাম। ইশ! প্রথম প্রথম কি ইগোটাই না দেখিয়েছে। যখন মনে হতো ওর পরিচিত কেউ হতে পারি তখনি সেই ইগোটা কমে যেতো ওর। ওকে ফাদে ফেলার জন্য হয়তো এইটাই আমার প্লাস পয়েন্ট ছিলো! আমি চুপ করে না থেকে কিছু না ভেবেই ওকে বল্লাম,”ভালবাসো আমাকে?” প্রেমা আমার কথা শুনে কিছু বল্লোনা! আমি আবার বল্লাম,”আমি কিন্তু ঠিকি সেই প্রথম যেইদিন থেকে কথা বলতেছি সেইদিন থেকেই তোমাকে ভালোবেসেই কথা বলি। না হোলে আমার এতো ঠেকা পড়ে নি যে তোমার জন্য নিজের টাকাগুলো ফোনে এইভাবে অবচয় করবো।” প্রেমা বল্লো,”আমি বুঝি নি তুমি আমাকে কি বলতে চেয়েছো ক্লিয়ার করে বলো।” আমি বল্লাম,”ভালোবাস ি খুব। ক্লিয়ার হয়েছে!” প্রেমা বল্লো,”আজ কেন বল্লে এইটা! আরো দুই মাস আগেই পাড়তে বলতে।” ও কথাটা এইরকম ভাবে বল্লো যে,খুব ক্লান্ত হয়েগিয়েছিলো শুধুমাত্র আমার মুখ থেকে এই কথাটা শোনার জন্য।
দিন সময় ঠিক হলো।আজ দেখা করবো দুইজন। আমি ঠিক ওর দেওয়া টাইম মতো লালবাগ কেল্লায় বসে রইলাম। ওর আসতে দেড়ি হচ্ছিলো। আমি জানি এই ঢাকার জ্যামে দেড়ি হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর ফোন আসলো।ও নাকি কেল্লার গেট দিয়ে ঢুকেছে। আমি গেটের সোজা বরাবরি বসে ছিলাম।ওকে দেখে চিনতে আমার বাকি রইলোনা। কিন্তু প্রেমা আমাকে খুঁজতে লাগলো। যেই আমি বল্লাম,” সোজা আসতে থাকো আমি সাদা কালারের পাঞ্জাবি পড়ে বসে আছি।” কথাটা বলেই আমি ফোনটা কেটে দিলাম। আসলে আমি বেগুনি রং এর পাঞ্জাবি পড়ে ছিলাম। একটু মিথ্যা বল্লাম।
প্রেমা ঠিক আমার সামনে এসে,আমার দিকে একবার তাকালেও আমকে চিনতে পারলো না। আমি ওর সামনে যেয়ে বল্লাম,”এসো বসি!” প্রেমা এইবার আমার দিকে খুব চমকিয়ে যেয়ে তাকালো।মুখ দিয়ে কিছু বলতে যেও বলতে পারলোনা। শুধু বল্লো,”অন্তু!” আমি বল্লাম,”হুম আমিই অন্তু।” প্রেমা আর কিছু না বলে বলে এক পা দুই পা করে সামনের দিকে আমার সাথে হেটে যেয়ে বসলো। দুইজনেই খুব চুপচাপ!প্রেমা বারবার আমার দিকে একটু একটু করে তাকাতে লাগলো। আমি বল্লাম,”কি চেনা চেনা লাগে?” ও বল্লো,”হুম!” আমি বল্লাম,”কই দেখেছো?” প্রেমা বল্লো,”সেইটাইতো ভাবতেছি।” কথাটা বলেই প্রেমা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আমি বল্লাম,”হোসেনী দালান মিছিলে দেখেছিলে।” প্রেমা একটু ভেবে বল্লো,”ও…..হ্যা হ্যা!” আমি চুপ করে রইলাম।বাদামি রং আর মেরুন কালারের ছাপার একটা শাড়ি পড়নে! আমার কথা অনুযায়ী হালকা মেকাপ দিয়েছে। খুব বেশিই সুন্দর দেখাচ্ছিলো ওকে। আমি কেন যেনো ওর দিকে তাকাতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু প্রেমা ঠিকি কেমন খামখেয়ালি ভাবে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে।
ওর হাতের সাথে আমার হাতটা যতবার ঘর্ষন হচ্ছিলো ঠিক ততবার বুকের ভিতরে কেমন যেমন যেনো শিরশিরে উঠছিলো। হঠাৎ করে প্রেমা বলে উঠলো,”তোমার জন্য এতো পাগল আমি!” আমি এইবার হেসে ওর হাতটা আস্তে করে ওর কাছ থেকে নিয়ে খুব যত্ন করে আমার হাতের উপর রেখে বল্লাম,”হুম!” প্রেমা আমার চোখের দিকে তাকালো। এক হাত দিয়ে আমার গালটা ছুঁয়ে কি যেনো ভেবে কিছুটা লজ্জা পেয়ে হাতটা চাপিয়ে নিলো। সারাটা বিকেল এমন কি সন্ধ্যা হওয়ার পর দুইজন এক সাথেই ছিলাম। প্রেমা একটাবারের জন্য বলেনি বাসায় যাবে ও! আমি নিজেই যখন বল্লাম,”রাত হয়ে যাচ্ছে তোমার যেতে হবে!” প্রেমা বল্লো,”আবার কবে দেখা হবে!” ওর কথাটা শুনে খুব মায়া লাগলো খুব। আমি বল্লাম,”এই মাসের শেষ দিকে।” আর কোনো কথা হলো না দুইজনের। ওকে রিকশা ঠিক করে দিয়ে আমিও বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
প্রেমার প্রতি এতোটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে,একটা বারের জন্যেও ওকে জিজ্ঞাস করি নি যে ও কোন ধর্মের! প্রেমা যখন হলির এক সাপ্তাহ আগে আমাকে ফোনে জিজ্ঞাস করলো,”এইবার হলিতে কই থাকবে?” আমি ওর কথা শুনে বল্লাম,”কেন বাসায় থাকবো।” প্রেমা বল্লো,”আরে বাবা বাসায়তো আমিও থাকবো। প্রতিবারতো শাঁখারিবাজার হলিতে রং খেলি। এইবার ঢাকেশ্বরী তে যাবো তোমাকে সাথে করে নিয়ে।” আমি চুপসে গেলাম ওর কথা শুনে। প্রেমা তাহলে শিয়া না! আমি খুব ভয়ে ভয়ে ওকে জিজ্ঞাস করলাম,”তুমি কি হিন্দু!” প্রেমা কিছুটা থমকে গেলো। ও কিছুই বলছিলোনা।
আমি আবার বল্লাম,”কি হলো!” প্রেমা এইবার বল্লো,”কেন প্রেমা সরকার অনেক আগেইতো বলছি। পুরো নাম শুনে বুঝো নাই?” আমি চুপ করে রইলাম। সরকারতো আমার মামার নামের শেষেও আছে। উনার নাম জামান সরকার। হিন্দুদের মধ্যেও যে সরকারটা আছে তা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আমি বল্লাম,”তুমি কি জানো আমি মুসলিম!” প্রেমা বল্লো,”হ্যা!” আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম! কি বলে এই মেয়ে! আমি কিছু না ভেবে ওকে বল্লাম,”জানার পড়েও তুমি কেন আমাকে বাধা দিলে না?” প্রেমা বল্লো,”কেন তুমি জানতে না?” আমি বল্লাম,”হোসেনী দালানে সেইদিন তোমাকে ওদের পরনের কালো ড্রেস পড়তে দেখেছি বিদায় ভেবে নিয়েছিলাম তুমি শিয়া হবে!” প্রেমা কিছু বল্লোনা আর। দুইজন বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আমি বল্লাম,”ভালো লাগতেছে না পরে কথা বলি।”
সাত দিন কেটে গেলো।আমি একটা দিনো ওকে ফোন দেই নি। প্রথম তিনদিন প্রেমা ফোন দিলেও আমি নিজ থেকে ওকে কিছুই বলতে পারিনি। ও হিন্দু এতে যে আমার সমস্যা তা না! বংশের ছোটো ছেলে আমি। হ্যা আমার পছন্দের গুরুত্ব আমার ফ্যামিলি দিবে। তবে আমি নিজে মানলেও তারা কি হিন্দু ধর্মের মেয়েকে তাদের পুত্র বধূ হিসাবে মেনে নিবে! এমনিতেই বাবা হজ্জ্ব করে আসার পর থেকে ঘরের সবাইকে চাপের উপর রাখে। কেউ তার উপর কথা বলার সাহস পায়না। আমার ভিতরে যে কি পরিমান যন্ত্রণা হচ্ছে তা শুধু আমি নিজেই বুঝতে পারতেছি। সাতটা দিন ধরে আর ওর রংতামাশা গুলো উপভোগ করতে পারিনা।
ওর মিষ্টি কথাগুলো শুনতে পারি না। যাও তিন দিন কথা হয়েছে।এখন তো পুরো চারদিন কোনো যোগাযোগি নাই। মেয়েটার মনে যে কি পরিমান মেঘ জমে আছে তা আমি ঠিকি বুঝতে পেরতেছি। যে মেয়ে একদিন কথা না বলে থাকতে পারেনা। আজ সে চারদিন ধরে কোনো কথা বলেনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে কথা গুলো ভাবছি। আমি কি করবো।প্রেমাকে তো ছেড়ে থাকার জন্য আমি ওকে ভালবাসি নি। চুপ করে বসে রইলাম। বাবা দুইবার ডাক দিয়ে দিছে নাস্তা করার জন্য। আমি আর বেশি দেড়ি না করে খেতে গেলাম। নাস্তা নিয়ে বসার সাথে সাথেই বাবা এসে বল্লো,”যা শুরু করছো এইগুলা বাদ দাও।রাত ভরে দেখি কম্পিউটারে বসে বসে কি সব করো। এইগুলো করে কি প্রতিষ্ঠিত হতে পারবা? পড়াশোনায় মনোযোগ দাও। ভালো চাকুরী করবা।দেখছো তোমার বড় ভাই কই চলে গেছে।”
আমি বল্লাম,”বাবা আমি এইগুলা পার্ট টাইম করতেছি।” বাবা বল্লো,”দরকার কি?পড়াশোনার ক্ষতি করার। টাকা কি আমি দিতে পারবোনা!” আমি কিছু বল্লাম না বাবা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বল্লো,”নামাজটা ধইরো।আর পড়াশোনাটা ভালো মতো শেষ করো।” কথাটা বলেই বাবা চলে গেলো। আমি খাওয়া শেষে অনলাইনে ঢুকে দেখলাম প্রেমা অনলাইনে নেই। খুব মনে পরছিলো ওর কথা। কি করবো আমি! ফ্যামিলি যেইটা মেনে নিতে না পারবে সেইখানে সময় দেওয়াটাকি কোনো কাজে লাগবে। অযথাই পরে আরো কষ্ট বাড়বে। কিন্তু এখন যে মোটেও আমি থাকতে পারতেছিনা। বার বার ওর কথা মনে পড়তেছে। কি করবো আমি! আগে জানলে তো আর এতো গভীরে চলে যেতাম না! আমি চুপ করে রইলাম।
বাসা থেকে বের হয়ে সোজা সূত্রাপুর চলে আসলাম। এইখানে এসেও নিজের ফ্যামিলির কথা চিন্তা করলাম।আমি ঠিক করতেছি! অনিশ্চিত জেনেও আগে বাড়াটা কি আমার ঠিক হবে। আমি আরেক বার ভাবলাম আমার যাওয়াটা কি ঠিক হবে! কিন্তু আমার আবেগের কাছে বিবেকটা হার মেনে গেলো। যা হওয়ার হবে।প্রেমাকে ছাড়া যাবেইনা। ওর মাঝেতো আমি ধর্ম দেখে ভালোবাসি নি! কথাটা ভেবেই আমি ওর বাড়ির সামনে যেয়ে ওকে ফোন দিলাম। রং খেলায় প্রচুর আওয়াজ হচ্ছিলো ওর বাড়ির সামনে। বেশ কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর প্রেমা ফোনটা ধরতেই আমি বল্লাম,”ছাদে আসো তোমাদের।
আমি তোমাদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি।”কথাটা বলার পর প্রেমা যেনো কিছুই বল্লোনা। এক মিনিটো হয়নি ওদের বাড়ির ছাদের দিকে তাকাতেই দেখি সাদা রঙ্গের কামিজ পড়নে ও দাঁড়িয়ে আছে। ভালো করেই বুঝা যাচ্ছিলো দৌড়িয়ে এসেছে ও। আমি ফোনের মাউথের দিকে মুখটা নিয়ে বল্লাম,”ঢাকেশ্বরীতে বলে যাবে কই চলো!” আমার কথা শুনে ও যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলোনা। প্রেমা চুপ করেই রইলো। আমি আবার বল্লাম,”চারদিন খুব কষ্টে ছিলাম। অনেক ভাবছি তোমাকে ছেড়ে থাকার জন্য।কিন্তু হার মেনে গেলাম হবেনা তোমাক ছেড়ে থাকা। প্লিজ বড্ড ভুল করে ফেলছি মাফ করে দিও।” কথাটা বলেই আমি কান ধরে যেই ওকে দেখালাম। ও আর সেইখানে না দাঁড়িয়ে চলে গেলো।
প্রায় দশ মিনিট পর প্রেমা নেমে আসলো। আমি ওকে দেখেই আগে ওদের এলাকা থেকে বের হয়ে রিকশা ঠিক করে বসার পর ও নিজেও এসে বসলো। গলা থেকে উর্ণাটা খুলে পুরো শরীরে লেপ্টে নিয়ে আমার দিকে তাকালো। চোখ জোড়া কিছুটা ফুলে আছে। অন্য কেউ হোলে হয়তো প্রচুর পরিমাণ রাগ দেখাতো। কিন্তু ওর চোখে মুখে আমি রাগের কোনো আভা দেখতে পাইনি। খুব যে বিশ্বাস করে সেইটাই আমি বার বার খুজে পাচ্ছিলাম।আমি আলতো করে ওর বাম চোখটা ছুতেই ও চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেল্লো। আমি বল্লাম,”রং খেলোনি!” প্রেমা মাথা ঝাকিয়ে না করলো।
আমি ওকে আমার বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিতেই ও নিজেও আমার সাথে সাই দিয়ে আমার সাথে ঘেঁষে বসলো। খেয়াল করলাম তৎক্ষণাৎ ওর চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এসেছিলো। নিজেকে ও সামলে নিয়ে বল্লো,”ফ্যামিলির জন্য এমনটা করেছিলে তাই না?” আমি বল্লাম,”হুম!” প্রেমা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। খুব মায়াবী লাগছিলো ওকে। ইচ্ছে করছিলো,আরো কাছে টেনে নেই ওকে। কিন্তু সম্ভব হচ্ছিলো না। প্রেমা আবার বল্লো,”আমি কিন্তু তোমার মতো ভাবতে পারিনি!” কেন যেনো ওর কথাটা শুনে নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হচ্ছিলো। আমি প্রেমাকে বল্লাম,”প্লিজ এই নিয়ে কিছু বলোনা। স্বপ্ন ভেবে গত এক সাপ্তাহের কথা ভুলে যাও। আমি আর দ্বিতীয় বার এমন করছিনা। বিশ্বাস রাখতে পারো।” প্রেমা এইবার চোখটা মুছে একটু হেসে আমার বুকে হেলান দিয়ে চুপ করে রইলো।
ঢাকেশ্বরী মন্দীরের সামনে আসতেই রিকশা থেকে নেমে সোজা মন্দীরের ভিতর ঢুকলাম। প্রেমা আমার হাতটা শক্ত করে ধরেই ছিলো। রঙ্গের থালা থেকে আমি কিছু পরিমান রং হাতে নিয়ে ওর গালে লাগিয়ে দিয়ে বল্লাম,”হ্যাপি হলি!” প্রেমার চোখ জোড়া আবারো পানি দিয়ে বড়ে যাচ্ছিলো আমি ওকে বল্লাম,”প্লিজ কান্না করোনা। মানুষ দেখলে আমার কপালে মাইরের অভাব হবেনা।”
প্রেমা এইবার হেসে দিয়ে ও নিজেও থালা থেকে রং নিয়ে চোখ বন্ধ করে আমার গালে রং লাগিয়ে দিতে লাগলো। দুইজন কিছুক্ষণ সেইখানে থাকার পর প্রেমা আমাকে বলে উঠলো,”চলো অন্য কোথাও যাই। জানি আজ এইখানে এসেছো শুধু মাত্র আমাকে খুশি করার জন্য। আমি না বল্লেও তুমি শুনতে না। রং খেলাতো আমার অনেক আগেই হয়ে গিয়েছে যখন তুমি বাসার নিচে দাঁড়িয়ে কানে ধরে ছিলে। এইখানে তো শুধু উপরে রং লেগেছে।কিন্তু তখন আমার পুরো মনের ভিতর রং লেগে গিয়েছিলো।” আমি কিছু বল্লাম না। গানের আওয়াজে সবাই যে যার মতো হৈ চৈ করছে।আমি প্রেমাকে শুধু কাছে টেনে জড়িয়ে নিয়ে বল্লাম,”আর ছাড়ছিনা কখনো,যত যাই হোক।