এখানে বসতে পারি??? (মেয়ে)
– জ্বি,বসেন। (ছেলে)
– ধন্যবাদ …
খুব ভয় ভয় লাগছে জুবায়েরের। এই প্রথম শহরের কোন মেয়ে তার সাথে কথা বলছে।তার জানা মতে শহরের মেয়েরাঅহংকারী হয় আর সহজে ছেলেদের সাথে কথা বলেনা। আচরনেও হয় রাগী…এজন্য সে শহরের মেয়েদের সাথে কথা বলতে ভয়পায়। আর তাছাড়া সে গ্রামের ছেলে। শহরে এসেছে পড়াশোনা করতে। আজ নতুন হয়েছে ভর্তি ভার্সিটিতে।
– আমি রিতু । মিরপুরে থাকি। আপনি?
– জ্বি আমি জুবায়ের। গ্রাম থেকে শহরে এসছি। পড়াশোনার জন্য।
– বেশ ভাল। পরিচিত হয়ে ভাল লাগলো। (হেসে)
– জ্বি ধন্যবাদ। আমিও খুশি হলাম।
রিতুকে দেখে তার শহরের মেয়েদের প্রতি চিন্তাধারা একটু ঘুরে গেল। রিতু ঐরকম নয়। হেসেখেলে কথা বলে। আচরনওবেশ মার্জিত।স্যার ক্লাসে আসার সময় হয়ে গেছে। ছেলেমেয়ে সবাই প্রস্তুত হয়ে বসলো। কিছুক্ষন বাদেই স্যার ক্লাসে প্রবেশ করল। ক্লাস শেষে জুবায়ের সরাসরি বাসায় আসলো। বাসা বলতে সে মেসে থাকে তার দুই বন্ধু রুমমেটের সাথে। গ্রাম ছেড়ে শহরে পড়াশোনার জন্য তাকে মেসে ভাড়া করে থাকতে হয়।
জুবায়েরের মা নেই। যখন সে ক্লাস সিক্সে পড়ে তখন তার মা ক্যান্সারে মারা যায়। এরপর বাবাই ছেলের ভরনপোষনের দায়িত্ব নেয়। বাবা ছোটখাটো মুদির দোকানদার। যদিও পরিবারে জুবায়েরের কোন ভাই বোন নেই। সে একাই বাবার সাথে থাকে। তবুও শুধু মুদি দোকান দ্বারা অনেক সময় তার চাহিদা পুরন করা তার বাবার পক্ষে সম্ভব হয়না। এমনও গেছে বাবা না খেয়ে ছেলেকে খাইয়েছে। এমন অভাবে চলতো বাপ ছেলের সংসার। বাবা সামান্য মুদি দোকানদার হওয়া সত্বেও ছেলের প্রতি ছিলেন খুব দায়িত্বশীল। পড়াশোনার একমাত্র ছেলেকে সে শহরে পাঠাবে, ছেলে বড় হয়ে মানুষ হবে এই আশায়।
ছেলে হিসেবে জুবায়ের ছিল নম্র ভদ্র, আচরন ছিল খুব ভাল। পড়াশোনায় ছিল মেধাবী ছাত্র। তাই তার গ্রামের গুরুজন তাকে বেশ স্নেহ করতো আর ভালবাসতো।জুবায়ের তার বাবার কথা মতোই সবসময় চলতো। বাবা স্বপ্ন পুরনেও সে কর্তব্যপরায়ন। এজন্যই জুবায়েরের বাবা তার একমাত্র ছেলেকে খুব ভালবাসতো। ছেলেও বাবাকে ভীষন ভালবাসতো। আর মা মারা যাবার পর তার বাবা কখনোই ছেলেকে মায়ের অভাব উপলব্ধি করতে দেন নি। তাই বাবাই ছিল তার কাছে সব। ঐদিকে রিতু তার বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে। বাবা শহরের বড় ব্যবসায়ী, নিজস্ব গাড়ি, বাড়ি আছে। আর মা গৃহিনীই। আর আছে ছোট ভাই। ছোট বেলা হতেই বড় আদরে মানুষ হয়েছে রিতু। আর খুব ভাল, ভদ্র মেয়ে। চাল-চলন যেমন ছিল সুন্দর তেমনি দেখতেও পরেরদিন ক্লাস শেষে বাড়ি যাবার পথে জুবায়েরের সাথে রিতুর দেখা হয়। দেখামাত্রই জুবায়েরকে ডাক দেয়……
– এইযে শুনুন…(রিতু)
– (হঠাৎ থেমে পিছনে তাকিয়ে) আমাকে বলছেন? (জুবায়ের)
– হ্যাঁ। গতকাল তো হুট করে চলে গেলেন। আজও যাচ্ছেন। ব্যাপার কি?
– না মানে…এমনি আর কি।
– তাড়া আছে?
– নাহ! কিছু বলবেন?
– চলেন এক জায়গায় যাব।
– কোথায়?
– আহ চলুন না!
– আচ্ছা চলুন।
এক বট গাছের সামনে রিতু জুবায়ের কে নিয়ে গেল। তারা দুইজন সেখানে বসল। চারদিকে হালকা শীতল হাওয়া এসে বইছে। বেশ নিরিবিলি আর সুন্দর একটা জায়গা। ফ্রি টাইমে রিতু প্রায়ই এখানে আসে। আজ সে জুবায়েরকে নিয়ে বসল।জুবায়েরের একটু নার্ভাস ফিল হচ্ছে কারন সে সহজে মেয়েদের সাথে কথা বলেনা। ভয় পায়। এই প্রথম একটা মেয়ে তার সাথে এমন ভাবে হেসে খেলে কথা বলছে যেন মেয়েটি তার অনেক দিনের চেনা। সত্যিই রিতু মেয়েটা বড় অদ্ভুত মনে মনে ভাবছে জুবায়ের ।
– নার্ভাস লাগছে? (রিতু)
– কই নাতো! (জুবায়ের)
– ভয়ের কিছু নাই। আমি ফ্রেন্ডলি সবার সাথে।
– না না তেমন কিছুনা।
– তারপর আপনার বন্ধু আছে কে কে?
– আছে বর্তমানে দুইজন মেসের রুমমেট।
– আর কেউনা! (অবাক হয়ে রিতু)
– আমার বাবাই বড় বন্ধু।
– হুমম… আরেকটা যে নতুন বন্ধু যোগ হতে যাচ্ছে। তাকে কি এক্সেপ্ট করা যাবে?
– বলেন কি? কে সে?
– আমি… কি বন্ধু হিসেবে কি নেয়া যায় এই হতভাগীকে! (কবি কন্ঠে বলে উঠল সিমি)
– কি যে বলেন! আমার মত ছেলের সাথে বন্ধুত্ব! (মাথা চুলকিয়ে সিফাত)
– দেখুন এটা ঠিক না! (রাগান্বিত সুরে)
– আচ্ছা আচ্ছা। আপনার বন্ধুত্ব গ্রহন করলাম।
– তবে এখন হতে আর আপনি নয়। তুই করে বলতে হবে। আমিও বলব।
– আচ্ছা ম্যাডাম তাই হবে। (দুষ্টুমির সুরে বলে উঠে জুবায়ের)
– হাহাহা…
এভাবে জুবায়ের আর রিতুর বন্ধুত্বের সূচনা। ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্ব গভীর হতে লাগল। দিন হতে মাস, মাস হতে বছর। দুইজন একসাথে সবসময় চলে, একে অপরের পারস্পরিকতায় তাদের বন্ধুত্ব। আর রিতুর স্বভাবের সাথে জুবায়েরের অনেক মিল আছে। দুইজনই ঠান্ডা স্বভাবের আর সাদামাটা জীবন যাপন পছন্দ করে। তাই তারা একে অপরকে খুব পছন্দ করে। দুষ্টুমি, হাসি-ঠাট্টা, রাগ, ভালবাসা এই মিলিয়ে তাদের বন্ধুত্ব প্রায় এক বছর কেটে গেল জুবায়ের আর রিতুর বন্ধুত্বের ঠিক এমন সময় একদিন হঠাৎ খুব সকালে রিতু জুবায়েরকে ফোন দেয়……
– কি ব্যাপার রিতু এত সকালে ফোন দিলি যে?
– জুবায়ের তুই এখনি ঐ জায়গায়টায় আয়
যেখানে আমরা প্রথম বন্ধুত্ব করি।
– এত সকালে?? এত সকালে?? কেন? ৮টা বাজে মাত্র।
– (উত্তেজিত সুরে) তুই আসবি কিনা বল!
– আচ্ছা আসছি ওয়েট।
– হুম জলদি আয়…
এই বলে ফোন রেখে দেয় রিতু।জুবায়ের চিন্তায় পরে গেল। কি হল মেয়েটার! মনেহচ্ছে বেশ চিন্তায় আছে আর বিরাট বড়সমস্যায় পড়েছে। যাক দেরি না করে বেরিয়ে পড়ল জুবায়ের। সকাল ৮টা ১৫ বেজে গেল ঐদিকে রিতুঅপেক্ষা করতে করতে অস্থির। হঠাৎ দূরথেকে দেখে জুবায়ের দৌড়ে আসছে। আর এসেই হাঁপাতে হাঁপাতে বলল…
– কিহ! বল…
– জুবায়ের আমায় নিয়ে চল! (রিতু জুবায়েরের হাত ধরে বলল)
– কোথায়??
– যেথায় ইচ্ছা। বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে। কিন্তু আমি তোকে ভালবাসি।
– কি বলছিস এসব?
– আমি ঠিকই বলছি। তুই প্লিজ আমাকেকোথাও নিয়ে চল। আমাকে বিয়ে কর।
– পাগলামি করিস না। (রিতুর হাত ছেড়েদিয়ে।)
– বিশ্বাস কর আমি তোকে ভালবাসি। আই লাভ ইউ জুবায়ের। আমি থাকতে পারব নাতোকে ছাড়া।
– তুই বাড়ি যা।
– না যাবনা।
– তবে আমিই যাচ্ছি।
আমি তোকে ভালবাসিনা। সো ইম্পসিবল।এই বলে জুবায়ের পিছনে ফিরে সজোরেহাটা দিল। রিতু অনেক জোরে চিৎকারকরে ডাকছে তাও শুনলো না। হতাশ মনে রিতু বাড়ি গেল।জুবায়েরের নাম্বারে ফোন দিলে রিসিভ করেনা।
এরকম বারবার কল দিয়ে যায় রিতু। হঠাৎ রিতুর নাম্বারে একটা ম্যাসেজ আসে। আর সেটা জুবায়েরের দেয়া। তাতে লেখা “পাগলি আমিও তোকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। তবে বলতে পারি নাই বন্ধুত্বটা যেন না হারিয়ে যাই।আই লাভ ইউ রিতু তখন রিতু যে কত খুশি হয়ছে তা বলা অসম্ভব। শুরু হলো তাদের বন্ধু থেকে প্রেম। মাস হানিক হওয়ার পর।জুবায়ের রিতুকে বলতেছে তারা কোনো এক নদীর পাড় ঘুরতে যাবে।তো রিতুও রাজি হলো। একদিন বিকেল বেলা দুজনে গেল নদীর পাড় ঘুরতে। অনেক্ষন যাবত দুইজনে বসে গল্প করতেছে।সন্ধা ঘনিয়ে আসতেছে…চারদিক ে নির্জন আবাস..জনবহুল বলতে নেই।হঠাৎজুবায়ের রিতু কে ধাক্কা মেরে দূরে ঠেলে দেই।রিতু কিছুই বুঝতেছে না।দুইজনেই দাঁড়িয়ে যাই।সাথে সাথে জুবায়ের তার পিছন থেকে একটা দাড়ালো ছুরি বের করে। ছুরি দেখে রিতু বলতেছে…
-জুবায়ের ছুরি বের করছ কেন,আর আমাকেই বা ধাক্কা মারলা কেন
-তকে খুন করব
-কি বলতেছ এসব
-হুম,সত্যি বলতেছি তকে খুন করব (জুবায়েরের মাঝে এক ভয়ালি রুপ ধারণ করেছে।মনে হয় সত্যিই রিতুকে খুন করবে)
-কিন্তু কেন আমাকে খুন করবে,তুমি বলে আমাকে ভালোবাস,তাহলে
-আমি তকে ভালোবাসতে যাব কোন দুঃখে,আমি তো তর সাথে এতদিন যাবত অভিনয় করে আসছি শুধু আজকের দিনটার জন্য।তকে খুন করব বলে আমি সেই দিন থেকে অপেক্ষা করে আসছি।যেই দিন আমার বন্ধু রিফাত মারা গেছিল। (রিফাতের নাম শুনে রিতু চমকে ওঠল। জুবায়ের তাহলে কি রিফাতের বন্ধু।রিতুর আর বুঝতে বাকি রইল না) জুবায়ের আবার বলতে লাগল…
-তুই চমকে ওঠলি কেন।রিফাত তকে অনেক ভালোবাসত।যেই দিন তুই রিফাতকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলি,সেই দিন রিফাতে অনেক কাঁদছে।শেষ পর্যন্ত আমার বন্ধুটা আত্মহত্যা করে।তকে তো ও অনেক ভালোবাসত। তাহলে তুই কেন ওর সাথে এমন করলি।কি দুষ ছিল ওর।আর আমার উপরোক্ত যে পরিচয় দিছি সবগুলো বানোয়াট। একমাত্র আমার প্রেমে তকে ঝড়ানোর জন্য।
এসব অভিনয় করছি।যেই দিন রিফাতে মারা যাই।সেই দিন আমি অনেক কাঁদছি।আর প্রতিজ্ঞা করছিলাম।তকে আমি নিজ হাতে খুন করব।আর আজকে আমার সেই আশা পূরণ হতে যাচ্ছে।আমি আজও আমার বন্ধু রিফাতের কথা ভেবে রাত্রে চোখের অশ্রু ঝড়াই। তকে ও অনেক ভালোবাসত। কিন্তু তুই ওরে বাঁচতে দিলি না।এরকম আর কয়টা ছেলের সাথে তুই করছত।আমি এতদিন যাবত ভাল ছেলের অভিনয় করে আসছি তকে খুন করব বলে।তকে খুন করে আমি আমার বন্ধুর আত্মার শান্তি দিতে চাই। এই বলে জুবায়ের কাঁদতে লাগল।আর রিতু হতবম্ব। কি হতে যাচ্ছে তার সাথে। অবশেষে জুবায়ের রিতুকে ছুড়ি দিয়ে তার গলাটা কেটে ফেলে। আর জোরে জোরে হাসতে থাকে,আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে…
-বন্ধু আমি পেরেছি তর আত্মহত্যার প্রতিশোধ নিতে।তর আত্মা শান্তি পাচ্ছে। আর সাথে কান্নারও আওয়াজ আসতেছে। রিতুর লাশটাকে নদীতে ফেলে।জুবায়ের হাটা শুরু করে তার গন্তব্যে।সন্ধায় আধার করে আসল চারদিকে।
এই গল্পে জুবায়েরের যে পরিচয় দেওয়া হয়ছে সবগুলো বানোয়াট।কারণ এটার মাধ্যমেই জুবায়ের রিতুকে খুন করতে পারে। তাই মিথ্যে পরিচয় দিয়ে রিতুর সাথে ভালোবাসার অভিনয়টা করে।জুবায়ের এর অনেক কাছের বন্ধু ছিল রিফাত।বছর হানিক আগে রিফাতের সাথে রিতুর রিলেশন হয়।কি এক কারণে রিফাতকে দূরে ঠেলে দেয় রিতু।সেই সুখে রিফাত আত্মহত্যা করে।আর জুবায়ের তার প্রতিশোধ নেয়।ভালোবাসার নামে সাইকো বেশে।