রাতপরীর গল্প

রাতপরীর গল্প

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।বিদ্যুৎ চমকানোর সাথে সাথে থাইয়ের কাচ ভেদ করে আলো এসে মানহার মুখে পড়তেই আমি পর্দাটা টেনে দিয়ে উঠে দাড়ালাম।

অন্ধকারে কিছু দেখা না গেলেও আমি বেলকুনির দিকে এগিয়ে গেলাম।বিদ্যুৎ চমকানোর সাথে সাথে যতটুকু আলো দেখা যাচ্ছে ততটুকুতে বেলকুনির দিকে যেতে আমার কষ্ট হয়নি।অবশ্য আমি রুমের লাইট জ্বালিয়েও আসতে পারতাম কিন্তু তাতে করে মানহার ঘুমটা ভেঙে ও যেতে পারতো।আর আমি চাইনা এই সময় মেয়েটার ঘুমটা ভেঙে যাক।

মানুষ নানা রকম ভাবে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।সেটার অবশ্য যথেষ্ট কারনও থাকে।কিন্তু আমার অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কারনটা কেমন যেন আমার নিজের কাছেই পছন্দ নয়।আমি বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে এই নিয়ে চারবার হাচি দিলাম।তবে সেটাও হাত দিয়ে মুখটা চেপে।শব্দ করে হাচি দেওয়া চলবে না।এতে করে মানহার ঘুম খুব তাড়াতাড়িই ভেঙে যাবে।নতুন বাসাতে মেয়েটা সারাদিন ঘর গুছিয়ে বেশ ক্লান্ত।তাই এই ঘুমটাও ওর জন্যে দরকার।

বৃষ্টির দিনে আমি যতই সুস্থ থাকি না কেন আমি অসুস্থ হয়ে যাব।বৃষ্টি শুরু হলেই আমার হাচি শুরু হয়ে যায়।আর হাচি দিতে দিতে ঠান্ডা লেগে যায়।আমার এই বৃষ্টির সাথে সাথে হাচি শুরু হয়েছিল আরও বেশ কয়েকবছর আগে।অবশ্য তখন মানহা ছিল না,তাই হাচি দিতে কষ্ট হলেও সমস্যা হতো না।কিন্তু এখন দুটোই হচ্ছে।

আমি যখন এগারো থেকে বারো তম হাচি দিলাম তখনি রুমের লাইটটা জ্বলে উঠলো।কিন্তু আমার হাচি থামলো না।একেবারে কয়েকটা হাচি শেষে যখন আমি ক্লান্ত তখনি মানহা আমার সামনে এসে বললো,

-তোমার তো বৃষ্টি শুরু হলেই হাচি, ঠান্ডা লেগে যায়,তাহলে এই বৃষ্টিতে তুমি এখানে কি করো?
-না মানে,তোমার ঘুমটা ভাঙাতে চাইনি আমার হাচির শব্দে,তাই বেলকুনিতে এসে দাড়িয়েছি একটু।
-তুমি কি ভাবো তোমার অসুস্থতায় আমি বিরক্ত হই,আমি রেগে যাই?
-আসলে আমি সেটা বলিনি তো।
-তাহলে আমাকে ডাকলে না কেন?
মানহার কথায় আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।এই মেয়েটা কোন কিছুই ছাড় দেবে না।একদম খুটে খুটে সব বের করবে।আমার চুপ থাকা দেখে মানহা বললো,
-ভেতরে আসো, আমি চা বানিয়ে দিচ্ছি।

কথাটি বলে মেয়েটা আর দাড়ালো না,আর আমাকেও দাড়াতে দিল না।আমায় বিছানায় বসিয়ে দিয়ে মেয়েটা রান্না ঘরের দিকে গেলো।এদিকে মানহা রেগে গিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলেও আমার হাচিটা আর রাগ করে চলে গেলো না,উনি আরও প্রস্তুতি নিয়েই নতুন ভাবে আক্রমণ করলো।যার থামার কোন লক্ষনই দেখতে পেলাম না।

মানহা যখন চায়ের কাপ হাতে রুমে ঢুকলো তখন আমি বেলকুনিতে দুটো চেয়ার নিয়ে পাশাপাশি রাখলাম।অবশ্য আমার মনে হচ্ছেনা মানহা এখন আমার পাশের চেয়ারটাতে বসবে।মেয়েটা আমাকে চেয়ার থেকে টেনে উঠিয়ে রুমেও নিয়ে যেতে পারে।কিন্তু বেলকুনিতে বসে যা চা খেতে আমার ভিষণ পছন্দ এইটা হয়তো মানহা ভুলে যায়নি।মেয়েটা মুচকি হেসে আমার দিকে চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিয়ে পাশের চেয়ারটাতে বসতে বসতে বললো,

-এই অসুস্থতায় ও তুমি বদলাবে না।
মানহার কথায় আমি কিছু বললাম না।চায়ে চুমুক দিতেই মেয়েটা চেয়ার থেকে উঠে আমার বা পায়ের উপর বসলো।এটা অবশ্য মেয়েটা সবসময় ই করে।আমি চায়ের কাপে আরও একবার চুমুক দিয়ে আগের বারের মত মানহাকে শক্ত করেই ধরলাম।আর উনি আমার চায়ের কাপটা নিয়ে বাকিটুকু শেষ করার জন্যে চায়ে চুমুক দিলেন।
মানহার এমন আচরনে আমি কিছু বললাম না।এরকম পরিস্থিতিতে যে আমি এবারই প্রথম পড়লাম তেমন না।এর আগেও অনেকবার মেয়েটা এরকম করেছে।ইচ্ছে করেই এক কাপ চা বানাবে আর ওই এক কাপেই ভাগ বসাবে।

বিদ্যুৎ চমকানো অনেকটা কমে গেলেও বৃষ্টি তার গতি ঠিকই ধরে রেখেছে।আর আমি ধরে রেখেছি মানহাকে।মেয়েটা চা শেষ করে আমার কাধে মাথা রেখেছে।মানহার দৃষ্টি বাইরের বৃষ্টির দিকে হলেও আমি তাকিয়ে আছি মানহার দিকে,আমার রাতপরীটার দিকে।হ্যা রাতপরীটার দিকে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত