আমার সুন্দরী বউ

আমার সুন্দরী বউ

আয়শা,আয়শা আয়শা কাজ করছিল এমন সময় ওর শাশুড়ির ডাক শুনে দৌড়ে আসে ওনার ঘরে।

_হ্যা মা বলেন কি হইছে?
_না আসলে আমি আজ একটু রুপার বাসায় যাব। ওর মেয়েটা নাকি অসুস্থ।ফোন করছিল।
_হ্যা মা,কিন্তু আজতো আপনার ছেলের নাইট ডিউটি তাই বলছিলাম যে…
_হ্যা মা আমি জানি।সেইজন্যই তোমাকে ডাকলাম। তুমি থাকতে পারবেতো একা একা?
_তা পারব।আমি কোনকিছু ভয় পাইনা।কিন্তু আপনার ছেলে….
_ও কিছু বলবে না।আমি ওকে ফোন করেছিলাম যেতে বলল।ও তোমাকে ফোন করবিনি একটু পর। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই আমি যাচ্ছি। তুমি দরজা ভালো করে লক করে দিও আর অপরিচিত কেউ ডাকলে দরজা খুলবে না।

_আচ্ছা ঠিক আছে মা।
_আরেকটা কথা।মামুনতো ভোররাতের দিকে আসবে। তুমি খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পরো।আমি ওকে বলে দিয়েছি চাবি দিয়ে বাইরে থেকে দরজা খুলে নেবে।

_আচ্ছা মা।
_আরেকটা কথা। ভয় টয় পেলে মামুনকে ফোন করো।
_ভয় পাবো!!! আর আমি।ভুত-প্রেত কিছু আসলে ওর সাথে গল্প শুরু করে দিব(মনে মনে এইসব কথা ভাবে আর মিটিমিটি হাসতে থাকে আয়শা)।
_আচ্ছা আমি তাহলে এইবার আসি।নিজের খেয়াল রেখো।
_আচ্ছা মা দেখেশুনে যাবেন। আর গিয়ে একটু ফোন করবেন।
_আচ্ছা থাকো।আসি।

এই বলে আয়শার শাশুড়ি চলে গেল।আয়শা দরজা ভালো করে লক করে কাজ করতে লাগল। মাগরিবের নামাজ পড়ে একটু কোরআন পড়ল। ওর শাশুড়ি আবার কোরআন না পড়লে বকে খুব,তাই এখন অভ্যাস হয়ে গেছে প্রতিদিন কোরআন পড়াটা।নাহ কিছুই ভালো লাগছে না আয়শার।ভেবেছিল ওর শাশুড়ি নেই ইচ্ছেমত শান্তিতে থাকবে আজ একটু। কিন্তু না মানুষটাকে খুব বেশি মিস করছে।ভয় পেতে পেতে কখন যে মানুষটাকে ভালবেসে ফেলেছে বুঝতেই পারেনি আয়শা।কথাগুলো ভাবতেই হাসি পায় আয়শার।যাক বউমা অবশেষে তার শাশুড়িকে ভালবেসে ফেলেছে। আয়শার কিছুই ভালো লাগছিলো না। ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবল মামুনকে ফোন দিবে পরে ভাবল না থাক ও হয়ত কাজে ব্যাস্ত আছে।ওর বাবার কথা মনে পরছিল খুব। তাই ওর ছোটবোন নিতুকে ফোন দিলো।

_হ্যা আপু কেমন আছিস?(নিতু)
_আসসালামু আলাইকুম। ওই তোকে না কতবার বলেছি ফোন রিসিভ করে আগে সালাম দিবি তারপর কথা বলবি।
_সরি আপু।তুই তাই…
_আমি তাই কি হুম।সবাইকেই সালাম দিবি ছোট হোক আর বড় হোক।যে আগে সালাম দিবে সে বেশি নেকি পাবে।
_হুম।বুঝলাম।আমার আপুমনিটা অনেক হাদীস শিখে গেছে।আচ্ছা বাড়ি আসলে ইচ্ছামত শেখাস।এখন বল কেমন আছিস?তোর শরীর ভালোতো?
_হুম।আমি ঠিক আছি।তুই কেমন আছিস?আর বাবা???
_ওইরকম ই আছে।একটু আগেও তোর কথা জিজ্ঞেস করছিল।বললাম আজ কথা হয়নি।তোকে নিয়ে খুব চিন্তা করেরে বাবা।
_আমাকে নিয়ে কিসের চিন্তা হুম।বাবাকে বলবি আলহামদুলিল্লাহ, আমি খুব খুব খুব ভালো আছি আল্লাহর রহমতে।ঘুমিয়েছে বাবা??
_নাহ।তবে চোখটা বন্ধ করে শুয়ে আছে।কথা বলবি?
_না থাক। থাকতে দে।ভালো লাগছিল না তাই তোকে ফোন দিলাম।
_কেনো? কি হয়েছে? তোর শাশুড়ি কিছু বলেছে?
_ধুর

আমার শাশুড়িকে তোর কি মনে হয় হুম। আমাকে সব সময় বকে নাকি।ভালোওতো বাসে।আর আমাকে শাসন করে।মায়ের মত। কথাটা বলতেই আয়শার কন্ঠটা ভারী হয়ে আসে।নিতু ছোট থাকতে ওর মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে আর টাকার অভাবে চিকিৎসা না করতে পারায় ওর মা মারা যায়। সেদিন ও খুব কেদেছিল, কিন্তু নিতু তিনবছরের ছোট বাচ্চা ছিল।ও কিছু বুঝতেই পারছিল না যে ওর মা আর কখনো ফিরে আসবেনা।আর আয়শা নিতুকে কখনো মায়ের অভাবটা বুঝতেই দেয়নি। নিতু বুঝতে পারল তার বোনটা ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছেতাই কথার প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল…

_আচ্ছা মামুন ভাইয়া কি অফিসে?
_হ্যা আজ ওর নাইট ডিউটি আছে আর বিকেলে একটা কাজ থাকায় দুপুরের দিকেই বেড়িয়ে গেছে।
_আর তোর শাশুড়ি আম্মা??সে কি করে?
_শোন নেক্সট আমার শাশুড়িকে সম্মান দিয়ে কথা বলবি।উনি রুপা আপুর বাসায় গেছে।বাবু অসুস্থ তাই।
_ওহ আচ্ছা তার মানে বাসায় আপনি একা আছেন। তাই এই ছোট বোনটার কথা মনেপড়েছেতাইনা।
_আচ্ছা বাদ দে।তুই ঠিকমতো নামাজ পড়িসতো?
_আসলে আপু সব সময় পড়া….
_হুম বুঝতে পেরেছি।কিন্তু নেক্সট যেন আমি আর এমন না শুনি।পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বি। আচ্ছাঈশারের আজান হচ্ছে ওজু করে আগে নামাজ পড়ে নিবি।
_আচ্ছা আপু।

বলেই ফোনটা কেটে দিল নিতু। আয়শা ঈশারনামাজ পড়ে খাবে কিনা ভাবতে লাগল।প্রতিদিন নামাজ পড়েই ওর শাশুড়িকে খেতে দেয় আর মামুনের রাতে ডিউটি থাকলে ও নিজেও খেয়ে নেয়।আজ আর একা একা খেতে ইচ্ছা করছে না ওর।না খেয়েই শুয়ে পরল। ঘুমও আসছে না।সবে রাত ৮টা এতো তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে কি করে।মামুনকে কেন জানি ফোন করতে মন চাইছে না ওর। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল।দেখে রুপার ফোন।

_আসসালামু আলাইকুম (আয়শা)
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।মা আমি।
_হ্যা মা বলেন। কখন গেলেন?জানালেন নাতো
_হ্যা আসলে এসেই মাগরিবের আজান শুনতে পেলাম তাই আর দেওয়া হয়নি।নামাজ পড়েছ?কোরআন পড়েছ? খেয়েছো? এতোগুলো প্রশ্ন একবারে শুনে আয়শার খুব হাসি পাচ্ছিল।হাসি চেপে রেখে ও বলল

_হ্যা মা নামাজ পড়েছি, কোরআন পড়েছি। তবে খাইনি এখনো। আপনি খেয়েছেন?
_হ্যা আমি খেয়েছি।তুমি এখনো খাওনি কেনো? মামুনেরতো আসতে দেরি হবে।তুমি খেয়ে শুয়ে পরো।
_আচ্ছা মা।
_আচ্ছা রাখছি তাহলে।দেখেশুনে থেকো।
_আসসালামু আলাইকুম।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।

ফোন রাখতেই আয়শার বিয়ের দিনের কথাগুলো মনে পড়ে যায়। ওরতো আজ এই বাড়িতে থাকার কথা ছিলনা।মামুনের সাথেতো ওর বিয়ের কথা ছিলনা। কিন্তু আল্লাহ যেটা চায় সেটাইতো হবে। নাহলে সেদিন কি আর গাড়ি এক্সিডেন্ট করে শুধু বরটাই মারা যেত নাকি। আয়শাকে বিয়ে করতে এসে রাস্তাতেই বর মারা গেছে।কথাটা শুনে আয়শা যতটা না কষ্ট পেয়েছিল তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিল ওর বাবা। তার উপর মানুষের নানা ধরনের কথা।অপায়া একটা মেয়ে। বিয়ের আগেই বর মারা যায়।এই মেয়েকে কে বিয়ে করবে??আরো নানা কথা।ওর বাবা কথাগুলো না নিতে পেরে সাথে সাথে অসুস্থ হয়ে যায়। আর সেই সময় ওদের পাশে এগিয়ে আসে ওর প্রিয় বন্ধু মামুন। হ্যা আয়শার সব চাইতে কাছের বন্ধু ছিল মামুন। প্রায় প্রায়ই আয়শা মামুনদের বাসায় যেত। ওর বড় বোন রুপা আয়শাকে খুব ভালবাসত।কিন্তু মামুনের মা আয়শাকে একদম পছন্দ করত না।

মেয়ে মানুষ বোরকা, নেকাব ছাড়া চলাফেরা করে,ছেলে মানুষের সাথে ঘুরাফেরা করে।এইসব ওনার একদম পছন্দ হতনা। আয়শাও বেশি কথা বলত না।এড়িয়ে চলত, কেননা সামনে পড়লেই বলত,বোরকা পরনা কেনো? মামুনের সাথে থাকো কেন? নামাজ পড় না কেনো? আরো অনেক উপদেশ দিত। তখন খুব বিরক্ত লাগত কথাগুলো ওর কিন্তু  আজ কত ভালো লাগে ওর এইসব কাজগুলো করতে।হয়ত এই জন্যই সেদিন আল্লাহ তার বিয়েটা মামুনের সাথেই রেখেছিল।সেদিন মামুন আর রুপা রাজি ছিল আয়শাকে তাদের বাড়িতে বউ করে আনার জন্য। কিন্তু মামুনের মা একটুও রাজি ছিলনা।এইরকমএকটা মেয়েকে সে বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবে না। তার ছেলেটাকেই ঠিকমতো নামাজ- কালাম পড়াতে পারেনা তার উপর এমন একটা মেয়ে আসলে তার ছেলেটাকে আরো ঠিক করতে পারবে না।

কিন্তু রুপার কথাতেই ওর মা সেদিন রাজি হয়েছিল না হলে মামুন হয়ত পারত না তার মায়ের আদেশ উপেক্ষা করে আয়শাকে বিয়ে করাটা। হ্যা প্রথম প্রথম আয়শার খুব অসহ্য লাগত ওর শাশুড়ির কথাগুলো। সকালে উঠে নামাজ পড়। কোরআন পড়। বোরকাতো আছেই তার সাথে আবার নেকাব পড়। এখানে যাওয়া যাবেনা, ওখানে যাওয়া যাবেনা, এইটা করা যাবেনা, ওইটা করা যাবেনা। মনে হত একটা জেলখানার কয়েদী ও।কিন্তু এই ছয়মাসের মধ্যে নিজেকে অনেকটাই চেঞ্জ করে নিয়েছে আয়শা। আর ওর শাশুড়িও ইদানীং ওকে খুব ভালবাসে। কারণ আয়শা যে এখন তার মনের মত বউমা।আর তার ছেলেটাও চেঞ্জ হচ্ছে।নামাজ পড়ে এখন। কোরআন পড়ার কথা অবশ্য আয়শা বলে অনেক কিন্তু আজ পড়ব, কাল পড়ব করে। ওর বিয়ের দিন থেকেই ওর বাবা অসুস্থ। মামুনের সাথে বিয়ে না হলে আল্লাহ বোধহয় ওনাকে নিজের কাছে নিয়ে নিতেন।

এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাত কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পায় আয়শা।ও কিছুটা চমকে যায়। ঘড়িতে কেবল ৯টা বাজে।এই সময় কে আসতে পারে। মামুনেরতো এখন আসার কথা না।ও আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।দরজার সামনে যেতেই ও দরজা খুলার আওয়াজ শুনতে পায়। আয়শা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠে।একটু পরেই বুঝতে পারে কেউ দরজাটা লাগিয়ে দিয়েই ওর মুখ চেপে ধরেছে।ও ভয়ে ভয়ে চোখ খুলতেই অবাক হয়ে যায়। এইবার মামুন ওর মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়।

_তুমি!!!এখন???
_হুম।ভাবলাম আমার সুন্দরী বউটা একা আছে যদি কেউ চুরি করে নিয়ে যায়, তাই পাহারা দিতে চলে আসলাম।

_কিন্তু তোমার বস আসতে দিলো???
_হুম।চিটিং করে এসেছি।
_মানে??কি চিটিং করলা?
_মানে নিতু ফোন করেছিল। বলল তুমি একা একা ভয় পাচ্ছ।আর তখনই বস এসেছিল।আমি বললাম যে ইমার্জেন্সি আমাকে বাসায় যেতে হবে। আমার বউ একা বাসায় আছে,কাকে যেন দেখতে পেয়ে খুব ভয় পেয়েছে,আমাকে এক্ষুনি বাসায় যেতে হবে।ব্যস

_আর তোমাকে অফিস থেকে আসতে দিল??
_না। আমিতো আসিনি।আমার ভুতের সাথে কথা বলছ তুমি। দেখতে পাচ্ছনা।
_হুম।বুঝলাম।চিটার।খেয়েছো??
_না।বাসায় খেয়ে আসব নাকি!!!তাহলে তোমার সাথে কে খাবে শুনি।তুমি খেয়েছ?
_না।আচ্ছা তাহলে এখন একসাথে খাবো। চলো।
_আচ্ছা আমি খাবার বাড়ছি।তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। এরপর মামুন ফ্রেশ হয়ে আসে আর দুজনে একসাথে একি প্লেটে খেতে থাকে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত