বন জুড়ে দুর্ভিক্ষ। খাবারের জন্য না আছে গাছ,না আছে গাছের ফল।প্রাণী গুলো সব না খেয়ে মরার দশা। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ আবার অন্য বনে পাড়ি জমাতে ব্যস্ত।তাদের মধ্য একজন শেয়াল পন্ডিত,নাম হিরু। চলাফেরা এবং কথাবার্তায় দারুণ স্মার্ট।উপস্থিতি বুদ্ধি তুলনাহীন।সমস্যা যা একটু বডিতে।
অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে হিরু উপস্থিত হলো ডাকিনির জংগলে।ভয়ংকর পরিবেশ।গা ঝুমঝুমে চারিপাশ অপরদিকে ক্ষুধায় পেট জ্বলছে। এমন পরিস্থিতিতে হিরু ভাবছে,এখান থেকে কিছু খাবে?নাকি আর কিছুটা দূর গিয়ে দেখবে?কে জানে কার এলাকা!হালকা নাস্তার জন্য না জানি প্রাণটা যায়। এর মধ্যে পায়ে কিছু একটা কামড় দিলো।ব্যাথার বেচারা নিচে তাকিয়ে দেখে চিংড়ি দাঁড়িয়ে। এবার তাঁর দুঃখ দেখে কে?সময় খারাপ গেলে চিংড়িতেও কামড় দেয়। রাগে কষ্টে দুঃখে হিরু চিংড়ির উদ্দেশ্য করে বললো “সমস্যা কি ভাই তোমার?হুদা কামে আমার মতন সাধারণ প্রাণীকে উত্তক্ত করে লাভ আছে?” চিংড়ি দাত সবগুলো বের করে দিয়ে জবাব দিলো “ধুর মিয়া।উল্টো বুঝো কেন?আমি জানতাম পুরো দুনিয়ায় আমিই একমাত্র চিকনচাকন ছোটো।কিন্তু না,তোমায় দেখার পর সব ধারণা ভুল প্রমাণ হয়েছে।তুমি তো আমার চেয়ে কম না।তাই চিমটি কাটলাম।”
– দেখ ভায়া,যা বলবা বলো কিন্তু বডি নিয়ে কিছু বলো না।এটা আমার ঐতিহ্য আমার অহংকার।
– মি টু।যাইহোক,এলাকায় নতুন মনে হচ্ছে!
– ইয়ে মানে হ্যা।
– আগে কোথায় থাকা হত?
– কমলপুর বনে।
– ও,তা সেখানে ছেড়ে এখানে কি মনে করে?
– সত্যি বলবো?
– বলো।
– খাবারের অভাবে।
– বাহ্,বেশ ভালো।তোমাকে স্বাগতম।
– ধন্যবাদ।
– সাথে ভাবি আসেনি?
– আর ভাবি!শ্যামলী নগর বনে এক হরীণের সাথে রিলেশন ছিলো।তিন বছর সব ঠিকঠাক।বিয়ে নিয়েও প্লানিং চলছিলো।ভাগ্যক্রমে কিছুদিন আগে টাকাওয়ালা হাতির সাথে পালিয়ে গেছে।ফিরে আসেনি।পরে সারাজীবন সিংগেল থাকার শপথ নিয়েছি।
– হায়রে প্রেম।বাদ দেও ভাই।আমারও একই অবস্থা।আচ্ছা চিকন মানুষ কি তাহলে সেকা বেশি খায়?
– হতে পারে।
– আমার তো মনে হয় চিকোনরা প্রেম এবং মোটা গুলো বিয়ে করতে জন্ম নিছে।
– ভুল কিছু বলোনি।
– হুম,ওহ্ ভালো কথা।
– বলো।
– রাতে থাকবা কোথায়?
– কোনো এক গাছের নিচে।
– তুমি এক কাজ করো,আমার সাথে চলো।আমি থাকার জন্য ভালো ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
– তোমার এই ঋণ কিভাবে যে শোধ করি।
– পরে টের পাবা বাছা।[বিড়বিড় করে]
– কিছু বললা?
– না,চলো।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত ঘনিয়ে আসছে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছু দেখা বড় দায়। হিরু বুঝে উঠতে পারছে না আদৌ সে এখানে এসে ঠিক করেছে নাকি ভুল।চিন্তাভাবনার সাথে মন কিছুতে সাঈ দিচ্ছে না।অবশেষে নিজেকে আটকাতে না পেরে হিরু বলে ফেললো “বাঘ মামা তুমি কিছু ধার করছো?” কিছুক্ষণ বাদে ভেতর থেকে উত্তর আসলো “ক..ক..কই নাতো।চিংড়ি রান্না করছে।রান্নার শব্দ হবে হয়তো।”
– কিন্তু আমি স্পষ্ট কিছু ধার করার শব্দ পেলাম।
– ভুল শুনেছো।এখন চুপচাপ ঘুমাও।রান্না হলে ডেকে দিবো।
– আচ্ছা।
এতেও হিরুর মন স্বস্থি পেলো না।বরংচ আরো অস্বস্থিতে পড়লো। এবার অস্বস্থি মেটাতে হিরু দরজার কাছে গিয়ে আড়ি পাতলো।যা কিছুটা আতংকজনক ছিলো। কারণ দরজার ওপাশে কথপকথন কোনভাবে হিরুর জন্য শুভো ছিলো না।
– কোথায় পেলিরে চিংড়ি,এই শুটকা ব্যাটাকে?
– পাবো আর কোথায়?রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো।হঠাৎ পরিচয়।
– বাহ্,তোর বুদ্ধি আছে বলতে হবে।না হয় ভুলিয়েভালিয়ে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসা চারটে খানি কথা নয়।
– সব তোমার থেকে শেখা মামা।
– হুম বুঝেছি।এখন শোন,দেরী করা ঠিক হবেনা মনে হয়।ব্যাটা আচ করতে পেরেছে কিছু একটা।চল সময় থাকতে কাজ সেরে ফেলি।
– তা না হয় গেলাম।তবে মামা,পুকুরের পাশে জমি কিন্তু আজ থেকে আমার।
– আচ্ছা তোর।এখন চল।
বেচারা হিরু পুরোটা শোনার পর মরে যাবে অবস্থা।এমনিতে সাথে জান ছাড়া হাড্ডি মাংস পর্যন্ত নেই।এবার জানটাই চলে গেলে থাকবে কি? ব্যাপারটা ভেবে পেছন দরজা দিয়ে হিরু চোখ বন্ধ করে দিলো ভৌ দৌড়।এক দৌড়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই।থামার নাম গন্ধ নেই। তারপর অনেকটা পথ গিয়ে আচমকা ডালের সাথে বারি খেয়ে পড়ে গেলো। পড়ে গিয়েই অজ্ঞান। জ্ঞান ফিরলো সকালে এক হরিণের ডাকে “ওগো শুনছো?” ডাক শুনে হিরু মিটমিটিয়ে চোখ খুলে তাকালো। সামনে অপরূপ দেখতে এক হরিণ দাঁড়িয়ে। মায়াবী চোখ।চোখের গভীরতা যেকোন সাগর-মহাসাগরকে হার মানায়। হিরু বললো “আমি বেঁচে আছি?”
– হ্যা।
– তাহলে স্বর্গ থেমে নেমে আসা অপ্সরী আমার সামনে কেন?
– ধ্যাৎ,কি যে বলো।
– নাম কি তোমার?
– নিত্যা।
– বাহ্,খুব সুন্দর।
– হুম জানি,তুমি হিরু তাইনা।
– তু..তুমি জানলে কিভাবে?
– আপু বলেছে।
– আপু!
– বিভিত্রার কথা ভুলে গেছো?
– তুমি বিভিত্রার বোন?
– ছোট বোন।
– কেমন আছে তোমার আপু?
– ভালো নেই।দুলাভাইয়ের সাথে ঘুমাতে গিয়ে আপুর এক পা ভেঙে গেছে।
– ওহ্ নো।আমি অনেক করে বলেছিলাম হাতি বিয়ে করতে হবে না।কিন্তু কে শোনে কার কথা?টাকার জন্য সে এত বড় ভুল করলো!তাছাড়া টাকার যদি এতই প্রয়োজন তাহলে হায়না বিয়ে করতো?ওদের ও তো কম টাকা ছিলো না।
– বাদ দেও।যা হওয়ার হয়ে গেছে।তবে আমার আবার টাকার প্রতি তেমন লোভ নেই।আমি বিয়ে করলে শেয়ালই বিয়ে করবো।
– শেয়াল?
– হুম।
– আমার এক ভালো বন্ধু আছে,টুলু।তুমি বললে ওর সাথে কথা বলে দেখতে পারি।
– উঁহু,নাম পছন্দ হয়নি।
– নিঝ্র,এই নাম কেমন লাগে।
– উমমম চলে,কিন্তু দেখতে কেমন?
– দেখতে খুব সুন্দর।কিউট চেহারা।
– তাহলে বাদ।কয়টার সাথে রিলেশন করে কে জানে।
– আচ্ছা,রয়?
– না।
– অন্তু?
– না।
– প্লেক্স?
– বিদেশি?
– হুম।
– আরো আগে না।
– বিল্টু?
– দেখতে কেমন?
– আমার মতই।
– তাহলে তুমি বিয়ে করে ফেলো।
– ধুর,বিল্টু ছেলেদের নাম।
– আরে আমি আমার কথা বলছি।
– মানে?
– উইল ইউ ম্যারি মি?
– কি বললা?
– আমায় বিয়ে করবা?
– তোমার মাথা ঠিক আছে?এগুলো নিয়ে মজা করা ঠিক না।
– আমি সিরিয়াস।
– ভুলে যেও না আমি তোমার বোনের এক্স।
– হুম তো?আমার প্রেজেন্ট হতে সমস্যা কোথায়?নাকি ভয় পাচ্ছো নিত্যা আপু প্রতারণা করেছে বলে আমিও প্রতারণা করবো?
– আসলে ঠিক তা নয়।
– তাহলে কি?আমায় পছন্দ হচ্ছে না?
– ধ্যাৎ!তোমায় নিয়ে রাখবো কোথায়?খাওয়াবো কি?বাচ্চা হলে ওদের দেখভাল করবো কিভাবে?
– সেটা নিয়ে তোমায় চিন্তা করতে হবে না।ভালবাসা থাকলে সব সম্ভব।দুজন মিলে খুব পরিশ্রম করবো।দেখবা কোনো অভাব থাকবে না।তাছাড়া বাচ্চা তিন বছর পর।ততদিন আমাদের বাড়িঘর হয়ে যাবে।
– আর?
– আই লাভ্ ইউ।
– আই লাভ্ ইউ টু।
অতঃপর শেয়াল পন্ডিত ওরফে হিরু একাকীত্ব কাটিয়ে এক নতুন জীবন শুরু করলো। যেখানে দুঃখ কষ্ট নামক শব্দের পাশে এক মায়াবী শব্দ যোগ হয়েছে “ভালবাসা।