– তুমি কি আজকেও আমার ফোন ধরবানা?
– হয়তো, আবার হয়তো না!
– হয়তো? নাকি হয়তো না?
– জানিনা!
– তুমি এত নিষ্ঠুর! তোমার কি শিশুদের জন্য কোনো মায়া মমতা নেই?
– তুমি শিশু?
– আমি শিশু না, আমার মেয়ে তো শিশু!
– তোমার মেয়ে কই থেকে আসলো এখানে?
– অবশ্যই আসলো! তুমি জানো আমার এই একটা কল তোমার ফোনের মিসড কল তালিকায় চলে যাওয়ার কারণে
আমি আমার মেয়ের স্কুলের বেতন দিতে পারবো না! এটা খুব ভালো কিছু হবে? বলো?
– মানে কি?
– মানে দেখো,
তুমি আমার এই একটা ফোন না ধরলে আমাদের কথাবার্তা এগোবে না আর তোমার-আমার বিয়ে করারও কোনো সুযোগ দেখিনা, বিয়ে না হলে আমার মেয়েও হচ্ছে না, মেয়ে না হলে তাকে স্কুলে ভর্তি করানোরও প্রশ্ন ওঠে না, আর স্কুলেই যদি না ভর্তি হয় তাহলে কি আমি তার স্কুলের বেতন দিতে পারবো? ভাবো, একটু ভাবো!
-ভাবলাম
-ভেবে কি পেলে.?
-ভেবে পেলাম যে তুমি একটা ছাগল!
-তুমি এটা বলতে পারলে কলি??
-হুম। বলেই তো ফেলেছি।।
-আচ্ছা বলেই যখন ফেলেছ, বাদ দাও। এবার বলো,, কল দেবো??
-জানিনা…
-মানে কি???
-মানে জানিনা।।
– আমি কল দিচ্ছি। তুমি রিসিভ করবে। আমি কথা বলবো।
-রিসিভ করবো কিনা সিওর না।
-আমি জানি তুমি রিসিভ করবে।।
-তোমার মাথা
-তোমার মন্ডু টাটা।
ফোন দিচ্ছি।।দুজনের পরিচয় ফেইসবুকে। নাম্বার আদান প্রদান হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু কথা হয়নি কখন ও। অরিত্র অনেক বার চেয়েছে এবং দিয়েছেও। কিন্তু কলি না করে দেয় সব সময়। কল রিসিভ করেনা। আজ অরিত্রর মন বলছে যে সে রিসিভ করবে। ফোন দেয় সে। ওয়েলকাম টিউন বাজে অপর প্রান্তে” দূর হতে আমি তারে সাধিবো.. গোপন এ বিরহ ডোরে বাধিবো… ” তারপর ভাইব্রেশন।। রিসিভ করেছে কলি। অতঃপর দু প্রান্তেই ১০সেকেন্ডের নিরবতা। কলিই প্রথম কথা বলে..
:: কি হলো? কথা বলছোনা যে.?
:: না মানে আমি ভাবলাম তুমি হয়তো রিসিভ করোনি। আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।।
:: হিহি। রিসিভ করেছি। কথা বলো।। অরিত্র কথা বলতেই পারেনি। কথা সব এলোমেলো হয়ে যায়। একটা মেয়ের কন্ঠ এত্ত সুন্দর কেম্নে হতে পারে?? আবার নিরবতা ভেংগে কলিই বলে,,
-:: আজব ব্যাপার। চুপ করে আছো কেনো??
:: না মানে ইয়ে,, কেমন আছো??
:: হিহি ভালো আছি।। তুমি??
:: হাসছো ক্যান?? আমি ভালো আছি। খুব
:: এমনি হাসলাম। আচ্ছা আমি ফোন রাখি।
::রাখবে?
::হুম।।
::আচ্ছা।
ফোন টা কেটে দেয় কলি। সে বুঝতে পারছে। অরিত্র ছেলেটা ক্রমশ তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। কলি কে সরে যেতে হবে। কিন্তু পারছেনা কলি ছেলেটাকে দূরে সরিয়ে রাখতে। কিছু বলতেও পারছেনা। অরিত্র অনেক বেশী ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটাকে। অনেক বেশী। কিন্তু মজার কথা হচ্ছে তারা দুজন দুজনকে এখন ও কেউ দেখেনি। অরিত্র দেখতেও চায় না। তবে অরিত্র নিজের একটা ছবি কলি কে ফেসবুকে দিয়ে দেয়। কলি বলে,, – ছবি দিলে কেনো?
-আমার ইচ্ছে হলো তাই।
-হু -একটা কথা বলবো কলি??
-হুম বলো।।
-একদিন দেখা করতে পারবে প্লিজ?/
-ক্যানো??
– কিছু কথা বলার ছিলো।
-কি কথা এখাবেই বলো।
-না এখানে সম্ভব না।
-তাহলে ফোন দাও।
-উঁহু ওভাবেও হবেনা। সামনা সামনি কথা বলতে হবে।
— ভেবে দেখি।
-আচ্ছা।
অরিত্র দিন রাত কলি কে নিয়েই ভাবে। মেয়েটার মাঝে অনেক রহস্য আছে। যার কারনে মেয়েটার প্রতি প্রতিনিয়ত সে আরোও বেশী দুর্বল হয়ে পড়ছে। কল দেয় কলি কে,,
–কলি?
-হুম।
-করবে দেখা?
-আচ্ছা।
-সত্যি বলছো??
-হুম।
-কোথায় দেখা করবে বলো।।
-সরকারী কলেজ এর পাশে যে কফি শপ টা আছে, সেখানে।
-আচ্ছা। কবে??
-রবিবার।।
-মানে কাল???
-হুম।।
-আচ্ছা অনেক অনেক ধন্যবাদ।।
-হু রাখি।।
অরিত্র ঘুমাতে পারছেনা। ঘুম আসছে না। ভালোবাসার মানুষ টাকে প্রথম বার দেখবে সে। সেই খুশিতে সারারাত আর চোখ বুজতে পারলো না সে। সকাল ১০টায় অরিত্র কল করলো কলি কে।
-তুমি কই??
-বাসায়..
-কখন যাবা?
-বিকালে যাবো। ৪টায়।
-আচ্ছা।
-টাটা।
বিকাল ৪:০০টা বাজে। অরিত্র এসে বসলো কোনার একটা টেবিল এ।। কালো রঙ এর পাঞ্জাবি পরে। অরিত্র এসে অর্ডার দিলো কফির। সে শুনেছে কলির অনেক ফেভারিট কফি ক্যাপাচিনো। সেটা অর্ডার করলো।। কফি চলেও এলো.. কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কলি এখন ও নাই.. কল দিলো অরিত্র। ওপার থেকে যান্ত্রিক মানবী বলে উঠলো ‘আপনার ডায়ালকৃত নাম্বার টিতে এই মুহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।। অনুগ্রহ পূর্বক কিছুক্ষন পর আবার……” কয়েকবার চেষ্টা করলো অরিত্র।। কোনো রেসপন্স পেলোনা সে। ফেসবুকে ঢুকলো সে। কলির নীল আইডিটা কালো হয়ে গেছে। তবে কি কলি তাকে মিথ্যা..?? না না এ কিভাবে হয়? কলি এমন টা করবেনা তার সাথে। রাত ৯টা পর্যন্ত বসে থাকে অরিত্র। কলি আসেনি।। সে যখন চলে আসছিলো,, তার বাড়ির সামনে একটা মেয়েকে দেখতে পায় সে। মেয়েটা অপরিচিত। অরিত্র কাছাকাছি গেলে মেয়েটি অরিত্র কে ডাকে।
-আপনি কি অরিত্র ভাই??
-জ্বি বলুন।
-আমাকে আপনি চিনবেন না আমি নিতু। কলির ফ্রেন্ড। অরিত্র চমকে ওঠে। বলে ,,
-কলি কই?? ওর আসার কথা ছিলো।। মেয়েটি কাঁদতে থাকে।
– কলি আর নেই। আর দুপুরে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গ্যাছে সে।।
-মানে কি বলছো এসব???
-ঠিক ই বলছি।
কলির ব্রেইন। টিউমার ছিলো। সে আপনাকে বলতে চেয়েছে অনেকবার। আজ বলে দিতো। কিন্তু পাগলী টা আর সে সময় টুকু পেলো না। চলে গেলো আমাদের ছেড়ে ।। অরিত্র মাটিতে বসে পড়লো।। সে কিচ্ছু ভাবতে পারছেনা। এমন টা কেনো হলো?? নিতু অরিত্র কে একটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো এটা আপনার জন্য। বলেই চলে ফেলো। অরিত্র কাগজ টা হাতে নিয়ে দেখলো সেটা একটা চিঠি। কলির লিখা। ,,,,,,,, অরিত্র,, আমি প্রথম থেকেই বুঝতে পারছিলাম আমার প্রতি তোমার দুর্বলতা টা। কিন্তু কি করবো বলো আমার কপালে কাউকে ভালোবাসার ভাগ্য নাই। আমার অসুখ টার কারনে কারো সাথে কথা বলতাম না। কিন্তু তোমার সাথে বলতাম। সত্যি বলছি অরিত্র তোমার সাথে কথা বললে আমার বাচার ইচ্ছেটা প্রবল হতো।
আমি জানি আজ তুমি তোমার ভালোবাসার কথা টা বলতে। তুমি অনেক বেশী ভালোবাসো আমায় আমি এটাও জানি। আমি কতোক্ষন বাচবো জানিনা। তবে এটা জানি যতোক্ষন এ তুমি এই চিঠি টা পড়বে ততক্ষন এ আমি আকাশের তারা হয়ে তোমাকে দেখবো। কেদোনা প্লিজ অরিত্র। তুমি কাদলে আমার সহ্য হবেনা যে। তোমার ভালোবাসা যাতে ঘৃণায় পরিণত না হয়, তাই এই চিঠি লাগে… পারলে আমায় মাফ করে দিও… আর হ্যা আমিও ভালোবাসি। ভালোবাসি তোমাকে।। অনেক অনেক বেশী।। ,, কলি অরিত্র চিঠিটা পড়ে চিৎকার করলো শুধু। আর কথা বলতে পারছেনা সে। শুধু মনে মনে বলছে। তুমি ভালো থেকো কলি..!.
সমাপ্তি