—-আপনি কি আমাকে ভালবেসে ফেললেন? (মেয়ে)
—-না… (ছেলে)
—-তাহলে কাল রাতে যেভাবে জড়িয়ে ধরলেন!! আমি তো ভাবলাম…
—-ওয়েট, ওয়েট। আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরেছি?
—-হুম…
—-কাল রাতে?
—-হ্যা…
—-কই, আমার তো তেমন কিছু মনে পড়ছে না…
—-মনে থাকবে কি করে? ঘুমের ঘোরে কিছু মনে থাকে না।
ছেলেটা চিন্তিত হয়ে একটা সিগারেট ধরায়। ভাবটা এমন, যেন সে খুব চিন্তা-ভাবনা করছে। হঠাৎ মেয়েটা ছেলেটার হাত থেকে সিগারেট নিয়ে ফেলে দেই।
—-এটা কি হল?
—-সিগারেট খাওয়া আমার পছন্দ না।
—-তো আমি কি করব?
বলেই আবার সে একটা সিগারেট ধরায়। মেয়েটা আবার সিগারেটে হামলা করে। তবে এবার ছেলেটা সতর্কিতভাবে সিগারেটটা সড়িয়ে নেই…
—-দেখুন ভালো হচ্ছে না বলে দিলাম।
—-না হল, তাতে আমার কি?
—-আমি মাকে বলে দেব!
—-দেন, তার ছেলে এখন বড় হয়েছে…
—-ওরে গুলুগুলু! দাড়ান মা, মা (উচ্চস্বরে)
—-আরে দাড়ান দাড়ান, ফেলে দিচ্ছি তো। এই মা টাও না, ছেলের বউকে পেয়ে ছেলেকে ভুলে গেল? (নিচু স্বরে, ধীরে)
—-কিছু বললেন?
—-কই নাতো,
—-ছেলের বউ না কি যেন বলবেন?
—-কই না……
—-বউই তো, বউকে একটু ভালবাসতে পারেন না?
বলেই মেয়েটা ছেলেটির দিকে এগিয়ে আসে। ছেলেটা উঠে পড়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়…
—-কই যাচ্ছেন?
—-কাজ আছে…
—-কখন ফিরবেন?
—-জানিনা বলেই ছেলেটা রওনা হয়।
—-দুপুরে বাসায় আসবেন, আপনার প্রিয় পায়েস রান্না করে রাখব…
ছেলেটা আর মেয়েটা হল স্বামী-স্ত্রী। ওদের নাম, রাজ আর অনন্যা। বিয়েটা ৪ মাস হল হলেও ওদের ভিতর তেমন কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি। রাজের অমতেই পারিবারিকভাবে দুজনার বিয়ে হয়। বিয়ের রাত থেকেই অনন্যা ফ্লোরে আর রাজ খাটে ঘুমায়। রাজের মা এখন রাজের থেকেও রাজের বউ অর্থাৎ অনন্যাকে বেশি ভালো বাসে। নিজের মেয়ের মত দেখে। অনন্যাও রাজের মাকে নিজের মায়ের মত মনে করে। সমস্যাটা হল রাজকে নিয়ে। রাজ মোটেও অনন্যাকে ভালবাসে না। আর কখনও ভালবাসতে পারবে কিনা? এটাও সিওর না। অবশ্য বিয়ের আগে অনন্যাকেও সবকিছু জানানো হয়েছে। আর অনন্যাও সব জেনেশুনেই রাজকে বিয়ে করেছে। কারণ, ওর স্বপ্ন ছিল, বিয়ের আগে প্রেম করবে না। আর বিয়ের পরে স্বামিকে সবটুকু দিয়ে ভালবাসবে। তার মন জয় করবে। ভালবাসা আদায় করে নিবে। কিন্তু, রাজের থেকে এই কাজটা করা একটু কঠিনই বটে!!
১ বছর আগের ঘটনা। রাজ তখন অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র। সে ভালবেসেছিল একটা মেয়েকে। মেয়েটাও ভালবেসেছিল রাজকে। মেয়েটার নাম ছিল রিফা। আসলে রিফা ছিল ছলনাময়ী, লোভী একটা মেয়ে। সে রাজের সাথে প্রেমের অভিনয় করছিল! অবশেষে যা হওয়ার তাই হয়, ওদের মাঝে ব্রেকআপ হয়। রাজ কিছুতেই ব্রেকআপ করতে চাইনি। কিন্তু, রিফাকে সে কোনমতেই আটকাতে পারেনি। রিফা ছলনাময়ী, লোভী হলেও যে অনেকগুলো প্রেম করছে? এমন কিছু না। আসলে একটু সাইকো টাইপের মেয়ে। রাজের জীবন থেকে রিফা চলে যাবার পরে ও সব কিছু ছেড়ে দেই। ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। মা হয়ে রাজের এই অধঃপতন কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না রেহানা বেগম। তিনি সিদ্ধান্ত নেন ছেলেকে বিয়ে করাবেন। কিন্তু মেয়ে পক্ষকে ঠকিয়ে নই। তাই আগেই সবকিছু তাদের জানিয়েছিল। যদিও বিয়ের আগে অনন্যার পরিবার আর রাজ কোনভাবেই রাজি ছিল না।
—-রাজ, বাবা শোন
—-জ্বী মা বল
—-তোর একটা বিয়ে ঠিক করেছি
—-মা, আমার দ্বাড়া ওসব হবে না। আমাকে একটু আমার মত থাকতে দাও।
—-দেখ, অনেক হয়েছে। আর না। তুই যদি মা হতিস? তবে বুঝতিস। প্রেম করেছিলে, মানা করেনি।
ব্রেকআপ হয়েছে আর ভেঙ্গে পড়লি? আরে ছেলে মানুষকে শক্ত থাকতে হয়। আমি মেয়ের পরিবারে কথা দিয়েছি আর বিয়েটা যদি না করিস,তবে আমার মরা মুখ দেখবি। আর ওদিকে রাজের এইসব কাহিনী শুনে অনন্যা নিজেই রাজি হয়ে যায়। তারপরে বাবা-মাকে রাজি করে। সেদিন দুপুরে রাজ খেতে আসেনি। প্রায় প্রতিদিনই রাজ দুপুরে ও রাতে বাইরে খেয়ে আসে। রিফা শুধু শুধু অপেক্ষা করে। কিন্তু কোন কাজ হয়না। সে সময়ে রাজের ফোনও বন্ধ থাকে একদিন রাতে, প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। আকাশে ঘন ঘন বিজলি চমকাতে থাকে বিকট শব্দে ডাকতে থাকে
—-শুনুন, আমি না বৃষ্টির দিনে একা ঘুমুতে ভয় পাই! বিজলি চমকালে আমার খুব ভয় লাগে
—-তো আমি কি করব?
—-খাটের একপাশে একটু জায়গা দিবেন?
—-আর আমি?
—-আপনিও থাকবেন সমস্যা কি?
—-দেখুন, আমি পারব না। আপনার বাসায় থাকতে কি করেছেন?
—-তখন তো আমার বোনের সাথে ঘুমোতাম!
—-এখন একাই থাকেন
—-তাহলে আমি মাকে ডাকি? বলি, আমি তার সাথে ঘুমাবো! এটা কি ভালো হবে?? এই মেয়েটা না! একটু কিছু হলেই মায়ের ভয় দেখায়। আর মা’টাও যেন হয়েছে
—-এই না না, আপনিই খাটে থাকুন, আমি নিচে থাকছি।
—-না তা হবে না, বললাম তো আমার একা ঘুমুতে ভয় করে রাজ কিছু ভেবে পায় না। কথা বলতে বলতে অনন্য প্রথম দিকেই রাজের কাছাকাছি এসে খাটে বসে পড়েছে।রাজ উপায় খুজে না পেয়ে অগত্যা রাজি হয়ে যায়। দুজন খাটের দুপাশে দু দিকে মুখ করে থাকে। মাঝখানে কোলবালিশ।
—-জানেন, এখন ওই একা থাকা মতই মনে হচ্ছে। বৃষ্টি বোধহয় থামবে না। কোলবালিশ টা সড়ান! আমি তো আর কিছু করছি না। রাজ কোলবালিশ সড়িয়ে নেই। বৃষ্টির ঠান্ডা আবহাওয়াই কখন ঘুমিয়ে পড়ে টের পাইনা। অনন্যা মনে মনে হাসে।আর রাজের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে। ভাবে, মায়ের ভীতু ছেলে! আসলে অনন্যা এতটা ভীতু না যে, সে ঝড় আর বিজলীকে ভয় পাই! সকালে রাজ ঘুম থেকে উঠে দেখে রিফা গোসল করে বের হচ্ছে। আর মুছকি মমুছকি হাসতে হাসতে, চুল মুছতে মুছতে বিছানায় এসে রাজের কাছে বসল
—-জানেন আজকে আমি অনেক খুশি!
—-কেন?
—-বুঝেন নাই? বোকা! আমি জয়ী হয়েছি!
—-মানে কি?
—-বা রে, কালকে রাতের কথা ভুলে গেলেন?
—-না, কালকে রাতে ঝড়-বৃষ্টি হইছে, আপনার ভয় করছিল, তাই আপনি খাটে এসে ঘুমিয়েছেন
—-আর তারপরে আপনি সেই সুযোগের সৎ ব্যবহার করলেন!
—-দেখুন, আমি মিথ্যা বলা পছন্দ করি না।
আপনাকে চাইলে অনেক আগেই পেতাম। সুযোগের অপেক্ষার দরকার ছিল না। এসব বাজে কাহিনী বন্ধ করেন দেখতে দেখতেই কেটে যায় আরো ২ মাস। নাহ্, রাজকে কিছুতেই নিজের দিকে ফেরাতে পারে না অনন্যা। তবে সেও হাল ছেড়ে দেবার পাত্রী নই। একদিন ভোরে
—-শুনুন, আপনাকে কিছু কথা বলার আছে
—-বলুন, আমি শোনার জন্য অধীর আগ্রহে আছি…! (রাজ)
—-আপনি যা ভাবছেন? তা নয়
—-তবে?
—-আসলে আমার পুরোনো গার্লফ্রেন্ড আবার আমার
জীবনে ব্যাক করতে চাই। আজ সন্ধ্যায় আমরা মিট করব। আপনিও থাকবেন! মুহুর্তেই অনন্যার হাসিমুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। ভোরের আলোতেও সে অন্ধকার দেখতে পায়। কিছু হারানোর অনুভব করে সত্যিই রিফার সাথে রাজের কথা হয়েছে। সে নাকি সত্যিই ফিরে আসতে চাই। নিজের ভুলের ক্ষমা চাই।
সন্ধ্যার সময়
—-হেই রিফা, কেমন আছ?
—-ভাল, তুমি? (রিফা)
—-আমি, আমি, বাদ দাও না। পরিচয় করিয়ে দেই, এ হল অনন্যা আমার বউ। অনন্যা, এই হল সেই রিফা
—-অসংখ্য ধন্যবাদ আপু, ও কালকে তোমার কথা এত বলেছে যে, আমি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। আসলেই আপনার তুলনা হয়না
—-না, তেমন কিছু না। উনি একটু বাড়িয়ে বলেছেন। তাহলে তো মিটেই গেল, আমি এখন আসি
—-দাড়াও অনন্যা রাজ হঠাৎ করে অনন্যার হাত ধরে। অনন্যার পুরো শরির শিউরিয়ে উঠে। গায়ের লোম দাড়িয়ে যায়। ভিতরে বোবা কান্না শুরু হয়ে যায়
—-তুমি কি মনে করেছিলে রিফা? আজকে এখানে আমি তোমার সাথে রিলেশন কনটিনিউ করতে আসছি? মোটেও না, তোমার মত একটা স্বার্থপর, সাইকো মেয়েকে ভালবাসা! একেবারেই অসম্ভব। দেখ, এই মেয়েটাকে কিভাবে সে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবেসে গেছে! সুধুমাত্র একটু ভালবাসা পাওয়ার জন্য। আর আমি বোকা, সুধু ওকে দূড়েই ঠেলে দিয়েছি। কখনো কাছে টানেনি। তবুও ও একটু রাগ করেনি, অভিমান করে হাল ছেড়ে দেইনি। অনন্যা, কালকে রাতে আমি অনেক ভেবেছি। সত্যিই তোমার সাথে আমি অনেক অন্যায় করেছি। আমাকে ক্ষমা কর প্লিজ?
—-কি করছেন? এভাবে ক্ষমা চাইবেন না। আমি কখনো আপনার দ্বাড়া কোন দুঃখ-কষ্ট মনে লাগাইনি।
—-আমি সত্যিই আজ চিৎকার কররে বলতে চাই, ভালবাসি অনন্যা, তোমাকে অনেক ভালবাসি এই অবস্থায় রিফার কান্না পাই। ভীষণ কান্ন। বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে কান্না করতে মন চাই। সে দৌড়িয়ে বেরিয়ে যায়। এটাই জগতের নিয়ম। যে পরিমাণ কষ্ট আপনি কাউকে দিবেন? ঠিক সে পরিমাণই কষ্ট আপনি পাবেন। আবার বিপরীতে যে পরিমাণ ভালবাসা কাউকে দিবেন? ঠিক সে পরিমাণই ভালবাসা ফেরত পাবেন। কারণ, পৃথিবীতে সবকিছুই সমান সমান। জীবনের বিপরীত মূত্যু সমান। কষ্টের বিপরীত সুখও সমান।