তোমার কথা ভেবে

তোমার কথা ভেবে

মানহাকে যখন রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতে দেখি তখন আমি রাস্তার ওপাশে চায়ের অর্ডার দিয়ে চেয়ার টেনে বসলাম মাত্র। আমি যদি বুঝতে পারতাম মানহাকে এখানে এসময় এভাবে দেখবো তাহলে আমি চায়ের অর্ডার না দিয়ে সোজা হাটা দিতাম। এসময় ওর সাথে কোন ভাবেই দেখা হওয়া যাবে না। আমি চেয়ার থেকে উঠে দোকানের ভেতরে গিয়ে বসার চেষ্টা করলাম। যেখান থেকে মানহাকে স্পষ্ট দেখা গেলেও মানহা আমাকে দেখতে পাবে না। সেটাই হলো, আমাকে দেখতেও পেলো না। মানহা ওর গাড়ির দিকে একটু এগিয়ে গেলো। বাইরে বেশ গরম। গাড়িতে বসে এসি চালিয়ে দিলেই আরাম পাওয়া যাবে। ঠান্ডা বাতাসে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করবে।অবশ্য মানহার সাথে ওর গাড়িতে আমি বেশ কয়েকবার উঠেছি।

কথায় আছে না, সবার পেটে সবকিছু হজম হয় না, ঠিক এসির বাতাসটা আমারও হজম হয়নি। তাই আমি এসি বন্ধ করে দিয়ে গ্লাস নামিয়ে দিয়েছিলাম। আমার এমন আচরনে মানহার ড্রায়ভার অবাক হলেও মানহা মুচকি হেসে আমার হাতটা ধরেছিল। তবে কিছু বলেনি। মানহার গাড়িটা হুট করেই দোকানটার সামনে এসে দাড়াতেই আমার ভেতরটাও কেপে উঠলো। ও কি আমাকে দেখে ফেললো। না সেটা কিভাবে সম্ভব। তাহলে কি কিছু কিনবে নাকি? আমি দোকানের ভেতরে একটু চেপে বসতেই মানহা গাড়ি থেকে নেমে চায়ের অর্ডার দিয়ে ঠিক আমি যে চেয়ারটায় বসেছিলাম সেই চেয়ারটাতে বসতে বসতে বললো…

-কি মামা, আজকাল কাস্টমারকে দোকানের ভেতরে নিয়ে চা খাওয়ানো শুরু করলেন নাকি? মানহার কথায় দোকানদার ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন…
-না আফা, উনি আমার রেগুলার কাস্টমার,তাই ভেতরে আইসা বইছে।

-দেখি আপনার রেগুলার কাস্টমার।

কথাটি বলেই মানহা দোকানের ভেতর উকি দিল। আমি অবশ্য মানহাকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিলাম। যে হাসিটা বলে দিচ্ছে আজ আমি ধরা পড়ে গেছি। আর সেটার জন্যে আমি দুঃখিত। মানহা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো…

-তো কাস্টমার সাহেব,

আপনি না খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে আটকে গেছেন, এটাই আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ? মানহার কথায় আমি দোকান থেকে বের হয়ে আসলাম। এই মেয়েটা যদি এখন রেগে যায় তাহলে আমার যেটুকু সন্মান অবশিষ্ট আছে সেটাও থাকবে না। এই মেয়েটা রেগে গেলে যে কোন কিছু করতে পারে। আমি মানহাকে একটু দূরে এনে বললাম,

-আসলে হয়েছে কি,

ওই কাজটা করেই মাত্র আসলাম। আমার কথায় মানহা কিছু বললো না। চুপ করেই রইলো। হয়তো ওর রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। নয়তো ওর কথাগুলা গুছিয়ে নিচ্ছে। মানহার চুপ থাকা দেখে আমি যখনি কিছু বলতে গেলাম তখনি মেয়েটা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো…

-তুমি কি সত্তিই আমাকে ভালবাসো? মানহার কথায় আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম….
-হ্যা,অবশ্যই।

-তাহলে এত মিথ্যে বলো কেন আমার সাথে?
-আসলে…
-কি আসলে,

কি,কি বলবে তুমি।  তোমার চাকরি নেই, বেকার,আমার কাছে থেকে টাকা নিতে লজ্জা করে এসব বলবে। শোনো তুমি যদি ভেবে থাকো আমাকে এখন আবার এসব বলে পরিবেশটা ভারি করে দেবে  তাহলে এই চিন্তাটা এখন ই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। নইলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।

মানহার কথায় আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না। কিই বা বলা উচিত এখন সেটাও আমার জানা নেই। সকালে যখন মানহা ফোন দিয়ে বললো দেখা করতে  তখন আমি ওকে মিথ্যে বলেছিলাম। কাজের অজুহাত দেখিয়ে না করে দিয়েছিলাম। সত্যি বলতে ওর থেকে টাকা নিতে আমার কেমন যেন অস্বস্থি লাগে। আর মেয়েটাও কেমন করে যেন বুঝে যায় আমার পকেট ফাকার খবর। না খেয়ে থাকলেও কণ্ঠ শুনে বলে দেবে আমি খেয়েছি কিনা। এই মেয়েটার সাথে আমার প্রেম হলো কিভাবে আমি সেটাও এখন মনে করতে পারছি না। আমার কোন গুন দেখে এই মেয়েটা আমার প্রেমে পড়লো সেটাও আমার মনে পড়ছে না। আমার চুপ থাকা দেখে মানহা কড়া গলায় বললো…

-শুধু চা খেলেই পেট ভরবে?
-আমি তো বাসা থেকে খেয়েই বের হয়েছি।
-তুমি আবারও মিথ্যে বলছো।
-না মানে,বাসায় গিয়ে খাবো।

আমার কথাটা মানহার হয়তো বিশ্বাস হলো না। মেয়েটা আমার দিকে বেশ রাগি চোখেই তাকালো। তবে কিছু বললো না। আমি মানহার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললাম..

-তুমি কি একটু বেশিই রেগে গেলে নাকি।

আমার কথায় মানহা এবারও কিছু বললো না। মেয়েটা দূরে দাঁড়ানো ড্রায়ভারকে কি ইশারা করলো আমি বুঝতে পারলাম না।কিন্তু যখন দেখলাম ড্রায়ভার গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছে তখন বুঝলাম ওর ইশারাটা কি ছিল। আমি এবার মানহাকে কিছু বলার আগেই মেয়েটা বললো…

-ওদিকে কি?
-না মানে, ড্রায়ভার তো চলে গেলো, বাসায় যাবে কিভাবে?
-কেন,তুমি পৌছে দিতে পারবে না?
-না,সেটা পারবো।কিন্তু
-কিন্তু কি? আমি মানহার কিন্তুর জবাব দিলাম না।একটু জোরে দোকানদারকে ডেকে বললাম,
-মামা চা লাগবে না। আমার কথায় মানহা ভ্রু কুচকে বললো,
-লাগবে না কেন?
-এই গরমে চা খেতে ইচ্ছে করছে না।

আমার এই কথাটা মানহা বিশ্বাস করলো কি করলো না সেটা আমি এবারও বুঝতে পারলাম না। এই মেয়েটাকে বোঝা বেশ মুশকিল আমার কাছে। মানহা একটু চুপ থেকে বললো,

-আসো আমার সাথে।
-কোথায়?
-আমি যেখানে যাব সেখানে, কোন সমস্যা?
-উহু,কোন সমস্যা নেই।চলো।

মানহার সাথে রেস্টুরেনন্টে বসে আমি যতবারই খেয়েছি ততবারই মানহা বিল দিয়েছে। এটা নিয়ে আগে বেশ অস্বস্থি হলেও এখন তেমনটা আর হয়না। আজও হলো না। আমার খাওয়ার ঠিক মাঝপথেই মানহা হুট করেই উঠে দাঁড়িয়ে বললো…

-আমার যেতে হবে একটা জরুরী কাজ আছে।

তোমার খাওয়া শেষ হলে বাসায় যাবে, আর গিয়েই আমাকে জানাবে। কথাটি বলে আর মানহা দাড়ালো না। বেশ তাড়াহুড়ো করেই বের হয়ে গেলো।কিন্তু এর কারনটা আমি বুঝতে পারলাম একটু পরেই। যখন দেখলাম টেবিলে মানহা পার্স ফেলে রেখে গেছে।

আমি জানি মেয়েটা এটা ভুলে রেখে যায়নি। ও ইচ্ছে করেই রেখে গেছে। যাতে করে আমি বিলটা দিতে পারি। সাথে এক্সট্রা টাকাও আছে এটা আমি না দেখেই বলে দিতে পারি। ও জানে যে ওর হাত থেকে টাকা নিতে আমার ভাল লাগে না তাই আজ এরকম একটা প্লান করেই রেখে গেছে। মানহার এরকম বুদ্ধির আমি প্রশংসা করলাম না, শুধু মুচকি হাসলাম আর মনে মনে বললাম “একদিন আমার মানিব্যাগটাও ঠিক এভাবে তোমার হাতে দিয়ে বলবো, কি বলবো ভুলে গেছি। দানীং এই সমস্যাটা বেড়ে গেছে। কোনকিছুই মনে থাকে না। ভুলে যাই। কারনে অকারনে ভুলে যাই। তবুও এই ভুলের মাঝে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে পারি তোমার কথা ভেবে। হ্যা তোমার কথা ভেবে।

 সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত